সূর্যগ্রহণ 2023: সূর্যগ্রহণের পরে স্নান করতে হয় কেন? কারণ জেনেন কি?

সূর্যগ্রহণের পরে স্নান করতে হয় কেন: সূর্যগ্রহণ নিয়ে রয়েছে অনেক বিধি নিষেধ এবং নিয়ম-কানুন। ধর্ম গ্রন্থ এবং পুরানে সূর্য গ্রহণের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। পুরান অনুযায়ী চন্দ্রগ্রহণের থেকে সূর্যগ্রহণ বেশি প্রভাব বিস্তার করে থাকে। সেই অনুসারে বেশ কিছু নিয়ম আমাদের পালন করতে হয়।

তেমনি একটি নিয়ম হল সূর্যগ্রহণ শেষ হয়ে যাওয়ার পর সকলকে স্নান করতে হয়। স্বয়ং কৃষ্ণ এবং রাধা সূর্য গ্রহণের সময় কুরুক্ষেত্রের পবিত্র নদীতে স্নান করেছিলেন। মহাভারতের সময় সূর্য গ্রহণ লেগেছিল, সেই সময় রাধা যশোদা এবং নন্দ বাবার সঙ্গে কুরুক্ষেত্রে এসেছিলেন। এর থেকে বোঝা যায় যে, গ্রহণের পরে পবিত্র নদীতে স্নান করা কতখানি জরুরী, সেই নিয়ম অথবা প্রথা আজও মেনে চলেন সকলেই।

সূর্যগ্রহণের পরে স্নান করতে হয় কেন? কারণ জেনেন কি?
সূর্যগ্রহণের পরে স্নান করতে হয় কেন? কারণ জেনেন কি?

গঙ্গা অথবা যেকোনো পবিত্র নদীতে স্নান করা সম্ভব না হলেও বাড়িতে কিন্তু আপনি আপনার স্নানের জলে গঙ্গাজল মিশিয়ে স্নান করতেই পারেন। কিন্তু গ্রহণের পরে স্নান করা কেন জরুরী সে বিষয়ে হয়তো অনেকেই জানেন না।

সূর্যগ্রহণের পরে স্নান করতে হয় কেন?

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, সূর্য গ্রহণের পরে আপনাকে কেন স্নান করতেই হবে:

শাস্ত্র অনুসারে সূর্য গ্রহণের পরে স্নানকে সবচেয়ে বেশি জরুরি একটা কাজ বলে মনে করা হয়। আরো অন্যান্য নিয়ম নীতি, প্রথা অনুসারে এই নিয়মটি সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মেনে চলেন।

সন্তান জন্ম নেওয়ার পর সূর্য এবং চন্দ্র সংক্রান্তি যদি রাতেও হয়, তাহলেও স্নান করে শুদ্ধ হওয়া উচিত, এমনটা বর্ণিত রয়েছে শাস্ত্রে। কারণ গ্রহণ ইত্যাদি ঘটনার পর শরীর অপবিত্র হয়ে যায়, তাই দেব ও পিতৃ কার্যের জন্য শরীর শুদ্ধ করা খুবই জরুরী হয়ে পড়ে।

পবিত্র হওয়ার জন্য পবিত্র নদীতে স্নান করা অনেকখানি পূণ্যের কাজ। তবে সূর্য গ্রহণের সময় চারিদিকে নেতিবাচক এবং অশুভ শক্তি বিরাজ করে, তার প্রভাব আমাদের শরীরের উপরেও পড়ে। সেই কারণে সূর্য গ্রহণ হয়ে গেলে তারপরে আমাদের কে স্নান করতে হয়। এটা এমনটাই নিয়ম রয়েছে, যার ফলে আবার পবিত্রতা বজায় থাকে।

সূর্যগ্রহণের সময় কি করবেন আর কি করবেন না, এখনি জেনে নিন

সূর্যগ্রহণ এর আগেও স্নান করার গুরুত্ব রয়েছে:

