সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প 2023: পশ্চিমবঙ্গের একটি বৃহৎ প্রকল্প যার সম্পর্কে জেনে রাখা দরকার

সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প: পশ্চিমবঙ্গের একটি বৃহৎ প্রকল্প যার সম্পর্কে জেনে রাখা দরকার
সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প: পশ্চিমবঙ্গের একটি বৃহৎ প্রকল্প যার সম্পর্কে জেনে রাখা দরকার

প্রকল্পের নাম : সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প

প্রকল্পের দপ্তর বা বিভাগের নাম : শ্রম দপ্তর

এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য কি :

রাজ্যের অসংগঠিত শ্রমিকদের বার্ধক্যজনিত দুর্দশা, কঠোর জীবন সংগ্রাম, শারীরিক অক্ষমতা ও অসমর্থতা, সন্তান প্রতিপালনে অসুবিধা, রোগ নিরাময় এবং আরোগ্যলাভের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা-এইসব সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি তাঁদের আয় সুনিশ্চিত করা এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

সকল অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক বা কর্মীকে সমান সুবিধা দিতে এবং সুবিধা পাওয়ার পদ্ধতিকে সহজতর করতে পূের্ব প্রচলিত পঁাচটি পরিকল্প বা স্কিমকে একত্রিত করে ‘সামাজিক সুরক্ষা যোজনা- ২০১৭’ (এসএসওয়াই ২০১৭) নামে একটি সম্পূর্ণ নতুন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প বা যোজনা চালু করা হল।

এই প্রকল্পের মধ্যে বর্তমানে অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত ভবিষ্যনিধি পরিকল্প, পশ্চিমবঙ্গ অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা পরিকল্প এবং পশ্চিমবঙ্গ বিড়ি শ্রমিক কল্যাণ পরিকল্প সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে।

নির্মাণ ও পরিবহণ শ্রমিকদের জন্য চালু থাকা সামাজিক সুরক্ষা পরিকল্প দুটি সংশোধন করে নতুন যোজনায় প্রাপ্ত সুবিধাগুলি পুরোনো পরিকল্পগুলো থেকে বাতিল করা হয়েছে। অন্যান্য সুবিধাগুলি চলতে থাকবে।

সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প
সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প

এই যোজনাটি শ্রম দপ্তর দ্বারা অসংগঠিত শিল্প ও স্বনিযুক্ত পেশার অনুমোদিত তালিকার প্রত্যেক যোগ্য অসংগঠিত শ্রমিকের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র প্রযোজ্য।

উপরোক্ত প্রকল্পগুলিতে ৩১/৩/১৭ পর্যন্ত নথিভুক্ত সমস্ত শ্রমিককেই এই নতুন যোজনায় ইতিমধ্যেই নথিভুক্ত করা হয়েছে। ২০১৭-র ৩ এপ্রিল থেকে এটি কার্যকর হচ্ছে।

এই প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রগুলি হল-

১.  ভবিষ্যনিধি

২.  স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ

৩.  মৃত্যু ও শারীরিক অসমর্থতা

৪.  শিক্ষা

৫.  প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা বিকাশ।

আসুন এবার দেখে নিন এই ক্ষেত্রগুলির মধ্যে কি রয়েছে আর কিভাবে এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারবেন। এই ক্ষেত্রগুলিকে ভালো ভাবে নিচে বোঝানো হয়েছে।

১. ভবিষ্যনিধি : 

প্রতি মাসে শ্রমিক/কর্মীরা ২৫ টাকা করে জমালে, রাজ্য সরকার ৩০ টাকা করে তাঁদের তহবিলে জমা করবে এবং সাধারণ প্রভিডেন্ট ফান্ড-এর হারে বার্ষিক সুদ দেবে রাজ্য সরকার।

৬০ বছর হয়ে গেলে অথবা কোনও কারণে শ্রমিক/কর্মী এই সঞ্চয় প্রকল্প না চালাতে চাইলে বা মৃত্যুর কারণে অ্যাকাউন্ট চালু না থাকলে সুদ-সহ সঞ্চিত টাকা তুলে নিতে পারেন, অথবা তাঁর মনোনীত ব্যক্তিকে বা বৈধ উত্তরাধিকারিকে ফেরত দেওয়া হবে।

২. স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ : 

অসংগঠিত শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার অধীনে এই প্রকল্পের কোনও সুবিধাভোগী গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের অন্তর্বিভাগ ও বহির্বিভাগে চিকিৎসার সুবিধা নিতে চাইলে বছরে সর্বাধিক ২০ হাজার টাকার চিকিৎসা-সংক্রান্ত আর্থিক সহায়তা করা হবে।

