Maha Saptami 2023: জীবন বিপদ মুক্ত করতে সপ্তমীতে এই কাজ করুন, হবে মঙ্গলময়

আমাদের জীবনযাত্রায় কখনো সুখ, কখনো দুঃখ, কখনো চড়াই, কখনো উতরায় সব সময় যে ভালো সময় যাবে তা কোনো ভাবেই বলা যায় না। বিপদ কখনো আগে থেকে জানিয়ে আসে না, সেই কারণে আমাদের সর্বদাই সচেতন থাকতে হয়। আর এমন এমন ক্ষেত্রে সেই সব বিপদের মুখেও আমাদের পড়তে হয়।

বাড়িতে অশান্তি, ব্যবসা- চাকরিতে উন্নতি নেই, বাড়ির সদস্যদের শরীর খারাপ, খেলতে গিয়ে সন্তানের দুর্ঘটনা এবং জীবনে আরও অন্যান্য ছোটখাটো থেকে অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়।

তবে এই দুর্গা পূজাতে আপনার সকল বিপদ কেটে যেতে পারে যদি মহাসপ্তমীতে কিছু মঙ্গলময় কাজ করেন। সকল প্রকার অঘটন থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে এবং নিজের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে দেবী দুর্গার কাছে প্রার্থনা করার পাশাপাশি আপনি এই মহাসপ্তমীতে কি করবেন ? যার ফলে জীবনের সুখ শান্তি সমৃদ্ধি সবকিছুই ফিরে আসবে আর জীবন হবে মঙ্গলময় !

জীবন বিপদ মুক্ত করতে সপ্তমীতে এই কাজ করুন, হবে মঙ্গলময়
জীবন বিপদ মুক্ত করতে সপ্তমীতে এই কাজ করুন, হবে মঙ্গলময়

বিপদ সব মানুষের জীবনেই কমবেশি থাকে, তা নিয়ে যদি সারাক্ষণ মন খারাপ করে থাকা যায় তাহলে বাকি জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে উঠতে বেশিক্ষণ সময় নেবে না। এই দুর্গাপূজা তে নিজের মনের আনন্দের পাশাপাশি আপনার সকল বাধা বিপদ কাটিয়ে উঠতে করতে পারেন এমন কিছু কাজ। দুর্গাপূজা মানে চারিদিকে কাশ ফুলে ভরে ওঠা মাঠ এবং বাঙালির মন ভরে ওঠে আনন্দ তে ভরে ওঠে মা দুর্গার কৃপায়, যেন সারা বছর সকলে বিপদমুক্ত থাকেন এবং সকলের মনের ইচ্ছা পূরণ হয়।

জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে যদি পুজোর এই দিনগুলোতে কিছু নিয়ম মেনে চলা যায়, তাহলে সারা বছর ভালোভাবে কাটে তাতে কোন সন্দেহ নেই, সপ্তমীর দিন বিশেষ কিছু নিয়ম মানার মধ্যে দিয়ে জীবনের সকল দুঃখ, কষ্ট এবং যেকোন সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

শুভ সপ্তমী শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস

আসুন জেনে নিন, মহা সপ্তমীতে কি করলে জীবন হয়ে উঠবে মঙ্গলময়:

১) পবিত্র স্নান:

পবিত্র স্নান শুধু মাত্র শরীরকে শুদ্ধ করে না, তার সাথে সাথে মন কেও শুদ্ধ করে এবং দেব-দেবীদের আরাধনায় মনকে আরো বেশি বিশুদ্ধ করে তোলে, ভক্তিতে মন ভরে ওঠে। গঙ্গাস্নান একটি পূণ্য স্নান, যেটি সারা বছরে কোন একটা সুযোগ পেলেই এই গঙ্গাস্নান করতে পারলে নিজেকে ধন্য বলে মনে করেন মানুষ, আর যদি সপ্তমীর দিন ভোরবেলা এই পূণ্য স্নান করতে পারেন এর গুরুত্ব এবং মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানলে অবাক হতে হয়।

সপ্তমীর দিন অবশ্যই ভোরবেলা স্নান করতে হবে এবং নিয়ম মত মা দুর্গার পূজা করতে হবে, নিয়মে যেন কোন ত্রুটি না থাকে।

এই দিন দেবীর নবপত্রিকা পূজা করা হয়, এছাড়া এই দিন মহাবীরের পূজা করাও অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয় যা আপনার জীবনকে সুখময় করে তুলবে।

দুর্গা পূজার সময় এই কাজগুলি না করলে অজান্তেই পাপ হতে পারে

২) সাতটি লাড্ডু এবং লবঙ্গ:

