দুর্গা পূজা 2023: দূর্গা পূজার সময় এই কাজ গুলি ভুলেও করবেন না, সঠিক পদ্ধতি জানুন

দেখতে দেখতে চলে এলো দূর্গা  পূজা। আর এই পূজার জন্য সারা বছর ধরে অপেক্ষা করা, ঘরবাড়ি সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা, আত্মীয়-স্বজনদের নিমন্ত্রণ করা, সবকিছু নিয়ে এই দুর্গোৎসব বাঙালির প্রাণ বলাই যায়। পুজো মানেই নতুনের ছোঁয়া, পুজো মানেই সীমাহীন আনন্দ।

এই সীমাহীন আনন্দের মধ্যে এমন অনেক নিয়ম কানুন রয়েছে যেগুলি মেনে চললে জীবনে আনা যায় অনেকখানি পরিবর্তন। অমাবস্যা, পূর্ণিমা, আরো অন্যান্য তিথি যেমন পালন করা হয়, তেমনি দুর্গাপুজোর দিনগুলি আনন্দ করার পাশাপাশি এই শুভ দিনে বেশ কিছু নিয়ম আপনাকে মেনে চলতে হয়।

সকলের প্রাণের উৎসব এই দুর্গাপুজোতে সকলেই চাইবেন দেবী দুর্গার আশীর্বাদ তাদের জীবনে এমন ভাবে বর্ষিত হোক, যাতে তাদের সংসারে উন্নতি সাধনের পাশাপাশি শান্তি ও যেন বিরাজমান থাকে।

দূর্গা পূজার সময় এই কাজ গুলি ভুলেও করবেন না
দূর্গা পূজার সময় এই কাজ গুলি ভুলেও করবেন না

আর তাইতো এত ঘটা করে এই উৎসব পালন করার মধ্যে দিয়ে অনেকে ছোটখাটো আরো অনেক নিয়ম কানুন পালন করে থাকেন, যার ফলে দেবী দুর্গা যেন তাদের প্রতি প্রসন্ন হয়ে আশীর্বাদ বর্ষণ করেন।

দুর্গাপূজা শুরু হয়ে যায় পঞ্চমীর দিন থেকে, বলতে গেলে মহালয়ার পর থেকে দুর্গাপূজা শুরু। এই দিনগুলোতে মানুষ থাকবে খুবই আনন্দে মেতে। তাছাড়া ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত মায়ের পুজোর দিন সারা বছরে একবার মাত্র এই আনন্দে মেতে ওঠেন সকল মানুষ। সব বাঙ্গালীদের ঘরে ঘরে উৎসবের আনন্দ, কেনাকাটার ধুম, সাজগোজের ঘনঘটা লেগেই থাকে।

তবে আপনি কি জানেন, পুজোর আনন্দের সঙ্গে পুজোর কিছু নিয়মকানুন পালন করতে হয় ?  যা সঠিক ভাবে পালন করলে মায়ের কৃপা সারা বছরে আপনার এবং আপনার পরিবারের সকল সদস্যের উপরে বজায় থাকবে। আর সেই কারণে এমন নিয়ম কানুন মেনে চলতে ভোলেন না প্রতিটি হিন্দু পরিবারের মানুষজন।

দুর্গা পুজার দিনগুলি কিভাবে পালন করবেন:

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, এমন কিছু নিয়ম সম্পর্কে, যা এই দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে পালন করলে আপনি মা দুর্গার কৃপা পাবেন:

ষষ্ঠীর দিন বেলতলায় পুজো দেওয়া থেকে শুরু করে দশমীতে সিঁদুর খেলা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের নিয়মকানুন, পূজা অর্চনা, আচার বিচার, পালন করে তবেই এই দুর্গাপূজার দিনগুলি কাটানো হয়। ষষ্ঠীর দিন সন্তানদের কপালে মায়ের পুজো করা হলুদের ফোটা দেওয়া থেকে শুরু করে বিসর্জন পর্যন্ত চলে মায়ের পূজোর নানা প্রকার বিধি।

তবুও এই সব গুলির মধ্যে দিয়ে যদি আপনি এমন কিছু নিয়ম পালন করেন ভক্তি রেখে, তাহলে আপনি দেখবেন যে পরিবারের সকলের মঙ্গল সাধনের পাশাপাশি আপনার জীবন অনেক খানি সহজ হয়ে উঠেছে।

