কালী পুজো, দীপাবলি মানে চারিদিকে আলোর রমরমা আর শাস্ত্র মতে লক্ষ্মী পূজা থেকে দীপাবলি পর্যন্ত এই সময়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়।
দীপাবলির আগে এমন অনেক কাজ রয়েছে সেগুলি যদি আপনি নিষ্ঠা ভরে এবং নিয়ম মেনে পালন করে থাকেন, তাহলে লক্ষ্মী দেবীকে প্রসন্ন করার পাশাপাশি আপনার ঘরেতে সারা বছর অর্থের অভাব হবে না। এই বিষয় গুলি আপনাকে এমন ভাবে খেয়াল রাখতে হবে, যার জন্য দীপাবলিতে সেগুলি যেন সঠিকভাবে পালন করতে পারেন।
দুর্গাপূজো শেষ হওয়ার সাথে সাথে এই যে কালী পূজা ও দীপাবলি উৎসব, আলোর উৎসব হিসেবে আমাদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। তাছাড়া অনেক দিন আগে থেকে কালীপুজোর তোড়জোড় শুরু হয়েই যায়।
তবে এমন কিছু নিয়ম রয়েছে সেগুলি মেনে চললে বাড়িতে আসবে সুখ, শান্তি এবং সমৃদ্ধি। তার পাশাপাশি ধন-সম্পদ বৃদ্ধি হবে, আপনার মনের যত ইচ্ছা আছে সব কিছু পূর্ণ হবে তাড়াতাড়ি।
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, এমন কিছু নিয়ম সম্পর্কে যেগুলি আপনি দীপাবলিতে পালন করতে পারেন:
১) কাঁচা দুধ ও মধু:
আরও অন্যান্য পূজা পার্বণে কাঁচা দুধ প্রয়োজন পড়ে, আর কালীপূজা এবং দীপাবলিতে বাস্তু, শাস্ত্র, অনুসারে দীপাবলীর আগে রোজ সন্ধ্যার সময় কিছুটা কাঁচা দুধ ও মধু একসাথে মিশিয়ে, সেটি দুই ভাগে ভাগ করে একটি ভাগ পরিবারের সদস্যদের স্নানের জন্য এবং অপর একটি ভাগ বাড়ির বিভিন্ন অংশ শুদ্ধ করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, বাড়ির কোন অংশ যেন কোনভাবেই বাদ না পড়ে। এমনটা করার ফলে বাড়ির মধ্যে থাকা সমস্ত নেতিবাচক শক্তি দূর হয়ে গিয়ে শুভ শক্তির সূচনা হয়।
২) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা:
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আমাদের জীবনে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। আর উৎসব পার্বণ আসলে তো সেটা আরো বেশি দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়ে যায়।
সেই কারণে দীপাবলির আগে প্রতিদিন ঘর বাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখার চেষ্টা করুন, আর এই কাজটি যত তাড়াতাড়ি পারেন, সেরে ফেলতে পারেন।
তাছাড়া ঘরবাড়ি সাজানো এবং লক্ষী দেবীর পায়ের চিহ্ন আঁকা এগুলিও করতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে যে, এই লক্ষী দেবীর পদচিহ্ন যেন বাড়ির ভিতর দিকে থাকে।
যেহেতু দীপাবলিতে অর্থাৎ কালী পূজাতে দীপান্বিতা লক্ষ্মী পূজা করা হয় সেই কারণে মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ আপনার বাড়িতে সর্বদাই থাকবে।
৩) জলে মোমবাতি ও ফুল:
দীপাবলি তে বাড়িতে দেখা যায় খাল, বিল, পুকুর এর মধ্যে প্রদীপ, মোমবাতি এগুলি ভাসিয়ে দেওয়া হয়। যা কিনা অমাবস্যার সেই অন্ধকারকে কাটিয়ে চারিদিক আলোকময় করে তোলে।
আর বাস্তু, শাস্ত্র, মতে জলে মোমবাতি রেখে তাতে ফুলের পাপড়ি ভাসালেও শুভ ফল পাওয়া যায়। তাছাড়া কোন কাঁচের পাত্রের জল রেখে তাতে ভাসমান মোমবাতি এবং ফুলের পাপড়ি দিয়ে সাজিয়ে রাখতে পারেন। যা কিনা ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার পাশাপাশি, ঘরকে সুগন্ধিত করবে এবং ঘরে শুভ শক্তির সূচনা হবে।