সপ্তমীর দিন আরও একটি নিয়ম পালন করার মধ্যে দিয়ে আপনার জীবনের সমস্ত বাধা বিপদ কাটিয়ে উঠতে পারেন। এই শুভ দিনের সকালে সাতটা লাড্ডুর মধ্যে সাতটা লবঙ্গ গেঁথে দিতে হবে, অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে লবঙ্গ গুলোর মুখ অথবা যে ফুল রয়েছে সেটা যেন লাড্ডুর বাইরের দিকে থাকে তারপর সেই লাড্ডু বাড়ির ঠাকুরের স্থানে মা দুর্গার উদ্দেশ্যে অর্পণ করতে হবে।

লবঙ্গ গাঁথা লাড্ডু তামার পাত্রে দিতে হবে, পূজার সময় অবশ্যই শঙ্খ বাজাতে হবে, এর পাশাপাশি ঘিয়ের প্রদীপ, ধূপ, ধূনা দিয়ে আরতি করার নিয়ম পালন করাও প্রয়োজন।

আপনার ভাগ্য ফেরাতে দুর্গাপূজার আগে ঘরে আনুন এই ৫ টি জিনিস

৩) স্বামী- স্ত্রী একত্রে মিলে পূজা:

সুখী দাম্পত্য জীবন উপভোগ করার ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীরা অনেক রকমের পূজা করে থাকেন এবং প্রার্থনা করে থাকেন। তবে যদি সপ্তমীর দিনে এই কাজটি করতে পারেন তাহলে আপনার দাম্পত্য জীবন খুবই সুখের হবে আশা করা যায়। দেবী দুর্গা সকলের মা এবং তিনি সকলের আশীর্বাদ দেওয়ার জন্যই এই ধরণীর বুকে প্রতিবছর নেমে আসেন।

মহাসপ্তমীর দিনে ১০৮ টা আতপ চাল, ১০৮ টা যব, ১০৮ টা দুর্বা ঘাস এবং একটা আলতা, একটা নতুন শাড়িতে মুড়িয়ে মায়ের চরণে অর্পণ করতে হবে। এই নিয়মটি পালন করতে পারেন সকলেই, তবে যদি সদ্য বিবাহ হয়ে থাকে বিবাহিত জীবনের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে এবং সুখী দাম্পত্য জীবন উপহার পেতে স্বামী স্ত্রী একত্রিত হয়ে এই পুজো করতে পারলে খুবই ভালো ফল পাওয়া যায় বলে মনে করা হয়। একসাথে সম্ভব না হলেও কোন একজন যদি এই পূজা করে থাকেন তাহলেও এই পূজার শুভ ফল লাভ করা যায়।

অষ্টমীতে পূজার সঠিক বিধি ও অঞ্জলি সম্পর্কে জানা আছে কি?

✨ ৪) মহা সপ্তমীতে কাল রাত্রি কে করুন সন্তুষ্ট:

শাস্ত্র অনুসারে আমরা জানি যে নবরাত্রীর সপ্তমী তিথির গুরুত্ব রয়েছে অনেক খানি। সেখানে বলা হয়েছে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চললে জীবনের সুখ, শান্তি-সমৃদ্ধি নেমে আসে এবং বিবাদ, সমস্যার অবসান ঘটে।

ষষ্ঠী পেরিয়ে সপ্তমীতে দশভূজা আরাধনা করা হয়, এই দিন নবরাত্রীর সপ্তম দিনে দুর্গার সপ্তম রূপ কাল রাত্রি পূজা করা হয়, দেবীর এই রূপের পূজা করলে ভূত-প্রেত সহ সমস্ত নেতিবাচক শক্তি জীবন থেকে দূরীভূত হয় এবং জীবন হয়ে ওঠে মঙ্গলময় এর পাশাপাশি দেবী দুহাত করে ভক্তদের আশীর্বাদ করেন।

শত্রু ও দুষ্টের বিনাশকারী দেবী কালরাত্রি’র আরাধনা করলে সমস্ত দুঃখ-কষ্ট দূর হয় ও পরিবারের সুখ শান্তি সমৃদ্ধি বজায় থাকে।

দুর্গাপূজা করুন এই নিয়মে আপনার উপর প্রসন্ন হবেন দুর্গতিনাশিনী

৫) কাল রাত্রির পূজার সময় শক্তি এবং বিজয়:

