মামলা চলাকালীন যদি বিরোধী পক্ষের মৃত্যু হয়, তাহলে কি করা যেতে পারে?

মামলা চলাকালীন যদি বিরোধী পক্ষের মৃত্যু হলে কি করবেন? যদি কোন মামলা চলা কালীন দুই পক্ষের মধ্যে কোন এক পক্ষের মৃত্যু হয় তাহলে কি হয়? এই জন্য কি কি আইনি পদক্ষেপ রয়েছে? তাহলে কি অন্য পক্ষ মামলা জিতে যাবে? জানুন এই বিষয়ে আইনি পরামর্শ

যেকোনো মামলার ক্ষেত্রে দুটি পক্ষ হয়ে থাকে। একটি হল বাদীপক্ষ আরেকটি হলো প্রতিবাদী পক্ষ। বাদীপক্ষ সেটা হতে পারে, যারা মামলা নিয়ে আসেন। আর প্রতিবাদী পক্ষ হল যারা এই মামলা থেকে বাঁচার চেষ্টা করেন।

কখনো এই পরিস্থিতি হয়ে থাকে যে, কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা আনা হয়েছে আর সেই ব্যক্তির মৃত্যু হয়ে গিয়ে। আর এই বিষয়টিকে প্রতিবাদীর মৃত্যু বলা যেতে পারে।

মামলা চলাকালীন যদি বিরোধী পক্ষের মৃত্যু হয়, তাহলে কি করা যেতে পারে?
মামলা চলাকালীন যদি বিরোধী পক্ষের মৃত্যু হয়, তাহলে কি করা যেতে পারে?

যে কোন ব্যক্তির মৃত্যু হয়ে যাওয়ার থেকে সমস্ত মামলাতে সেই মামলা সমাপ্ত হয়ে যায় না। যেমন ধরুন যদি স্বামী আর স্ত্রীর মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ অথবা ভরণপোষণ এর মত কোন মামলা চলতে থাকে আর প্রতিবাদী পক্ষের মৃত্যু হয়ে থাকে তখন কিন্তু এমন মামলা সমাপ্ত হয়ে যেতে পারে। কিন্তু অনেক মামলা এমন আছে, যেখানে প্রতিবাদী পক্ষের মৃত্যুর পরও এমন মামলা কখনো সমাপ্ত হয় না।

যেমন ধরুন কোন বাদীপক্ষ প্রতিবাদী পক্ষ থেকে কোনো সম্পত্তি কিনে থাকেন, সেই ব্যাক্তির কোন প্রকার এর এগ্রিমেন্ট করা হয়েছিল আর তার উপরে বিবাদ অথবা সমস্যা রয়েছে, তখন এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবাদী পক্ষের মৃত্যুর পর এই এগ্রিমেন্ট কখনোই সমাপ্ত হবে না।

কেননা প্রতিবাদী পক্ষের কোনো কার্য অথবা কোনরকম সিদ্ধান্তের কারণে বাদীপক্ষের ক্ষতি হতে পারে। তার ক্ষতিপূরণ প্রতিবাদী পক্ষের মৃত্যু হয়ে যাওয়ার পরও কিন্তু হওয়া সম্ভব হয় না। তাই এমন পরিস্থিতিতে মামলা জারি রাখা হয়ে থাকে।

এই সম্বন্ধিত সিভিল প্রক্রিয়া সংহিতা অথবা বিধান 1908 এর আদেশ 22 তে বিশেষ ভাবে নিহিত করা হয়েছে। যেখানে কোন প্রতিবাদী পক্ষের মৃত্যু হয়ে যাওয়ার পর যেকোন মামলাতে সর্বপ্রথম কোন এগ্রিমেন্ট অথবা চুক্তি সম্পর্কে বিষয়টিকে দেখা হয়ে থাকে।

আবার যদি মৃত্যুর পর সেই এগ্রিমেন্ট শেষ হয়ে থাকে, তাহলে বিচারালয় অথবা আদালত প্রতিবাদী পক্ষ এর উত্তরাধিকারী দের মামলাতে পক্ষকার বানিয়ে দিয়ে থাকে।

যদি কোনো সম্পত্তির তখন নেওয়া হয়ে থাকে অথবা কোন টাকা পয়সার আদায় করা হয়ে থাকে, প্রতিবাদী পক্ষ এর উত্তরাধিকারী তার পক্ষ থেকে মামলা কে প্রস্তুত করার জন্য বাধ্য করা হয়ে থাকে।

কিভাবে করা যেতে পারে উত্তরাধিকারীদের কে শামিল?

