অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা, প্রতিরোধের সঠিক উপায়

কোন রকমে করোনা ভাইরাসের রেস কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আবার অ্যাডিনো ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিয়েছে সর্বত্রই। যা কিনা শিশুদের কে আক্রান্ত করছে বেশি। বসন্ত ঋতু পড়তে না পড়তেই একটা নতুন ভাইরাসের কারণে ভয়ের রেস থেকেই যায়।

অ্যাডিনো ভাইরাসের এমন প্রতিপত্তিতে একেবারে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে রয়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে চিকিৎসকরাও। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা এই ধরনের অসুখের শিকার হচ্ছেন বেশি।

কেননা শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাটা কম থাকে। সেই কারণে যে কোন ভাইরাস, যে কোনো অসুখ বিসুখ খুব তাড়াতাড়ি তাদেরকে কাবু করে ফেলে।

অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা, প্রতিরোধের সঠিক উপায়
অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা, প্রতিরোধের সঠিক উপায়

তবে এ ক্ষেত্রে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। একটুখানি সতর্ক থাকলে এবং ঠিকঠাক ভাবে চিকিৎসা করলে এর থেকে অনেকখানি ভয় কাটিয়ে ওঠা যায়।

অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণ:

সাধারণ ভাবে জ্বর সর্দি-কাশিতে অনেকেই একেবারে নিস্তেজ হয়ে পড়লে শয্যা সায়ী হয়ে পড়েন। শিশু রোগীর ভিড় উপচে পড়ছে কলকাতাজেলা সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতেও। সেখানে এই সমস্ত রোগীদের আনাগোনা তো রয়েছেই। এছাড়াও কয়েকজন শিশুর পরিস্থিতি এতটাই সংকটজনক হচ্ছে যে, তাদের ভেন্টিলেশনে রাখতে হচ্ছে।

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন যে, জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে ভর্তি থাকা শিশু রোগীদের মধ্যে শতকরা ৯০ % অন্ত্রের সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে অনেকেই আবার অ্যাডিনো ভাইরাসের শিকার। ফলে এই শ্বাসকষ্ট টাও আরো বেশি বাড়তে শুরু করেছে। তবে এই ভাইরাস নতুন নয়, অনেকেই আবার ধারণাও করছেন।

এছাড়া চিকিৎসরাও জানাচ্ছেন যে ২০১৮ সাল – ২০১৯ সালের পরে এই ভাইরাস নতুন করে ফিরে এসেছে আবার। এই ভাইরাসের ভয়াবহতা বছর তিনেক আগের পরিস্থিতি কেও ছাপিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে শিশু চিকিৎসকরা সচেতন থাকতে বলছেন সকল বাবা মায়েদের।

এছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে যে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি থাকার কারণে এটি শিশু ও বয়স্কদের আক্রান্ত করছে বেশি। কোভিড- ১৯ এর কারণে ঘর বন্দী শিশুরা দীর্ঘসময়ে অনেক মানুষের সাথে মেলামেশা এবং উন্মুক্ত পরিবেশে তেমনভাবে থাকতে পারেনি।

এর ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমেছে বহু গুনে। তাদের শিশুসুলভ এবং শৈশব জীবনকে রীতিমত ব্যাঘাত ঘটানো হয়েছে এই কোভিড- ১৯ এর লকডাউন এর সময়ে। ফলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমেছে তরতরিয়ে। মাস্ক পরা বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকেই, শিশুরাও এখন আর স্কুলে মাস্ক পরছে না।

এছাড়া মাস্ক পড়লে অনেকেরই দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত কষ্ট অনুভব হয়। তাই আবহাওয়া পরিবর্তনের এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক ভাবেই সকলেরই একটু শরীর খারাপ থাকে। আর এই সময়ে এই ভাইরাস যেন সবাইকে কাবু করে ফেলছে অল্পেতেই।

এমন প্রতিপত্তিতে ভয় থাকারই কথা, অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে এই ভাইরাসকে বাগে আনা যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রেই আগে এই ভাইরাস শরীরে বাসা বাঁধলে কেবল শ্বাসকষ্ট অথবা পেটের সমস্যা ঘটতো জলের সাথে সাথে, কিন্তু এবার ভেন্টিলেশন অব্দি গড়াচ্ছে পরিস্থিতি।অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার, ভুলভাল প্রয়োগ, এই ভাইরাসের চরিত্র বদল করার জন্য অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।

অ্যাডিনো ভাইরাস থেকে শিশুদের বাঁচাতে এই খাবারগুলি আগে দিন

অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ গুলি:

সাধারণত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার দুদিন থেকে দু সপ্তাহের মধ্যে শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি ভালোভাবেই টের পাওয়া যায়। বায়ুবাহিত অ্যাডিনো ভাইরাস সাধারণত চোখ, অন্ত্র, মূত্রনালী এবং স্নায়ুতন্ত্রের বিশেষভাবে ক্ষতি করে।

এই ভাইরাস আক্রমণ করলে এতোটুকু সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াটা জরুরী। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা শুরু করা উচিত। আর এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা সর্বদাই সচেতন থাকতে বলছেন।