কাল রাত্রীর পূজার সময় পাঁঠা নিবেদন করা উচিত, সপ্তমী তিথিতে দেবী কালরাত্রির জন্য পাঁঠা বলিও দেওয়া হয়। এই নিয়ম অনেক জায়গায় প্রচলিত রয়েছে, হিন্দুদের বিশ্বাস অনুসারে এই রীতির মধ্যে দিয়ে শক্তি এবং বিজয় অর্জন করা যায় এবং সেটা বজায় থাকে।

এছাড়াও আপনি যদি কোন মামলা মোকদ্দমা বা আইনি কোন সমস্যায় জড়িয়ে পড়েন তাহলে সে ক্ষেত্রেও বিজয়ী হবেন।

দূর্গা পূজার সময় এই কাজ গুলি ভুলেও করবেন না, সঠিক পদ্ধতি জানুন

৬) জীবন থেকে নেতিবাচক বা অশুভ শক্তি দূরীভূত:

নেতিবাচক এবং অশুভ শক্তি আমাদের জীবনকে যে দুর্বিষহ করে তোলে সে ক্ষেত্রে কিন্তু কোন সন্দেহ নেই। জীবনে যত ইতিবাচক চিন্তাভাবনা, ইতিবাচক পরিস্থিতি থাকবে জীবন ততই সুন্দর ও সুখময়, শান্তিময় হয়ে উঠবে।

বাড়িতে যদি ছোট বাচ্চা থাকে তাহলে নবরাত্রির সপ্তম দিনে তাকে সুরক্ষিত রাখতে দেবীর আশীর্বাদ প্রাপ্ত এই জিনিসটি পরাতে পারেন, সেটি হলো একটি কালো কাপড়ে হলুদ সর্ষে, একটি ভাঙ্গা সূচ রেখে কাপড়টি মুড়িয়ে সেই কাপড়টি শিশুর গলায় পরিয়ে দিন।

এটা বিশ্বাস করা হয় যে, সপ্তমী তিথি তে অশুভ শক্তি গুলি ব্যাপকভাবে জাগ্রত হয়ে পড়ে, তাই কোন অশুভ শক্তি যেন আপনার ছোট্ট প্রাণের শিশুকে কোনরকম ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখাটা আপনাদের কর্তব্য।

দেবী দুর্গাকে কিভাবে পুজো করলে সৌভাগ্য ফিরে আসবে

৭) দেবী কালরাত্রি কে সন্তুষ্ট করতে খিচুড়ি ভোগ:

দেবীর আরাধনায় নৈবেদ্য থেকে শুরু করে ভোগের আয়োজন করা হয় তা তো আমরা সকলেই জানি। অশুভর বিনাশ করতে নবরাত্রির সপ্তম দিনেও দেবীকে খিচুড়ি দেওয়া হয়। যা উড়র ডাল দিয়ে খিচুড়ি তৈরি করা হয়, এই খিচুড়ির উপরে ঘি ছিটিয়ে দেবীকে উৎসর্গ করুন, পূজা হলে সেই ভোগ ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করতে পারেন।

গ্রহের বিরূপ প্রভাব ও দূর হয়ে যায় এই নিয়ম পালন করার মধ্য দিয়ে। এর পাশাপাশি কালরাত্রি দেবীর লাল জবা ফুলের মালা খুবই প্রিয়, তাই সেটিও দিতে একেবারেই ভুলবেন না, সপ্তমীতে পূজার সময় লাল জবা ফুলের মালা পরিয়ে দেবীকে সন্তুষ্ট করতে অর্পণ করুন।

⭐ আমাদের জীবন থেকে সকল অশুভ শক্তি এবং নেতিবাচক বিষয়গুলি সরিয়ে দিয়ে জীবনকে মঙ্গলময় করে তুলতে এই কাজগুলি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি প্রয়োজন পড়লে কোন পুরোহিতের সহযোগিতা নিতে পারেন। সকলেই চান তাঁদের জীবন সুন্দর ও স্বাভাবিক থাকুক, আর সেই কারণেই এই দুর্গা পূজার মহা সপ্তমী তিথি টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

শুধুমাত্র পূজা অর্জনই নয়, এই দিন করতে পারেন এমন কিছু কাজ যা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলির মধ্যে দিয়ে সকল বাধা বিপদ পেরিয়ে নিজের জীবনকে করে তুলুন বিপদমুক্ত। তাছাড়া সকল নিয়ম মেনে, ভক্তি ভরে দেবীর পূজা করলে মা দুর্গার আশীর্বাদ তো আপনার উপরে বর্ষিত হবেই, তার সাথে সাথে আপনার পরিবারের সকল সদস্য এবং আত্মীয়-স্বজনের জীবন সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধিতে ভরে উঠবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top