আজকের দিনে দাঁড়িয়ে মোবাইল এর কথাটা কারোরই অজানা নয়। ছোট থেকে বড় সবাই এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
একটা ছ’মাসের শিশুও মোবাইল চিনতে পারে, দেখতে ভালোবাসে। প্রতিটি জিনিস এর দুটি দিক থাকে একটি খারাপ ও একটি ভালো।
আমরা সবাই যেমন একই রকম দেখতে নয় তেমনি আমাদের সকলের চিন্তা ভাবনাও ভিন্ন ভিন্ন। কারো কাছে কোনো কাজ সহজ মনে হলেও অপরজনের কাছে সেই একই কাজ কঠিন মনে হতে পারে।
মোবাইল এর ব্যবহার কমবেশী আজকের দিনে বেশিরভাগ মানুষ করে থাকেন। অনেকে কাজের সূত্রে একের অধিক মোবাইল ব্যবহার করেন।
মোবাইল এর ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা কে অনেক সহজ করে তুললেও এর অনেক খারাপ দিকও আছে।
জেনে নেওয়া যাক :
সুচিপত্র
১. শৈশব কে ভুলে যাওয়া
এখনকার ব্যস্ত জীবনে বাচ্চাদের হাতে মোবাইল থাকা মানেই বাবা মা একটু স্বস্তি পায় এই ভেবে যে বাচ্চারা কোনো দুষ্টুমি ছাড়াই মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকবে।
কিন্তু একবার ভেবে দেখেছেন তার কত বড় ক্ষতি আপনি করছেন। মোবাইল এর ব্যবহার যখন এত পরিমানে হতো না বা মোবাইল যখন আবিষ্কার হয় নি তখন বাচ্চারা কিভাবে শৈশব জীবন উপভোগ করতো।
খেলাধূলা তো বাচ্চারা ভুলেই গেছে। ছোট বয়সে চোখে চশমা পরতে হচ্ছে তাদের। বৃষ্টিতে ভেজা, দস্যিপনা, গাছে উঠে ফল পাড়া, ঝড়ের দিনে আম কুড়ানো এই সবই নব্বই দশকের ছেলে মেয়েরাই জানে।
এখন তো ঝড়ের আসার কথা শুনলে ফোন চার্জ দিতে ব্যস্ত থাকে, পরে যদি কারেন্ট না থাকে। সারাদিন ঘরের ভিতর মোবাইল নিয়েই ব্যস্ত থাকে, কেউ গেম খেলতে তো কেউ ইউটিউবে ভিডিও দেখতে।
আর শিকার হচ্ছে খিটখিটে মেজাজের।
২. ভাবনাশক্তির অবনতি
খেলাধূলা যেমন শরীরকে সুস্থ রাখে তেমনি কোনো কাজ নিজে থেকে করা, কোনো কিছু তৈরী করার মধ্য দিয়ে মানুষের অসাধারণ কিছু করার বুদ্ধি বাড়ে।
ফোনে এমনও অনেক বিষয় দেখানো হয় যার কোনো ভিত্তি নেই। শেখার কিছু নেই। কোনো কিছুকে এতটা বাড়িয়ে দেখানো হয় যার সাথে বাস্তবের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না।
আর তাই দেখে মানুষ কল্পনার জগতে ভাসতে থাকে, বাস্তবটাই ভুলে যায়। কিন্তু বাস্তবে বাঁচতে হবে আমাদের কল্পনার জগতে নয়।
৩. দূরত্ব বাড়ায়
কবে একসাথে পরিবারের সকলে মিলে খেতে বসেছেন মনে আছে? কেউ কোনো কথা বললে তার দিকে তাকানোর সময় নেই, ফোনের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে হয়, এতটাই নেশা ফোনের উপর।
মাদার্স ডে তে সোশ্যাল মিডিয়াতে শুভেচ্ছার বন্যা অথচ মায়ের সাথে একঘন্টা সময় কাটানোর মতো সময় নেই।
শো অফ করে বিবাহ বার্ষিকী তে শুভেচ্ছা জানানো এদিকে দেখা যায় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভালো করে কথা পর্যন্ত হয় না।
এসবের জন্য কারোরই কোনো সমস্যা নেই, আপনার জীবন আপনারি খুশি খুশি বাঁচাটা দরকার। পরিবারের থেকে এখন ফোনের নোটিফিকেশন চেক করাটা গুরুত্ব পূর্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৪. স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যতের ক্ষতি
ফোনের রেডিয়েশন আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভীষণ ক্ষতিকর। রাত জেগে ফোন দেখলে যেমন ঘুমের ঘাটতি হয় তেমনি ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়, কত সময় অপচয় হয়ে যায়, সে সময় টা অন্য কোনো কাজে লাগালে জীবনে অনেক কিছু শেখা যায়।
ফোন যেন আমাদের অদৃশ্য কোনো শিখলে বেঁধে রেখেছে। পরিস্থিতি এমন যে, একবেলা খাবার না দিলেও চলবে কিন্তু ফোনে হাত না দিয়ে এক দিনও পার হবে না।
একজন ব্যক্তির মাসিক ইনকাম যদি কুড়িহাজার টাকা হয়, সেই ব্যক্তি ত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে নতুন ফোন কিনতে পিছুপা হয় না। তার উপর আরও তো খরচা রয়েছেই।
