Saraswati Puja 2024: সরস্বতী পূজার পরের দিন গোটা সেদ্ধ কেন খাওয়া হয়?

বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন পূজা পার্বণ অনুষ্ঠিত হয়, তেমনি মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে বাগদেবীর অর্থাৎ সরস্বতী পূজা হয়। এই দিন সমস্ত পড়াশোনা একেবারে বন্ধ তার সাথে সাথে প্রচুর মজা, খাওয়া দাওয়া, ঘোরাঘুরি। এর পাশাপাশি ঘুড়ি ওড়ানোও রয়েছে।

প্রায় প্রত্যেক বাঙালির বাড়িতেই সরস্বতী পূজা হয়ে থাকে। তার জন্য আয়োজন এর শেষ নেই, বাড়ির মেয়েরা ব্রত পালন করেন, ওই দিন সবার বাড়িতে একেবারে বন্ধ থাকে রান্নাবান্না। আগের রাতে রান্না করা সেদ্ধ খান তারা।

সরস্বতী পূজা: সরস্বতী পূজার পরের দিন গোটা সেদ্ধ কেন খাওয়া হয়?
সরস্বতী পূজা: সরস্বতী পূজার পরের দিন গোটা সেদ্ধ কেন খাওয়া হয়?

কিন্তু কেন যুগের পর যুগ ধরে সরস্বতী পূজার পরের দিন পালন করা হয় শীতল ষষ্ঠী? কেনই বা গোটা সেদ্ধ খাওয়া হয় ? এ বিষয়ে অনেকেই হয়তো কিছুই জানেন না, শুধু পালন করতে হয় তাই পালন করে আসছেন।

সরস্বতী পূজার দিন সকালে বাড়ির সদস্যরা বেরিয়ে পড়েন গোটা সেদ্ধ খাওয়ার জন্য বিভিন্ন রকমের শাকসবজি নিয়ে আসতে। যেগুলির মধ্যে রয়েছে শীষ যুক্ত পালং শাক, গোটা মুগ ডাল, গোটা বেগুন, গোটা সিম, গোটা কড়াই শূটি, সজনে ফুল, এগুলির চড়া দাম হলেও তবুও কিনতে হয় বাধ্য হয়ে।

সরস্বতী পূজায় গোটা সেদ্ধ খাওয়া:

বসন্ত পঞ্চমী হিসেবে পরিচিত এই সরস্বতী পূজার দিনটি সকলে খুবই আনন্দের সাথে কাটিয়ে থাকেন। পূজা মিটে গেলে বিকেলের দিকে পরিষ্কার হাঁড়িতে শুরু হয় গোটা সেদ্ধ রান্না, কোন সবজি না কেটেই হাড়িতে দিতে হয়। তাইতো গোটা সেদ্ধ নামেই পরিচিত এই রান্নাটি।

সেদ্ধ হয়ে গেলেই গোটা সেদ্ধ রান্না একেবারে সম্পন্ন। কেউ কেউ গোটা সেদ্ধ রান্নায় মসলা দেন আবার কেউ কেউ মসলা ছাড়াই রান্না করেন। সরস্বতী পূজার পরের দিন সকালে ষষ্ঠী তিথিতে হয় ষষ্ঠী পূজা। এরপরে ফুল, প্রসাদ দিয়ে বাড়ির শীল নোড়ারও পুজো করা হয়।

এই প্রথাটি অনেক প্রাচীনকাল আগে থেকে চলে আসছে। পুজোর সময় দই এর ফোটা দেওয়া হয় শীল ও নোড়ার গায়ে। রান্না সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সেই দই আগের দিনে রান্না করা খাবারে ছিটিয়ে দেওয়া হয়।

আবার এই দিন সকাল থেকে বাড়িতে কোনভাবেই আগুন জ্বালানো হয় না। বলতে গেলে উনুন ধরানো হয় না। অনেকটা অরন্ধনের মত এই পার্বণ।  সরস্বতী পূজার পরের দিন খুবই আনন্দের সাথে কাটে সকল বাঙালির।

গোটা সেদ্ধ খাওয়ার উপকারিতা:

সরস্বতী পূজা এমন একটা ঋতুতে হয়ে থাকে, যার পরে পরেই আবার একটি নতুন ঋতুতে পদার্পণ করতে চলেছে সকলেই। এই সময় শীত অনেকখানি বিদায় নেয়। আসতে চলেছে বসন্ত। এই সময়ে শরীরের পক্ষেও গোটা সেদ্ধর উপকারিতা রয়েছে বহুগুনে। এই খাবারটি শরীরে জীবাণুদের সঙ্গে মোকাবেলা করতে সাহায্য করে।