রোগ পরীক্ষা ও ওষুধের দাম এবং হাসপাতালে ভর্তির খরচ সম্পূর্ণ টাই পাওয়া যাবে। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হলে করদি্ম বস নষ্ট হওয়ার কারণে প্রথম ৫ দিনের জন্য ১ হাজার টাকা এবং পরবর্তী দিনগুলোতে ১০০ টাকা হারে আর্থিক সহায়তা পাবেন কিন্তু একবারে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে।

সুবিধাপ্রাপকরা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি হতে পারবেন কিন্তু এই সংক্রান্ত ব্যয় বছরে ২০ হাজার টাকার বেশি দেওয়া হবে না। উপভোক্তার বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের অপারেশনের ক্ষেত্রে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাবে।

সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প
সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প

৩. মৃত্যু ও শারীরিক অসমর্থতা : 

দুর্ঘটনার কারণে উপভোক্তার মৃত্যু হলে ২ লক্ষ টাকা এবং সাধারণ মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা উপভোক্তার মনোনীত ব্যক্তিকে দেওয়া হবে। উপভোক্তার ন্যূনতম ৪০% শারীরিক অসমর্থতা থাকলে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে।

দুর্ঘটনার কারণে ২টি চোখ, ২টি হাত ও ২টি পায়ের কর্মক্ষমতা নষ্ট হলে যথাক্রমে ২ লক্ষ টাকা এবং ১টি চোখ, ১টি হাত, ১টি পায়ের কর্মক্ষমতা নষ্ট হলে ১ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া হবে।

৪. শিক্ষা : 

শ্রমিক কর্মীদের সন্তানদের শিক্ষাগত উন্নয়নের জন্য আর্থিক সহায়তা করা হয়। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে যথাক্রমে ৪ ও ৫ হাজার টাকা, আইআইটি ও স্নাতক স্তরে ৬ হাজার টাকা, পলিটেকনিক ও স্নাতকোত্তর স্তরে ১০ হাজার টাকা, মেডিক্যাল বা ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ৩০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে।

দুটি কন্যাসন্তান পর্যন্ত স্নাতকস্তর শেষ করা অবধি অবিবাহিত থাকলে প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। ‘স্বামী বিবেকানন্দ মেরিট-কাম-মিনস স্কলারশিপ স্কিম’-এর সুবিধা যারা পাবে তারা এই সুবিধা পাবে না।

রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদিত এবং সংবিধিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে যারা পড়াশুনা করবে এবং সরকারের অন্য কোনও বৃত্তি বা প্রকল্পের সুবিধা নিচ্ছে না তারাই এই সুবিধা নিতে পারবে।

৫. প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা বিকাশ: 

শিল্পে কর্মসংস্থান ও স্বনিযুক্তির পথ দেখাতে প্রকল্পের সুবিধাপ্রাপক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিখরচায় বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পশ্চিমবঙ্গ সোসাইটি ফর স্কিল ডেভেলপমেন্ট উৎপাদনভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেবে।

এই প্রকল্পে কারা আবেদন করতে পারবেন:

অসংঠিত শ্রমিক এবং পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হতে হবে। বয়স হতে হবে ১৮-৬০ বছরের মধ্যে। পারিবারিক মাসিক আয় ৬৫০০ টাকার বেশি হবে না।

অসংগঠিত ক্ষেত্র শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদ-এর অধীনে নিবন্ধীকৃত কর্মীর শনাক্তকরণের জন্য প্রদত্ত সামাজিক মুক্তিকার্ড প্রাপকরা এই সুবিধা পাবেন। নতুন করে যাঁরা নথিভুক্ত তাঁদেরও সামাজিক মুক্তিকার্ড দেওয়া হবে।

সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প
সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প

কোথায় যোগাযোগ করবেন এই প্রকল্পের জন্য :

পশ্চিমবঙ্গ অসংগঠিত ক্ষেত্র ‘শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদ’ নোডাল এজেন্সি হিসাবে এটির পরিচালনা ও রূপায়ণের দায়িত্বে। ব্লক, পৌরসভা অথবা পৌর নিগমের অফিসে অথবা বিশেষ শিবিরে নাম নথিভুক্ত করতে হবে।

আশা করি আমাদের এই তথ্য আপনাদের সাহায্য করবে, যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই সকলের থাকে শেয়ার করবেন। আর এই ধরণের আরো তথ্যের জন্য নজর রাখবেন আমাদের ওয়েবসাইটে। ধন্যবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top