শান্তি ভঙ্গ হলে প্রশাসন কি করে? অপরাধীদের কি করা হয়? আইনি পদক্ষেপ জানুন

উপদ্রব বা শান্তি ভঙ্গ হওয়ার সন্দেহ’তে ম্যাজিস্ট্রেট (প্রশাসন) কি কি আইনি পদক্ষেপ নিয়ে থাকে? সন্দেহজনক ব্যক্তিদের ও অপরাধীদের কি করা হয়? এবং জানুন কিভাবে প্রশাসন দোষী ব্যক্তির থেকে নিরাপত্তা দিয়ে থাকে জানুন এই বিষয়ে সকল আইনি নিয়ম কানুন।

কখনো কখনো কিছু পরিস্থিতি এমন হয়, যেখানে শান্তি বজায় রাখার কথা অনিবার্য এবং খুবই জরুরি হয়ে পড়ে। সমাজে কিছু এমন ব্যক্তি আছেন যাদের কাজের মধ্যে দিয়ে সমাজের মধ্যে পরিবেশের শান্তি ভঙ্গ হয়ে যায়। আর সেটা খুবই বিপদ এর আকার ধারণ করে।

সময় সময় ওপর রাজ্য প্রশাসন এমন মানুষদের থেকে নিরাপত্তার সাথে অথবা বাতিল বন্ধ পত্র (Canceled closing letter) নিয়ে থাকেন। প্রশাসনের মূল উদ্দেশ্য রাজ্যতে শান্তি স্থাপন করে রাখা অথবা শান্তি বজায় রাখা এই শান্তির স্থাপনা হেতু নিরাপত্তা নেওয়া যেতে পারে।

শান্তি ভঙ্গ হলে প্রশাসন কি করে? অপরাধীদের কি করা হয়? আইনি পদক্ষেপ জানুন
শান্তি ভঙ্গ হলে প্রশাসন কি করে? অপরাধীদের কি করা হয়? আইনি পদক্ষেপ জানুন

সমাজে এমন অনেক অভ্যস্থ অপরাধী আছে যারা বারবার অপরাধ করে তার সাথে অপরাধ কে প্রতিনিয়ত করতেই থাকে। এদের অপরাধ থেকে সমাজে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় উৎপন্ন হয়। তার সাথে সংকটময় পরিস্থিতির জন্ম হয়। এমন পরিস্থিতির কারণে সমাজের সাধারণ মানুষের জীবন সংকটময় আর ভয় আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ভারতের আইনে দন্ড প্রক্রিয়া সংহিতা 1973 এর অন্তর্গত পুলিশ ক্ষমতার সমাবেশ করা হয়েছে। তথা এই ক্ষমতা রাজ্যের কার্যপালক (কমিশন) ম্যাজিস্ট্রেট কে সমর্পিত করা হয়েছে। কমিশন ম্যাজিস্ট্রেট সমাজে শান্তি বজায় রাখার প্রচেষ্টা করে থাকে।

যে ব্যাক্তির থেকে এমন নিরাপত্তা নেওয়া যেতে পারে:

দন্ড প্রক্রিয়ার সংহিতা এর অধ্যায় 8/৮ তে এমন ব্যক্তিদের কে উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের থেকে এমন নিরাপত্তা নেওয়া যেতে পারে, সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো:-

দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর সেই দোষী ব্যক্তির থেকে নিরাপত্তা নেওয়া: 

অনেক এমন অপরাধমূলক পরিস্থিতি রয়েছে যেখানে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যাক্তি এই পরিস্থিতির উপরে প্রথম বর্গের ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত দ্বারা নিরাপত্তা নেওয়া হয়ে থাকে। কোন ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করার পর সেশন আদালত অথবা প্রথম বর্গ ম্যাজিস্ট্রেট নিরাপত্তা নিয়ে থাকেন।

তথা এই নিরাপত্তা তে এই সমস্ত শর্তগুলি সমাবেশ হয় যে, অভিযুক্ত হওয়ার পিছনে দোষী দ্বারা কোন এমন কাজ করা যাবে না। যার ফলে পরিবেশের শান্তি ভঙ্গ হতে পারে।

আদালতের নিরাপত্তা এর এমন আদেশ তিন বছর থেকে কম সময় পর্যন্ত জন্য দেওয়া যেতে পারে। ধারা 106 এর অন্তর্গত যেমন বিশেষ অপরাধ হিসেবে বলা হয়েছে যে, সমস্ত অপরাধে ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পিছনে আদালত দ্বারা নিরাপত্তা এর চাহিদা রাখা যেতে পারে অথবা নিরাপত্তা চাওয়া যেতে পারে।

