Kartik Puja 2023: কার্তিক ঠাকুর চিরকুমার কেন? জানুন পৌরাণিক কাহিনী

আপনি কি জানেন কার্তিক ঠাকুর চিরকুমার কেন? জানেন না? তাহলে আসুন জেনে নিন। কার্তিক পূজা নিয়ে বাংলায় বেশ তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। এইতো কদিন আগেই দুর্গাপুজো শেষ হয়ে কালীপুজো পার হয়ে কার্তিক পূজা চলে এলো।

কার্তিক ঠাকুর মায়ের সাথে একবার এসেও আবার একা একা পূজা নিতে চলে আসেন। সেই জন্যই অনেকে কথাই বলেন “কার্তিক ঠাকুর খুবই হ্যাংলা, একবার আসেন মায়ের সাথে, আবার আসেন একলা”।

তবে জানা যায় যে, কার্তিক ঠাকুর চিরকুমার, তা নিয়ে রয়েছে এক পৌরাণিক কাহিনী। তবে এখনো পর্যন্ত কোন সুন্দর দর্শন পুরুষের সঙ্গে তুলনা করা হয় কার্তিক ঠাকুরের, এমনই তার রূপ।

কার্তিক ঠাকুর চিরকুমার কেন? জানুন পৌরাণিক কাহিনী
কার্তিক ঠাকুর চিরকুমার কেন? জানুন পৌরাণিক কাহিনী

সন্তান কামনা করে অনেক দম্পতি কার্তিক পূজা করে থাকেন, কার্তিক ঠাকুরের মতো একটা পুত্র সন্তান পাওয়ার আশায়। এছাড়াও যারা সদ্য বিবাহিত তাদের সঙ্গে মজা করার পাশাপাশি কার্তিক পূজা করানোর জন্য তাদের বাড়িতে রাতের অন্ধকারে চুরি করে কার্তিক ঠাকুর ফেলে আসা হয়। কার্তিক মাসের সংক্রান্তিতে কার্তিক পূজা হয়ে থাকে ঘরে ঘরে।

তবে কথায় আছে কার্তিক বিয়ে করেননি, তিনি চিরকুমার কিন্তু কেন তিনি এমন “চিরকুমার” উপাধি পেলেন, সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না, এই নিয়ে প্রচলিত আছে বেশ কিছু লোককাহিনীও।

কার্তিক ঠাকুর চিরকুমার কেন?

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, কার্তিক ঠাকুর চিরকুমার কেন :

প্রতিটি দেব-দেবীদের একেকটি বিশেষত্ব থাকে, তেমনি কার্তিক ঠাকুরের ও বিশেষত্ব হলো তিনি চিরকুমার, কখনো বিবাহ করেননি, প্রচলিত লোককথা থেকে জানা যায় যে, একদিন দানবদের পরাজিত করে কার্তিক বাড়ি ফিরছিলেন, তখন এক রূপবতী দেব কন্যার সঙ্গে তার দেখা হয়ে যায়।

সেই দেব কন্যার নাম উষা, সেই দেবকন্যা রূপে মুগ্ধ হয়ে কার্তিক তাকে বিবাহ করার প্রস্তাব দেন, ঊষাও কার্তিকের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। তারপর সেই সুন্দরী রূপবতী কন্যা ঊষা কে সাথে করে নিয়ে কৈলাসের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন কার্তিক।

কৈলাসে পৌঁছানোর আগে হঠাৎ করে কার্তিকের মনে হলো, বাড়িতে বউ নিয়ে যাওয়ার আগে মায়ের সঙ্গে একবার কথা বলে নেওয়া উচিত। তাই ঊষা কে ধান ক্ষেতে অপেক্ষা করতে বলে তড়িঘড়ি দুর্গার কাছে যান, কার্তিক এর মায়ের থেকে অনুমতিও নেওয়া হয়ে যায়।

তবে এখানে একটা সমস্যা দেখা দেয়, দেবী দুর্গা সেই অনুমতি কতটা মন থেকে দিয়েছেন এই নিয়ে খানিকটা সন্দেহ হয়। কার্তিকের মনে যেন উথাল পাতাল হতে থাকে সেই কথা নিয়ে। তড়িঘড়ি ধান ক্ষেতের দিকে রওনা দেন তিনি, কিন্তু হঠাৎ করে মনে পড়ে, যাহ মাকে তো প্রণাম করা হয়নি !

