পশ্চিমবঙ্গে অনলাইন বিবাহ রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি ও কাগজপত্র

West Bengal Marriage Registration Online: জানুন পশ্চিমবঙ্গ বিবাহ রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি অনলাইন | বিবাহ রেজিস্ট্রেশন কি? কিভাবে অনলাইন বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করবেন? বিবাহ রেজিস্ট্রেশন এর সুবিধা ও লাভ কি? জানুন সবকিছু এখানে।

বিবাহ হলো একটি সুন্দর পবিত্র বন্ধন, এই পবিত্র বন্ধনে শুধুমাত্র দুটি মানুষের মনের মিলই হয়না, তার সাথে দুটি পরিবারের মিলন ঘটে বলা যেতে পারে। আর এই সুন্দর সম্পর্কে একটি সুন্দর প্রমানপত্র থাকাটা বর্তমানে এতটাই জরুরি হয়ে পড়েছে যে, তার জন্য অনেকেই এখান থেকে ওখান ছোটাছুটি করে থাকেন।

এমন অনেক স্বামী-স্ত্রী রয়েছেন যাদের বিয়ের প্রমাণপত্র নেই অর্থাৎ রেজিস্ট্রি সার্টিফিকেট নেই। যার কারণে বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ম্যারেজ ডেডিকেটেড পোর্টাল (Marriage Dedicated Portal) থেকে পাত্র-পাত্রী অথবা স্বামী-স্ত্রী অনলাইনের মাধ্যমে এই বিয়ের প্রমাণপত্র এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে এবং সেটি যাচাই করে বিবাহের স্বীকৃতি হিসাবে শংসাপত্র অথবা সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। আর এই অনলাইন ব্যবস্থাটি স্বচ্ছ, এবং কাগজ বিহীন হবে।

West Bengal Marriage Registration Online @ rgmwb.gov.in
West Bengal Marriage Registration Online @ rgmwb.gov.in

আগেই অনেক রেজিস্ট্রি সার্টিফিকেট শুধুমাত্র কাগজের উপরে নির্ভর করে তৈরি করা হতো। কিন্তু এখন ডিজিটাল যুগে সবকিছুই অনলাইন এবং ডিজিটাল হয়ে গিয়েছে। তার ফলে বর্তমানে যে সমস্ত বিবাহের সার্টিফিকেট দেওয়া হবে সেগুলি কাগজবিহীন অর্থাৎ মোবাইল অথবা ল্যাপটপে সুরক্ষিত থাকবে। তার জন্য অনলাইনে আপনি নিজে থেকেই আবেদন করতে পারবেন।

বিবাহ রেজিস্ট্রেশন অথবা ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন কি:

ম্যারেজ সার্টিফিকেট অথবা বিয়ের প্রমাণপত্র হলো এমন একটি আইনত প্রমাণপত্র, যার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে দুটি নারী পুরুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। বর্তমানে তারা এখন স্বামী-স্ত্রী।

ম্যারেজ সার্টিফিকেট এর সুবিধা:

যেকোনো প্রমাণপত্র আমাদের বিভিন্ন রকমের সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে, তার মধ্যে অন্যান্য প্রমাণপত্র যেমন ঠিকানার প্রমাণপত্র, পরিচয় পত্র, এগুলির মত ম্যারেজ সার্টিফিকেট ততটাই গুরুত্বপূর্ণ একজন নারী পুরুষের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রমাণ পত্র।

এছাড়া সরকারি কাগজপত্র যেমন – পাসপোর্ট, রেশন কার্ড, প্যান কার্ড, ম্যারেজ সার্টিফিকেটও অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাছাড়া মহিলাদের সামাজিক ও আইনত সুরক্ষা প্রদান করে এই ম্যারেজ সার্টিফিকেট। নিজের অধিকার নিয়ে যখন কথা ওঠে, তখন এই ম্যারেজ সার্টিফিকেট অনেকটাই সাক্ষী দিয়ে থাকে যে, কোন নারী কোন ব্যক্তির স্ত্রী অথবা কোন ব্যক্তি কোন নারীর স্বামী।

