কার্তিক মাস 2023: কার্তিক মাসে এভাবে মা লক্ষ্মীর পূজা করলে আয় বৃদ্ধি হবে সারবে অসুখ-বিসুখও

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ, তবে ১২ মাসের মধ্যে কার্তিক মাস হল সব থেকে শ্রেষ্ঠ মাস। স্কন্দ পুরাণ অনুসারে জানা যায় দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করার জন্য কার্তিক মাস সর্বশ্রেষ্ঠ। এর ফলে ভক্তদের রোগ মুক্তি ঘটে এবং সংসারে আসে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি।

মা লক্ষ্মীর আরাধনা করার জন্য বছরের প্রতিটি বৃহস্পতিবার তো রয়েছেই, তার সাথে সাথে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা এবং বিশেষ দিনে লক্ষ্মীপূজা আর এই কার্তিক মাসের মা লক্ষ্মীর আরাধনা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

কার্তিক মাসে এভাবে মা লক্ষ্মীর পূজা করলে আয় বৃদ্ধি হবে সারবে অসুখ-বিসুখও
কার্তিক মাসে এভাবে মা লক্ষ্মীর পূজা করলে আয় বৃদ্ধি হবে সারবে অসুখ-বিসুখও

অন্যদিকে কার্তিক মাসকে দামোদর মাস ও বলা হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে কার্তিক মাসকে পবিত্র মাস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কার্তিক মাসে শ্রী বিষ্ণুর পাশাপাশি মা লক্ষ্মীর পূজা করলে শুভ ফল লাভ করা যায়।

দেবী লক্ষ্মীর পুজোর পাশাপাশি লক্ষ্মী স্তোত্র পাঠ করা উচিত। সঠিকভাবে এবং সুন্দরভাবে মন্ত্র উচ্চারণ করার মধ্য দিয়ে সকল ধরনের রোগ মুক্তি ঘটে, এর পাশাপাশি জীবনে আসে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি, উপার্জন এবং সঞ্চয় বৃদ্ধি পায়।

শ্রী বিষ্ণুর সাথে মা লক্ষ্মীর পূজা: 

যেহেতু কার্তিক মাস হল একটি পবিত্র মাস, সেই কারণে এই মাসে তুলসী পূজার ও নিয়ম রয়েছে। তুলসী যেমন ভগবান বিষ্ণুর অত্যন্ত প্রিয়, সেই কারণে অবশ্যই এই মাসে শ্রী বিষ্ণুর পূজা করা উচিত।

কার্তিক মাসে ভগবান বিষ্ণুর সাথে সাথে মা লক্ষ্মীর পূজা করলে সংসারে ধন-সম্পত্তি বৃদ্ধি হয়। দেবী লক্ষ্মী যেহেতু ধন-সম্পদের দেবী, তাই তাকে সন্তুষ্ট করতে পারলে আপনার জীবন সুন্দর ভাবে কাটবে, টাকা পয়সা নিয়ে কোনো রকম চিন্তা আর থাকবে না।

কার্তিক মাসে মা লক্ষ্মীর পূজা করবেন কিভাবে?

প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার সুন্দর করে মা লক্ষ্মীর ঘট সাজিয়ে, নৈবেদ্য নিবেদন করে পূজা করা হয়। সেই কারণে বৃহস্পতি বারকে লক্ষ্মী বারও বলা হয়। তবে এই কার্তিক মাসে লক্ষ্মী পূজা করলে আপনি অনেক লাভবান হবেন, এই সময় সকাল সকাল কাজ শেষ করে উপবাস পালন করুন।

তবে এমন কোন নতুনত্ব নয় পূজার ক্ষেত্রে, যে আপনাকে ভয় পেতে হবে। আপনি যেভাবে সারা বছর নিষ্ঠা ভরে মা লক্ষ্মীর পূজা করে থাকেন, সেভাবেই কিন্তু এই কার্তিক মাসেও পূজা করতে পারেন। ভগবান বিষ্ণু এবং মা লক্ষ্মী কে যথাযথভাবে পূজা করুন।

প্রথমে দেবী লক্ষ্মী কে জল নিবেদন করুন। এরপরে ফুল, মালা, সিঁদুর, ভোগ নিবেদন করুন, নৈবেদ্য অর্পণ করুন মা লক্ষ্মীর চরণে। এরপরে ঘি দিয়ে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করুন, ধূপ জ্বালাতেও কিন্তু একেবারেই ভুলবেন না। পূজা শেষ হলে লক্ষ্মী মন্ত্রসহ লক্ষ্মী চালিশা, লক্ষ্মী স্তোত্র পাঠ করতে হবে।

তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, যেহেতু কার্তিক মাসে তুলসী পূজা হয়ে থাকে, তবুও লক্ষ্মী পূজার ক্ষেত্রে তুলসী গাছে জল অর্পণ করা হলেও তুলসী পাতা কখনোই কিন্তু ব্যবহার করা যাবে না, তবে নারায়ণকে তুলসী অর্পণ করা যেতে পারে। এরপর কনকধারা স্তোত্র এবং বিষ্ণু সহস্রনাম স্তোত্র পাঠ করলে আরো শুভ ফল লাভ করতে পারবেন।

এবার তাহলে জানা যাক, কার্তিক মাসে মা লক্ষ্মীকে সন্তুষ্ট করতে আপনি কোন কোন নিয়ম গুলি পালন করতে পারেন:

১) পুণ্য স্নান:

প্রতিটি পূজা অর্চনায় পুণ্য স্নান করা কতটা পবিত্র কাজ তা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। তেমনি যেমন ধরুন গঙ্গাস্নান, যমুনাস্নান অথবা কোন প্রবাহিত নদীতে যদি স্নান করে পূজা-অর্চনা করে থাকেন, সেক্ষেত্রে শুভ ফল লাভ করা যায়।

কার্তিক মাসটিকে সমস্ত মাসের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মাস বলা হয়, আর এই মাসে পুণ্য স্নান করলে পুণ্য অর্জন করা যায়। এই দিনে উপবাস করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

বিশ্বাস করা হয় যে, এই দিনে নদীতে স্নান করে দান করলে সম্পূর্ণ মাস ধরে পুজো করার সমান ফলাফল পাওয়া যায়। কার্তিক মাসে ভগবান বিষ্ণু জলে অধিষ্ঠান করেন।

কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, কার্তিক পূর্ণিমায় গঙ্গা অথবা যে কোন নদীতে স্নান করলে জীবনের সমস্ত পাপ ধুয়ে যায় এবং বিষ্ণুর কৃপায় অক্ষয় পুণ্য লাভ হয়।

২) ভগবান বিষ্ণু কে উৎসর্গ করা:

কার্তিক মাসটি ভগবান বিষ্ণু কে উৎসর্গ করা হয়। মনে করা হয় এই মাসেই শ্রী হরি মৎস্য অবতার ধারণ করেছিলেন। এই দিনটিকে গুরু নানক জয়ন্তী হিসেবেও পালন করা হয় বহু জায়গায়।

শাস্ত্র অনুসারে কার্তিক পূর্ণিমার দিনে কিছু বিশেষ কাজ করলে দেবী লক্ষ্মী খুব খুশি হন এবং ব্যক্তির জীবনে কখনো অর্থ ও শস্যের অভাব হয় না।

৩) তুলসী ও ক্ষীর নিবেদন:

পূর্ণিমা তিথি শ্রী হরিকে উৎসর্গ করা হয়, তবে কার্তিক পূর্ণিমা তিথিতে সকালে বিষ্ণুর মৎস্যরূপকে তুলসী নিবেদন করতে পারেন। তার সাথে সাথে সত্যনারায়ণের মন্ত্র পাঠ করুন।

এছাড়াও পঞ্চামৃত সহ দেবীকে ক্ষীর ও নিবেদন করুন, মা লক্ষ্মী ও তুলসীর জন্য ঘি এর প্রদীপ জ্বালাতে বলেন অনেকেই।

৪) ছয় তপস্বীর পূজা অর্চনা:

কার্তিক পূর্ণিমার সময় চাঁদ ওঠার পরে কার্তিকের ছয় তপস্বীর পূজা করা উচিত বলে মনে করা হয়। কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, এই দিনে তাদের পূজা করলে ধন-সম্পত্তি, ঐশ্বর্য, শক্তি, ধৈর্য, অন্ন বৃদ্ধি পায়। আর সেই কারণে কার্তিক মাসে কার্তিক পূর্ণিমায় ছয় তপস্বীর পূজা অর্চনা করা উচিত।

৫) জ্বলন্ত প্রদীপ ভাসানো:

কার্তিক পূর্ণিমায় সন্ধ্যের সময় নদী অথবা পুকুরে প্রদীপ জ্বালিয়ে তা ভাসিয়ে দেওয়ার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এছাড়া জ্বলন্ত প্রদীপ পুকুর অথবা নদীর জলে ভেসে গেলে তা যেমন দৃষ্টি নন্দন তার সাথে সাথে দেবতাদের আশীর্বাদ ও শুভ ফল লাভ করা যায়।

৬) দান করুন:

দান ধ্যান পুণ্যের কাজ, তবে কার্তিক পূর্ণিমা তিথিতে গরম কাপড় অর্থাৎ শীতের কাপড়, জুতো, অন্ন এগুলো দান করলে গৃহে দেবী লক্ষ্মীর অধিষ্ঠান আজীবন থাকে। যদি কোন ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হয়ে থাকেন, তাহলে সেই ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, অর্থ লাভের সম্ভাবনা দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়তে থাকে।

⭐ প্রতিটি গৃহস্থ বাড়িতে মা লক্ষ্মীর অধিষ্ঠান, তবে তাকে সারা জীবনের জন্য ঘরেতে অধিষ্ঠিত করে রাখার জন্য কত কিছুই না করা হয়। তবে তার মধ্যে বিশেষ বিশেষ কিছু নিয়ম যদি নিষ্ঠা ভরে পালন করা হয় এবং কার্তিক মাসের সম্পূর্ণ মাস জুড়ে মা লক্ষ্মীর আরাধনা করা যায়, তাহলে তাকে সন্তুষ্ট করা যেতে পারে খুবই সহজে।

আর দান এর মধ্যে দিয়ে সংসারের আয় ও উন্নতি বাড়ানো যায়। সেই জন্য কার্তিক মাসে মা লক্ষ্মী কে সন্তুষ্ট করার জন্য তাকে আরাধনা করতে একেবারেই ভুলবেন না। আপনার সাধ্যমত এবং পূজার নৈবেদ্য হিসেবে যেগুলো প্রয়োজন সেগুলো দিয়েই মা লক্ষীকে আপনি সন্তুষ্ট করতে পারবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top