সেই কারণে সরস্বতী পূজার পরের দিন গোটা সেদ্ধ খাবার রীতি আজও প্রচলিত। বর্তমানে কর্মব্যস্ত জীবনে যদিও এই রীতি ভূলতে বসেছেন অনেকেই। তবে এখনো অনেক জায়গায় নিয়ম মেনে এই প্রথাটি পালন করা হয় নিষ্ঠা ভরে।

তবে আগের দিনের মা ঠাকুমাদের হাতে তৈরি গোটা সেদ্ধ খেলে নাকি তার স্বাদ মুখে লেগে  থাকত সারা বছর। সেই স্বাদ নাকি কখনো ভোলার নয়। আজও অনেক বাড়িতে ঠাকুমা দিদিমাদের হাতে এই গোটা সেদ্ধ উপভোগ করেন বাড়ির সকল সদস্যরা।

সরস্বতী পূজায় গোটা সেদ্ধ খাওয়ার তাৎপর্য:

সরস্বতী পুজোর পরের দিন শীতল ষষ্ঠী পূজা অনুষ্ঠিত হয়, এটা সম্পর্কে হয়তো অনেকেই জানেন না। সরস্বতী পূজার পরের দিন এই পূজা অনেক জায়গায় বড় আকারে হয়। বসন্তী পঞ্চম তিথি কেটে গেলেই শীতল ষষ্ঠী পড়ে যায়।

এই দিন সন্তানের মঙ্গল কামনায় ব্রত রাখেন অনেক মায়েরা। এই শুভদিনে বাংলার ঘরে ঘরে অরন্ধন পালন করা হয়। তাই আগের দিন রান্না করে এ দিন গোটা সেদ্ধ খাওয়ার নিয়ম রয়েছে।

উনুনের পাশাপাশি শিল নোড়া কেও বিশ্রাম দেওয়া হয় নিয়ম মেনে। ‘শীতল’ ষষ্ঠী, তাই গরম খাবার একেবারেই নয়, আগের দিন সেদ্ধ করে শীতল খাবার খাওয়ার নিয়ম রয়েছে এই দিন অর্থাৎ সবকিছুই ঠান্ডা থাকতে হবে এবং গোটা থাকতে হবে।

এর পিছনে রয়েছে তাৎপর্য এবং বৈজ্ঞানিক যুক্তিও। এই সময় যেহেতু পক্স হয় তাই গোটা সিদ্ধ খেয়ে শরীর ঠান্ডা রাখা হয়, শরীর যত ঠান্ডা থাকবে এই ধরনের অসুখ শরীরের আশেপাশেও আসবেনা। ডাক্তাররাও এই খাবার কে বলেন কমফোর্ট ফুড। যেহেতু ষষ্ঠী অর্থাৎ ষষ্ঠ তাই এই সময়কার ছয় রকম মরশুমি সবজি একসঙ্গে গোটা সেদ্ধ করে খাওয়া হয় বলে একে বলা হয় গোটা সেদ্ধ

এই গোটা সেদ্ধ তে মূলত থাকে রাঙা আলু, আলু, সিম, কড়াইশুঁটি, কচি বেগুন, কচি পালং শাক অথবা শীষ যুক্ত পালং শাক হলেও হবে, সেগুলি একসঙ্গে একটি পাত্রে সেদ্ধ করে রান্না করতে হয়, সঙ্গে থাকে কাঁচা মুগ ডাল। এর মধ্যে অনেকেই স্বাদমতো গোটা মসলা দেওয়ারও চেষ্টা করেন।

তবে বলা যেতে পারে শরীরের উপকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের মৌসুমীর সবজি একসাথে পড়ার কারণে এই গোটা সেদ্ধর স্বাদ হয় অতুলনীয়। যা মুখে রুচি ফিরিয়ে আনতে এবং শরীরকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে সাহায্য করে বলে, এটি প্রাচীনকাল থেকে প্রথা হিসেবে মেনে আসছেন সকলেই।

এটি একটি উৎসবের অঙ্গ বলা যায়। তাই এটি ছাড়া বসন্ত পঞ্চমী যেন একেবারেই অসম্পূর্ণ। দেবী সরস্বতীর কাছে বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞান এর প্রার্থনা করার পাশাপাশি শরীরকে একটি ঋতু থেকে আরেকটি ঋতুতে মানিয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুতিও চলে আগে থেকেই। বাচ্চা থেকে বড় বাড়ির সকল সদস্যরা এই গোটা সেদ্ধ কে ভীষণভাবে উপভোগ করেন। আর মা ঠাকুমারা এটি রান্না করেন ভক্তি নিষ্ঠা ও আনন্দের সাথে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top