মৃত্যু ওয়ারেন্ট কি? এই মৃত্যুদণ্ডের জন্য আইন ও নিয়ম কি?

Death Warrant Law in Bengali: জানুন মৃত্যু ওয়ারেন্ট (Death Warrant) কি এবং এই মৃত্যুদণ্ডের জন্য আইন কি? কিভাবে আর কেন দেওয়া হয় মৃত্যু ওয়ারেন্ট? সব কিছুর আইন জেনে নিন।

কোন অপরাধের বিরুদ্ধে আইন যখন কোন শাস্তি প্রদান করে থাকে, কোন অভিযুক্ত এর জন্য, তাহলে তাকে কোন রকম ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেপ্তার করা সম্ভব নয়।

মৃত্যু ওয়ারেন্ট এর আইন ও নিয়ম - Death Warrant Law in Bengali
মৃত্যু ওয়ারেন্ট এর আইন ও নিয়ম – Death Warrant Law in Bengali

তাই ওয়ারেন্ট এর মাধ্যমে সেই দোষী ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে তাকে আদালতে হাজির করা, তার শাস্তি প্রদান করা সম্ভব হয়।

মৃত্যু ওয়ারেন্ট অথবা ডেথ ওয়ারেন্ট এবং এর প্রক্রিয়া:

“মৃত্যু ওয়ারেন্ট” অথবা “ডেথ ওয়ারেন্ট” বা “ব্লক ওয়ারেন্ট” জেলের কার্যালয়ের অধীক্ষক কে সম্বোধিত করা ওয়ারেন্ট হয়ে থাকে। এই ওয়ারেন্ট সেই অপরাধীকে চিহ্নিত করার জন্য দেওয়া হয়, যার জন্য আদালত দ্বারা মৃত্যুর সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। তার সাথে সাথে এই ওয়ারেন্ট এমন ব্যক্তিকে, ব্যক্তির বিষয়ে কিছু তথ্য উল্লেখ করে।

সরল ভাষায় বলতে গেলে, মৃত্যু ওয়ারেন্ট একটি আদালত দ্বারা জারি করা হয় এবং জারি করার নোটিশ এর একটি প্রকার যা কিনা একজন দোষী যাকে মৃত্যুর সাজা দেওয়া হয়েছে, তার ফাঁসির সময় আর শাস্তির জায়গা ঘোষণা করা হয়। এটা খেয়াল রাখা জরুরী যে, আদালত দ্বারা জারি করা ডেথ ওয়ারেন্ট অথবা মৃত্যু ওয়ারেন্ট জেলা প্রশাসনকে সম্বোধিত করে থাকে।

অভিযুক্ত অথবা দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তির ফাঁসি দেওয়ার পর কয়েদির মৃত্যু সম্বন্ধিত সার্টিফিকেট কোর্ট এ ফেরত পাঠানো হয়। এই সমস্ত ডকুমেন্টস এর সাথে কয়েদির ওয়ারেন্ট ও ফেরত দেওয়া হয়।

কোন মামলাতে দোষী সাব্যস্ত করা ব্যক্তির ফাঁসির সাজা কখন এবং কোন সময় দেওয়া হবে এটা নির্ণয় করার জন্য এই মৃত্যু ওয়ারেন্ট আদালত দ্বারা জারি করা হয়। এর জন্য এটা জরুরি যে, সর্বপ্রথম ব্যক্তিকে ফাঁসির সাজা দেওয়া হবে, আর এই সম্বন্ধে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে জর্জ এর সমক্ষে অনুরোধ পত্র দায়ের করা হবে।

এই অনুরোধ পত্রে উপজেলা প্রশাসন দ্বারা ফাঁসি দেওয়ার দিন তথা সময় এর পরিষ্কার উল্লেখ করা থাকবে। যার উপরে জর্জ মোহর / সিল লাগাতে পারেন, আর এর পর এটা মনে করা হয় যে, ফাঁসির সাজার তিথি এবং সময় নির্ণয় করা হয়েছে।

যখনই এই ডেট ওয়ারেন্ট জেলে পৌঁছায় তখন প্রশাসন ফাঁসি দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দেয়। সাধারণত এর সাথে ফাঁসির শাস্তি পাওয়া অভিযুক্ত দের পরিবার-পরিজন কেও এর মধ্যে দিয়ে জানানো হয়ে থাকে যে, অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে।

ডেথ ওয়ারেন্ট কে কার্যকর করা এবং আদালতে আয়োজিত করা হয়, যিনি সর্বপ্রথম এই মামলাতে মৃত্যুর সাজার আদেশ দিয়ে ছিলেন। ওয়ারেন্টের সম্বন্ধে বিধান প্রক্রিয়া সংহিতা তে পাওয়া যেতে পারে।

