মহিলা স্ব-শক্তিকরণ আইনি নিয়ম কানুন ও প্রয়োজনীয়তা

Womens Empowerment Laws in Bengali: মহিলা স্ব-শক্তিকরণ কি? এর প্রয়োজনীয়তা কি? | মহিলা স্ব-শক্তিকরণ করার জন্য সরকারি প্রকল্পগুলি কি কি? | জানুন মহিলা স্ব-শক্তিকরণ করার সমস্ত আইনি নিয়ম কানুন ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এখানে।

মহিলা স্ব-শক্তিকরণ এর সম্বন্ধে জানার আগে আমাদের সবার প্রথমে জানতে হবে যে, স্ব-শক্তিকরণ বলতে কী বোঝায়? স্ব-শক্তিকরণ হল এমন একটি ক্ষমতা, যে ক্ষমতার মধ্যে ব্যক্তির সেই যোগ্যতা আসে, যার মধ্য দিয়ে তার নিজের জীবন এর সাথে জড়িত সমস্ত রকম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, নির্ণয় নিজে থেকেই নিতে পারবেন। আর নিজের সম্বন্ধে উচিত এবং অনুচিত বিচার ও চিন্তাধারা রাখতে পারবেন।

মহিলা স্ব-শক্তিকরণ এর মধ্যে এটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, কোন মহিলা তার নিজের ইচ্ছা অনুসারে পরিবার এবং সমস্ত রকম মায়ার বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে নিজের জীবন সম্পর্কে বিভিন্ন রকমের নির্ণয় অথবা নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারবেন।

মহিলা স্ব-শক্তিকরণ আইনি নিয়ম কানুন ও প্রয়োজনীয়তা
মহিলা স্ব-শক্তিকরণ আইনি নিয়ম কানুন ও প্রয়োজনীয়তা

সমাজের নারীদের আর্থিক স্ব-শক্তিকরণ তাদের নিজের জন্য সময় এবং আরো অন্যান্য সমস্যার সমাধান করার জন্য তারা নিজের ভালো করার উদ্দেশ্যে যে কোনো রকমের সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন এবং মহিলাদের জন্য এটা প্রযোজ্য রয়েছে।

ভারতের মহিলা স্ব-শক্তিকরণ এর প্রয়োজনীয়তা:

প্রাচীনকাল অনুসারে ভারতীয় মহিলাদের সম্মান এর স্তর বর্তমানে কিছুটা হলেও কমে গিয়েছে। তাছাড়া আধুনিক যুগে কিছু ভারতীয় মহিলা বিভিন্ন রকমের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক তথা প্রশাসনিক পদে যুক্ত রয়েছেন। আর সেই পদ সেই মহিলা খুবই ভালো ভাবে পালন করার ক্ষমতা রাখেন।

তবুও সামান্য গ্রামীণ মহিলাদের ক্ষেত্রে আজও নিজের ঘরে বন্দী অবস্থায় থাকার জন্য বাধ্য করা হয়। তাছাড়া তাদের সামান্য স্বাস্থ্য সুবিধা, তার সাথে শিক্ষা এবং আরো অন্যান্য যে সমস্ত সুবিধা গুলি একটি মানুষের প্রয়োজন সেগুলো থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করা হয়।

শিক্ষার বিষয়ে বলতে গেলে, পুরুষদের তুলনায় মহিলারা অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছেন। ভারতে পুরুষদের শিক্ষা ৭৫.৭% যেখানে সেখানে মহিলাদের শিক্ষা ৬২%। আমাদের দেশে অনেক মহিলাই এমন রয়েছেন যারা একেবারেই নিরক্ষর বলতে গেলে।

আবার যদি কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষা উপলব্ধ হয়ে থাকে, সেখানেও কিন্তু কিছু দিন পর তাঁদেরকে শিক্ষাক্ষেত্র থেকে সরিয়ে নিয়ে বিবাহ দেওয়ার মতো ঘটনা নেহাত কম নয়। তার পরে একেবারে ঘরে বন্দি অবস্থায় তাদেরকে জীবন কাটাতে হয়।

ভারতের মহিলা স্ব-শক্তিকরণ এর বিষয়ে যে সমস্ত বাধা গুলি আসতে পারে:

ভারতীয় সমাজে বিভিন্ন রকমের রীতি-নীতি, নিয়ম কানুন এবং পরম্পরা যুক্ত রয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, পুরানো পরম্পরা, নিয়ম অনুসারে ভারতের মহিলা স্ব-শক্তিকরণ এর জন্য বাধা সৃষ্টি হয়েছে। মহিলাদের জীবনে চলার পথে এরকম অনেক বাধা সৃষ্টি হয়েছে, তার মধ্যে নিচে কিছু বাধা উল্লেখ করা হল:

১) সামাজিক মানদন্ড।

২) কর্ম ক্ষেত্রে শারীরিক শোষণ।

৩) পুরুষদের তুলনায় তাদেরকে অনেকটাই নিচু এবং ক্ষুদ্র হিসেবে গণ্য করা।

৩) অশিক্ষা।

৪) পরিশ্রম এর বদলে সমান বেতন প্রাপ্ত না হওয়া।

৫) বাল্যবিবাহ।

৬) কন্যা ভ্রুণ হত্যা।

৭) মহিলাদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধ।

ভারতের মহিলা স্ব-শক্তিকরণ এর জন্য সরকার দ্বারা যে সমস্ত প্রকল্প গুলি চালু করা হয়েছে:

