আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ভালো পরিমাণ ঘুম। একজন মধ্য বয়সী মানুষের প্রতি দিন কম পক্ষে আট ঘণ্টা ঘুমের দরকার। যা এই ব্যস্ত জীবন যাপন এ হয়ে ওঠে না।
সেক্ষেত্রে ছয় থেকে সাত ঘন্টা রাতের ঘুম আমাদের শরীরের অনেক ঘাটতি পূরণ করে। কষ্ট দূর করে, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিশ্রাম পায়। পরে তারা পুনরায় সঠিক ভাবে কাজ করতে সক্ষম হয়।
আমাদের মস্তিষ্ক কতকিছুই না চিন্তা করে, একটি মস্তিষ্কের মানুষ দিনে কমপক্ষে ষাট হাজার এর ও বেশী চিন্তা করতে পারে। পরিমাণ মত ঘুম মস্তিষ্কের কিছুক্ষণ আরাম দিতে পারে। শরীরের বিভিন্ন হরমোনও নির্ভর করে ঘুমের উপর।
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক –
ঘুম আসার জন্য কী কী করবেন না?
১. দুশ্চিন্তা : আমরা অনেক সময় এমন অনেক চিন্তা করি যার কোন বাস্তব রূপ নেই, তার ফলে মস্তিষ্ক এ চাপ পড়ে।
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন
ঘুমাতে চাইলেও উত্তেজিত নার্ভ গুলো ঘুম আসতে বাধা দেয়, তাই যতটা সম্ভব দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে চেষ্টা করুন।
২ . মোবাইল ও ল্যাপটপ : অনেকেরই অভ্যাস আছে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় বিছানায় ফোন বা ল্যাপটপ নিয়ে যায়, মোবাইল দেখতে দেখতে কতটা সময় পার হয়ে যাবে যেমন বোঝা যাবে না, তেমনি মোবাইল এর আলো চোখে পড়ায় ঘুম আসতেও দেরি হয়।
মোবাইল, ল্যাপটপ বন্ধ রেখে বিছানা থেকে দুরে রেখে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন দেখবেন আস্তে আস্তে এই অভ্যাস এর জন্য ঘুম না আসার কোন কারণ থাকবে না।
৩. রাতে দেরিতে খাওয়া : রাতের খাবার আটটা থেকে ন’টার ভিতর খেয়ে নেওয়া সব থেকে ভালো। ডাক্তার বা ডায়েটিশিয়ানরাও এই পরামর্শ দিয়ে থাকেন। রাত এগারো বারোটার সময় খাওয়া মানে ঘুমাতে যাওয়া একটা বাজবে।
আপনি যদি সকাল পাঁচটার সময় ওঠেন, কাজের জন্য আপনাকে উঠতেই হবে। তাহলে আপনার ঘুম পরিমাণ মতো হচ্ছে না, মাত্র চার ঘণ্টা ঘুমাতে পারছেন।
যা শরীরের পক্ষে একেবারেই ঠিক নয়। অনেক দিন ধরে এই অভ্যাস চলতে থাকলে অনেক রোগ বাসা বাঁধতে পারে শরীরে। তাই এই অভ্যাস বদলানোর চেষ্টা করুন।
৫. দুপুরে ঘুমানো : আমাদের জীবন যাপন এখন আর ছোট বেলার মতো নেই, চিন্তা মুক্ত জীবন। সেসময় দুপুরে ঘুমালেও আটটা না বাজতে বাজতে ঘুমে ঢলে পড়তাম। তার জন্য অনেক বকাও শুনতে হয়েছে মা বাবার কাছে।
আর এখন দুপুরে একটু ঘুমালে রাতের ঘুম যেন ছুটি নেয়। তাছাড়া দুপুরে ঘুমানো শরীরের ক্ষতিই করে, মেদ জমে শরীরে। শরীর সুস্থ রাখতে দুপুরে না ঘুমিয়ে রাতে ঠিকঠাক ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
তবে হ্যাঁ যদি দুপুরে চোখ জড়িয়ে আসে তাহলে আধঘন্টা একঘন্টা ঘুমানো যেতেই পারে। এতে শরীর মন সতেজ লাগবে। তবে তার বেশি ঘুমানো রাতে ঘুম না আসার কারণ হতে পারে।
ঘুম আসার জন্য কি করবেন?