সাধারণ মামলাতে শান্তি বজায় রাখার জন্য নিরাপত্তা: 

দন্ড প্রক্রিয়া সংহিতা এর ধারা 107 এর অন্তর্গত কমিশন ম্যাজিস্ট্রেটকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়ে থাকে। যদি কোন ব্যক্তি শান্তি ভঙ্গ করে থাকে অথবা লোক শান্তি বিক্ষুব্ধ করা হয়ে থাকে বা কোন এমন দোষ পূর্ণ কার্য সম্পাদন করা হয়।

যার মাধ্যমে সম্ভব হতে পারে যে, কোন পরিবেশে শান্তি ভঙ্গ হয় অথবা লোক শান্তি ভঙ্গ হয়ে যায়, তখন যদি  বিচার করার জন্য পর্যাপ্ত আধার হয়ে থাকে, তাহলে এমন ব্যক্তিকে নিরাপত্তার সাথে অথবা নিরাপত্তা তার বিবেক অনুসারে বন্ধ পত্র নিশ্চিত করার জন্য আদেশ দেওয়া যেতে পারে।

এই ধারা অনুসারে নিরাপত্তার সাথে আদেশ করার জন্য মামলাতে কিছু তথ্য হওয়া অবশ্যই প্রয়োজন: 

#১) কমিশন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এই কথার সূচনা থাকাটা জরুরী যে, কোনো ব্যাক্তি যদি শান্তি ভঙ্গ করে অথবা এমন কোন কাজ করার মধ্যে দিয়ে শান্তি ভঙ্গ হতে পারে বা লোক শান্তি তে হস্তক্ষেপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।

#২) কমিশন ম্যাজিস্ট্রেট এর রায় তে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে, যার সম্বন্ধে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, সেই সম্বন্ধে বিচার করার জন্য পর্যাপ্ত আধার হতে হবে।

#৩) সেই স্থান যেখানে শান্তি ভঙ্গ হয়েছে অথবা শান্তি ভঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তার স্থানীয় অধিকারী তার মধ্যে অবশ্যই হতে হবে বা সেই ব্যক্তিকে সেই অধিকারী তার মধ্যেই হতে হবে যার দ্বারা ওই ম্যাজিস্ট্রেট এর অধিকারী তা থেকে লোক শান্তি ভঙ্গ করার জন্য কোনরকম আশঙ্কা থেকে থাকে তো।

রঙ্গলাল মহত বিহার রাজ্য AIR 1979 এর পর বলা হয়েছে যে, যদি কোন ব্যক্তি 1 বছর পর্যন্ত বন্ধ পত্র মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা ক্ষেত্রে আদেশ আদেশ করা যেতে পারে। আর উক্ত আদেশ থেকে পুনরীক্ষণ অথবা আপিল করার ক্ষেত্রে এক বছরের সময় যদি পার হয়ে যায়, তাহলে সেই ব্যক্তি নিজেকে বন্ধ পত্রের নিষ্পাদন থেকে কখনোই নিজেকে বাঁচাতে পারবেন না। আপিল অথবা পুনরীক্ষণ এরপর বন্ধ পত্র নিষ্পাদিত করতেই হবে।

রাজদ্রোহ করার মত কথা ছড়িয়ে দেওয়া ব্যক্তি থেকে বন্ধ পত্র নেওয়া: 

দন্ড প্রক্রিয়া সংহিতা এর ধারা 108 তে অন্তর্গত বর্তমান পরিদৃশ্য তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা হয়েছে। আর এটি আজকের দিনে আমাদের রাজনৈতিক ধরনা প্রদর্শন অথবা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা ব্যাক্তিদের সম্পর্কে বেশ কিছু বিষয় পেয়ে থাকি।

এখানে কমিশন ম্যাজিস্ট্রেট কে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়। তার স্থানীয় অধিকারী তার মধ্যে কোন ব্যাক্তি মৌখিক অথবা লিখিতভবে এমন কোন কথা প্রকাশ করে থাকে। যা কিনা ভারতীয় দণ্ড সঙ্গীতা এর ধারা 124a, 153a, 153b আর ধারা 295a এর অধীনে দণ্ডনীয় অপরাধ।