৪) আম, বট, অশ্বত্থ পাতার তোরণ:
প্রতিটি পূজা পার্বণে এই তোরন গুলি সদর দরজায় লাগালে শুভ লাভ পাওয়া যায়। সেই কারণে দীপাবলির দিন বাড়ির সদর দরজায় আম পাতা, বটপাতা অথবা অশ্বত্থ পাতার তোরণ লাগালে আপনার ঘর টিকে যেমন পূজা পার্বণের লুক দেবে, তেমনি দেখতে সুন্দর হওয়ার পাশাপাশি শুভশক্তির প্রবেশ ঘটবে।
তবে এক্ষেত্রে পাতার সংখ্যা যেন বিজোড় হয়ে থাকে। যদি পাতা দিয়ে তৈরি করা সম্ভব না হয়, তাহলে কিনতেও পাওয়া যায়, সেগুলিও লাগাতে পারেন।
৫) শুকনো খেজুর:
দীপাবলির দিন ১১ টি শুকনো খেজুর তার সাথে একটি রুপোর কয়েন লাল কাপড়ের মুড়ে মা লক্ষ্মীর আসনের সামনে সারারাত রেখে দিতে হবে।
তারপরে, পরের দিন সেগুলো টাকা রাখার জায়গায় অর্থাৎ আপনার সিন্দুকে রেখে দিন, এতে ধন-সম্পদ বৃদ্ধি হয় বলে জানা যায়।
৬) উপহার:
প্রতিটি উৎসব মানেই উপহার আদান প্রদান করা। তার সাথে সাথে অনেকখানি খুশি ও আনন্দ ভাগ করে নেওয়া। আর তাইতো দীপাবলিতে সকল আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে উপহার প্রদান করা হয়।
এই দিন আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের কিছু উপহার দিন এবং মিষ্টিমুখ করান। এর ফলে আপনি আপনার এই দীপাবলির আনন্দ অনেকখানি ভাগ করে নিতে পারবেন সকলের সাথে।
৭) গরিবদের জন্য দান করুন:
গরিব, দুঃখী মানুষদের মধ্যে কিছু দান বিতরণ করা মানে আপনি অনেকখানি পূণ্যের কাজ করছেন। তবে যে কোন উৎসব উপলক্ষে যদি আপনি এই কাজটি করে থাকেন তাহলে আরও বেশি শুভ ফল পাবেন এবং পুণ্য অর্জন করতে পারবেন।
অবশ্যই মন্দিরে অথবা গরিবদের সাধ্যমত কিছু দান করুন, এর ফলে আপনি যেমন পাবেন মনে অনেকখানি প্রশান্তি, তেমনি তাদের মুখের হাসি আপনার জীবনে নিয়ে আসবে সমৃদ্ধি।
৮) বিভিন্ন রঙের মাটির প্রদীপ:
কালীপূজায় দীপাবলি মানেই চারিদিকে আলোর রমরমা এবং রঙের ছড়াছড়ি, তাই দীপাবলির দিন সন্ধ্যাবেলা, লাল, হলুদ, সবুজ, কমলা, নানা রঙের প্রদীপ আপনার আশেপাশে থাকা যে কোনো পাঁচটি মন্দিরে জ্বালাতে পারেন এবং ঘরটাকেও সুন্দর করে প্রদীপের আলোয় সাজিয়ে তুলতে পারেন।
এর পাশাপাশি যখন প্রদীপ গুলি জ্বালাবেন, তখন মনের ইচ্ছা গুলি মা কালীর কাছে জানাতে পারেন, সেই ইচ্ছা গুলি আপনার খুব তাড়াতাড়ি পূর্ণ হবে।
৯) ঘর ও মন্দির রাখুন সাজিয়ে:
দেব দেবীদের সন্তুষ্ট করার প্রাথমিক বিষয় হল ঘর অথবা মন্দির সুন্দর করে সাজিয়ে, পূজার পরিবেশ তৈরি করা। সেই কারণে কালী পূজার অনেক আগে থেকেই আপনাকে এই কাজে লেগে পড়তে হবে।
ঘর হোক অথবা মন্দির, সুন্দর করে সাজিয়ে তুলুন, বিভিন্ন রকম সাজানোর উপাদান দিয়ে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন সর্বদাই।
⭐ এ সমস্ত বিষয় গুলি আপনি যদি মন থেকে সুন্দর করে মেনে থাকেন, তাহলে আপনার সারা বছর কোনরকম অর্থের অভাব হবে না। যে কোন কাজে সফলতা পাবেন খুব শীঘ্রই।
জীবন থেকে অভাব অনটান দূর করার জন্য আপনাকে একটু তো কষ্ট করতেই হবে। তাই দীপাবলির আগে এবং দীপাবলি চলাকালীন কালীপূজাতে এই সমস্ত কাজগুলি করে নিজের সৌভাগ্য ফিরিয়ে আনুন।