১. বিছানা : বেডরুম বা বিছানা এই কথাটার সাথে ঘুমের সম্পর্ক অনেক খানি। তাই সারাদিন বিছানায় না থাকাটাই ভাল, এতে বিছানা সুন্দর থাকে, অনেকেই আছেন পড়াশোনা, লেখা লেখি, খাওয়া দাওয়া সবই করেন বিছানায়।
এগুলো ত্যাগ করা ভীষণ দরকার। বিছানা সুন্দর করে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে গুছিয়ে রাখাটাও জরুরী ভালো ঘুমের জন্য।
২. চোখের ব্যায়াম : ঘুমানোর আগে চোখের পাতা কয়েক বার ওঠানামা ও চোখ দুটো উপর নীচ ডান দিক বাম দিক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কমকরে দুই থেকে তিন মিনিট এটি করতে হবে, সেক্ষেত্রে চোখের পাতা ও চোখ কষ্ট অনুভব করবে।
আর চোখ বন্ধ করে থাকতে আপনার মন চাইবে, ঘুমও ধীরে ধীরে চলে আসবে। কয়েক দিন এটি করে দেখুন ফলাফল অবশ্যই পাবেন।
৩. দুধ ও কলা : রাতে ঘুম আসে না বলে অনেকেই ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা জল বা দুধ খেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে একটু উষ্ণ গরম দুধ অথবা একটা কলা খেলে আপনার শরীর নিস্তেজ হয়ে আসতে থাকবে আর ঘুমও আসতে আর দেরি হবে না।
৪. আলো : বিনা কারণে ঘরে লাইট জ্বালিয়ে রাখলে যেমন পোকামাকড়, টিকটিকি আসার সুবিধা হবে তেমনি ঘর গরম থাকে। তাই দরকার না থাকলে লাইট জালানই ভাল।
চোখ ঠান্ডা অনুভব করে ঘুম আসতে সুবিধা হয়। উজ্জ্বল আলো ঘুমের বাধা সৃষ্টি করে।
৫. ঘরের ভিতর গাছ : অনেকেই ঘরে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলার জন্য ঘরের ভিতর গাছ রাখে, যেমন জানালার কাছে বেল বা জুঁই ফুল, অ্যালোভেরা, এরিকা পাম ইত্যাদি অনেক রকম গাছ আছে যা দূষিত বাতাস শুষে নিয়ে ঘর কে দূষণ মুক্ত রাখে।
তাপমাত্রাও কমিয়ে রাখে অনেক খানি। আর বেল অথবা জুঁই ফুল এর গন্ধ তে তো সারা ঘর ম ম করবে, যা আপনাকে একটা গভীর প্রশান্তি এনে দেবে।
৬. বই পড়ার অভ্যাস : বই পড়ার অভ্যাস খুবই ভালো একটা অভ্যাস। কথায় আছে, “একটা ভালো বই একটা মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে”।
বই উপহার সেরা উপহার। জানার কোনো শেষ নেই শেখারও শেষ নেই। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মোবাইল নয় একটা শিক্ষা মূলক বই পড়ুন অনেক কিছু জানাও হবে আর ঘুমাতে কোনো অসুবিধা হবে না।
ব্যস্ত জীবনে অবসর সময় খুব কম মানুষই উপভোগ করতে পারেন। ঘুমানোর সময় নেই, খাওয়ার সময় নেই। তাই নিজেকে একটু ভালোবেসে এই কাজগুলো করলে শরীরের অনেক খানি যত্ন নেওয়া যায়।
একটা ভালো ঘুমের পর মস্তিষ্ক নতুন করে চিন্তা করার অবকাশ পায়, আর আমরা পাই নতুন এক সকালের নতুন এক দিনের সুন্দর প্রস্তুতি নেওয়ার অদম্য ইচ্ছাশক্তি।