তাই এই আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় শিশুদের জ্বর হলে হালকা ভাবে সেটি না নেওয়াই ভালো। স্বাভাবিক জ্বর হলেও সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেই হবে। ঘরে কোনভাবেই ফেলে রাখা যাবে না। জেনে নিন আর কোন কোন উপসর্গ দেখলে আপনি সতর্ক হবেন আগে থেকেই।

⭐১. এই ধরনের ভাইরাস আক্রমণ করলে জ্বরের মাত্রা ক্রমে ক্রমে বাড়তে থাকে।

⭐২. তাছাড়া শিশু হোক অথবা বয়স্ক, নাক দিয়ে কাঁচা জল পড়ার সমস্যা ও দেখা যায়। যেটা স্বাভাবিকভাবেই সর্দি-কাশিতে দেখা গেলেও এই উপসর্গ দেখলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

⭐৩. এই ভাইরাস শরীরে বাসা বাঁধলে কনজাংটিভাইটিসের সমস্যাও দেখা দিচ্ছে।

⭐৪. আবার অনেক শিশু ও বয়স্কদের বমি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ার মতো এমন উপসর্গ দেখা দিচ্ছে, তাছাড়া শ্বাসকষ্ট প্রবল ভাবে বেড়ে চলেছে।

⭐৫. সারাদিন যাবত ঘুষঘুষে জ্বর থাকতেও দেখা যায়। যা একেবারে অস্বস্তিকর। এমন পরিস্থিতিতে যে কোন মানুষ নাজেহাল হয়ে যেতে পারেন, তাই এমন উপসর্গ দেখলে হাসপাতালে তড়িঘড়ি নিয়ে যেতে হবে।

⭐৬. যখন জ্বর বাড়বে তা কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই হু হু করে বেড়ে যাবে। তখন আর একটুও সময় নষ্ট না করে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়তে হবে হাসপাতালে উদ্দেশ্যে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

অ্যাডিনো ভাইরাস থেকে বাঁচার ও প্রতিরোধের উপায়: 

⭐১. আমাদের জীবনযাত্রায় সাধারণত ধুলোবালি, ভিড় এগুলো যতটা এড়িয়ে চলা যায়, ততটাই কিন্তু সুস্থ থাকা যায়। তাই সাধারণত ভিড় এলাকা থেকে দূরে থাকুন। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম হয় তাই তাদের ক্ষেত্রে আরো বেশি সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।

⭐২. বিশেষ করে সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু এবং ছয় মাস, সাত মাস পার হয়ে গেলেও সেই শিশুকেও বাড়ির বাইরে খুব প্রয়োজন ছাড়া বের না করাই ভালো। এমন একটা ভাইরাসজনিত আতঙ্কের মধ্যে এবং এমন একটা আবহাওয়ায়।

⭐৩. এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ, তাই আক্রান্তদের কাছ থেকে দূরে থাকুন। যতটা সম্ভব নিজেদের ঘরের মধ্যে থাকাটা বাঞ্ছনীয়।

⭐৪. সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিদের ব্যবহারের কোন জিনিসপত্র ছোঁয়া যাবে না এবং সেগুলি আলাদা করে রাখাটা বুদ্ধিমানের কাজ।

⭐৫. বায়ুবাহিত হওয়ার কারণে রাস্তাঘাটে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করুন।

⭐৬. মল-মূত্র ত্যাগের পর শিশু ভালো করে পরিষ্কার হলো কিনা সেদিকে খেয়াল রাখাটা খুবই জরুরী। প্রয়োজন পড়লে তাদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়ার জন্য নিজেরাই সহযোগিতা করুন।

⭐৭. এছাড়া শুধুমাত্র শিশু ও বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছে বলে তাদেরকেই যে এই সমস্ত কিছু মেনে চলতে হবে তা কিন্তু নয়। শিশুদের বাবা-মায়াদের এবং মাঝ বয়সি সকলকেও মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। কেননা বলা তো যায় না, এক্ষেত্রে আপনিও আক্রান্ত হতে পারেন।

⭐৮. কোন ছোট শিশুকে কোলে নেওয়ার আগে অথবা তাকে ধরার আগে হাত ধুয়ে নিন ভালো করে।

⭐৯. কোন খাবার খাওয়ার আগে এবং পরে ভালো করে হাত ধুইতে হয় এটা তো আমরা অনেকদিন আগে থেকেই জানি, তবে এমন পরিস্থিতিতে সেদিকে আরো বিশেষভাবে খেয়াল দিতে হবে।

এই সমস্ত ছোট খাটো বিষয়গুলি মাথায় রেখে চলাফেরা করলে এমন পরিবেশের মধ্যেও সুস্থ স্বাভাবিক থাকা যেতে পারে। অ্যাডিনো ভাইরাসের বিরুদ্ধে যদি লড়াই করতেই হয়, তাহলে এই নিয়মগুলি আপনাকে অবশ্যই পালন করতে হবে।

আর হ্যাঁ, কোনভাবেই যদি এই সমস্ত উপসর্গগুলি দেখা দেয়, তাহলে কোন রকম গাফিলতি না করে হাসপাতালে যাওয়াটা জরুরি এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে চলাফেরা করাটাও জরুরী। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসাও শুরু করতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top