কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে কালী পূজা চারিদিকের অন্ধকার কাটিয়ে দিয়ে আলোয় ভরিয়ে তোলে। তাইতো অনেকের কাছে এটি আলোর উৎসব, দীপাবলি অথবা দিওয়ালি উৎসব, প্রদীপ মোমবাতি এবং আরো সমস্ত আলোর বন্যায় ভেসে যায় চারিদিক।
এই কালীপুজোর সাথে সাথে ঘরের লক্ষ্মী কেও পূজা করা হয়, আর মা লক্ষ্মীর সবথেকে প্রিয় জিনিসটি নিবেদন করতে পারলেই সংসারে হবে টাকার বৃষ্টি।
কালী পূজার সময় অলক্ষ্মী বিদায় করার পরে ঘরে মহালক্ষ্মীর ঘট স্থাপন করে পূজা করা হয়। তবে লক্ষ্মী দেবীর প্রিয় ভোগ নিবেদন করতে পারলেই আপনার সকল মনের ইচ্ছা পূর্ণ হবে।
মা লক্ষ্মীকে খুশি করতে তার প্রিয় ভোগ লক্ষ্মী মন্দিরে নিবেদন করা উচিত, তার সাথে সাথে দীপাবলির দিনে পূজার সময় নিবেদন করা খুবই ভালো।
এমনই কয়েকটি ভোগের কথা বলা হচ্ছে, যে গুলি ছাড়া লক্ষ্মী দেবীর পূজা অসম্পূর্ণ বলে মনে করা হয়। দেবী লক্ষ্মী কে খুশি করতে এবং তাকে নিজের বাড়িতে সারা জীবনের জন্য অধিষ্ঠিত করে রাখতে তার প্রিয় ভোগ নিবেদন করুন।
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, মা লক্ষ্মীকে খুশি করতে কোন ভোগ আপনি নিবেদন করবেন :
সুচিপত্র
১) নারকেল:
আমরা আগেই জেনেছি মা লক্ষ্মীর সবথেকে প্রিয় ফল হল এক চক্ষু বিশিষ্ট নারকেল। আর সেই নারকেল যদি আপনি লক্ষ্মী পূজায় না রাখেন তাহলে পূজা টাই অসম্পূর্ণ হয়ে থাকবে।
সনাতন ধর্মে নারকেল কে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। আর সেই কারণে প্রায় প্রতিটি পূজায় নারকেলের অবস্থান থাকেই থাকে। নারকেল শ্রী লক্ষ্মীর প্রিয় ফল, সেই কারণে এই নারকেল কে শ্রীফল ও বলা হয়।
কালী পূজার দিন লক্ষ্মী দেবীকে নারকেলের লাড্ডু অথবা যাকে আমরা নারকেল নাড়ু বলি, কাঁচা নারকেল এবং জল ভর্তি নারকেল নিবেদন করা ভালো। এতে দেবী লক্ষী প্রসন্ন হবেন এবং তার শুভ ফল আপনি পাবেন আপনার সংসারে।
২) বাতাসা:
বাতাস এমন একটি নৈবেদ্য, যা কিনা প্রতিটি পূজায় প্রয়োজন পড়লেও লক্ষ্মী পূজাতে খুবই জনপ্রিয় এবং প্রয়োজনীয়।
কেননা বাতাসা মা লক্ষ্মীর খুবই প্রিয় তাই দীপাবলিতে অর্থাৎ কালী পূজার রাতে পূজার সময় দেবী লক্ষ্মী কে বাতাসা নিবেদন করতে ভুলবেন না কিন্তু।
হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুসারে বাতাসা চাঁদের সাথে সম্পর্কিত এবং চাঁদকে দেবী লক্ষ্মীর ভাই বলে মনে করা হয়। এই কারণে বাতাসা মা লক্ষ্মীর কাছে খুবই প্রিয় একটি ভোগ।
৩) মাখানা:
অন্যান্য নৈবেদ্যর সাথে সাথে লক্ষ্মী পূজায় মাখানা একটি জনপ্রিয় ভোগ বলাই যায়। কঠিন আবরণে জলে মাখানার জন্ম হয়, তাই একে সবদিক দিয়ে পবিত্র বলে মনে করা হয়। জলে জন্মানো এই ফলটি দেবী লক্ষ্মীর খুবই প্রিয় একটি ফল।
এক্ষেত্রে কালী পূজার রাতে লক্ষ্মী দেবীর আরাধনায় মাখানা নিবেদন করে তাকে প্রসন্ন করা যায় সহজেই। এর ফলে ভক্তদের মনস্কামনা পূর্ণ হয়, আর স্বপ্নপূরণ হতে আর বেশি দিন সময় লাগে না।
৪) পানিফল:
ফলের নামের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে ফলের মাহাত্ম্য। অর্থাৎ সম্পূর্ণ জলে চাষ হয় এই পানিফল। আর যা কিনা মা লক্ষ্মীর খুবই প্রিয় একটি ফল।
এটা বিশ্বাস করা হয় যে, মা লক্ষ্মী জল সম্পর্কিত জিনিস খুবই পছন্দ করেন। যেমন ধরুন এই জল ভর্তি নারকেল, পানি ফল, মাখানা ইত্যাদি।