১) ন্যাশনাল মিশন ফর এম্পাওয়ার্মেন্ট অফ ওম্যান।

২) বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও প্রকল্প

৩) কার্য মহিলা ছাত্রাবাস প্রকল্প।

৪) মহিলা হেল্পলইন প্রকল্প।

৫) অন স্টাফ সেন্টার প্রকল্প।

৬) সাধারণ গৃহ প্রকল্প।

৭) রাজীব গান্ধী রাষ্ট্রীয় অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্প।

৮) উজ্জ্বলা প্রকল্প।

৯) সাপোর্ট টু ট্রেনিং এন্ড এম্প্লয়মেন্ট প্রোগ্রাম ফর ওম্যান (Step)

১০) মহিলা শক্তি কেন্দ্র।

১১) মহিলাদের সুরক্ষার জন্য পঞ্চায়েতি রাজ্য প্রকল্প।

ভারতের মহিলা স্ব-শক্তিকরণ এর অগ্রাধিকার:

১) শ্রী শ্রী রবি শংকর জি এর কথা অনুসারে “যদি সামাজিক অবক্ষয় পারিবারিক হিংসা অত্যাচার আর আর্থিক স্বনির্ভরতা মত বিভিন্ন রকমের সমস্যা থেকে যদি মুক্তি পেতে চান তাহলে এর জন্য মহিলা স্ব-শক্তিকরণ এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে।”

২) ভারতীয় সংবিধান অনুসারে এ বিষয়ে মহিলাদের স্ব-শক্তিকরণ এর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে খুবই ভালো ভাবে। এরপরে মৌলিক অধিকার, মৌলিক কর্তব্য, আর রাজ্যের নির্দেশক সিদ্ধান্ত হতেও মহিলা এবং পুরুষদের সমান অধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

সংবিধান শুধুমাত্র মহিলাদের সমান অধিকার প্রদান করে থাকে না, এর পাশাপাশি রাজ্যের মহিলাদের পক্ষে সকরাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করার অধিকার দিয়েছে।

৩) ভারত মহিলাদের সমান অধিকার এবং তাদের উচিত সম্মান এর সুরক্ষা প্রদানের জন্য বিভিন্ন আন্তরাষ্ট্রীয় সম্মেলনে আর মানব অধিকার এর উপকরণ অনুসারে মহিলাদের নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে।

এর সাথেসাথে 1993 তে মহিলাদের বিরুদ্ধে যে বৈষম্যমূলক পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, সেটা একেবারে বন্ধ করার জন্য একটি বিশাল কনভেনশন ও করা হয়েছে।

৪) মহিলাদের জন্য ভারতে বৈষম্যমূলক এই বিষয়ে সমাপ্তির সমর্থনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশন আর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে যেমন ধরুন- দ্যা মেক্সিকো প্লান অফ একশন (1975), নরওয়ে ফরওয়ার্ড লুকিং স্ট্র্যাটেজি (1985), বেনজিং ঘোষণা আর প্লাটফর্ম ফর একশন 1995 এবং ইউ এন জি এ দ্বারা ডকুমেন্টগুলি প্রাপ্ত করা হয়েছে।

প্রাচীনকাল অনুসারে বর্তমান এখন অনেকটাই উন্নত নারীরা। তাদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই স্বাধীনভাবে নিতে পারেন। তার জন্য আইন রয়েছে এবং আইন খুবই কঠোর ভাবে এই আদেশ দিয়ে থাকে যে, সমস্ত রকম সামাজিক বৈষম্য মূলক পরিস্থিতিকে সরিয়ে দিয়ে মহিলারা তাদের অধিকার এবং আরো অন্যান্য সুবিধা গুলি ভোগ করতে পারবেন সমানভাবে পুরুষদের সাথে পাল্লা দিয়ে। তাছাড়া বর্তমানে এখন নারীরা কোন কাজেই পিছিয়ে নেই। সমানভাবে পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমস্ত কাজে অংশগ্রহণ করে থাকেন।

তার সাথে পরিবার সামলানো থেকে শুরু করে আরো সমস্ত রকম কর্মক্ষেত্রে তাদেরকে লক্ষ্য করা যায়। তাই এ ক্ষেত্রে সমান কর্মের জন্য সমান বেতন প্রাপ্ত হওয়া টা তার আইনি অধিকারের মধ্যে পড়ে।

একটা সময় যখন মেয়েদেরকে একেবারে বন্দি অবস্থায় জীবন কাটাতে হতো, এখন কিন্তু তার ঠিক বিপরীত। সেই কারণে এখনকার নারীরা অনেকটাই আধুনিক, অনেকটাই উন্নত এবং সমস্ত কাজে পারদর্শী হয়ে উঠতে পেরেছেন। শিক্ষা থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করা, বাল্যবিবাহ এমনকি সমস্ত রকম সুবিধা ও লাভ থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করা এখন অনেকটাই অতীত।

পরবর্তী ক্ষেত্রে মহিলাদের অধিকার নিয়ে আইন আরো বেশি কঠোর হবে এমনটা আশা করা যায়। সুন্দর স্বাভাবিক সমাজ, সুন্দর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, পরিবারের শান্তি সবকিছু বজায় রাখার জন্য মহিলাদের সমস্ত ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার এবং তার সাথে সমস্ত বিষয়ে তাদের কে অংশগ্রহণ করতে দেওয়ার যে অধিকার আছে সেটা থাকলে সবকিছু স্বাভাবিক ভাবেই সম্পন্ন হবে এমনটা লক্ষ্য করা যায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top