অথবা বিচার ব্যবস্থার মানহানি করা বা অশ্লীল বস্তুর বিক্রয় করা বা বিক্রয় করার জন্য তৈরি করা। তার সংরক্ষণ করা আর সেগুলিকে ভাড়ায় চালানো। এই ধরনের যেকোনো কাজ করা ব্যক্তিদের থেকে কমিশন ম্যাজিস্ট্রেট ধারা 108 এর অন্তর্গত সদাচার এর জন্য নিরাপত্তা চাইতে পারেন।

সন্দেহজনক ব্যক্তিদের থেকে নিরাপত্তা: 

দন্ড প্রক্রিয়ার সঙ্গীতা ধারা 109 এর অন্তর্গত কমিশন ম্যাজিস্ট্রেট তার নিজের ক্ষেত্র অধিকার এর মধ্যে কোন সন্দেহ জনক ব্যক্তি থেকে নিরাপত্তা চাইতে পারেন। এমন সন্দেহজনক ব্যক্তি তার নিজের উপস্থিতি লুকানো তে এই রকম চালাকি করতে পারে অথবা সন্দেহজনক ব্যক্তি নিজের উপস্থিতি কে কোনরকম অপরাধমূলক কাজ করার মধ্যে দিয়ে লুকানোর চেষ্টা করে থাকে, তাহলে কমিশন ম্যাজিস্ট্রেট ধারা 109 এর অন্তর্গত এমন সন্দেহজনক ব্যক্তির থেকে নিরাপত্তা প্রাপ্ত করার অধিকারী হয়ে যাবেন।

অভ্যাসগত অপরাধীদের থেকে নিরাপত্তা: 

কিছু ব্যক্তি, তাদের অপরাধ করাটা যেন অভ্যাসে পরিণত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা প্রতিনিয়ত অপরাধ করেই চলেছে। এমন অপরাধীদের সমাজে নিরাপত্তা ছাড়া স্বাধীনভাবে থাকা খুবই ঘাতক প্রকৃতির হয়ে থাকে।

যা কিনা জনসাধারণ অথবা সাধারণ জনগণের জন্য খুবই বিপদজনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। কমিশন ম্যাজিস্ট্রেট কে এমন অভ্যাসগত অপরাধীদের থেকে সব সময়ের জন্য নিরাপত্তা নেওয়ার ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়ে থাকে।

যখন কমিশন ম্যাজিস্ট্রেট এর এমন কোন অভ্যাগত অপরাধের তথ্য মিলে থাকে, তখন তার স্থানীয় অধিকারীতার ভিতর তথা যাবার পর কোন বিশেষ প্রকারের অপরাধ যেমন ধরুন লুটপাট, চুরি করা, কূট রচনা, ছলচাতুরি, চুরি করা সম্পত্তি লুকিয়ে রাখার অপরাধ, হুমকি দেওয়া, আরো গুরুতর অপরাধ বারবার হতে থাকে।

এমন অপরাধীদের অভ্যাসগত / অভ্যস্ত অপরাধী বলা হয়। দণ্ড প্রক্রিয়া সংহিতা ধারা 110 এর অন্তর্গত কমিশন ম্যাজিস্ট্রেট এমন অপরাধীদের থেকে সবসময়ের জন্য নিরাপত্তার স্বার্থে অথবা বন্ধ পত্র নিয়ে তাদের থেকে সমাজের সংরক্ষণ করার প্রচেষ্টা করে থাকেন।

ধারা 107 এবং 108 এর অন্তর্গত কোন ব্যক্তিকে যখন গ্রেপ্তার করা হয় তখন ধারা 111 দন্ড প্রক্রিয়া সংহিতা এর অন্তর্গত আদেশ দেওয়া হয়েছে। এমন আদেশ দেওয়ার পূর্বে সেই আদেশ জারি করা আদালত অথবা কমিশন ম্যাজিস্ট্রেট এর কারণ বলার মধ্যে দিয়ে নোটিশ জারি করতে হবে। কারণ নোটিশ এর আধারের উপর অভিযুক্ত থেকে নিরাপত্তা কেন দেওয়া যাবে না সেটার কারণ প্রস্তুত করে থাকে।

সমাজে এমন ঘটনা প্রায়ই চোখে পড়ে। যেখানে অভ্যাসগত অপরাধী প্রতিনিয়ত তাদের স্বভাবগত ভাবে অপরাধ করেই চলেছে। আর এদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তাহীন ভাবে সমাজে স্বাধীনভাবে ছেড়ে রাখার মানে হল সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলা। তাই তাদের থেকে নিরাপত্তা সকল জনগনের প্রাপ্য।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top