আর সেই কারণেই এই ফলগুলি অর্থাৎ জলে জন্মানো ফলগুলি মা লক্ষ্মীর প্রিয় ফল। এমন অবস্থায় কালী পূজার রাতে যদি লক্ষ্মী পূজা করে থাকেন, সেক্ষেত্রে পানি ফল আপনাকে নিবেদন করতেই হবে।
৫) হলুদ রঙের মিষ্টি:
আপনি হয়তো ভেবে থাকবেন যে, মিষ্টি অনেক রকমের, অনেক রঙের হয়ে থাকে। তবে এক একটি দেব-দেবীর কাছে এক এক রং এর মিষ্টি খুবই প্রিয়। আর সেই অনুযায়ী মা লক্ষ্মীর কাছে হলুদ রঙের মিষ্টি খুবই প্রিয়।
আর এই পূজায় হলুদ রঙের যে কোন মিষ্টি আপনি নিবেদন করতে পারেন দেবীর ভোগে অর্থাৎ নৈবেদ্য তে।
এর ফলে লক্ষ্মীর কৃপা থাকবে আপনার উপরে এবং আপনার পরিবারের উপরে। এছাড়াও মা লক্ষ্মী কে হলুদ রঙের জাফরান চাল নিবেদন করেও প্রসন্ন করা যেতে পারে।
৬) আখ:
লক্ষ্মী পূজায় আখ হল অতি অবশ্যই প্রয়োজনীয় একটি ভোগ। কালী পূজার রাতে লক্ষ্মী পূজার সময় আখ নিবেদন করার তাৎপর্য রয়েছে, বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে দেবী লক্ষ্মী কে আখ নিবেদন করলে তিনি খুবই খুশি হন।
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে আরও জানা যায় যে, মহা লক্ষ্মী, গজলক্ষ্মী এরও একটি রূপ রয়েছে। মা লক্ষ্মীর প্রিয় ঐরাবত অর্থাৎ হাতি আঁখ খেতে খুবই পছন্দ করে, সেই কারণে মহালক্ষ্মীও এই আখ পেলে খুবই খুশি হন।
সেই কারণে দেবী লক্ষ্মী কে খুশি রাখতে আখ নিবেদন করতে ভুলবেন না।
৭) পান:
আরো অন্যান্য পূজা পার্বণের মতো লক্ষ্মী পূজাতেও পান প্রয়োজন পড়ে। তাছাড়া ধন-সম্পদের দেবী লক্ষ্মীর কাছে পান হল অত্যন্ত প্রিয় একটি জিনিস।
তাকে পান নিবেদন করতে হয় এর ফলে মা খুশি হন এবং তার আশীর্বাদ বর্ষণ করেন আপনার এবং আপনার পরিবারের উপরে।
৮) ক্ষীর ও পুডিং:
লক্ষ্মী পূজায় মিষ্টি ভোগের মধ্যে ক্ষীর ও পায়েস রান্না করে দিতে হয়। দুধ চাল দিয়ে তৈরি পায়েস খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুবই কমই রয়েছেন।
তবে দেবী লক্ষ্মী কিন্তু এমন ক্ষীর ও পায়েস খুবই পছন্দ করেন। সেই কারণে কালী পূজার রাতে মহালক্ষ্মীর পূজার সময় তার ভোগে পায়েস অথবা চালের পুডিং বা ক্ষীর রাখতে ভুলবেন না কিন্তু। দী
পাবলি পূজার সময় মা লক্ষ্মী কে নিবেদনের জন্য এই সমস্ত ক্ষীর পায়েস তৈরি করুন নিজের হাতেই। এতে কিসমিস, মাখানা এবং কাজু মিশিয়ে দেবী লক্ষ্মী কে নিবেদন করুন।
৯) ডালিম অথবা বেদানা:
লাল রঙের এই ফলটি যেমন সুস্বাদু তেমনি দেখতে সুন্দর। ছোট্ট ছোট্ট দানায় ভরপুর এই ফল মা লক্ষ্মীর খুবই পছন্দের। দেবী লক্ষ্মী কে ডালিম নিবেদন করুন।
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে বিভিন্ন ফলের মধ্যে দেবী লক্ষ্মীর কাছে ডালিম অত্যন্ত প্রিয় একটি ফল, তাই এই পূজায় ডালিম নিবেদন করতেই হবে।
১০) তিলের নাড়ু:
নারকেল নাড়ুর পাশাপাশি তিলের নাড়ু ও নিবেদন করা যায় এই লক্ষ্মী পূজায়। ছোট্ট ছোট্ট তিলের নাড়ু লক্ষ্মী দেবীর পূজায় বিশেষভাবে প্রয়োজন পড়ে। তাই এই পূজাতে তিলের নাড়ু দিয়ে দেবীকে সন্তুষ্ট করতে পারেন।
⭐ দেব-দেবীদের সন্তুষ্ট করার জন্য নৈবেদ্য তে কমতি থাকে না। কি দিলে তিনি সন্তুষ্ট হবেন এই জন্য তোড়জোড় চলে সকাল থেকেই।
লক্ষ্মী পূজার সময় অর্থাৎ বিশেষ করে কালী পূজার রাতে এই মহালক্ষ্মীর পূজায় এই ভোগ গুলি নিবেদন করে তাকে নিজের ঘরে সারা জীবনের জন্য অধিষ্ঠিত করে রাখতে পারবেন। দূর হবে সংসার থেকে সমস্ত কালিমা উন্নতি আসবে সবার জীবনে।