Maha Ashtami 2023: অষ্টমীতে পূজার সঠিক বিধি ও অঞ্জলি সম্পর্কে জানা আছে কি?

দুর্গাপূজা সব থেকে বড় উৎসব বাঙালি দের জীবনে। এই দুর্গাপূজার কয়েকটা দিন খুবই আনন্দের সাথে কাটানোর পাশাপাশি এই উৎসবের দিনগুলির মধ্যে মহা অষ্টমীর দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকে কাঠি পড়ার সাথে সাথে মন মেতে ওঠে দুর্গা পুজোর আনন্দে।

এই দিন কুমারী পূজা থেকে সন্ধ্যা আরতি, সন্ধ্যা আরতি থেকে পুষ্পাঞ্জলি, সবকিছু মিলিয়ে মহা অষ্টমী হয়ে ওঠে সবার কাছে খুবই প্রিয়। দুর্গাপূজা সকলের কাছে ধর্মীয় আচরণের থেকেও অনেক বেশি উৎসব অনুষ্ঠান বলাই যায়। তবুও পূজোর কিছু নির্দিষ্ট রীতি নীতি রয়েছে, যা কখনো উপেক্ষা করা সম্ভব নয়।

অষ্টমীতে পূজার সঠিক বিধি ও অঞ্জলি সম্পর্কে জানা আছে কি?
অষ্টমীতে পূজার সঠিক বিধি ও অঞ্জলি সম্পর্কে জানা আছে কি?

তাছাড়া অষ্টমীর সকাল মানেই এক নতুন আনন্দ, নতুন জামা কাপড় পড়ে, পূজা মন্ডপে গিয়ে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া, সকলের সাথে পুজোর প্রসাদ ভাগ করে নেওয়া, সবকিছু বেশ আনন্দের সাথে কাটে। তবে এই অষ্টমীতে এমন কিছু নিয়ম রয়েছে যেগুলি পালন করলে সকলের মঙ্গল সাধন হয়।

শুভ অষ্টমী শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস

কথায় আছে, “মন তুলসী তো ভক্তি চন্দন” অর্থাৎ আপনি যদি মন থেকে ভক্তি ভরে পূজা অর্চনা করে থাকেন, তাহলে আপনার মত ভক্তের ডাকে সাড়া দিতে দেব-দেবীরা মর্ত্যে অবতীর্ণ হন। কিন্তু আপনি হয়তো ভাবছেন পুজোর পদ্ধতি তো আপনি জানেন না, তাহলে পূজা করবেন কিভাবে ? তাই তো ! পুরোহিত ছাড়াও নিজে থেকেই সমস্ত নিয়মকানুন জেনেও পূজা করা যায়।

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, এমন কিছু নিয়ম-কানুন সম্পর্কে যেগুলি আপনি মহা অষ্টমীতে পালন করতে পারেন:

মহাষ্টমী তিথির গুরুত্ব:

দুর্গা পূজার মহা অষ্টমী মানে যেন বসন্ত উৎসব। সকলেই শাড়ি আর পাঞ্জাবিতে সেজে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার জন্য উপস্থিত হন মায়ের মন্ডপে এবং মন্দিরে। অষ্টমীর দিন সকালে স্নান করে শুদ্ধ কাপড় পড়ে ঠাকুরের সামনে বসে মন্ত্র উচ্চারণ করে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হয় মায়ের চরণে।

হাতের মধ্যে ফুল নিয়ে মন্ত্র পড়ে তিনবার পুষ্পাঞ্জলি দিতে হয়। তাছাড়া সকল মেয়েরাই মা দুর্গার অংশ। তাই মৃন্ময়ী প্রতিমাকে পুজো করার পাশাপাশি কম বয়সের ছোট মেয়েদেরও পূজা করা হয় এই দিন। যাকে কুমারী পূজাও বলা হয়।

মহাষ্টমীর দিন কুমারী মেয়ে বিশেষত যে সকল মেয়ের বিবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে অথবা বিবাহ ঠিক হয়েও ভেঙে যাচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ ফলদায়ক এই নিয়মটি। লাল অথবা হলুদ কাপড় দেবী দুর্গাকে প্রদান করতে হবে এই মহা অষ্টমীর পুণ্য তিথিতে। তারপর লাল অথবা হলুদ সুতো মায়ের কাছে নিবেদন করে হাতে বাঁধুন সেই সুতো।

চিনি, ডাব, মিষ্টি, ফল সবকিছু দিয়ে পূজা করুন দেবীকে। নিজের মনের সকল ইচ্ছা পূরণের জন্য সংকল্প করুন। এছাড়া বলা যেতে পারে, এই দিন সম্পূর্ণ নিরামিষ আহার গ্রহণ করতে হয়। তার সাথে সাথে দেবীর সামনে এবং ঘরের ঠাকুর ঘরেতেও ঘিয়ের প্রদীপ জ্বেলে রাখতে হয়।

মহা অষ্টমীর সন্ধিপূজায় লাগে ১০৮ টি লাল পদ্ম ও ১০৮ টি প্রদীপ, কেন জানেন?

