পুলিশ হেফাজতে থাকাকালিন অপরাধীর মৃত্যু হলে কি করা যেতে পারে?

যদি পুলিশ হেফাজতে থাকাকালিন অপরাধীর মৃত্যু হয়ে যায় তাহলে কি করা যেতে পারে? এই বিষয়ে আইন কি বলে? জেনে নিন এই রকম কোন ঘটনার আইনি নিয়ম।

এমন ঘটনা আমরা প্রায় খবরের কাগজে দেখতে পাই, আবার এমন ঘটনা অনেক পরিবারের সাথে ঘটেছে। যেখানে আইন সাধারণ মানুষের সুরক্ষার জন্য বানানো হয়েছে। তখন যদি কোন অপরাধীকে জেল হেফাজতে রাখার পর সেই বন্দি অবস্থায় তার মৃত্যু হয়ে যায়। তাহলে সেই বিষয়টি সমাজের জন্য খুবই খারাপ বিষয় এবং এটা একটা অপরাধ বলা যেতে পারে।

অনেক মামলার ক্ষেত্রে ইনকোয়ারি করার পর সি বি আই অথবা বিশেষ এনকোয়ারি টিম এজেন্সির কাছে বিষয়টি হস্তান্তরিত করা হয়। বেশিরভাগ মামলাতে এমন পীড়িত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজন দের দ্বারা যে মামলা-মোকদ্দমা চালানো হয়, সেটাই কিন্তু কারণ হতে পারে। তাছাড়া পরবর্তীতে এনকোয়ারি কে এমন এজেন্সির কাছে দেওয়ার জন্য যার কারণে পরিনাম এর বিষয়ে কোনো রকম আশ্বাস পাওয়া যায় না।

পুলিশ হেফাজতে থাকাকালিন অপরাধীর মৃত্যু হলে কি করা যেতে পারে?
পুলিশ হেফাজতে থাকাকালিন অপরাধীর মৃত্যু হলে কি করা যেতে পারে?

যদি প্রমাণ পত্র এক জায়গায় করার ক্ষেত্রে প্রথমেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এর মাধ্যমে, যেমন ধরুন পোস্টমর্টেম, জিজ্ঞাসাবাদ, এই সমস্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে যদি কোনরকম রিপোর্ট এদিক-ওদিক করা হয়, তখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

এই সমস্যার দিকে খেয়াল রাখার মধ্যে দিয়ে এই ঘটনার সাথে সাথে ম্যাজিস্ট্রিক ইনকোয়ারি এর একটি প্রক্রিয়া পরিকল্পনা করা হয়ে থাকে। এটি দণ্ডবিধান সংহিতা ধারা 176 (1A) যাকে 2005 তে সংশোধনের পর সি আর পি সি যুক্ত করা হয়েছিল।

যে কোন লোনের জন্য আবেদন করুন অনলাইনে 👇
হোম লোনপার্সোনাল লোনবাইক লোনকার লোনবিজনেস লোনশিক্ষা লোন

ধারা 176 (1) crpc তে বলা হয়েছে যে, একজন ম্যাজিস্ট্রেট যার অপ্রাকৃতিক মৃত্যুর মামলাতে জিজ্ঞাসাবাদ করার অধিকার রয়েছে। তিনি পুলিশ আধিকারিক দ্বারা যে এনকোয়ারি চালানো হচ্ছে, সেটা ছাড়াও মৃত্যুর কারণ এর এনকোয়ারি করা যেতে পারে। এটি একটি সামান্য সশক্তিকরণ এর প্রক্রিয়া, যা কিনা ম্যাজিস্ট্রেট কে এই ধরনের ইনকোয়ারি করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে থাকে।

একটি অন্য তথ্য হলো এমন জিজ্ঞাসাবাদ অথবা ইনকোয়ারি কার্যকারী ম্যাজিস্ট্রেট অথবা বিচারালয়ের ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা করা যেতে পারে।

অন্যদিকে পুলিশ কাস্টডিতে মৃত্যু, পালিয়ে যাওয়া অথবা ধর্ষণের মামলা থেকে নিষ্পত্তি পাওয়ার জন্য ধারা 176 (1) একটি বিশেষ প্রক্রিয়া বলা যেতে পারে।

এই বিষয়ের মধ্যে বলা হয়েছে যে, এমন মামলাতে বিচারালয়ের ম্যাজিস্ট্রেট অথবা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট যার কিনা স্থানীয় অধিকার ক্ষেত্রে অপরাধ করা হয়েছে। পুলিশ দ্বারা যে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে অথবা ইনকোয়ারি করা হয়েছে, তা ছাড়াও অন্যভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করার অধিকার রয়েছে ম্যাজিস্ট্রেটের।

