ফ্ল্যাট ভাড়া নিলে বা ফ্ল্যাট ভাড়া দিলে দুই ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়া এবং ফ্ল্যাট মালিকের আইনি অধিকারগুলি কি কি জেনে নিন।
ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়া উন্নয়নশীল বিশ্বে একটি চুক্তির বিষয় এবং যথেষ্ঠ কঠিন হয়ে উঠছে। ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়ার প্রক্রিয়াটি একঘেয়ে প্রকৃতির হতে পারে, কিন্তু ভাড়াটিয়া এবং ফ্ল্যাট মালিক উভয়ের স্বার্থ রক্ষার্থে ভাড়া নেওয়ার সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক।
তা না হলে এটা সমস্যার কারণ হতে পারে, বিশেষত যদি যথাযথ ভাড়ার চুক্তির মাধ্যমে ভাড়া দেওয়া না হয় তাহলে মালিক এবং ভাড়াটিয়া উভয়েই ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
তাই উভয় পক্ষের স্বার্থ এবং যেকোন বিশেষ প্রয়োজনে আইনী সুবিধা পেতে চুক্তির ফর্ম পূরণ করে তারপর ভাড়া নেওয়া আবশ্যক।
সুপ্রিয় পাঠক আমাদের আজকের আয়োজনে থাকছে ভাড়া প্রদানের চুক্তি এবং চুক্তি অনুযায়ী ভাড়াটিয়ার উপর ফ্ল্যাট মালিকের অধিকার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। চলুন দেরী না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক। ভারতে ভাড়াটিয়ার উপর ফ্ল্যাট মালিকের অধিকার:-
ভাড়া চুক্তি কি?
ভাড়া চুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল যা ভাড়াটিয়া এবং সম্পত্তি মালিকের মধ্যে আইনগত বাধ্যতামূলক সম্পর্কের সংজ্ঞা প্রদান করে।
সাধারণত, কোনও এজেন্ট উভয় পক্ষের মধ্যে প্রাথমিক চুক্তি করতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে থাকে। তবে, উভয় পক্ষই ভাড়া চুক্তিটি সম্পাদন করতে নিজেদের পছন্দমত অন্য কোন পেশাদার মধ্যস্থতাকারীর সাহায্য নিতে পারে।
যখন দুই পক্ষের মধ্যে ভাড়া সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদন করা হবে তখন সর্বদা দুজন নিরপেক্ষ সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত করুন।
ভাড়া চুক্তি প্রক্রিয়া
ভাড়া চুক্তি সম্পাদন করতে চাইলে সাধারণত ৫০০ রুপির স্ট্যাম্প শুল্ক প্রদান করে ভাড়া চুক্তিটি নিবন্ধন করতে পারেন।
১০ বছর পর্যন্ত সময়ের জন্য ভাড়া চুক্তিতে – বার্ষিক ভাড়ার ১% সাথে ডিপোজিট এবং ১০ বছরেরও বেশি সময়ের জন্য ভাড়া চুক্তিতে – বার্ষিক ভাড়ার ২% এবং সাথে ডিপোজিট প্রয়োজন হবে।
ভাড়া চুক্তির জন্য নির্দিষ্ট তথ্য পূরণের ফর্ম তৈরি করতে হবে এবং উল্লিখিত ফর্মের সাথে যথাযথ মূল্যের স্ট্যাম্প সংযুক্ত করতে হবে যাতে তা আইনত গ্রহণযোগ্য হয়।
এই ফর্ম পূরণ করে ২ জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে মালিক এবং ভাড়াটে দ্বারা চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে। কোন আইনী সমস্যা সমাধান করতে হলে আদালতে এই দুজন সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রদান করতে হবে।
তাই তারা ভাড়াটিয়া অথবা মালিকের নিজের পক্ষের কেউ হতে পারবে না৷ তাতে পক্ষপাতিত্বের আশঙ্কা থাকে। নির্দিষ্ট রেজিস্ট্রেশন চার্জ প্রদান করে নিকটস্থ সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে চুক্তিপত্রটি নিবন্ধন করে নিতে হবে।
কোনও ভাড়াটে এবং একজন মালিকের কী কী অধিকার এবং দায়বদ্ধতা রয়েছে?
ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়ার সময় মালিকের উচিত তার ফ্ল্যাটের সমস্ত ত্রুটি প্রকাশ করা। এই জাতীয় তথ্যের মধ্যে সেই সমস্ত ত্রুটি অন্তর্ভুক্ত হবে যা ভাড়াটিয়া ফ্ল্যাটে বসবাস করার সময় নিজে ঠিক করতেও পারে নাও পারে।
মালিক তার ফ্ল্যাটের সবকিছু কিভাবে ব্যবহার করা উচিত বা অনুচিত তা আগেই ভাড়াটিয়াকে অবগত করবেন। তিনি যদি আগে থেকেই উচিত অনুচিত না জানান তাহলে কোন সমস্যা হলে হুট করে ভাড়াটিয়াকে দোষারোপ করতে পারবেন না।
ভাড়াটিয়াকে বাড়িওয়ালার সমস্ত উচিত অনুচিত মেনে তারপর চুক্তিতে সাক্ষর করতে হবে। বাড়িওয়ালা কতদিনের জন্য বাড়িভাড়া দিচ্ছেন তা যদি চুক্তিতে উল্লেখ থাকে এবং নির্দিষ্ট সময় পর পর বাড়িভাড়া বৃদ্ধি এবং ফ্ল্যাট ছেড়ে দেওয়ার কথা থাকে তাহলে তা ভাড়াটিয়াকে মেনে নিতে হবে।
তবে চুক্তিতে উল্লেখিত সময়ের আগে চুক্তিতে উল্লেখিত কোন বিষয়ের লংঘন ব্যতীত বাড়িওয়ালা তার ভাড়াটিয়াকে ফ্ল্যাট ছাড়তে বলতে পারবেন না। নির্দিষ্ট সময়ের আগে ভাড়া বৃদ্ধি বা নিয়ম-কানুনের পরিবর্তন করতে পারবেন না।
কত বছর বা দিন পর চুক্তিতে উল্লেখিত বিষয়ের পরিবর্তন বা সংশোধন করা হবে তা চুক্তিপত্রে উল্লেখ করে দিতে হবে। কোন কারণে ভাড়াটিয়াকে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হলে চুক্তিতে উল্লেখিত সময় তাকে দিতে হবে নতুন ফ্ল্যাট খুঁজে নেওয়ার জন্য।
ভারতে ভাড়াটিয়াদের উপর বাড়িওয়ালার অধিকার
কোন ভাড়াটিয়া জোরপূর্বক বাড়ি ভাড়া নিতে পারবে না অথবা মালিক অনুমতি দেন নি এমন কোন উদ্দেশ্যে ফ্ল্যাট ব্যবহার করতে পারবেন না। করলে তা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ হবে।
চুক্তিতে যদি নির্দিষ্ট সময়ের উল্লেখ থাকে তবে চুক্তি বর্ধিত না করা হলে নির্দিষ্ট সময় পর ভাড়াটিয়াকে বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে। আর যদি নির্দিষ্ট সময় পরেও ভাড়াটিয়া বাড়ি ছাড়তে সম্মত না হন, তবে তা আইনত চুক্তির খেলাপ হবে এবং সেক্ষেত্রে মালিক ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করতে আইনের সাহায্য নিতে পারবেন।
নির্দিষ্ট সময়ে ভাড়া না পরিশোধ করে কোনও ভাড়াটে বাড়ি দখল করে থাকলে অথবা চুক্তির বাইরে অধিক সময় বাড়ি দখল করে থাকলে উক্ত বিষয়টি ভারতীয় আইনের অধীনে আইন লংঘন বলে গণ্য করা হবে।
ধারা ১০৩ এবং ১০৪ এর অধীনে, ভাড়াটিয়া অপসারণের জন্য মালিককে বল প্রয়োগ করার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে, যদি মালিক আশঙ্কা করেন যে, ভাড়াটিয়া কতৃক তার সম্পত্তির ক্ষতি হচ্ছে তবে কেবলমাত্র সম্পত্তি রক্ষার প্রয়োজন হলে তিনি জোরপূর্বক ভাড়াটিয়াকে ফ্ল্যাট থেকে নামিয়ে দিতে পারেন।
অন্যথায়, মালিক এ ধরনের আচরণ ভাড়াটিয়ার সাথে করতে পারেন না। সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ এর ধারা ১০৮ এর অধীনে, ভাড়া চুক্তি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে মালিক তার বাড়ি খালি করার ক্ষমতা রাখে এবং ভাড়া না প্রদানকে চুক্তির লঙ্ঘন হিসাবে বিবেচনা করে চুক্তি অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারেন।
কোনও ভাড়াটিয়া যদি মালিকের সম্পত্তির কোন ক্ষতি অথবা পাচারের মত অপরাধ করে এবং এ বিষয়ে মালিক অবগত না থাকে তখন সেই ভাড়াটিয়ার বিপক্ষে, ভারতীয় দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪৪১ ধারায় এটাকে ট্রেসপাসিং এবং আইনত দন্ডনীয় হিসাবে চিহ্নিত করে শাস্তি প্রদানের বিধান রয়েছে।
ধারা অনুযায়ী, যদি কোনও অননুমোদিত ব্যক্তি ফ্ল্যাট মালিকের সম্পত্তিতে অনধিকারীরুপে প্রবেশ করে কোন ক্ষতি সাধন করে অপরাধের জন্য আইনত শাস্তি পেতে হবে।
শেষ কথা
ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া এখন আর আগের মত সহজ প্রক্রিয়ার নেই। এটা এখন ব্যবসায়িক চুক্তির মত লিখিত দলিল আকারে সম্পন্ন করা হয়। এতে যেকোন আইনী সমস্যা এড়াতে দুজন নিরপেক্ষ সাক্ষী, নির্ধারিত ফর্ম পূরণ, স্ট্যাম্প সংযোজন এবং প্রয়োজনীয় সকল শর্ত এবং নিয়মাবলী সংযুক্ত করে ভাড়া চুক্তির ফর্ম তৈরি করা উচিত।
যাতে ভাড়াটিয়া এবং মালিক উভয়ের অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষা হয়। আশা করি ভারতে ভাড়াটিয়াদের উপর মালিকের অধিকার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস সফল হয়েছে।
সুপ্রিয় পাঠক পোস্টটি পড়ে আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না। এরপর কোন বিষয় নিয়ে জানতে চান তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। আমরা পরবর্তীতে সে বিষয়ে তথ্য নিয়ে হাজির হব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।