১) নিরামিষ আহার গ্রহণ করা:

পুজো মানেই পবিত্র অনুষ্ঠান, আর তাই প্রতিটি পবিত্র অনুষ্ঠানে উপবাস এর পাশাপাশি নিরামিষ খাবার খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। এমনকি অনেকেই শুধুমাত্র ফল আহার অথবা সম্পূর্ণরূপে শাকসবজি, নিরামিষ, খেয়ে থাকেন পুজোর দিনগুলিতে।

সেই অনুসারে যদি আপনি দুর্গাপুজোর চার দিন পর্যন্ত যদি নিরামিষ খাবার খেয়ে থাকেন তাহলে মায়ের আশীর্বাদ সর্বদাই বর্ষিত হবে আপনার এবং আপনার পরিবারের সকল সদস্যদের উপর।

দেবীর ভোগ যদি আমিষ হয় সে ক্ষেত্রে কিন্তু সেটা গ্রহণ করা যেতেই পারে, কেননা সেটা আপনি প্রসাদ হিসেবে গ্রহণ করছেন।

২) গঙ্গা স্নান:

গঙ্গা স্নান অনেকটা পূর্ণ অর্জন করার একটি পন্থা, যদি কোন পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে থাকেন কেউ তাহলে গঙ্গাস্নান করে সেই পাপ কাজ থেকে একেবারে জন্য নিজেকে সরিয়ে নেওয়া এবং মনকে শুদ্ধ করে নেওয়ার বিধি অনেকদিন আগে থেকেই হয়ে আসছে।

তবে যদি পুজোর কটা দিন প্রত্যেকদিন গঙ্গা স্নান করা যায়, তাতে শরীর ও মন শুদ্ধ হয়ে যাবে এবং সংসারে সুখ শান্তি বজায় থাকবে, যদি প্রতিদিন গঙ্গায় গিয়ে স্নান করা সম্ভব না হয়ে ওঠে, তাহলে বাড়িতে স্নানের জলে কিছুটা গঙ্গাজল মিশিয়ে স্নান করতে পারেন।

পুজোর সময় প্রতিদিন সকাল বেলায় ১০৮ বার দুর্গা নাম জপ করলে, সকল বিপদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

৩) মায়ের পুষ্পাঞ্জলি:

পুষ্পাঞ্জলীর মধ্যে দিয়ে আপনি আপনার মনের সকল ইচ্ছা মায়ের কাছে জানিয়ে থাকেন। তেমনি যদি পুজোর দিনগুলিতে পুষ্পাঞ্জলি সহকারে মায়ের পূজা দিতে পারেন তাহলে খুবই ভালো ফল পাবেন।

যদি প্রত্যেকদিন সম্ভব না হয় তাহলে অন্তত সন্ধি পূজার পুষ্পাঞ্জলি দেওয়াটা অত্যন্ত মঙ্গল জনক বলে মনে করা হয়।

৪) সন্ধ্যা আরতি:

কথায় আছে ভক্তি ভরে মন থেকে যদি ঈশ্বরকে ডাকা যায় তিনি অবশ্যই সাড়া দেন। আর সন্ধ্যা আরতি এমন একটি বিষয় যার সাথে জড়িয়ে রয়েছে অনেক খানি আধ্যাত্মিক ধ্যান-ধারণা।

পুজোর কটা দিন নিজেই ঠাকুর ঘরে মাকে প্রদীপ এর আলোয় অথবা পঞ্চ প্রদীপের আলোয় আপনি আরতী করতে পারেন।

যদি তেমনটা সম্ভব না হয় তাহলে মণ্ডপে গিয়ে সেখানে সন্ধ্যা আরতির অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করাটা আপনার জন্য শুভ বলে মনে করা হয়।

দুর্গা পুজার দিনগুলিতে কি কি করবেন না:

এছাড়াও রয়েছে আরও অনেক নিয়ম কানুন, যেগুলি শাস্ত্রমতে একেবারে নিষিদ্ধ বলে মনে করা হয়:

১) চুল, নখ কাটা যাবে না:

প্রতিটি মানুষের চুল নখ কাটাটা শরীরের পক্ষে ভালো এবং তার সাথে সাথে পুজোর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য অনেকেই চুল কেটে থাকেন নিজেকে সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলার জন্য। তবে এই কাজটা আপনি পূজার আগেও করতে পারেন, তাই না !

