Jamai Sasthi 2023: জামাই ষষ্ঠী কেন পালন করা হয়? সঠিক ইতিহাস জানুন

হিন্দুরীতি অনুসারে বিভিন্ন পূজা পার্বণের পাশাপাশি কিছু আচার অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার মধ্যে জামাই ষষ্ঠী হল একটি অন্যতম রীতি। যা অনেকদিন আগে থেকে হয়ে আসছে। যে বাড়িতে সদ্য বিবাহিতা মেয়ে আছে সেই বাড়িতে জামাইষষ্ঠী তো আরো বেশি ধুমধাম ভাবে পালিত হয়।

মেয়ে জামাইয়ের মঙ্গল কামনা করে দেবী ষষ্ঠীর পূজা করে থাকেন শাশুড়ি মায়েরা। যেন মেয়ে জামাই আজীবন সুখে ও শান্তিতে বাস করতে পারে এবং তাদের ঘর আলো করে সন্তান সন্ততি আসে সেই কামনা করে ষষ্ঠীর দিনে জামাইষষ্ঠীর ব্রত পালিত হয়ে আসছে বহুকাল আগে থেকে।

জামাই ষষ্ঠী: জামাই ষষ্ঠী কেন পালন করা হয়? সঠিক ইতিহাস জানুন
জামাই ষষ্ঠী: জামাই ষষ্ঠী কেন পালন করা হয়? সঠিক ইতিহাস জানুন

এই বিশেষ দিনে জামই  কে আশীর্বাদ করে নানান ধরনের উপহার দেওয়া হয় এবং বিভিন্ন পদের রান্না করা হয় জামাই কে আপ্যায়ন করার জন্য। জামাইয়ের মঙ্গল কামনার সঙ্গে মেয়ের মঙ্গল কামনা ও কিন্তু যুক্ত হয়ে যায়, এই কারণে জামাইকে দীর্ঘায়ুর আশীর্বাদ দেন শাশুড়ি মায়েরা।

জামাই ষষ্ঠী নিয়ে যে কাহিনী ও গল্প রয়েছে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো অবগত নন, প্রতিটি উৎসব অনুষ্ঠানের পিছনে রয়েছে অনেক খানি ঐতিহ্য, গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য।

জামাই ষষ্ঠী পূজার কাহিনী সম্পর্কে জানা যাক:

প্রচলিত কাহিনী অনুযায়ী সন্তান-সন্ততির দেবী হলেন দেবী ষষ্ঠী এবং সেই দেবী ষষ্ঠীর বাহন হল বিড়াল। কাহিনী অনুসারে জানা যায়, একটি পরিবারে দুটি বউ ছিল। দুই বউয়ের মধ্যে ছোট বউ ছিল খুবই লোভী।

যেদিন বাড়িতে মাছ বা ভালো-মন্দ রান্না হতো, সেই দিন ছোট বউ লুকিয়ে খেয়ে নিতো আর বাড়ির বিড়াল এর উপর সেই দোষটা চাপিয়ে দিত। কিন্তু এদিকে দেবী ষষ্ঠী নিজের বাহন বিড়ালের নামে এমন অভিযোগ শোনার পর খুবই রাগান্বিত হয়ে পড়েন।

তার ফলস্বরূপ ছোট বউয়ের সাতটি পুত্র ও এক কন্যার প্রাণ কেড়ে নেন দেবী ষষ্ঠী। কষ্টে ভেঙে পড়েন সেই বাড়ির ছোট বউ। পরবর্তীতে এক বৃদ্ধার রূপ ধারণ করে দেবী ষষ্ঠী তার কাছে যান।

ছোট বউকে তার এই কান্নার কথা জিজ্ঞেস করেন যে কেন কান্নাকাটি করছে। এরপর নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়ায় এক এক করে ছোট বউয়ের সমস্ত সন্তান ফিরিয়ে দেন দেবী ষষ্ঠী। তার সাথে সাথে ছোট বউকে তার আচরণের কথা মনে করিয়ে দেন।

তিনি এরপর নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়ায় এক এক করে ছোট বউকে তার সমস্ত সন্তান ফিরিয়ে দেওয়া হয়, এরপর থেকে ঘরে ঘরে সন্তান-সন্ততির মঙ্গল কামনার জন্য ষষ্ঠী পূজার গুরুত্ব ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে।

সেই অনুসারে আজও কিন্তু ছোট বাচ্চাদের একটা তিথি বা কিছু সময় পর ষষ্ঠী পূজার মধ্যে দিয়ে তার মঙ্গল কামনা ও দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়।