শুধুমাত্র সূর্য গ্রহণের পরেই নয়, সূর্য গ্রহণ লাগার আগেও আপনাকে স্নান করে নেওয়া উচিত। কারণ এটি সাধনার সময়, গ্রহণের সময় সূর্যের মন্ত্র জপ করা উচিত, এছাড়াও গুরু মন্ত্র, নারায়ন কবজ এবং বিভিন্ন গ্রহের মন্ত্র জপ করা অত্যন্ত শুভ এবং প্রভাবশালী বলে মনে করা হয়। এগুলি করার জন্য আপনাকে অবশ্যই পবিত্র হতে হবে। সূর্য গ্রহণ চলাকালীন সকলকে ঈশ্বরের নাম জপ করতে হয়।

পূজা পার্বণের মতোই কোনো পবিত্র কাজে যখন আপনি নিযুক্ত হবেন, তখন নিশ্চয়ই নিজেকে শুদ্ধ করে নিতে চাইবেন, তাই না ! সেই কারণে নিজের শরীরটাকে শুদ্ধ করে রাখাটা জরুরী। আর তাই জন্য সূর্য গ্রহণের আগে স্নান করে পবিত্র হতে হয় সকলকেই।

সূর্যগ্রহণ এর পরে স্নান করার উপকারিতা:

প্রতিটি প্রথা, প্রতিটি নিয়ম মানব শরীরে উপকার ছাড়া কখনোই অপকার করে না। আর তাইতো এগুলি মেনে চললে শরীরের সুস্থতা বজায় থাকার পাশাপাশি সংসারে আসে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি।

ধর্মীয় ধারণা অনুযায়ী দুটি অশুভ গ্রহ অর্থাৎ রাহু ও কেতুর কারণে গ্রহণ হয়। সূর্যগ্রহণের সময় কেতু সূর্যকে সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করে। এর ফলে নেতিবাচক শক্তির প্রভাব অনেক অংশ বৃদ্ধি পায়।

গ্রহের রাজা কেতুর গ্রাসে থাকায় অশরী শক্তি জাগ্রত হয়। আবার বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে দেখা যায় যে, এই সময় রোগ জীবাণুর পরিমাণ প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়ে যায়, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি স্বাস্থ্যের উপরে বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে।

আর সবদিক থেকেই বিচার করলে দেখা যায় যে, সূর্য গ্রহণের এই সময়টা কেটে গেলে আপনার এই সমস্ত নেতিবাচক শক্তি, শরীরের উপরে পড়া সূর্য এর অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব রোগ জীবাণুর সবকিছু থেকে মুক্তি পেতে সূর্য গ্রহণের পরে স্বাস্থ্য লাভ করার জন্য স্নান করা খুবই জরুরী।

তাহলে বুঝতেই পারছেন যে, সূর্য গ্রহণ এর পরে সকলকে স্নান করে নেওয়াটা কতখানি যুক্তিযুক্ত। স্বাস্থ্য বজায় থাকার পাশাপাশি শাস্ত্র মেনে আপনি কিন্তু আপনার এবং আপনার পরিবারের সকলের জন্য শুভ কাজটাই করছেন।

সূর্যগ্রহণের সময় গর্ভবতী মহিলারা এইগুলি মোটেই করবেন না

সূর্যগ্রহণ শেষ হওয়ার পর আপনি আর কি কাজ করতে পারেন:

সূর্য সমগ্র পৃথিবীর উপরে তার প্রভাব বিস্তার করে, শুধুমাত্র সূর্য গ্রহণের পরে নিজের স্নান করাটা জরুরি নয়, তার সাথে সাথে বাড়িঘর সবকিছু কিন্তু পবিত্র করে তুলতে হয়। আর এই সূর্য গ্রহণের পরে আপনি স্নানের পাশাপাশি আর কোন কোন কাজ গুলি করতে পারেন, চলুন জানা যাক।

১) সূর্য গ্রহণের পর নিজেকে পরিশুদ্ধ করার পাশাপাশি ঘরবাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে নেওয়া উচিত এবং সমগ্র বাড়িতে গঙ্গাজল ছিটিয়ে পবিত্র করতে হয়।