আবার তিনি বাড়ি ফিরে যান দেবী দুর্গাকে প্রণাম করার জন্য। গোটা বাড়িতে মাকে খুঁজে না পেয়ে অবাক হয়ে যান কার্তিক। এর পরের দৃশ্য দেখে তিনি তো একেবারে অবাক হয়ে যান। তিনি দেখেন সদ্য নিহত হওয়া একটি মহিষ খাচ্ছেন দুর্গা।

কেন এমন তাড়াহুড়ো করে মহিষ খাচ্ছেন মা, প্রশ্ন করে বসেন কার্তিক। কার্তিকের প্রশ্নের উত্তরে দুর্গা বলেন, পুত্রবধূ যদি বাড়িতে এসে তাকে খেতে না দেয়, এই আশঙ্কার জন্যই দুর্গা খাওয়া দাওয়া শুরু করেছিলেন। মায়ের কথা শুনে দুঃখ পান কার্তিক, ঠিক করেন এভাবে ঊষা কে বিয়ে করবেন না।

ওদিকে তখনও কিন্তু ধান ক্ষেতে অপেক্ষা করে রয়েছেন ঊষা, কার্তিক আর ফেরেই না, অবশেষে তিনি জানতে পারেন কার্তিকের প্রতিজ্ঞার কথা। প্রত্যাখ্যাত হয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত বদলে দেন ঊষাও। লজ্জায় ধান খেতেই লুকিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নেন উষা।

কার্তিক মাসে আমন ধানের শীষ বেরিয়েছে সারা খেত জুড়ে। অনেকেই বলেন ওই ধানের শিষই নাকি ঊষা। যে কারণে কার্তিক পূজোয় ব্যবহার করা হয় নতুন ধানের শীষ। আর এই ভাবেই কার্তিক তার নিজের পছন্দ করা কন্যাকে বিবাহ করতে না পেরে চিরকুমার থেকে যান।

সন্তান কামনায় কার্তিক পূজা:

কার্তিক ঠাকুর হলেন বীরত্বের প্রতীক, দেবকুলের সেনাপতি তিনি, আবার অপরূপ সৌন্দর্যের প্রতীক হলেন তিনি। যেন অশুভ শক্তি নিধনকারী, বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে কার্তিক পূজার প্রচলন রয়েছে।

সন্তানের কামনায় কার্তিক পূজা করে থাকেন অনেক দম্পতিরা। বিশেষত যারা বন্ধ্যা নারী, তারাও কিন্তু কার্তিকের মতো সুন্দর ও বীর পুত্রের মতো সন্তান কামনা করে এই কার্তিক পূজা আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে পালন করে থাকেন।

কার্তিকের সৌন্দর্য ও বীরত্ব:

দেবতা কার্তিক একজন পৌরাণিক দেবতা। তিনি ভগবান শিব ও মা দুর্গার পুত্র। দেবতা কার্তিক এর অত্যন্ত সুন্দর দেহ এবং অসীম শক্তির অধিকারী। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, তারকাসুরের আধিপত্য থেকে স্বর্গরাজ্য উদ্ধার করার জন্য স্বর্গের দেবতারা কার্তিককে সেনাপতি রুপে বরণ করেছিলেন।

তার দেহের রং তপ্ত স্বর্ণের মত অর্থাৎ জ্বলন্ত সোনার মত। যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে কার্তিকের হাতে থাকে তীর, ধনুক ও বল্লাম। তার বাহন সুন্দর পাখি ময়ূর, কার্তিক বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অসুরের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন, এই সকল যুদ্ধে  তিনি জয় লাভও করেছিলেন।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, তারকাসুরকে বধ করার জন্যই কার্তিকের জন্ম হয়েছিল। তিনি বলির পুত্র বানাসুরকেও পরাজিত করেছিলেন বীরত্ব দিয়ে। কার্তিকের অন্য নাম স্কন্দ, কুমার, গুহ, মহসেন, ইত্যাদি। স্কন্দ পুরাণ কার্তিক ঠাকুরকে নিয়েই রচনা করা হয়েছে।

তাহলে জানা গেল যে, কার্তিক ঠাকুর কেন চিরকুমার। আর কার্তিকের মতো সু-সন্তান পেতে এবং সুন্দর বর পেতেও অনেকেই ভক্তি ভরে কার্তিক পূজা করে থাকেন। পছন্দের কন্যা কে বিবাহ করতে না পারার জন্য তিনি চিরকুমার থেকেছেন ঠিকই, তবে তার পূজাতে ওই ঊষা অর্থাৎ ধানের শীষ অবশ্যই প্রয়োজন, না হলে যে তার পূজা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আর এই কার্তিক মাসেই ধানের ক্ষেতে সুন্দর ধানের শীষ বের হয়, যা দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি কার্তিক পূজার জন্য অবশ্যই অবশ্যই প্রয়োজনীয়।

একদিকে তিনি বীর, সৌন্দর্যের প্রতীক এবং চিরকুমার, সবদিক থেকে তিনি পৃথিবীবাসীর কাছে পূজনীয় এবং স্নেহের সাথে তিনি সকলের বাড়িতে আগমন করেন। নিজের ছেলের মতো করে অনেক দম্পতি কার্তিক ঠাকুরকে ঘরে তুলে তার পূজা অর্চনা করার জন্য তোড় জোড় শুরু করে দেন। আর এইভাবে তিনি বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে পূজিত হয়ে আসছেন বহু দিন আগে থেকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top