পশ্চিমবঙ্গ বিবাহ রেজিস্ট্রেশন অথবা ম্যারেজ পোর্টাল থেকে ম্যারেজ সার্টিফিকেট তৈরি করার সুবর্ণ সুযোগ দিয়ে থাকে এক্ষেত্রে জানা যাক:-

ম্যারেজ পোর্টাল কি:

পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিবাহ নিবন্ধনের প্রক্রিয়াকে আরো বেশি সহজ করে তোলার জন্য একটি অনলাইন পোর্টাল চালু করেছে। যার মধ্যে দিয়ে সমস্ত সম্প্রদায়ের পাত্র-পাত্রী অথবা স্বামী-স্ত্রী অনলাইনের মধ্যে দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন।

তার সাথে সাথে অবিলম্বে বিয়ের সার্টিফিকেট অথবা রেজিস্ট্রি সার্টিফিকেট পেতে পারেন এই ম্যারেজ পোর্টালের প্রধান উদ্দেশ্য হলো কাগজের ব্যবহারকে ন্যূনতম করা, অর্থাৎ যেমন ডিজিটাল রেশন কার্ড, ডিজিটাল ড্রাইভিং লাইসেন্স, তেমনি সবকছু এখন ডিজিটাল হয়েছে। সেই কারণে ম্যারেজ সার্টিফিকেট যাতে ডিজিটাল হয়ে যায় তার জন্য এই পোর্টাল চালু করা।

কোথাও যাওয়ার সময় সবাই স্মার্টফোন নিয়ে যান অবশ্যই, অথবা ল্যাপটপ অনেকেই সাথে রাখেন। সেক্ষেত্রে এই ডিজিটাল ম্যারেজ সার্টিফিকেট যদি স্মার্টফোনে থেকে থাকে, তাহলে আর আলাদা করে কাগজের সার্টিফিকেট বহন করে কোথাও নিয়ে যেতে হবে না, তার জন্য জনসাধারণের অনেকটাই সুবিধা হবে।

অনলাইনে ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন এর জন্য আবেদনকারীর কোন কোন যোগ্যতা:

  • প্রথমত বিবাহ বন্ধন এর সময় পাত্র-পাত্রী অথবা স্বামী-স্ত্রী অবশ্যই একসাথে থাকতে হবে।
  • অনলাইন ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন এর সময় পাত্রের বয়স ২১ বছর প্রার্থীর বয়স ১৮ বছরের কম হওয়া একেবারেই উচিত নয়।
  • যখন ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন অথবা রেজিস্টার করবেন, সেই সময় স্বামী পক্ষের দিক থেকে একাধিক স্বামী এবং স্ত্রী পক্ষের দিক থেকে একাধিক স্ত্রী থাকা উচিত নয়।
  • এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের যে জেলা থেকে ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন করবেন অথবা আবেদন করবেন এই সার্টিফিকেটের জন্য, সেখানে স্বামী-স্ত্রীকে বা পাত্র-পাত্রীকে কমপক্ষে এক মাস একসঙ্গে থাকতে হবে।

ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন এর জন্য ডকুমেন্টস:

  • অবশ্যই স্বামী-স্ত্রীর সই, আর যদি নিরক্ষর হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে আঙ্গুলের ছাপ এর LTI স্ক্যান প্রয়োজন পড়বে।
  • পাত্র-পাত্রী অথবা স্বামী-স্ত্রীর পাসপোর্ট সাইজ ছবির স্ক্যান কপি।
  • উভয়ের বর্তমান ঠিকানার প্রমাণ পত্রের স্ক্যান করা কপি।
  • দুজনের বয়সের প্রমাণপত্র স্ক্যান করা কপি।
  • সামাজিক বিয়ের পরে যদি রেজিস্ট্রেশন করতে হয়, তাহলে আমন্ত্রণপত্র, পুরোহিত অথবা স্থানীয় পঞ্চায়েতের সংস্থার কাছ থেকে একটি হলফনামা প্রয়োজন পড়বে।

ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন কিভাবে করবেন অনলাইনের মাধ্যমে:

এখন অনলাইনে সমস্ত রকম কাজ যেমন সহজ হয়ে গিয়েছে, তেমনি নিজেদের বিয়ের সার্টিফিকেট অথবা ম্যারেজ সার্টিফিকেট তৈরি করার জন্য অনলাইনে খুবই সহজ ভাবে কয়েকটি ধাপ পার করে পেতে পারেন।