২) সূর্য গ্রহণের পরে স্নান করে দরিদ্র ব্যক্তিদের দান করতে পারেন, এতে তাদের উপকার হওয়ার পাশাপাশি আপনি কিন্তু পুণ্য অর্জন করতে পারবেন। কেননা এমন কিছু যোগ অথবা তিথি থাকে, সেই সময়ে দান ধ্যান করলে আপনি দ্বিগুণ পুণ্য লাভ করতে পারেন।

৩) নেতিবাচক শক্তির প্রভাব দূর করার জন্য আপনি যখন ঘর মুছবেন, সেই ঘর মোছার জলে সামান্য পরিমাণ লবন মিশিয়ে দিতে পারেন। এই সামান্য জিনিস লবণই আমাদের ঘর থেকে নেতিবাচক শক্তির প্রভাব দূর করে দেয়।

৪) যেহেতু ঠাকুর ঘরের ঠাকুরের মূর্তিগুলি ঢাকা দেওয়া ছিল সূর্য গ্রহণের সময়, সেই কারণে ঠাকুর ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সূর্য গ্রহণের পরে দেবতা দের দর্শন করুন এবং তাদের পূজা অর্চনা করুন।

৫) যদি আপনার পক্ষে সম্ভব হয়, তাহলে কোন পবিত্র নদীতে স্নান করে পূর্বপুরুষ দের উদ্দেশ্যে তর্পণ করতে পারেন, যা তাদের পরলোকে অনেকখানি সহযোগিতা হবে।

৬) সূর্যগ্রহণ চলাকালীন রান্না খাওয়া সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ থেকে, তাই গ্রহণ কেটে যাওয়ার পরেই আপনার রান্না করা উচিত। গ্রহণের আগে তৈরি  খাবার কখনোই খাবেন না।

৭) সূর্য গ্রহণ কেটে যাওয়ার পর আপনার আশে পাশে থাকা কোন গরুকে ঘাস খাওয়াতে পারেন এটা কিন্তু একটা শুভ কাজ।

৮) যেহেতু সূর্য গ্রহণ চলাকালীন কোনরকম শুভ কাজ অথবা নতুন কাজ করতে নেই। তাই সূর্য গ্রহণ কেটে গেলে আপনি সেই সমস্ত শুভ কাজ অথবা কোন নতুন কাজে হাত দিতে পারেন বা সম্পন্ন করতে পারেন।

নিরাপদে সূর্যগ্রহণ দেখুন এই সহজ পদ্ধতিতে

সূর্যগ্রহণ খুবই কম সময়ই হয়। আর এই কম সময়ে আমাদের সকলের উপরে খুব বেশি মাত্রায় প্রভাব বিস্তার করে। যেহেতু কেতু সূর্যকে সম্পূর্ণ রূপে গ্রাস করে। সেই কারণে সূর্যের সমস্ত ক্ষতিকর  রশ্মি পৃথিবীপৃষ্ঠে এসে আছড়ে পড়ে।

এক্ষেত্রে সমগ্র প্রাণীকুলের উপরে একটা নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করেই। রোগ জীবাণুর পরিমাণ বাড়তে থাকে, আর সেই কারণে এমন কিছু বিধি-নিষেধ ও নিয়ম রয়েছে, যেগুলি মেনে চললে এই সূর্য গ্রহণের সময় আপনি যেমন থাকবেন সুস্থ্য, স্বাভাবিক।

সূর্য গ্রহনের পরেও কিন্তু এমন কিছু নিয়ম রয়েছে যেগুলি মেনে চললে আপনি সমস্ত রকম নেতিবাচক প্রভাব থেকে নিজেকে এবং নিজের পরিবারের সকল সদস্যকে বের করে আনতে পারবেন। এর সাথে সাথে এমন কিছু পুণ্যের কাজও রয়েছে, যেগুলি করে আপনি পুণ্যও অর্জন করতে পারবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top