Pohela Baisakh 2024: পয়লা বৈশাখের দিন নিম হলুদ মাখতে হয় কেন? জেনে নিন

বাঙালি দের জীবনযাত্রা উৎসব, অনুষ্ঠান, পূজা, পার্বণ এই সবের মধ্যে দিয়ে চলে। তবে বছরের প্রথম দিন বৈশাখ মাসের প্রথম দিন হল নববর্ষ অথবা পয়লা বৈশাখ। এই দিনটি দিয়েই শুরু হয় বছর, আর এই দিনে বিভিন্ন রকমের রীতিনীতি মেনে চলার পাশাপাশি আরো একটি নিয়ম হলো এই দিন বাড়ির সকল সদস্যদের নিম হলুদ মাখতে হয়। তবে এর পেছনে রয়েছে আরও অনেক যুক্তি আর স্বাস্থ্যের দিক থেকে খেয়াল রেখে এই বিষয়টি আজও সকলেই মেনে চলেন।

নববর্ষের সংস্কৃতি, রান্নাবান্না, সাজ পোশাক সব কিছু এখনো সারাদেশে খুব ভালো ভাবেই লক্ষ্য করা যায়। উৎসবের আমেজে মানুষ এই দিনটি পালন করে থাকেন বিভিন্ন ভাবে।

বিভিন্ন বিনোদন, ঘোরাফেরা ও রান্না বান্নার মধ্যে দিয়ে নববর্ষ কে খুবই সুন্দর ভাবে স্বাগত জানানো হয়। এই উপলক্ষে শহর অথবা গ্রামে মেলা বসে খুবই বড় আকারে, আর নববর্ষ এভাবে এখন সারাদেশে বাঙালির বিশেষ ভাবে পালনীয় এবং আনন্দের একটি উৎসব।

পয়লা বৈশাখের দিন নিম হলুদ মাখতে হয় কেন? জেনে নিন
পয়লা বৈশাখের দিন নিম হলুদ মাখতে হয় কেন? জেনে নিন

তবে এই দিন নিম হলুদ মাখতে হয় বলে সকাল বেলা সব বাড়িতেই এই নিয়ম খুবই জাকজমকপূর্ণ ভাবে চলতে থাকে। বড়দের পায়ে নিম হলুদ লাগিয়ে প্রণাম করতে হয়। তারপরে সকলেরই গায়েতে মাখতে হয়।

নববর্ষ পালন করার প্রস্তুতি নেওয়া হয় চৈত্র সংক্রান্তি পালনের মধ্যে দিয়ে। এটা আজও গ্রাম বাংলার গৃহস্থ বাড়িতে পরম্পরাগত আচার হিসেবে পালনীয়।

পয়লা বৈশাখের দিন নিম হলুদ মাখতে হয় কেন?

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, পয়লা বৈশাখে অথবা নববর্ষে নিম হলুদ কেন মাখতে হয়?

আমাদের শরীর সুস্থ এবং স্বাভাবিক রাখার জন্য অনেক রকম পন্থা অবলম্বন করেই থাকি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সুস্বাস্থ্যের পরিচয়। খাওয়া-দাওয়ার মধ্যে তিতো অথবা শুক্ত এই ধরনের পদ শরীরে যেমন রোগ জীবাণু ধ্বংস করে, তেমনি তেল হলুদ লাগিয়ে স্নান করলে তা শরীরের বাইরের আবর্জনা আর চামড়ার অনেক রোগ সারিয়ে তোলে।

আসলে নববর্ষের দিনে তাকে আহ্বান জানানোর ক্ষেত্রে আমাদেরকে নতুন রূপে নতুনভাবে সাজতে হয়। তেল হলুদ লাগিয়ে শুদ্ধ হওয়ার মধ্যে একটা ঐতিহ্যগত, পরম্পরাগত প্রথা আছে বলা যেতেই পারে।

সারা বছর সুস্থ ভাবে, সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করার ক্ষেত্রে এই বিষয়টি অনেক খানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সময় আবহাওয়ার উপযুক্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়।

তিতো খাওয়ার ফলে যেমন শরীরের রক্তে শুদ্ধতা আসে, স্বাস্থ্য ভালো থাকে, তেমনি নিম হলুদ একসাথে গায়ে মাখলে সেটাও আমাদের ত্বকের জন্য আর শরীরের জন্য খুবই ভালো।

পয়লা বৈশাখ ও হালখাতার সম্পর্ক কি? জানুন ইতিহাস

নিম পাতার গুনাগুন:

কথায় আছে বাড়ির ডাক্তার হলো নিমগাছ, তাই নিম পাতা, নিম ফুল এইসবের গুনাগুন এতটাই যে তা নিয়ে আর নতুন করে বলার কিছু নেই। কোথাও আবার শুধু নিমপাতা একটু ভেজে তা দিয়েই ভাত খাওয়ার নিয়ম রয়েছে।

আবার অনেকেই নিম পাতা শুকনো করে গুঁড়ো করে খালি পেটে খেয়ে থাকেন, কোথাও কোথাও গরমের উপদ্রব থেকে বাঁচার জন্য এইসব নিয়ম পালন করে থাকেন।