ধাপ ১. সবার প্রথমে এই অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন, https://www.rgmwb.gov.in/ অথবা সরাসরি এই লিংকে ক্লিক করে যেতে পারেন।

ধাপ ২. এরপর রেজিস্টার ইওর মেরেজ (Register Your Marriage) এই অপশন এর উপরে ক্লিক করুন।

ধাপ ৩. এরপর দেখবেন একটি নতুন পেজ ওপেন হবে, সেখানে সমস্ত রকম নিয়মাবলী দেওয়া থাকবে সেগুলো পড়ে নিন, তারপর “ক্লিক হেয়ার টু অ্যাপ্লাই অনলাইন” (Click Here to Apply Online) এই অপশনে ক্লিক করুন।

WB Marriage Registration Online at rgmwb.gov.in
WB Marriage Registration Online at rgmwb.gov.in

ধাপ ৪. পরবর্তী যে পেজটি ওপেন হবে সেখানে নিয়মাবলী পড়ে নিয়ে প্রসিড (Proceed) বাটনে  ক্লিক করুন।

ধাপ ৫. এবার দেখবেন একটি ফরম ওপেন হবে। এবার এই ফরমটি থেকে সিলেট রিলিভ্যান্ট অ্যাক্ট এর ড্রপডাউন মেনু থেকে তিনটি আইনের থেকে আপনার প্রয়োজনীয় একটি বেছে নিন।

এরপর ফর্মটির মধ্যে প্রতিটি অংশে ক্লিক করে সেগুলির তথ্য ও যথাযথভাবে পূরণ করুন। যেমন ধরুন- ডিটেইলস অফ হাজবেন্ড, ডিটেইলস অফ রেজিস্ট্রেশন, ডিটেইলস অফ চিল্ড্রেন, এরকম মেনু আসবে প্রত্যেক টি তে ক্লিক করে আলাদা আলাদা ভাবে পূরণ করুন।

তার সাথে সমস্ত রকম প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ও দুজনের সই আর যদি নিরক্ষর হয়ে থাকেন তাহলে আঙ্গুলের ছাপ এর এল টি আই (LTI) স্ক্যান দিয়ে আপলোড করুন।

ধাপ ৬. এরপর যে তালিকা ওপেন হবে, সেখানে আপনার নিজের পছন্দ অনুযায়ী ম্যারেজ অফিসার সিলেক্ট করুন এবং সেই ম্যারেজ অফিসারের কাছে ম্যারেজ সার্টিফিকেট এর জন্য আবেদন করুন।

ধাপ ৭. এরপর আবেদনের ক্রমিক নাম্বার সহ একটি এসএমএস এবং মেইল পাবেন। এরপর আবেদনের সময় আপলোড করা ডকুমেন্টসগুলো অরিজিনাল নিয়ে ম্যারেজ অফিসারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

এছাড়া ক্রমিক নাম্বার টির মাধ্যমে আপনি আপনার ম্যারেজ সার্টিফিকেট এর অ্যাপ্লিকেশন স্ট্যাটাস দেখতে পারবেন। যে অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের মধ্যে থেকে ম্যারেজ সার্টিফিকেট এর জন্য আবেদন করছেন, সেই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।

তাহলে জানা হয়ে গেল, ম্যারেজ সার্টিফিকেট এর জন্য কিভাবে অনলাইনে সহজ কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করে আবেদন করতে পারবেন। তাহলে আর দেরি কেন? বর্তমানে অন্যান্য ডকুমেন্টের মত ম্যারেজ সার্টিফিকেট বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম কাজে লাগতে পারে।

তাই আগে থেকেই সেটা তৈরি করে রাখুন। বর্তমান পরিস্থিতি উন্নত প্রযুক্তি, এখন আর আপনাকে কাগজ নিয়ে ঘুরতে হবে না, মোবাইল অথবা ল্যাপটপে থাকলে তা দিয়েই অনায়াসেই যেকোনো কাজ করতে পারবেন।

Home Click here
Official Website Click here

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top