চন্দ্রগ্রহণ 2023: চন্দ্রগ্রহণের সময় কি করবেন আর কি করবেন না? জেনে নিন

আমাদের সকলের কাছে সূর্য, চন্দ্র অর্থাৎ চাঁদ অনেকখানি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। এদের প্রভাব পৃথিবীতে এবং আমাদের শরীরে সরাসরি বিস্তার করে।

হিন্দু ধর্ম অনুসারে চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহণ কে ঘিরে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মতামত ও কুসংস্কার। অনেক কিছুই করতে বারণ করা হয় এই চন্দ্রগ্রহণের সময়। আবার অনেকেই এই বিষয়টিকে কুসংস্কার বলে একেবারেই মানতে চান না। বর্তমান সময়ে আধুনিক যুগে অনেকেই এই চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহণ নিয়ে বেশি মাথা ঘামান না। তারা মনে করেন এটা একটা প্রাকৃতিক ঘটনা। এ নিয়ে অত বেশি বিধিনিষের মানার কোন প্রয়োজনই নেই।

আবার কিছু কিছু বিষয় একেবারেই কুসংস্কার বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ এগুলো কোন কুসংস্কার নয়, এর পিছনে কোন বৈজ্ঞানিক কারণ ও যুক্তি তো রয়েছেই। তাই কোন কাজ এই সময় করা একদমই উচিত না সেগুলি সম্পর্কেও জানা দরকার।

চন্দ্রগ্রহণের সময় কি করবেন আর কি করবেন না? জেনে নিন
চন্দ্রগ্রহণের সময় কি করবেন আর কি করবেন না? জেনে নিন

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কে কিছু কথা এবং এই সময় কি করবেন আর কি করবেন না সে সম্পর্কে:

অমাবস্যা, পূর্ণিমা আবার অমাবস্যা, পূর্ণিমা এভাবেই চাঁদের যে ষোলকলা পূর্ণ এবং চাঁদের যে চক্র সেটা আমাদের শরীরের সাথে বিশেষভাবে সম্পর্ক যুক্ত। সেই জন্যই চন্দ্রগ্রহণের সময় কিছু কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হয় এবং খেতে বারণ করা হয়। এই সময় বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাস, নানা রকম ক্ষতিকর তরঙ্গ বিকিরণ হয়, যা সরাসরি আমাদের শরীরকে প্রভাবিত করতে পারে।

আমরা আগেই জেনেছি যে সূর্যগ্রহণ অথবা চন্দ্রগ্রহণ যাই হোক না কেন, তার প্রভাবে বাতাসে নানা প্রকার ক্ষতিকর পদার্থের বিকিরণ ঘটে আর এই সময় খোলা খাবারেও ক্ষতিকর পদার্থ মিশতে পারে। যেগুলো খাওয়ার পরে আমাদের শরীরের জন্য তা কখনোই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তবে খাবার ফেলে দেওয়া বা অন্যান্য আরো যেসব নিয়ম প্রচলিত রয়েছে, সেগুলি কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়। আপনি এমন কিছু কাজ করা থেকে বিরত থাকুন, তবে বৈজ্ঞানিক যুক্তি অনুযায়ী চন্দ্রগ্রহণের সময় এমন কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো করা থেকে আপনাকে বিরত থাকতে হবে।

সূর্যগ্রহণের সময় কি করবেন আর কি করবেন না, জানুন

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, কোন কাজ গুলি করতে পারবেন না চন্দ্র গ্রহণের সময়:

১) নতুন কাজের সূচনা নয়:

চন্দ্রগ্রহণ যখন চলবে তখন নতুন কোন কাজ করা উচিত নয়। নতুন কোন কাজ অথবা শুভ কাজ শুরু করলে সেটা কখনোই শুভ বলে মনে করা হয় না, যা কিনা প্রাচীনকাল থেকে মেনে চলছেন সকলেই।

২) রান্না করা খাবার খাওয়া যাবে না:

চন্দ্র গ্রহনের আগে যে খাবার রান্না করা ছিল সেই খাবার কিন্তু চন্দ্র গ্রহণের সময় অথবা চন্দ্রগ্রহণের পরে খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। এমনকি চন্দ্রগ্রহণের কিছুক্ষণ আগেও সেটা খাওয়া উচিত নয়।

কারণটা কিন্তু আমরা আগেই জেনেছি যে, ক্ষতিকর পদার্থের বিকিরণের ফলে খাবারের সেই ব্যাকটেরিয়া মিশে যেতে পারে।

৩) ছোট শিশুদের খেয়াল রাখুন:

চন্দ্রগ্রহণের সময় ছোট শিশুদের অর্থাৎ যারা ১৫ বছরের নিচে রয়েছে সেই সমস্ত বাচ্চাদের জন্য বেশি সতর্ক থাকতে হবে। এমনকি যদি সেই বাচ্চা বাইরে যেতে বায়না করে, তাহলেও তাকে ঘরের বাইরে যেতে দেওয়া যাবে না কোনমতেই।

এর পাশাপাশি শিশুদের এই সময় কোন ধারালো অথবা ধাতব বস্তুর সঙ্গে খেলা করতে দেবেন না। এর ফলে কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

চন্দ্রগ্রহণের সময় গর্ভবতীদের সতর্ক থাকতে বলছেন বিজ্ঞানীরা

৪) শরীরে তেল মাখা যাবে না:

শরীরে তেল মাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের ত্বকের জন্য ভালো, তবে চন্দ্র গ্রহণের সময় কোন মতে কিন্তু শরীরে তেল মাখা যাবে না। এতে স্কিনের অনেক রকমের ক্ষতি হতে পারে। তবে চন্দ্রগ্রহণের আগে অর্থাৎ কয়েক ঘন্টা আগে স্নান করে নিতে পারেন।

৫) জন্ম কুণ্ডলীতে চন্দ্র দোষ:

যে সমস্ত ব্যক্তিদের জন্ম কুণ্ডলীতে চন্দ্রদোষ আছে তারা এই সময় একেবারেই সতর্ক থাকবেন। এই সময় বাইরে কোথাও না যাওয়াই ভালো, এক জায়গায় দাঁড়িয়ে যান এবং চন্দ্রগ্রহণ দেখুন।

৬) শারীরিক মিলন:

চন্দ্র গ্রহণ চলাকালীন যেমন আরো অন্যান্য কাজগুলি করা থেকে বিরত থাকতে হবে, তেমনি এই সময় শারীরিক মিলন করাটাও কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য একেবারেই ভালো নয়। কারণ শারীরিক মিলনের একটা উপযুক্ত সময় আছে।

আর সেই সময়টা শারীরিক মিলন শরীরের জন্য উপযুক্ত, তবে চন্দ্রগ্রহণটা কোনভাবেই স্বাস্থ্যকর নয়, কারণ আগেই বলেছি চাঁদের সাইকেলের সাথে আমাদের শরীরের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।

৭) গর্ভবতী মহিলাদের সর্তকতা:

চন্দ্রগ্রহণ হোক অথবা সূর্যগ্রহণ, এই সময়টাতে গর্ভবতী মায়েদের বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়। এই সময় ঘরে থাকাই সবথেকে ভালো তাদের অনাগত সন্তানের জন্য।

আসলে বৈজ্ঞানিক মত অনুযায়ী গ্রহণের সময় নানান ধরনের ক্ষতিকর তরঙ্গের বিকিরণ ঘটে, যা গর্ভস্থ সন্তানের শরীরে গিয়ে ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। যেটা আপনার শরীরের জন্য এবং বাচ্চার জন্য খুবই বিপদজনক, তাই ঘরে থেকেই চন্দ্রগ্রহণ দেখুন।

৮) খালি চোখে চন্দ্র গ্রহন দেখা উচিত নয়:

খালি চোখে একেবারেই চন্দ্রগ্রহণ দেখা উচিত নয়। দেব-দেবীদের মূর্তিতে স্পর্শ করা যাবে না।

৯) গাছ গাছালি স্পর্শ করতে নেই:

চন্দ্র গ্রহণের সময় তুলসী গাছ সহ আরো অন্যান্য গাছ-গাছালি স্পর্শ করা উচিত নয়। এর ফলে আমাদের শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।

১০) চুল দাড়ি কাটতে নেই, মল-মূত্র ত্যাগ করতে নেই:

চন্দ্রগ্রহণের সময় চুল, দাড়ি কাটা যাবে না, দাঁত পরিষ্কার করা যাবে না, অথবা চুল আঁচড়ানো যাবে না। এর পাশাপাশি মল, মূত্র ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকুন।

এবার তাহলে জানা যাক, চন্দ্রগ্রহণের সময় আপনি কোন কোন কাজ গুলি করতে পারবেন:

১) রান্না করা খাবার এ দিন তুলসী পাতা:

বাড়িতে যদি রান্না করা খাবার থাকে, তাহলে সেগুলি ফেলে না দিয়ে আগে থেকেই সেই খাবারে কয়েকটা তুলসী পাতা দিয়ে রাখুন, বৈজ্ঞানিক ভিত্তি অনুযায়ী তুলসী অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল রূপে কাজ করে, তাই খাবার কে রাখবে ব্যাকটেরিয়া মুক্ত। যার ফলে সেই খাবার খেলে কোনরকম ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাই নেই।

২) প্রার্থনা করুন:

কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কাছে আমাদের কোন শক্তিই কাজে আসে না, খুবই নগণ্য সেগুলি, তাই এমন কোন প্রাকৃতিক ঘটনাতে আপনি একটাই কাজ করতে পারেন সেটা হল ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা। চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদ, পৃথিবী ও সূর্য একই সরলরেখায় থাকে।

আর এই সময় কিন্তু বড় পাথরগুলির পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসার সম্ভাবনা থেকেই যায়। যেটা পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকেও ঠেলে দিতে পারে, তাই এই সময় প্রার্থনা করতে বলা হয়। ঈশ্বর যেন এই পৃথিবী কে রক্ষা করেন, এই দুর্যোগ থেকে। কোনরকম বিপদ যেন কাউকে ছুঁয়ে যেতে না পারে।

৩) চন্দ্রগ্রহণ এর আগে বা পরে স্নান করুন:

চন্দ্রগ্রহণ হোক অথবা সূর্যগ্রহণ এই সময় প্রার্থনা করার জন্য আপনাকে শুদ্ধ তো হতেই হবে। এর পাশাপাশি আপনার শরীর ভালো রাখার জন্য এবং স্কিনের জন্য গ্রহণের সময় স্নান ও তেল মালিশ খুবই অস্বাস্থ্যকর।

তাই আগে বা পরে স্নান করতে পারেন অর্থাৎ গ্রহণ লাগার সময় বাতাসে নানা রকম ক্ষতিকর পদার্থ আপনার ত্বকে লাগল যেগুলি, সেগুলো পরিষ্কার হয়ে যাবে যদি গ্রহণের পরে স্নান করেন।

৪) চন্দ্রগ্রহণ উপভোগ করুন:

চন্দ্রগ্রহণ খুবই দুর্লভ একটি দৃশ্য। যা সবসময় দেখা যায় না, আর অত্যন্ত রোমাঞ্চকর দৃশ্য বলেই বাড়ির যে জায়গা থেকে ভালো দেখা যায় সেই জায়গায় বসে দেখতে পারেন।

মন দিয়ে উপভোগ করুন এই দুর্লভ দৃশ্য। আশা করি সুরক্ষিত থেকে এবং দূর থেকে চোখের নিরাপত্তা বজায় রেখে চন্দ্রগ্রহণ দেখতে আপনার ভীষণ ভালো লাগবে।

৫) দান ধ্যান করুন:

দান ধ্যান করা খুবই পূণ্যের কাজ, আর সেই পূণ্যের কাজ যদি কোন ভাল তিথিতে পড়ে যায় তাহলে তো আর কথাই নেই। সেই কারণে চন্দ্র গ্রহণের সময়টা কিন্তু খুব কমই আসে। আর সেই অনুযায়ী এই দিনে কিছু দান ধ্যান করাটা আপনার জন্য অত্যন্ত পূণ্যের কাজ।

৬) চন্দ্রগ্রহণ কেটে যাওয়ার পরে পূজা অর্চনা:

স্বাভাবিক ভাবে এবং সুন্দর ভাবে চন্দ্রগ্রহণ কেটে যাওয়ার পর পৃথিবীতে কোন রকম ক্ষতি না হওয়ার কারণে বা উল্কা বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আপনি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাতে কখনোই ভুলবেন না। তাই চন্দ্রগ্রহণ কেটে গেলে স্নান সেরে শুদ্ধ হয়ে দেব-দেবী দের উদ্দেশ্যে পূজা অর্চনা করতেই পারেন, এটাও কিন্তু খুবই ভালো কাজ।

এ সমস্ত বিষয় গুলির মধ্যে সবগুলোই কিন্তু বৈজ্ঞানিক যুক্তিযুক্ত। এর সাথে আমাদের শরীরের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। সেই কারণেই পৃথিবীতে চাঁদের উপরে নির্ভর করেই জোয়ার ভাটা হয়। আর আমাদের শরীরেও অনেক চড়াই-উৎরাই চলে।

সেই জন্যই চন্দ্রগ্রহণের সময় এগুলি মেনে চলা সকলের জন্য খুবই যুক্তিসঙ্গত। তবে যে সমস্ত কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে, সেগুলো আপনি নাও মানতে পারেন, বৈজ্ঞানিক যুক্তি দিয়েই সেই নিয়ম কানুন গুলি মানতে পারেন।

আর বর্তমানে সকলেই কমবেশি কুসংস্কার আর বিজ্ঞান নিয়ে বেশ কিছুটা ধারণা রাখেন, সেই ধারণা অনুসারে বিশ্বাস করুন। তবুও চন্দ্রগ্রহণের সময় নিজের এবং নিজের পরিবারের সকল সদস্যের সুরক্ষা প্রদান করাটা জরুরী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top