এখনো গ্রাম বাংলায় বেগুন নিম পাতা দিয়ে ভেজে খাওয়ার প্রচলন রয়েছে, যা নাকি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। তার সাথে সাথে নিমপাতা বেটে গায়ে মাখা সেটাও কিন্তু আমাদের ত্বকের জন্য, স্বাস্থ্যের জন্য আরও বেশি উপযুক্ত।

বিভিন্ন রকমের শাকসবজি তে যেমন সমস্ত রকমের প্রোটিন, ভিটামিন থাকে তেমনি নিমপাতা তে এমন অনেক গুনাগুন রয়েছে, যা আমাদের পাকস্থলীর জন্য খুবই উপযোগী। যা আমাদের পাকস্থলী কে ঠান্ডা রাখতে আর হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

পয়লা বৈশাখে এই কাজ করলে সংসারে অর্থের অভাব হবে না

হলুদের ব্যবহার ও গুনাগুন:

হলুদ আমাদের ত্বকের জন্য কতটা উপকারী তা তোমরা সকলেই কম বেশি জানি। সুন্দর ত্বক আর উজ্জ্বল ত্বকের জন্য হলুদ বেটে মুখে মাখার অথবা শরীরে মাখার কথা বলে থাকেন ডাক্তাররা অথবা রূপচর্চায় হলুদের স্থান সবার আগে।

প্রাচীনকাল হোক অথবা বর্তমান পয়লা বৈশাখে নতুন জামা কাপড় পরার পাশাপাশি পান্তা ইলিশ, খাওয়া, গান বাজনা, ঘুরতে যাওয়া, আনন্দ উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সবকিছু মিলিয়ে এই দিনটি খুবই সুন্দরভাবে কেটে যায় সকলের।

এই দিন গায়ে নিম হলুদ মেখে স্নান করা, নানা রকম পদের রান্না করা তরকারি দিয়ে ভাত খাওয়া, সবকিছুই যেন নিয়ম মতো চলে। তবে এই দিন অবশ্যই অবশ্যই নিম হলুদ মাখতেই হয়।

কেননা এই দুটো প্রাকৃতিক এবং শক্তিশালী উপাদান যা কিনা ব্যবহার করার ফলে দেহ শুধু সুন্দর, শুদ্ধ, জীবাণুমুক্ত হয় তা কিন্তু নয়, এই দুটো উপাদান ব্যবহার করলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, বিভিন্ন অসুখ বিসুখ এর মোকাবিলায় শরীরকে সাহায্য করে প্রতিরোধ করতে।

পয়লা বৈশাখে খাওয়া-দাওয়ার এই সাবধানতা মানলে শরীর থাকবে ফিট

নিম হলুদ মাখার তাৎপর্য:

প্রতিটি উৎসবের পেছনে রয়েছে রহস্য, ইতিহাস, পৌরাণিক কাহিনী এবং বিজ্ঞানসম্মত উপকারিতা, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সাথে এবং সুস্থ স্বাভাবিক শরীরের সাথে বিশেষভাবে জড়িত। তাই পয়লা বৈশাখে নিম হলুদ মাখার পিছনে রহস্য তো আমরা অনেকটাই জানলাম, কেননা যা কিছুই পালন করা হয় তা কিন্তু আমাদের সবটাই ভালোর জন্য।

প্রাকৃতিক উপায়ে যদি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায়, তাহলে তার থেকে বেশি পাওয়া আর কিছুই হতে পারে না। প্রকৃতি আমাদের দুই হাত ভরে ঢেলে দিয়েছে। যা আমাদেরকে সুন্দর, সুস্থ, স্বাভাবিক থাকতে সাহায্য করে।

নিম হলুদ এর ব্যবহার শুধুমাত্র পয়লা বৈশাখেই করতে হবে এমনটাই কিন্তু নয়, এই দিন বাধ্যতামূলক সকলেই করে থাকেন, তবে যদি আপনি সারা বছর কোনো না কোনো সময়ে নিয়ম মত এই নিম হলুদ এর ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে আপনার শরীরের আশেপাশে কোনরকম জীবাণু অথবা রোগ আসতে পারবে না।

ছোট থেকে বড় সকলেই কিন্তু এই দিন এই নিয়ম মানতে বাধ্য আর যা সকলকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের দিকে অগ্রসর করিয়ে থাকে। শরীর সুস্থ থাকলে মন ও সুন্দর থাকে, মন ও আনন্দে ভরপুর থাকে, তাই সু-স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রেখে এই বিষয়টি মাথায় রাখাটা জরুরী।

পয়লা বৈশাখ মানেই নতুন একটা বছর কে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি নতুন পোশাক পরা, বিভিন্ন রকম পদের রান্না বান্না, আনন্দ উৎসব আর ঘরবাড়ি সাজানোর মধ্যে দিয়ে এই পরম্পরাগত উৎসবটি বাঙালির জীবনের সাথে সুন্দর ভাবে জড়িয়ে রয়েছে, পয়লা বৈশাখ মানেই যেন বাঙালির ভুরিভোজ। সুস্থ থাকুক পৃথিবীর সকল মানুষ, সুন্দর হয়ে উঠুক এই পৃথিবী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top