ভারতে যৌতুকের (বিবাহ পণ) বিরুদ্ধে আইন-কানুন ও পরামর্শ

Laws Against Dowry in Bengali: যৌতুক নেওয়া আইনত অপরাধ জানুন যৌতুকের বিরুদ্ধে আইন | কোন কোন বিষয় যৌতুকের মধ্যে পড়ে জেনে নিন | যৌতুকের কারণে কোন রকম অশান্তি হবার পূর্বে অবশ্যই যৌতুকের আইনি সম্পর্কে জেনে নিন।

কন্যা দান করার সময় প্রত্যেক বাবাকে অনেক কষ্ট করে তাকে সম্প্রদান করতে হয়। তার সাথে সাথে যদি সারা জীবনের উপার্জন সেই মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে যৌতুক হিসেবে দিতে হয়, তাহলে সেই বাবার বাকিটা জীবন বেঁচে থাকা হয়ে ওঠে অনেকটাই দুর্বিষহ।

ভারতে যৌতুকের (বিবাহ পণ) বিরুদ্ধে আইন-কানুন ও পরামর্শ
ভারতে যৌতুকের (বিবাহ পণ) বিরুদ্ধে আইন-কানুন ও পরামর্শ

এছাড়া ভারতে যৌতুকের জন্য হাজার হাজার মহিলাকে নির্যাতিতা হতে হচ্ছে। এমনকি আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে বাধ্য হয়েছেন হাজার হাজার মহিলা। শুধুমাত্র এই যৌতুকের কারণেই। যৌতুক নিয়ে আইন থাকলেও সেটা একেবারেই ভুলে গিয়ে অবাধে চলছে এমন যৌতুক দেওয়া নেওয়া।

ভারতে যৌতুকের বিরুদ্ধে আইন: 

যৌতুক একেবারেই নিষিদ্ধ এবং 1961 অনুসারে ভারতের যৌতুক প্রথা আইন হিসেবে গণ্য করা হয়। উপরোক্ত অধিনিয়ম অনুসারে যৌতুক দেওয়া এবং নেওয়া দুটোই কিন্তু দণ্ডনীয় অপরাধ।

শাস্তি হিসেবে:- আইনের নিয়ম লংঘন করার জন্য পাঁচ বছরের জেল, তার সাথে পাঁচ হাজার (৫,০০০) টাকা পর্যন্ত জরিমানা। এছাড়া যে পরিমাণ যৌতুক নেওয়া হয়েছে সেই পরিমাণ টাকা ও কিন্তু জরিমানা হিসেবেও দিতে হতে পারে।

বিষয়-ক্ষেত্র: 

১) পাত্রপক্ষ এবং তার পরিবার দ্বারা কোনরকম যৌতুক যদি চাওয়া হয়ে থাকে, সেখানে পরিবারের সাথে প্রত্যক্ষ এবং অপ্রত্যক্ষ চুক্তিও শামিল হয়। সেটাও কিন্তু এই যৌতুক হিসেবে মনে করা হয়।

২) সেই যৌতুক চাওয়া টা নগদ টাকা হতে পারে, কোন সম্পত্তি অথবা অন্য কোনো উপকারিতা / ঋণ শোধ হিসেবে হতে পারে।

৩) বিয়ের আগে অথবা পরে এই যৌতুক চাওয়ার বিষয়টি হতে পারে অথবা জিনিসপত্র, টাকা-পয়সা সম্পত্তি চাওয়া হতে পারে।

কিভাবে একটি দৈনিক চাহিদার উপরে বিচার করা যায়?

১) এই ক্ষেত্রে যে কোন কিছু শামিল হতে পারে, যা কিনা কন্যাপক্ষ থেকে না দেওয়া হয়ে থাকে।

২) যেকোনো কিছু শামিল হতে পারে, যা কিনা পাত্রপক্ষ সোজাসুজি অথবা পরোক্ষ ভাবে কোনরকম সংকেত এর মাধ্যমে এমন যৌতুকের কথা বলতে পারেন।

৩) যেকোনো চাহিদা, যা কিনা পাত্রীপক্ষ কে চাহিদা পূরণ করার জন্য একেবারে বাধ্য করা হয়।

৪) বিয়ের জন্য পূর্ববর্তী কোন শর্ত রূপে কোন কিছু দেওয়া, যা ছাড়া পাত্রীপক্ষের এমনটা অনুভব হতে পারে অথবা অনুমান হতে পারে যে, সেই জিনিসপত্র অথবা যৌতুক হিসেবে যাই কিছু হোক না কেন, যদি না দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে বিয়ে বন্ধ হয়ে যেতে পারে অথবা বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে

৫) যখন বরপক্ষ বাস্তবিক চাহিদাা, বাস্তবে কোনো চুক্তি কে সম্পূর্ণ করতে অসমর্থ হয়ে থাকে তখন পাত্রের অথবা  বরের থেকে কোন যৌতুক নেওয়া অথবা কোনো চুক্তি করার জন্য কথা বলা।

৬) পাত্রীপক্ষের পরিবারকে বিয়ের পর তাদের মেয়ের বিয়ের ক্ষতিপূরণ হিসেবে চাহিদা পূর্ণ করা।

যখন একটি উপহার না হয়: 

১) নববিবাহিত জুটি কে কনের বাবা মা তাদের নিজেদের পছন্দমতো উপহার কোনরকম জোরপূর্বক ছাড়া দেওয়া যেতে পারে।

২) এইরকম উপহারকে অথবা উপহার গুলি সূচিপত্র বিয়ের উকিল দ্বারা তার খরচ এবং ঘোষণা এক সাথে তৈরি করতে হবে যা কিনা এমনটা হবে যে, পাত্রীপক্ষ উল্লেখ করবেন কোনরকম বাধ্য করা ছাড়া নিজেদের পছন্দমতো এবং মেয়েকে উপহার দেওয়ার জন্য এমন জিনিসপত্র টাকা পয়সা অথবা কোন সম্পত্তি দেওয়া হয়েছে।

৩) পাত্র পক্ষের পরিবারের কাছে উপরোক্ত ওই সূচিপত্রের একটি কপি থাকতে হবে।

৪) নববিবাহিত দম্পতির জন্য যে উপহার দেওয়া হবে, সেটা কেবল মাত্র তাদের দুজনের কাছেই থাকবে অন্য কোথাও যাবে না।

স্ত্রীধন আসলে কি?

১) মেয়ের বাবা-মা দ্বারা তাকে এবং পাত্রকে দেওয়া উপহার সেটা যে কোন বস্তু হতে পারে, সেটা শুধুমাত্র সেই মেয়ের অথবা কন্যার একমাত্র সম্পত্তি হবে আর সেটা স্ত্রীধন হিসেবে পরিচিত অর্থাৎ স্ত্রীর সম্পত্তি বলা হয়ে থাকে।

২) বিয়ের আগে অথবা বিয়ের পরে এই স্ত্রীধন দেওয়া যেতে পারে।

৩) স্ত্রীধন হল সেই মেয়ের নামে যে সম্পত্তি রয়েছে সেটাও কিন্তু শামিল আছে।

৪) এছাড়াও নিজের পরিবার অথবা স্বামীর পরিবার দ্বারা নগদ টাকা বা এই ধরনের আরো অন্যান্য উপহার দেওয়া হয়ে থাকে।

৫) স্ত্রীধন যেটা সেটা শুধুমাত্র নববধূর অধিকার থাকবে, বলতে গেলে সেই স্ত্রীধন এর শুধুমাত্র নববধূ একাই মালিক হবেন।

৬) এই স্ত্রীধন এর উপর স্বামী এবং স্বামীর পরিবারের অন্য কোন সদস্যের কোনরকম অধিকার থাকবে না।

৭) ভবিষ্যতে যদি কোন কারনে এই বিয়ে ভেঙে যায় অথবা ডিভোর্স হয়ে যায়, তাহলে সেটি ফেরত নেওয়ার জন্য চেষ্টা করতে পারেন।

৮) এছাড়া সেই নববধূ অথবা সেই বিবাহিত মেয়ের অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর মামলাতে মেয়ের পরিবারে সেই স্ত্রীধন আবার পুনরায় ফেরত চলে আসে।

যেহেতু যৌতুক নেওয়া এবং দেওয়া দুটোই আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই যদি কোন মেয়ের বাবা-মা খুশি হয়ে তার মেয়েকে উপহার স্বরূপ কোন কিছু দিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে উল্লেখ অনুসারে, কাগজ পত্র অনুসারে এবং উকিলের উপস্থিতিতে যদি এটা হয়ে থাকে, তাহলে সেটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়।

তাছাড়া যদি কোন পরিবারকে যৌতুক দেওয়ার জন্য বাধ্য করা হয় অথবা বিয়ে ভেঙে দেওয়ার মতো হুমকি দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে এটি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এর জন্য আপনার জেল-জরিমানা দুটোই হতে পারে।

এছাড়া এই যৌতুক জড়িত বিষয়ে অনেক পরিবার একেবারে ভেঙে গিয়েছে। এর বিরুদ্ধে যদি আমরা সকলেই রুখে দাঁড়াই, বলতে গেলে যৌতুক দেওয়া যাবে না এবং নেওয়াও যাবে না। উপহার বিষয়টা আলাদা জিনিস। তাহলে অনেক মেয়ের বাবা-মা সারা জীবন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবেন। এর সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক দুটো পরিবারেই বজায় থাকবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top