জামাই ষষ্ঠী পালন করার কারণ সম্পর্কে জানা যাক:

জামাইষষ্ঠী তে জামাই আদর মনে হলেও এক্ষেত্রে কিন্তু বিশেষ করে মেয়ে ও জামাইয়ের সংসার যেন সুন্দর হয়, সন্তান-সন্ততি নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারে তারা, সেই কামনা নিয়ে এই রীতি ও উৎসবটি পালিত হয়ে আসছে অনেকদিন আগে থেকেই।

জৈষ্ট মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে ষষ্ঠী পুজো করা হয়। ষষ্ঠী কে সন্তানের দেবী মনে করা হয় বলে, ঘর বা মন্দিরের বাইরে বট, করমচার ডাল পুঁতে প্রতিকি অরণ্য রচনা করে এই পুজো করা হয়। তাই এই তিথিকে অরণ্য ষষ্ঠীও বলা হয়ে থাকে অন্য দিক থেকে। শাস্ত্রে আছে যে, জামাইয়ের দীর্ঘায়ুর সঙ্গে মেয়ের মঙ্গল কামনার বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে।

জামাইষষ্ঠী পালনের মাধ্যমে শাশুড়ি মায়েরা নিজের জামাইয়ের সুখ, শান্তি ও দীর্ঘায়ু কামনা করার মাধ্যমে নিজের মেয়ের মঙ্গল কামনা করে থাকেন পরোক্ষভাবে। কেননা জামাইয়ের জীবন সুন্দর হলে সেক্ষেত্রে মেয়ের জীবনও সুন্দর হবে।

আবার প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী প্রাচীনকালে বিবাহের পর মেয়েরা সহজে বাপের বাড়ি আসার অনুমতি পেতেন না। মেয়েকে না দেখে বহু বছর কেটে যেত মেয়ের বাবা-মা এর।

তাই জামাইষষ্ঠী পালনের মধ্যে দিয়ে প্রতি বছর মেয়েকে কাছে পাওয়ার এবং চোখের দেখা দেখার তাদের আদর আপ্যায়ন করার একটা বড় সুযোগ পাওয়া যায়। জামাইষষ্ঠীর দিনে মেয়ে জামাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয় আর জামাইয়ের মঙ্গল ও মেয়ের সুখ কামনা করে এই দিন এই পুজো ও রীতি মেনে চলা হয়।

তাই সব দিক থেকে বিচার করে আসল অর্থে বলতে গেলে এই দিনটি মেয়ের সুখ, শান্তি কামনা করে জামাইকে আদর করে বাড়িতে ডেকে এনে তার পছন্দমত রান্না বান্না করে খাওয়ানো, উপহার দেওয়া, সবকিছু করা হয় এই বিশেষ শুভদিনে।

জামাই ষষ্ঠী হল লোক প্রিয়, লোকায়ত ব্রত:

জামাইষষ্ঠীর জনপ্রিয়তা এতখানি যে তা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। যদি নতুন জামাই হয়ে থাকেন তাহলে তো আর কথাই নেই। প্রথমবার জামাইষষ্ঠী যেন এক বড় উৎসব। তবে পুরানো জামাইদের ক্ষেত্রেও একই রকম আপ্যায়ন থাকে।

জামাইষষ্ঠী আসলে একটি লোকায়ত ব্রত, ষষ্ঠী দেবীকে তুষ্ট করতে এই ব্রত পালন করেন শাশুড়ি মায়েরা। এই দিন শ্বশুর বাড়িতে জামাইকে আমন্ত্রণ করা হয়, আসনে বসিয়ে কপালে চন্দন ও দই এর ফোঁটা দিয়ে আশীর্বাদ করা হয়। তারপরে জামাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে তেল হলুদের ফোটা দেওয়া হয়।

তারপর ধান, দূর্বা, বাঁশের করুল, তালের পাখা, করমচা, পান, সুপারি, বিভিন্ন রকমের ফল, নানারকম মিষ্টি ইত্যাদির মাধ্যমে জামাই যত্ন ও আশীর্বাদ করেন শাশুড়ি মায়েরা। রকমারি সব খাবার দিয়ে জামাইকে আপ্যায়ন করা হয়।

এই বিশেষ দিনে নতুন ধুতি পাঞ্জাবিতে সেজে ওঠেন সকল জামাইরা। সঙ্গে অবশ্যই থাকে মৌসুমী ফল আম, লিচু, কাঁঠাল ইত্যাদি। যা এই জামাইষষ্ঠীর উৎসবকে আরো বেশি আনন্দ মুখরিত করে তোলে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top