শনির প্রকোপ থেকে বাঁচতে কি করবেন: বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ যেমন কথার কথা, তেমনি কিন্তু প্রতিদিনই কোন না কোন পূজা পার্বণ, উৎসব অনুষ্ঠান লেগেই রয়েছে। সপ্তাহের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত কোন না কোন দেব দেবীর জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে এবং সেই দিনে সেই দেবদেবীর পূজা করলে শুভ ফল লাভ করা যায়।
যেমন ধরুন সোমবার দেবাদিদেব মহাদেবের পূজার দিন, এই দিন সকল শিব ভক্ত উপবাস পালন করে থাকেন শিব কে সন্তুষ্ট করার জন্য। তেমনি শনিবার হল শনিদেবের পূজার দিন।
যাকে এক কথায় বড় ঠাকুর অথবা গ্রহরাজও বলা হয়। শনিদেব কে সন্তুষ্ট করতে পারলেই সুন্দর হয়ে ওঠে জীবন। তাই সন্তুষ্ট করার ক্ষেত্রে শনিদেবের পূজার জন্য এমন অনেক নিয়ম রয়েছে সেগুলি মেনে চলতেই হয়।
শনিদেব কে সন্তুষ্ট করতে পারলে কোন রকমের দুঃখ কষ্ট থাকে না বললেই চলে। কিন্তু কোনভাবে শনিদেব যদি আপনার উপরে অসন্তুষ্ট হয়ে যান তাহলে কিন্তু জীবনের দুঃখের কোন শেষ নেই। তাই নিজের সাধ্য অনুসারে আপনার মনের মতো করে নিয়ম মেনে শনিদেবের পূজা অর্চনা করুন তাকে সন্তুষ্ট করতে।
তবে শুধু শনি দেবতার পূজোর মাধ্যমে শনিদেবকে সন্তুষ্ট করা যায় এমনটা কিন্তু নয়, এর পাশাপাশি এমন অনেক কাজ রয়েছে, যেগুলি করার মধ্যে দিয়েও আপনি শনিদেবকে সন্তুষ্ট করতে পারেন।
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, শনিদেবের প্রকোপ থেকে বাঁচতে এবং তাকে সন্তুষ্ট করতে আপনি পূজার পাশাপাশি আর কি কি করতে পারেন:
সুচিপত্র
১) বজরংবলী অথবা হনুমানের আরাধনা:
শনির প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বজরংবলি অথবা হনুমান এর পূজা করাও আবশ্যক। শনির দোষ কাটাতে চাইলে বজরংবলী ঠাকুরও বিশেষভাবে কৃপা প্রদান করে থাকেন। সেই জন্য প্রতি শনিবার হনুমান ঠাকুরের আরাধনা করতে হয়।
এই দিন কোন হনুমান মন্দিরে গিয়ে পূজা অর্চনা করতে পারেন। যদি হনুমানের পূজা করেন তাহলে অবশ্যই হনুমান চল্লিশা নিয়ম অনুসারে পাঠ করা জরুরী। এর পাশাপাশি শনিবার নিরামিষ খাওয়াটা খুবই ভালো আপনার শরীর এবং সংসারের জন্য।
শনি দেবের পূজায় যে ভুলগুলি করলে বিপদে পড়তে পারেন
২) ধার্মিক ও অধার্মিক কাজের পার্থক্য বুঝুন:
প্রতিটি মানুষ যখন কোন ভুল করেন তখন কিন্তু কিছুটা হলেও বুঝতে পারেন যে তার দ্বারা কোন ভুল হয়েছে। তেমনি শনিদেবকে সন্তুষ্ট করার আগে আপনাকে আগে বুঝতে হবে আপনি ভালো কাজ করছেন না খারাপ কাজ করেছেন।
আগে আপনাকে ধার্মিক হতে হবে আর ধার্মিক ও অধার্মিক কাজের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে, ধার্মিক কাজ করলে শনি দেব প্রসন্ন হতে বাধ্য। তাই নিজেকে সবসময় ভালো কাজে নিযুক্ত রাখুন, এমনিতে আপনি ভালো মানুষ হিসেবে শনিদেবের কৃপা দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবেন।
আর যদি অধার্মিক কাজ করে থাকেন তাহলে শনিদেবের রোষানলে পড়তে আপনি বেশি সময় নেবেন না। তাই দরিদ্র মানুষদের উপরে কখনোই কোনরকম অত্যাচার করা যাবে না, সবার উপরে সদয় থাকাটা জরুরী।
৩) কালো গরুর পূজা করুন:
আমরা আগেই জেনেছি শনিদেবের পছন্দের রং হল নীল ও কালো, সেই কারণে শনিদেবের পূজার পাশাপাশি শনিবার কালো গরুর পুজো করে তাকে লাড্ডু খাওয়ানোর রীতি রয়েছে। এর ফলে সকল দোষ কেটে সাফল্য আসতে কোনরকম বাধা পায় না জীবনে। আর শাস্ত্র অনুসারে সেই জন্য শনিবার কালো গরুর পূজা করার প্রচলন রয়েছে।