ভবিষ্যতের সঞ্চয়-এর দিকটাও খেয়াল রাখাটা জরুরী, কোন জিনিসের প্রয়োজন আছে আর কোনটার নেই তা বাছাই করাটা এমন কিছু কষ্টকর বিষয় নয়। অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা থেকে দূরে থাকাটা সবদিক দিয়েই ভালো।
৫. প্রতারনার শিকার
সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেকেই কাজের লোভ দেখিয়ে টাকা নিয়ে নকল পরিচয় বানিয়ে অনেকের সাথেই প্রতারনা করেছে।
কেউ কেউ সর্বস্ব হারিয়েছেন, এর জন্য অনেকে আত্মহত্যা ও হীনমন্যতার শিকার হচ্ছে। ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে, এই সব অচেনা কোনো ব্যক্তিকে টাকা ও পারশোনাল ডিটেইলস না দেওয়াই ভাল।
মোবাইল ব্যবহার করলেও এই সব থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করুন। অনেক খারাপ দিক থাকলেও মোবাইলের অনেক ভালো দিকও আছে।
মোবাইল ব্যাবহারের কিছু ভালো দিক যেনে নেওয়া যাক –
১. নতুন কিছু শেখা
যারা ফোনটাকে ভালো কিছু শেখার জন্য ব্যবহার করে তারা এর থেকে অনেক ইউনিক আইডিয়া ও পদ্ধতি জানতে পারে।
রান্না না জানা একটা মানুষও তার কাছের মানুষ গুলোকে খাওয়ানোর জন্য রান্না শেখে অনায়াসেই। অনেক গেম আছে শিশুদের বুদ্ধির বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে।
ঘর সাজানো থেকে বাগান করা সবই ফোনে চোখ রাখলেই দেখতে পাওয়া যায়। নতুন কিছু জানতে ও শিখতে ফোন অনেক সাহায্য করে আমাদের।
ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে ইউনিক সব জিনিস বানাতে বাচ্চারা যেমন দেখতে ভালোবাসে তৈরি করতেও চেষ্টা করে, যা তাদের সৃজনশীল মনোভাবের বিকাশ ঘটায়।
এ বিষয়ে পরিবার কে পাশে থেকে সাহায্য ও উৎসাহিত করা প্রয়োজন।
২. উন্নত প্রযুক্তি
সমাজ এখন বেশিরভাগই ডিজিটাল হয়ে গেছে। উন্নত প্রযুক্তি মানুষকে বিশেষ ভাবে প্রভাবিত করেছে। যা কিছু মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল আজ তা ঘরের দরজায় এসে হাজির হয়েছে।
এই করোনা কালে সেটা বুঝতে আর বাকি নেই। জামাকাপড় থেকে ওষুধ, দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় সব জিনিস এখন ঘর থেকে না বেরিয়েও পেয়ে যাচ্ছি হাতের কাছে।
সবজি থেকে টাকা সব এই ফোনের মাধ্যমে একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় অনায়াসেই পাঠানো যায়। আর এখন পড়াশোনাও হয়ে গেছে অনলাইন।
মোটকথা মোবাইল আমাদের জীবনের একটি গুরুত্ব পূর্ন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৩. সহজ জীবনযাপন
আজকের দিনে জীবনের অনেক বিষয় যে মোবাইল সহজ করে দিয়েছে, তা অস্বীকার করার জায়গা নেই কোনো বিষয়ে কিছু জানতে চাইলে সার্চ করো গুগল কিংবা ইউটিউবে, সামনেই হাজির সমাধান।
ঘরে বসে জানতে পারা যায় পরীক্ষার ফলাফল, কোথায় কি ঘটছে। কোথাও ঘুরতে যাবেন, আগে থেকেই ঠিক হয়ে যায় থাকার জায়গা থেকে খাওয়া ও ঘোরার বন্দোবস্ত।
পছন্দসই খাবার ঘরে বসে অর্ডার করা যায়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তো এখন মোবাইল ব্যবসারই একটা অংশ।
টিভি তো আগেই পৃথিবীকে ঘরের কোনে এনে দিয়েছে, তবে মোবাইল পৃথিবীকে আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। পৃথিবী অনেক সুন্দর, আর ভালো মন্দ মিলিয়ে আমাদের সমাজ।
যেকোনো বিষয় পজিটিভ ভাবে নিলে তা আমাদের জীবনকে সুন্দর করে আর অপরদিকে নেগেটিভ দিকটাও অনেক খারাপ প্রভাব ফেলে।
যতটা সম্ভব পজিটিভ দিকটা ফলো করা দরকার। মোবাইল এ ভালো কিছু দেখে শিখে তা থেকে নিজকে আগের থেকে অনেক বেশী উন্নত করা যাবে।
কিন্তু নেগেটিভ দিক মানুষ কে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। যেখান থেকে বের হয়ে আসতে অনেক কষ্ট পেতে হয়।
আমাদের উপর নির্ভর করে মোবাইল কে ভালো কাজে ব্যবহার করবো না খারাপ কাজে। আমরা মোবাইল কে চালনা করি, মোবাইল আমাদেরকে চালনা করে না।