আর সংহিতা তে উপস্থিত ফরম নম্বর 42 ওয়ারেন্টের সম্বন্ধে আসে। এই ফর্ম এ সেই ব্যক্তির নাম উপস্থিত থাকে, যাকে অপরাধের জন্য মূল অভিযুক্ত হিসেবে সাজা শোনানো হয়েছে। এছাড়াও এতে ওয়ারেন্টের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডের সময়, দিন আর স্থান এর বর্ণনাও করা হয়।

এই ফর্মে লেখা থাকে যে, আসলে কতক্ষণ পর্যন্ত ফাঁসির আসামিকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে রাখা হবে ? ওয়ারেন্ট অনুসারে, যতক্ষণ না পর্যন্ত সেই ফাঁসির আসামির মৃত্যু হয়ে যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখতে হবে, (আর এটি সিআরপিসি / CrPC এর ফরম নম্বর 42 এর উপর ছাপা তিনটি বাক্যে, দ্বিতীয় ভাগের অন্তর্গত)।

এই ধরনের বিশিষ্টতা এই জন্য প্রয়োজন যে, অভিযুক্ত কয়েদির তার জীবন এবং মৃত্যু নিয়ে অনাবশ্যক অনুমান থেকে বাঁচানো যেতে পারে, যা তার জন্য গুরুতর প্রতারণা হতে পারে।

ডেথ ওয়ারেন্ট নিয়ে স্পষ্টতার অভাব:

আদর্শ রূপে একজন কয়েদির দ্বারা সমস্ত রকম আইনি পদক্ষেপগুলি সমাপ্ত করার পর, তবেই ওয়ারেন্ট কার্যকর হতে হবে। তবুও আইনে এর প্রক্রিয়া নিয়ে খুবই কম স্পষ্টতা উপস্থিত রয়েছে।

আর ফল স্বরুপ রাজ্য সরকারের তরফ থেকে কার্যত এই বিষয়টি নিয়ে কোন স্পষ্টতা দেখানো হয় নি যে, কখন ডেথ ওয়ারেন্টের প্রক্রিয়ার কার্যকর করা যেতে পারে।

সাধারণত মৃত্যু ওয়ারেন্ট, ফাঁসি দেওয়ার তারিখ নির্ণয় করে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন মামলাতে জেল আধিকারিক দের দ্বারা ওয়ারেন্ট কে লম্বা সময় পর্যন্ত স্থগিতও রাখা হয়।

এছাড়াও মৃত্যুর সাজা পাওয়া কয়েদির শারীরিক আর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও ফাঁসি দেওয়ার আগে খেয়াল রাখতে হবে অবশ্যই, আর অভিযুক্তকে তখনই ফাঁসি দিতে হবে, যখন জেলের আধিকারিক এই বিষয় নিয়ে সন্তুষ্ট বা নিশ্চিত থাকতে পারবেন যে, অভিযুক্ত ফাঁসির আসামী সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে।

এছাড়াও এমন ব্যক্তির থেকে কোনো রকমের কাজ বা শ্রম জনিত কোন কিছু করানো যাবে না। আর তার স্বাস্থ্যের পরীক্ষা দিনে ২ বার করতে হবে। একটি মৃত্যু ওয়ারেন্ট কোর্টের সিল আর তারিখের সাথে ওয়ারেন্ট অফ এক্সেকিউশন অফ এ সেন্টেন্স অফ ডেথ” শীর্ষকের সাথে আসে।

কোন ব্যক্তিকে ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্য ওয়ারেন্ট কে কার্যকর করা অথবা ওয়ারেন্ট শুরু করার জন্য, আগে এগোনোর আগে এটা সুনিশ্চিত করতে হবে যে, সরকারের দায়িত্ব হবে এটা, সেই দোষী ব্যক্তি অথবা অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছে উপস্থিত সমস্ত আইনি বিকল্প ব্যবহার করা হয়েছে।

অনেক সময় আসামির ফাঁসির দিন, তারিখ, সময়, পরিবর্তন হয়ে থাকে। তার সাথে সাথে সেই আসামির পরিবারের মানুষ জন দের এই বিষয়ে অবগত করানো হয় যে, এই অভিযুক্ত ব্যক্তির ফাঁসি কোন দিন, কোন সময় এবং কোন জায়গায় দেওয়া হবে।

জেল হেফাজতে থাকা কালিন অন্যান্য অভিযুক্ত কয়েদিরা যে ভাবে পরিশ্রম করে থাকে, ফাঁসির আসামিরা কিন্তু তেমন পরিশ্রম করে না। আর তার সাথে সাথে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভাবে, অর্থাৎ বলা যেতে পারে দিনে কমপক্ষে দুইবার তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।

কেননা অসুস্থ থাকাকালীন কোন কয়েদিকে ফাঁসি দেওয়া যাবে না। এই কারনে ফাঁসি দেওয়ার জন্য কয়েদি কে শারীরিক ভাবে, মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ রূপে সুস্থ থাকতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top