শনিদেব কে প্রসন্ন করে কৃপা দৃষ্টি লাভ করুন এই পদ্ধতিতে
৪) অশ্বত্থ গাছের নিচে মাটির প্রদীপ জ্বালান:
শনিদেবের পূজার সময় শনিদেবের মূর্তির সামনে কোন রকম প্রদীপ জ্বালাতে নেই। শনির প্রভাবে যদি জীবনে আর্থিক সমস্যা হয়, তাহলে শনিবার সূর্য ডুবে যাওয়ার পরে সকলের চোখের আড়ালে গিয়ে অশ্বত্থ গাছের নিচে মাটির প্রদীপ জ্বালাতে পারেন।
এছাড়া নীল রঙের ফুল ও তেল দিয়ে শনিদেবের পূজা করতে পারেন। এর ফলে আপনার সংসারে আর্থিক সমস্যা দূর হয়ে গিয়ে সংসারে আসবে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি, আর ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, আপনি তা নিজেই বুঝতে পারবেন।
৫) প্রসাদ খেতে হবে বাড়ির বাইরে:
শনিদেব কে সন্তুষ্ট করতে বিভিন্ন রকমের নৈবেদ্য, ভোগ দিয়ে তাকে পূজা করা হয়। তবে পূজার শেষে সেই প্রসাদ নিয়ে কখনোই বাড়ির সদর দরজা পার হয়ে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করতে নেই।
এটা একটা বড় রীতি, বড় ঠাকুরের পূজার এই প্রসাদ বাড়ির বাইরে কোন জায়গায় বসে সবার মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করার পাশাপাশি পূজায় থালা গুলি ভালোভাবে ধুয়ে তবে কিন্তু বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করতে হয়।
শনিদেবের পুজাতে এই বিষয় গুলির খেয়াল রাখলে পাবেন লাভ
৬) নিরামিষ আহার:
প্রতি শনিবার প্রতি বাড়িতে নিরামিষ খাবার খাওয়ার নিয়ম রয়েছে। কেননা এই দিন বড় ঠাকুরের বার অথবা শনিদেবের ব্রত পালন করা হয়। তাই তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য বাড়িতে কোনরকম আমিষ যেন না তোলা হয়, রান্না করা তো দূরের কথা। এর ফলে শনির প্রকোপ থেকে মুক্তি পাওয়ার পাশাপাশি তাকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন আপনি।
৭) পছন্দের ভোগ নিবেদন:
যেকোনো দেব-দেবীকে সন্তুষ্ট করার জন্য তার পছন্দের ভোগ নিবেদন করাটা একটা ভক্তের কাছে অনেক বড় বিষয়। তেমনি শনিদেবকে সন্তুষ্ট করতে গেলে গুড়, খিচুড়ি, তিল নিবেদন করা যেতেই পারে। তবে এক্ষেত্রে কালো তিল খুবই প্রয়োজনীয়।
এই ভোগ পেলে শনিদেব অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন, যা কিনা অত সামান্য তে তাকে প্রসন্ন করতে পারবেন আপনি। শনিবার এই নৈবেদ্য অথবা ভোগ দিয়ে তাকে পূজা করলে তিনি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন এবং ভক্তদের সকল মনস্কামনা পূর্ণ করেন আর জীবনে আনেন সফলতা।
শনিবার ভুলেও এই কাজগুলি করলে জীবনে নেমে আসবে অমঙ্গল
কোন মানুষই চাইবেন না যে শনিদেবের রোষানলে পড়তে, আর শনির প্রকোপ থেকে বাঁচতে কত কিছুই না করা হয়। সবদিক থেকে দেখলে দেখা যায় যে, শনিদেবকে সন্তুষ্ট করার জন্য সামান্য কিছুই প্রয়োজন, এর মধ্যে দিয়েই আপনি তাকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন, আর জীবন থেকে সফল রকমের বাধা বিপদ কাটিয়ে শনির প্রভাব কাটিয়ে সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করতে পারবেন। শুধুমাত্র বিশেষ কয়েকটি সামান্য বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখলেই হবে।