যে বিষয়ের উপরে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে: 

১) এই জিজ্ঞাসাবাদ পুলিশ কাস্টডিতে মৃত্যু, ধর্ষণ, পালিয়ে যাওয়া, ইত্যাদির ক্ষেত্রে হতে পারে।

২) এই এনকোয়ারি কার্যকরী ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারাও করা যায় না, আর এটিকে বিচারালয় ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা করাটা অবশ্যই প্রয়োজন।

৩) এই এনকোয়ারি অনিবার্য হয়ে থাকে ধারা 176 (1) তে “করবে” শব্দের প্রয়োগ হয়ে থাকে যা কিনা “হতে পারে” শব্দ থেকে আলাদা।

2005 সালের সংশোধনের পর ধারা 176 (5) তে ম্যাজিস্ট্রেট কে এই ধরনের এনকোয়ারি করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তির মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শরীর কে কাছাকাছি সিভিল সার্জনের কাছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হয়ে থাকে। যদি এমন সম্ভব না হয় তাহলে লিখিত রূপে এর কারণ দায়ের করা অবশ্যই প্রয়োজন।

1994 তে বিধি কমিশন তে হেফাজতে নিষ্ঠুরতার মামলাতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়ের উপরে খেয়াল রাখার মধ্য দিয়ে, 152 (বি) রিপোর্টে, ধারা 176 (1), 176 (5) একসাথে সম্মিলিত করার আবেদন করা হয়েছে। তার এক দশক পরে 2005 এর সংশোধন করা হয়।

রাষ্ট্রীয় মানবাধিকার বিভাগ ম্যাজিস্ট্রিক ইনকোয়ারির জন্য নির্দেশ জারি করা হয়েছে যা অনুসারে নিম্নলিখিত বিষয় গুলি শামিল করতে হবে:- 

১) মৃত্যুর পরিস্থিতি,

২) ঘটনার প্রক্রিয়া, আর এই ঘটনা ধারাবাহিক ভাবে ঘটা, যার মাধ্যমে এই মৃত্যু হয়েছে।

৩) মৃত্যুর কারণ,

৪) মৃত্যুর জন্য দায়ী কোন ব্যক্তি অথবা জিজ্ঞাসাবাদ এর সময় সামনে আসা কোনরকম বেইমান ব্যক্তিকে সন্দেহ।

৫) মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ধরতে না পারা,

৬) মৃত ব্যক্তিকে দেওয়া চিকিৎসার পর্যাপ্ত পরিষেবা।

এন এইচ আর সি ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা ইনকোয়ারি সম্পূর্ণ করার জন্য দুই মাসের সময়সীমা ও নির্ধারিত করা হয়েছে।

ধারা 176 (1 A) এর অ-সম্মতি:

প্রবোধন এর অনিবার্য প্রকৃতি, এ সত্বেও এর অনুপালন খুবই কম হয়। 2020 জানুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্ট একটি জনগণের উদ্দেশ্যে অভিযোগের উপর নোটিশ জারি করেছিল, যার মধ্যে সমস্ত রাজ্য, কেন্দ্রশাসিত প্রদেশ এ ধারা 176 (1A)  এর নির্দেশ দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল।

মানবাধিকার কার্যকর্তা সুহাস চাকমা দ্বারা দায়ের করা জনগণের উদ্দেশ্যে আবেদন পত্র টিতে বলা হয়েছে যে, 2005 থেকে 2017 সালের মধ্যে পুলিশ হেফাজতে মানুষের মৃত্যু অথবা সেই অপরাধের অনুপস্থিতি এর 827 মামলা থেকে এনকোয়ারি কেবলমাত্র 166 মামলাতে হয়েছিল অর্থাৎ সম্পূর্ণ মামলার 20%।

আবেদন পত্রে বলা হয়েছে যে, ধারা 176 (1 A) তে জারি হওয়ার পর থেকে এটি ব্যবহার করা হয় নি। এটি কেবল মাত্র আইনের বইয়ের মধ্যে সীমিত রয়েছে। আর এই বিষয়টিকে সর্বসমক্ষে আইনের মাটিতে জারি করা হয় নি।

এফ আই আর এর রেজিস্ট্রেশন (এফ আই আর (FIR) দায়ের করা): 

