একতরফা ডিভোর্স বা এক পক্ষ থেকে ডিভোর্সের আবেদনের আইনি নিয়ম

একতরফা ডিভোর্স অথবা এক পক্ষ থেকে ডিভোর্সের আবেদন কিভাবে করা হয়? একতরফা ডিভোর্সের জন্য কি কি নিয়ম পালন করতে হয়? আসুন জেনে নিন এক পক্ষ থেকে ডিভোর্সের আবেদনের আইনি নিয়ম।

অনেক সময় দেখা যায় ডিভোর্সের ক্ষেত্রে দু’পক্ষ থেকে রাজি থাকে না। সেখানে যে কোনো একটি পক্ষ, সেটা ছেলে পক্ষ হতে পারে অথবা মেয়ে পক্ষ থেকে ডিভোর্সের জন্য আবেদন করে থাকেন। তখন সেই পরিস্থিতি অনেকটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কেননা অপরপক্ষ ডিভোর্স দিতে চান না।

যখন স্বামী অথবা স্ত্রী তাদের নিজেদের স্বার্থ অনুসারে অপরকে এক পক্ষ থেকে ডিভোর্সের জন্য বলে থাকেন, সেক্ষেত্রে সেটা একতরফা ডিভোর্স হয়ে থাকে অথবা একদিক থেকে বিবাহ বিচ্ছেদ করার জন্য বলা হয়ে থাকে।

একটি পক্ষ থেকে অথবা একতরফা থেকে ডিভোর্সের জন্য বিচারালয় অভিযোগ দায়ের করা যেতে পারে। এক পক্ষ থেকে ডিভোর্সের জন্য কেবল মাত্র কিছু নিশ্চিত আধার এর উপর নির্ভর করা হয়ে থাকে। যা কিনা হিন্দু বিবাহ অধিনিয়ম 1955 এর section-13 তে উল্লেখিত রয়েছে।

একতরফা বা এক পক্ষ থেকে ডিভোর্সের আবেদনের আইনি নিয়ম
একতরফা বা এক পক্ষ থেকে ডিভোর্সের আবেদনের আইনি নিয়ম

এমন ধরনের কিছু পরিস্থিতি যার মধ্যে ডিভোর্সের জন্য বিচারালয় অভিযোগ দায়ের করা যেতে পারে। হিন্দু বিবাহ অধিনিয়ম 1955 এর section-13 1 অনুসারে এটা হয়ে থাকে।

এমন কিছু বিষয়ের উপরে আলোকপাত করা যাক যে গুলির উপর নির্ভর করে আপনি এক পক্ষ থেকে ডিভোর্সের জন্য আবেদন করতে পারেন : 

 এই হিন্দু বিবাহ অধিনিয়ম 1955 এর শুরু হওয়ার আগে অথবা পরে যদি কোন বিয়ে হয়ে থাকে এবং তার ডিভোর্স হয়ে থাকে স্বামী অথবা স্ত্রীর দ্বারা বিচারালয় প্রস্তুত ডিভোর্সের বিষয়ের ওপর এক পক্ষ থেকে ডিভোর্স পাওয়ার জন্য যে কোন ব্যাক্তি বিচারালয় থেকে ডিভোর্স অথবা বিবাহ বিচ্ছেদের আদেশ প্রাপ্ত করতে পারেন।

যদি সেই ডিভোর্স নিম্নলিখিত যে কোনো কারণের উপর হয়ে থাকে তাহলে:

১) বিবাহের পরে নিজের স্বামী অথবা স্ত্রী ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি বা মহিলার সাথে স্বেচ্ছায় সহবাস করা হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে।

২) স্বামী অথবা স্ত্রী এর মধ্যে যেকোনো একজন বিবাহের পর সঙ্গীর সাথে কোনরকম নিষ্ঠুরতা অথবা খারাপ ব্যবহার করে থাকেন তো।

৩) স্বামী অথবা স্ত্রীর মধ্যে যে কোন একজন বিচারালয় এ এই ডিভোর্সের বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার আগে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কম করে জীবন সাথীর সাথে দু বছর পর্যন্ত একসাথে না থাকা বা তার সাথে ভালোভাবে ব্যবহার না করা।

৪) স্বামী অথবা স্ত্রীর মধ্যে যে কোন একজন হিন্দু ধর্ম থেকে অন্য কোন ধর্মে পরিবর্তন হয়ে থাকেন তো, সে ক্ষেত্রে একতরফা ডিভোর্স হতে পারে।

৫) স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে কোন একজন পাগল অথবা কোন চিকিৎসার জন্য সম্ভব নয় এমন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে যেকোনো একজনকে মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়া থেকে কিছু সময় অন্তর রোগে আক্রান্ত হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। প্রতিবাদীর সাথে থাকার কোনো রকম সম্ভাবনা নাও হতে পারে।

