বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় আদা জলের ব্যবহার ও দারুন উপকারিতা

চিকিৎসায় আদা জলের ব্যবহার: দৈনিক জীবনযাত্রায় খাবার দাবারের পাশাপাশি শরীর এর দিকে আলাদা খেয়াল রাখতে হয়। যেন কোনভাবেই কোন অসুখ বিসুখ শরীরে বাসা না বাঁধতে পারে। তার জন্য প্রতিনিয়ত চেকআপ, ডাক্তার দেখানো এগুলোতে রয়েছে। তবে যদি সামান্য কিছু পদক্ষেপ অবলম্বন করা যায়, এই সবকিছু থেকে অনেকখানি দূরে থাকা যায় জীবনে।

সব সময় ডাক্তারের কাছে যাওয়া হয়তো সকলের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনা। সামান্য জিনিসপত্র দিয়েই রোগের চিকিৎসা করা যেতে পারে। আবার শরীরকে সুস্থ স্বাভাবিক রাখার জন্য তার আলাদা করে খেয়াল রাখাও যেতে পারে।

বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় আদা জলের ব্যবহার ও দারুন উপকারিতা
বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় আদা জলের ব্যবহার ও দারুন উপকারিতা

এমন একটি উপাদান হল আদা, এই আদা প্রতিটি ঘরের রান্না ঘরের সাধারণ একটা জিনিস। যা মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে আদায় রয়েছে প্রচুর গুনাগুন। প্রাচীনকাল থেকেই রোগের চিকিৎসায় আদার ব্যবহার হয়ে আসছে আজও। তাই সরাসরি আনা নয়, আদার জল খাওয়া কিন্তু উপকারী।

আদা অনেকেই খেতে চান না এর ঝাঁঝালো স্বাদের জন্য। যা অনেকটাই কষ্টদায়ক, তবে কষ্ট করে আর গোটা আদা খেতে হবে না। শুধুমাত্র আদা ভেজানো জল খেলেই তার উপকারিতা পাওয়া যাবে সম্পূর্ণ।

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, এই মহা ঔষধ আদার কিছু ব্যবহার এবং উপকারিতা সম্পর্কে:

১. সাধারণ শারীরিক সমস্যায় আদার ব্যবহার:

প্রতিটি মানুষের স্বাভাবিক যে শারীরিক সমস্যা গুলি রয়েছে সেগুলোর মধ্যে পেট ব্যথা, পেটের গোলযোগ, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, জ্বর, বমি বমি ভাব এই সমস্ত বিষয় গুলি যেকোনো সময় যেকোনো কারণে ঘটতে পারে।

আর এমন পরিস্থিতিতে যদি কখনো পড়ে থাকেন। তাহলে এই সমস্যার সমাধান করতে পারে শুধুমাত্র আধা জল। এক গ্লাস জলে আধা ভিজিয়ে তার মধ্যে কিছু পুদিনা পাতা মিশিয়ে পান করতে পারেন।

সেই কারণে আদার ঝাঁঝালো ভাব আপনার মুখেও লাগবেনা, তার সাথে এই জল নিমিষে কিন্তু পেটের গোলযোগ, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, বমি বমি ভাব এগুলো কাটিয়ে তুলতে পারে।

২. আদা চা:

সর্দি- কাশি- জ্বর হলেই অনেকের মুখেই শোনা যায় আধা চা খেলে অনেকখানি উপকারে পাওয়া যায়। গলা খুসখুসে ভাব এর মধ্যে আদা চা যেন নিত্য সঙ্গী হয়ে যায়, অথবা এক টুকরো আদা খেলে মিটে যায় সকল সমস্যা।

মনে হয় যেন এই আধা খাওয়ার পরে থেকে গলার সমস্ত কিটকিট ভাব, জীবাণু মরে গেছে। আদার আয়ুর্বেদিক গুণাবলী সম্পর্কে সকলেরই জানা, সেই কারণে জ্বর, মাথা ব্যাথা, গলাব্যথা, এগুলি হলেই স্বাভাবিকভাবেই আধা জল অথবা আদা চায়ের কথা মাথায় আসে।

৩. ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের জন্য:

আদা শুধুমাত্র রান্নাঘরেই সীমাবদ্ধ নেই। রূপচর্চার ক্ষেত্রেও আদা তার বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। আদা হলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ একটি উপাদান। ত্বক, চুল ও স্বাস্থ্যের জন্য চমৎকার একটি প্রাকৃতিক উপাদান।

যা আমাদের অনেকখানি সহযোগিতা করে এ সমস্ত সমস্যা গুলি মেটানোর জন্য। চুল পড়ার সমস্যায় অনেকে আদার রস ব্যবহার করেন। এর ফলে চুলের গোড়া মজবুত হয়। আর আদা জল খাওয়ার ফলে ত্বকেও একটা আলাদা উজ্জ্বলতা দেখতে পাওয়া যায়।

৪. আদা ও লেবুর শরবত:

আদায় হয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য, তাই প্রতিদিন যদি আদার জল খাওয়া যায়, তাহলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। এটি সর্দি- কাশি- গলা ব্যথা, ফ্লু, এর চিকিৎসা করে খুবই দ্রুত। আর রোগী দ্রুত সরে ওঠে। বাড়ে মানসিক শক্তি, শারীরিক শক্তি, যা যেকোনো রোগের মোকাবেলা করতে যথেষ্ট।

সামান্য আদার রস, লেবুর রস, এক গ্লাস জলে মিশিয়ে তার মধ্যে কয়েক টুকরো বরফ ফেলে দিয়ে সেটি পান করতে পারেন। স্বাদ খুবই সুন্দর আর শরীরের জন্য এটা একটা মহা ঔষধ।

৫. ওজন কমাতে সাহায্য করে:

এখন বলতে গেলেই ওজন কমানোর জন্য সকলেই কত কিছুই না অবলম্বন করেন। প্রতিনিয়ত ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেওয়ায়, কিছু কারণে একটুখানি রোগা হওয়ার জন্য কত কষ্টই না করছেন নিয়মিত। যদি আদার জল পান করা যায় তাহলে শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরে গিয়ে শরীর থাকবে ঝরঝরে।

অতিরিক্ত ওজন ঝরাতে দারুন কার্যকরী এই আদা।  দ্রুত ক্যালরি বার্ন করে, খিদে বাড়ায় ঠিকই, তবে দীর্ঘক্ষন পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে, তাই অতিরিক্ত খিদে পাওয়ার হাত থেকে বাঁচা যায়। তার ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতাও কমিয়ে আনে, তাই স্বাভাবিকভাবেই ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন আদার জল খান, আধার জল রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ও ক্ষীদের মাত্রা কমিয়ে দেয়। দ্রুত ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন পান করুন আদার জল।

৬. আদার ক্যান্ডি:

সচরাচর কাঁচা আদার রস অনেকেই খেতে পারেন না। কেমন গন্ধ লাগে, তবে এমন ক্ষেত্রে এই আদার গুণাগুণ পাওয়ার জন্য গুড় দিয়ে আদার রস মিশিয়ে ক্যান্ডি বানিয়ে রাখতে পারেন। যা লজেন্স হিসেবে বাচ্চা থেকে বড় সকলেই খেতে পারবেন। তার সাথে সাথে আদার সমস্ত গুনাগুন শরীরে প্রবেশ করবে।

ক্যান্ডি বানানোর পর পাউডার সুগারের মধ্যে মিশিয়ে কাঁচের বোতলে রাখতে পারেন। যা দীর্ঘদিন পর্যন্ত ভালো থাকবে। সর্দি-কাশি, জ্বর, গলা ব্যথা, গলা খুসখুস ভাব হলেই এমন ক্যান্ডি একটা তুলে মুখে দিতেই পারেন। এর ফলে নিমিষেই কিন্তু অনেকখানি স্বস্তি পাবেন।

⭐  আধা সামান্য জিনিস হলেও এর অসামান্য গুনাগুন রোগের চিকিৎসা করতে সহযোগিতা করে। সেই কারণে অনেক প্রাচীনকাল আগে থেকেই এর কদর কিন্তু অনেক বেশি। তাছাড়া বর্তমানে আদা চায়ের কথা সকলের মুখে মুখেই। তবে সামান্য ছোটখাটো এই শারীরিক সমস্যায় আদা জল বিশেষ উপকারে আসে। নিমেষের মধ্যেই এই কষ্টগুলি থেকে উপশম প্রদান করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top