পুলিশ কাস্টডি অথবা জেল হেফাজতে থাকা কালীন কোন ব্যক্তির মৃত্যুর মামলাতে এফ আই আর দায়ের করা অনিবার্য হয়ে যায়।

ভারতে দণ্ডবিধি অনুসারে পুলিশ কাস্টডিতে হওয়া মৃত্যুর মামলাতে এফ আই আর দায়ের করার ক্ষেত্রে পুলিশ এই সমস্যার বিষয়ে বেশ ভালই অবগত।

আর এই সম্বন্ধে 152 তে সমাধান দেয়া হয়েছে যে, যে কোন ব্যক্তি এফ আই আর দায়ের করার ক্ষেত্রে পুলিশের বিফলতা তে এই মামলার জন্য বিচারালয়ের কাছে অভিযোগ দায়ের করার অধিকার দেওয়া হয়েছে।

মানবাধিকার কমিশন (বিভাগ) এর সূচনা:

রাষ্ট্রীয় মানবাধিকার কমিশন 1993 তে সামান্য নির্দেশ জারি করেছে যে, হেফাজতে থাকাকালীন মৃত্যু হওয়ার 24 ঘণ্টার মধ্যে কমিশনকে এই বিষয় এর সর্ম্পকে সূচনা দিয়ে দিতে হবে অথবা জানিয়ে দিতে হবে।

  • এই ঘটনার দুই মাসের মধ্যে পোস্টমর্টেম, ভিডিওগ্রাফি সমেত ম্যাজিস্ট্রিয়াল ইনকয়ারি রিপোর্ট এর সাথে সমস্ত রকম রিপোর্ট পাঠানো অবশ্যই প্রয়োজন।
  • পোস্টমর্টেম চলাকালীন ভিডিও রেকর্ডার ফটোগ্রাফির নির্দেশ।

এন এইচ আর সি সমস্ত রাজ্য তে পুলিশ কাস্টডিয়াল ডেথ এর মামলাতে পোস্ট মর্টেম এর ভিডিওগ্রাফি করার আর কমিশনকে ক্যাসেট পাঠানোর জন্য দিশা নির্দেশ জারি করা হয়েছে।

পোস্টমর্টেম এর ভিডিও গ্রাফি আর ফটোগ্রাফি এই ধরনের হওয়া জরুরী:- 

  • পোস্টমর্টেমের বিস্তৃত বিষয়বস্তু দায়ের করতে হবে।
  • বিশেষভাবে আঘাত এবং নিষ্ঠুরতার চিহ্ন গুলির যা কিনা পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন সেই সময়কার অত্যাচারের বর্ণনা দিতে পারে।
  • ভিডিও গ্রাফির সাক্ষ্য দ্বারা পোস্টমর্টেম পরীক্ষা, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দায়ের করার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার তথ্য থাকতে হবে, যাতে কোনরকম অনুচিত প্রভাব অথবা সামগ্রীর তথ্য যেনো লোকানো না যায়।
  • আর যদি লুকানো হয়ে থাকে তাহলে সেটা খুবই সহজ ভাবে জানতে পারা যায়।
  • যদি প্রয়োজন হয় তাহলে পরবর্তীতে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এর একটি স্বতন্ত্র সমীক্ষা করা যেতে পারে।

তাছাড়া 152 বি রিপোর্ট করা অভিযোগের উপরে কোনরকম পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এছাড়া কোন অপরাধ করার জন্য জারি করা হয়নি। যা কিনা সেই ব্যক্তির পুলিশ কাস্টডিতে কোন কোন ব্যক্তি সেই অপরাধের শরীরে আঘাত করেছে যার কারণে এমন মৃত্যু হতে পারে। নাকি এমন অনুমতি দেওয়া যায় যে, এমন অপরাধের জন্য যেখানে অধিকারের অপব্যবহার করা হয়ে থাকে।

অপরাধ এর জন্য আইন সবার ক্ষেত্রে সমান। তবে বিচার চলাকালীন পুলিশ কাস্টডিতে অপরাধীর সাথে এমন অত্যাচার সত্যিই অপরাধমূলক। যার কারণে আঘাতজনিত অবস্থায় কোন অপরাধী পুলিশ হেফাজতে থাকা কালিন মারা যেতে পারেন।

তবে এই ক্ষেত্রে এফ আই আর দায়ের করে সেই অপরাধীর পরিবার এর মানুষজন কিভাবে সেই অপরাধীর মৃত্যু হয়েছে সেটা জানার চেষ্টা করতে পারেন, এমন অধিকার রয়েছে তাদের।

Leave a Comment