৬) স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে কোন একজন কোনো রকম বিশেষ রোগ অথবা কুষ্ঠ রোগ এর মত অসাধ্য রোগে পীড়িত হয়ে থাকেন, তাহলে সে ক্ষেত্রে একতরফা ডিভোর্স দেওয়া যেতে পারে।

৭) স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে কোন একজন যদি কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, যার মধ্যে দিয়ে একজন এর থেকে আরো অনেক জনের মধ্যে সেই রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে, সে ক্ষেত্রে কিন্তু যে কোন পক্ষ অপর পক্ষকে ডিভোর্স দিতে পারবেন।

৮) স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে কোন একজন যদি ধর্মকে ভালোবেসে সন্ন্যাস নিয়ে থাকেন এবং সংসারের মায়া ত্যাগ করে থাকেন সে ক্ষেত্রে এক পক্ষ অপর পক্ষকে ডিভোর্স দিতে পারবেন।

৯) এছাড়া বলা যেতে পারে, কোন ব্যাক্তি সাত বছর অথবা তার বেশি সময় ধরে জীবিত থাকা সম্পর্কে যদি না শোনা হয়ে থাকে, তাহলে এক পক্ষ অপর পক্ষকে ডিভোর্স দিতে পারবেন।

১০) স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দুজনের যেকোনো একজন যদি দাম্পত্য জীবন যাপন করার জন্য যে সমস্ত বিষয় গুলি খেয়াল রাখা জরুরী সেগুলি সম্পর্কে উদাসীনতা দেখিয়ে থাকেন, তাহলে এক পক্ষ অপর পক্ষকে অনায়াসেই ডিভোর্স দিতে পারবেন।

১১) এছাড়া যথেষ্ট কারণ তার সাথে প্রমাণ স্বরূপ আপনাকে আদালতে এই ডিভোর্সের জন্য আপিল করতে হবে। এর জন্য আপনার একজন দক্ষ উকিল এর প্রয়োজনীয়তা পড়বে। তাই এখন ডিজিটাল যুগ, তাই অনলাইনে অনেক ডিভোর্স সম্পর্কিত উকিলের সাথে আপনি যোগাযোগ করতে পারেন।

সেখান থেকে আপনার সাধ্যমত তার সাথে খুব সহজে এমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন যে উকিলের সাহায্যে, তাঁকে এমন মামলাতে নিযুক্ত করুন। যার ফলে খুব সহজেই কিছু প্রমান পত্রের মাধ্যমে আপনি এমন পরিস্থিতি থেকে অনায়াসেই বেরিয়ে আসতে পারবেন।

এছাড়া ডিভোর্সের ব্যাপারে সমাজে অনেক রকম রটনা অথবা কথাবার্তা হয়ে থাকে। তাই উপযুক্ত প্রমাণ স্বরূপ আপনি এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন যার ফলে আপনাকে পরবর্তীতে কোনো রকম হেনস্থার মুখোমুখি না হতে হয়।

তাছাড়া বলা যেতে পারে, বৈবাহিক সম্পর্ক একটি সুন্দর সম্পর্ক, যেখানে দুটি মানুষের মনের মিল এর সাথে সাথে সুন্দর ব্যবহার, একে অপরের যত্ন নেওয়া, একে অপরের প্রতি দায়িত্ববান হওয়া, সবকিছু নির্ভর করে একটি দাম্পত্য জীবন সুখের হয়। আর সেগুলো যদি একটি বৈবাহিক জীবনে না থেকে থাকে, তাহলে সেটা একদিন না একদিন ডিভোর্সের দিকে পৌঁছাতে পারে।

উপযুক্ত কারণ গুলি উপরে আলোচনা করা হল। এগুলির মধ্যে আপনার জীবনে যদি এমন কিছু ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে জীবনকে দুর্বিষহ না করে তুলে অনায়াসেই এমন সিদ্ধান্ত আপনি নিতেই পারেন।

একতরফা ডিভোর্স দেওয়া যেতে পারে, সেখানে অপর পক্ষের কোনরকম অনুমতি প্রয়োজন পড়বে না। যদি উপযুক্ত কারণ আপনি দেখাতে পারেন তো।

চিকিৎসা সম্ভব নয় এমন রোগ, বিয়ের বাইরেও যৌন সম্পর্ক এগুলো যখন মেনে নেওয়া যায়না তখন এমন পরিস্থিতিতে একতরফা ডিভোর্স অথবা বিবাহ বিচ্ছেদ করা অনেকের কাছে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ বলতে পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top