সন্ধি পূজাতে পালন করুন এই নিয়ম গুলি:

সন্ধিপূজা হলো দূর্গা পূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তাছাড়া অষ্টমী এবং নবমীর সন্ধি স্থলে অর্থাৎ অষ্টমী শেষ হওয়ার ২৪ মিনিট এবং নবমী শুরু হওয়ার ২৪ মিনিট এই সময়ের মধ্যে এই পূজা সম্পন্ন করা হয়। এই সন্ধিক্ষণে মূলত দেবী চামুণ্ডার পূজা করা হয়।

এই পুজোতে ১০৮ টি পদ্মফুল দেবীকে উৎসর্গ করা হয়। আর এই কাহিনী আমরা রামায়ণে জানতে পারি, রাবণ বধের জন্য রাম ১০৮ টি পদ্ম দিয়ে দেবীর পূজা করেন, তারপর রাবণ নিধন করেছিলেন।

কোনো কোনো জায়গায় এই দিনে বলি দেওয়ার প্রথাও রয়েছে। বলি হিসেবে পশু বলি নিয়ে অনেক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলে এখান বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি বলি দেওয়া হয়। যেমন ধরুন চাল কুমড়ো, আঁখ ইত্যাদি।

মহা অষ্টমীতে যে কাজগুলি করলে দেবী দুর্গা রুষ্ট হতে পারেন

কুমারী পূজা:

মহা অষ্টমীর সাথে খুবই সুন্দর ভাবে জড়িয়ে রয়েছে কুমারী পূজার মাহাত্ম্য। সকল মেয়েরাই মা দুর্গার অংশ। তাই মৃন্ময়ী প্রতিমাকে পুজো করার পাশাপাশি ছোট ছোট মেয়েদের ও পূজা করা হয়। ১৬ বছরের পর্যন্ত মেয়েদের কুমারী হিসেবে পূজা করা হয়।

একটি মেয়েকে প্রথমে আমন্ত্রণ করে তাকে শাড়ি ও গয়না উপহার দিতে হয়। সেই শাড়ি এবং গয়না তাকে পরিয়ে মাতৃ মূর্তির সামনে এনে উঁচু আসনে বসাতে হয়। তারপর সেই কুমারীর পা জল দিয়ে ধুয়ে দিতে হয় তারপরে তার পূজা শুরু করতে হয়।

এছাড়া সেই কুমারী মেয়েকে মিষ্টি ছাড়া আরও অন্যান্য নৈবেদ্য প্রদান করতে হয়। তার উদ্দেশ্যে অঞ্জলি দিয়ে থাকেন সকলেই। এই দিন ওই কুমারীকে দেবী দুর্গার রূপ হিসেবেই পূজা করা হয়। কেননা অনেক পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, অনেক জায়গায় দেবী দুর্গা ছোট্ট কুমারী মেয়ের রূপ ধারণ করে অনেক লীলা দেখিয়েছেন।

মহা অষ্টমীতে কুমারী পূজার মাহাত্ম্য জেনে নিন

পুষ্পাঞ্জলি:

মহা অষ্টমীতে পুষ্পাঞ্জলী হলো এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটা ছাড়া মহাষ্টমী অসম্পূর্ণ বলে মনে হয়। অষ্টমী মানেই কিন্তু পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া, নতুন জামা কাপড় পড়ে। স্নান করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে হাতে ফুল নিয়ে মনের সকল সংকল্প দেবীকে জানিয়ে মন্ত্র উচ্চারণের মধ্যে দিয়ে সেই ফুল দেবীর চরণে ছুড়ে দেওয়া। মনের সকল ইচ্ছা দেবীর চরণে অর্পণ করা হয়, বলা যেতে পারে এই অঞ্জলীর মধ্যে দিয়ে।

সবদিক থেকে দেখতে গেলে দেখা যায় যে, এই মহাষ্টমীর দিন নিষ্ঠা ভরে দেবীর সামনে অঞ্জলি দিলে জীবনের সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও যারা আর্থিক সমস্যায় ভুগছেন অথবা চারিদিকে শত্রুদের জ্বালায় বিরক্ত হয়ে উঠেছেন, তারাও কিন্তু এই দিন উপবাস পালন করে পুষ্পাঞ্জলির মধ্যে দিয়ে সুফল পেতে পারেন।

অষ্টমীর পূজা বিধি কি? অস্ত্রের পূজা কেন হয়? জেনে নিন

অঞ্জলির আগে একটি ডালায় অবশ্যই মা দুর্গার উদ্দেশ্যে ফুল, মিষ্টি এবং ফল নিবেদন করুন। দেবী দুর্গার চরণে সাধ্যমত নতুন কাপড় এবং সাজসজ্জার দ্রব্য অর্পণ করতে পারেন। তবে হ্যাঁ, অঞ্জলি দেওয়ার সাথে সাথে মনের সমস্ত কথা, স্বপ্ন এবং ইচ্ছা গুলো মায়ের কাছে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।

দেবী দুর্গা অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তির সূচনা করেন। তাই তার কাছে সমস্ত সমস্যার কথা জানিয়ে আপনি আপনার জীবনের সব সমস্যার সমাধান করতে পারেন। তাই মহাষ্টমীর দিন এই বিষয়গুলি বিশেষভাবে খেয়াল রাখাটা জরুরী।

তাছাড়া কুমারী মেয়েদের, বাচ্চা মেয়েদের দেবী জ্ঞানে পূজা করা, তাদেরকে খুশি করা, এই দিনের বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। মহাষ্টমীর দিন কাটুক সকলের খুবই সুন্দরভাবে। অঞ্জলি তে পূর্ণ হোক সকলের মনের ইচ্ছা। সকলের জন্য রইল শুভ মহাষ্টমীর প্রীতি ও শুভেচ্ছা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top