কেননা ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত এই বিষয়গুলি থেকে যদি আপনি বিরত থাকেন তাহলে আপনার জন্যই মঙ্গল। কেননা উৎসবের এই দিনগুলিতে শুভ তিথিতে অর্থাৎ ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত চুল আর নখ কাটা একেবারেই উচিত নয়।

২) অতিথি নারায়ন:

কথাটা নিশ্চয়ই শুনে থাকবেন যে, “অতিথি হলো নারায়ন”। ঘরে আগত কোন অতিথি, সেটা আপনার চেনা পরিচিত হতে পারে অথবা অন্য কেউ।

পুজোর দিনগুলোতে যদি কেউ বাড়িতে আসেন তাহলে তার আপ্যায়নে যেন কোনরকম খামতি না থাকে। কোনভাবেই যেন তার প্রতি কঠোর মনোভাব এবং খারাপ ব্যবহার যেন প্রকাশ না পায়।

তার আপ্যায়নের সব দিক থেকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা ঘরে আসা যে কোন অতিথি নারায়ণের রূপ হয়।

এই অতিথি রুপি নারায়ণ কে সন্তুষ্ট করতে পারলে আপনার সংসারে উন্নতি আটকাতে পারবেনা কেউই। তাই শুধুমাত্র এই দুর্গাপুজো উপলক্ষেই নয়, প্রতিটি উৎসবে যদি আপনার ঘরের দোরগোড়ায় কোন অতিথি এসে দাঁড়ায়, সেটা কোন ভিক্ষুক ও হতে পারে, তার আপ্যায়নে আপনি হাসিমুখে তাকে স্বাগত জানাবেন।

৩) সাজানো ঘরবাড়ি:

লক্ষ্মী লাভ মুখের কথা নয়, তবে উৎসবের দিনগুলিতে যদি আপনি ঘর বাড়ি সাজিয়ে না রাখেন, দেবী যদি আসে আপনার ঘরে, বসতে দেবেন কোথায়? সেই জন্য উৎসবের আগে থেকেই নিজের ঘর বাড়িকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলুন।

কোথাও যেন এতোটুকু আবর্জনার চিহ্ন না থাকে। ঘরের আশেপাশের চারিদিকটাও খেয়াল রাখবেন। কেননা জানেনই তো লক্ষ্মী বড়ই চঞ্চলা।

তাই এমন ভাবে ঘর সাজিয়ে রাখুন, যাতে সেই সুন্দর ঘরের মোহে পড়ে সেখানেই রয়ে যান তিনি।

৪) শান্তিপূর্ণ পরিবেশ:

উৎসব মানেই সীমাহীন আনন্দ, এমন উৎসবের দিনে ঝগড়াঝাঁটি না হওয়ারই কথা। তবুও যদি কোন কারনে আপনার মাথা গরম হয়, একেবারেই তা গরম হতে দেবেন না।

এই পরিস্থিতিতে আপনার ব্যবহারে পরিবারের কোন সদস্য যেন আঘাত না পায়। তার ফলে এই উৎসবের আনন্দ সেই ব্যক্তির পাশাপাশি আপনার জন্য একেবারে মাটি হয়ে যেতে পারে।

ঘরেতে বজায় রাখুন শান্তি, সবার সাথে খুবই সুন্দর ভাবে কথা বলুন, চারিদিকে ছড়িয়ে দিন আপনার ভালোবাসা।

তো এই ছিল বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নিয়ম কানুন, যেগুলি দুর্গাপূজার এই উৎসবের দিনগুলিতে আপনি পালন করতে পারেন। তার পাশাপাশি নিষিদ্ধ এই বিষয়গুলি এড়িয়ে চলতে পারেন।

যার ফলে আপনার সংসারে আসবে সুখ-শান্তি, উন্নতি ও সমৃদ্ধি। প্রার্থনা করি সকলের সব মনের ইচ্ছা পূরণ হোক। দূর্গা পূজার প্রতিটি দিন সকলের খুবই আনন্দের সাথে কাটুক। শুভ শারদীয়া দুর্গাপূজার প্রীতি, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন, সাথে রইল অনেক অনেক শুভকামনা।

Leave a Comment