যেকোনো মামলাতে প্রতিবাদী পক্ষের মৃত্যু হয়ে যাওয়ার পর তার উত্তরাধিকারী দের কে এই মামলার বিষয়ে পক্ষকার হিসাবে থাকতে হবে। প্রতিবাদী পক্ষের মৃত্যু হয়ে যাওয়ার পর তার উত্তরাধিকারী দের পক্ষকার বানানো সম্বন্ধিত প্রক্রিয়া আদেশ 22 এ দেওয়া হয়েছে। যেখানে স্পষ্টরূপে বলা হয়েছে যে, এমন পক্ষকার বানানোর জন্য বাদীপক্ষকে বিচারালয় এ একটি আবেদনপত্র জমা করতে হবে।

সেই আবেদন পত্রে এই কথার উল্লেখ থাকতে হবে যে, “প্রতিবাদী পক্ষের মৃত্যু হয়ে গিয়েছে, আর প্রতিবাদী পক্ষের উত্তরাধিকারীদের কে এই মামলার পক্ষকার বানানো হোক।” এমন আবেদন পত্রকে দেওয়ার সময় সময়সীমা নির্ধারিত করা হয়েছে, যেখানে ৯০ দিনের মধ্যে এমন আবেদন পত্র প্রস্তুত করতে হবে, যদি ৯০ দিনের মধ্যে এমন আবেদন পত্র প্রস্তুত করতে না পারেন, বা যদি প্রস্তুত করা না হয়ে থাকে, তাহলে বিচারালয় এমন মামলা খারিজ করে দিয়ে থাকে।

যদি বাদী পক্ষ কে প্রতিবাদী পক্ষের মৃত্যুর খবর না দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে তখন লিমিটেশন অ্যাক্ট এর ধারা 5 এ অন্তর্গত এই ক্ষেত্রে ছাড় পাওয়া যেতে পারে। আর বিচারালয় এই বিষয়টি স্বীকার করতে পারেন, যে সূচনা নামের কারণে অথবা খবর না পাওয়ার কারণে প্রতিবাদী পক্ষের তরফ থেকে আবেদন পত্র প্রস্তুত করা হয়নি।

বাদীপক্ষ কে প্রতিবাদী পক্ষের মৃত্যুর সূচনা মিলে যায়, অথবা সেই খবর পাওয়া যায়, তখনই কিন্তু তাদের উত্তরাধিকারী দের সমস্ত রকম তথ্য বের করে তাদেরকে মামলার পক্ষকার বানানোর আবেদন সেই বাদীপক্ষকে দিতে হবে।

আবার যদি প্রতিবাদী পক্ষের উত্তরাধিকারীদের সম্পর্কে স্পষ্ট রূপে কোন রকম তথ্য যদি না জানা থাকে, তখন বিচারালয় এ যে কোনো এক জন উত্তরাধিকারী সম্বন্ধে উল্লেখ করতে হবে সেই আবেদনপত্রে।

পরবর্তীতে সেই উত্তরাধিকারীর  এই দায়িত্ব থাকবে যে, তিনি যেন কোর্টে অন্য ব্যক্তিদের সম্বন্ধে ও তথ্য দিয়ে থাকে, যাতে যে ব্যক্তি গুলি মৃতব্যক্তির উত্তরাধিকারী হয়ে থাকবেন, প্রতিবাদী পক্ষের দিক থেকে এই মামলা জেতার জন্য বৈধ উত্তরাধিকারী থাকতে হবে।

সবাইকে এই মামলাতে পক্ষকার বানানো যেতে পারে অথবা সবার তরফ থেকে কোনো একজন ব্যক্তিকে পক্ষকার হিসেবে বানিয়ে এই মামলাটি চালানো যেতে পারে।

অনেক সময় দেখা যায়, প্রতিবাদী পক্ষ যিনি কিনা কোন মামলার ক্ষেত্রে বাঁচার জন্য চেষ্টা করে থাকেন, মামলা চলাকালীন যদি তার মৃত্যু হয়ে যায়, অনেক সময় যারা মামলা করেছেন সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে, তারা জানেন না যে, উত্তরাধিকারী হিসেবে প্রতিপক্ষের কেউ আছেন। এই কারণে অনেক সময় মামলা খারিজ হয়ে যায় আর বাদীপক্ষের অনেকখানি ক্ষতিও হয়ে যায়।

আই অনুসারে মৃতব্যক্তির উত্তরাধিকারী মৃতব্যক্তির মামলা চালাতে পারবেন। তার জন্য অপরপক্ষকে আবেদনপত্র জমা দিতে হবে, সে তো আগেই বলা হয়েছে। আপনি যদি এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন, তাহলে আইন অনুসারে এমন আবেদনপত্রের মধ্য দিয়ে আদালতের অনুরোধ করতে পারেন, মামলাটি চলানোর জন্য।

অনেক সময় দেখা যায়, বিষয়-সম্পত্তি, এমন কিছু মামলা রয়েছে, যার নিষ্পত্তি হওয়া খুবই জরুরী। তখন অবশ্যই উত্তরাধিকারী দের খোঁজ নিয়ে সেই মামলার সঠিক বিচার এবং শুনানি করতে পারবেন আইন অনুসারে।

তবে অবশ্যই এমন পরিস্থিতিতে একজন ভালো দক্ষ উকিল কে নিযুক্ত করতে পারেন। যার ফলে মামলাটি খুব সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন। আর আপনার কোনরকম সমস্যা হলে সেই সমস্যা থেকে এই উকিল সহজেই পরামর্শের মধ্যে দিয়ে আপনাকে সঠিক বিচার পাইয়ে দিতে পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top