প্রতিটি পূজায় যেমন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম মেনে চলতে হয়। তবেই সেই পূজার সম্পূর্ণ ফলাফল পুণ্য অর্জন করা যায় এবং মনস্কামনা পূর্ণ হয়। তেমনি কিন্তু এই ছট পূজার সময় আপনাকে এমন অনেক বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে, তবেই এই পূজার সম্পূর্ণ শুভ লাভ আপনি পাবেন।
প্রতিবছর কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ তিথিতে পালিত হয়, এই পবিত্র উৎসব ছট পূজা। সমস্ত উৎসব ও উপবাসের মধ্যে এটি হলো সব থেকে কঠিন উপবাস গুলির মধ্যে একটি বিশেষ করে বিহার এবং উত্তরপ্রদেশের মানুষজন এই ছট পূজার উৎসব খুবই আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালন করেন।
ছট উৎসব আসলে বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত একটি উৎসব, যেখানে ছট মাইয়া এবং সূর্যদেবের পূজা করা হয়, প্রথমত স্নান তারপরে খরনা এবং তৃতীয় দিনে সূর্যকে অর্ঘ্য নিবেদন করা হয় এবং দীপাবলীর ৬ দিন পর অর্থাৎ কার্তিক মাসের ষষ্ঠ দিনে এই মহা পর্ব ছট পালিত হয়। স্নান থেকে এবং ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত উপবাস রেখে সূর্যদেবতা এবং ছটি মাইয়ার পূজার মাধ্যমে উৎসব শুরু করা হয়।
ছট পূজাতে আপনাকে এমন কিছু বিষয়ের প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখা জরুরি, যার ফলে আপনি এই পূজার সম্পূর্ণ শুভ লাভ অর্জন করতে পারবেন। ছট পূজাতে কি করবেন আর কি করবেন না তা নিয়ে অনেকেই হয়তো চিন্তিত থাকেন। চিন্তার কোন কারণ নেই।
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, ছট পূজার গুরুত্বপূর্ণ নিয়মগুলি সম্পর্কে:
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন
প্রতিটি পূজা পার্বণ যেমন নিষ্ঠা ভরে প্রতিটি নিয়ম মেনে পালন করলে এর শুভ লাভ পাওয়া যায়, তেমনি ছট পূজার ক্ষেত্রেও অনেক কঠিন এবং সুন্দর নিয়ম রয়েছে। যেগুলি পালন করার মধ্য দিয়ে আপনি সূর্যদেব কে এবং ছটি মাইয়া কে সন্তুষ্ট করতে পারবেন।
ছট পূজায় কি করবেন আর কি করবেন না:
সুচিপত্র
- ১) নতুন উনুন ব্যবহার করা উচিত:
- ২) প্রসাদ তৈরি করার সময় পবিত্রতা বজায় রাখা:
- ৩) ঘরবাড়িতে ময়লা আবর্জনা একেবারেই থাকা উচিত নয়:
- ৪) প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা:
- ৫) বিছানাতে ঘুম একেবারে নিষিদ্ধ:
- ৬) কাম, ক্রোধ, লোভ, থেকে দূরত্ব বজায় রাখা:
- ৭) সাত্ত্বিক খাবার গ্রহন:
- ৮) ব্রতীদের সেবা করা:
- ৯) নতুন পোশাক পরিধান করা:
- ১০) অর্ঘ্য নিবেদন করার নিয়ম:
১) নতুন উনুন ব্যবহার করা উচিত:
ছট পুজোর জন্য ছুটি মাইয়ার নৈবেদ্য দেওয়ার যে ভোগ গুলি প্রস্তুত করা হয়, সেগুলো খুবই যত্ন সহকারে প্রস্তুত করা হয় এর জন্য উনুন এর প্রয়োজন পড়ে।
এটি সর্বদা একটি নতুন উনুন ব্যবহার করে তবেই সেটি এই পূজার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়িতে মাটির উনুন তৈরি একটি ঐতিহ্যবাহী নিয়ম রয়েছে, পূজার আগেই সেই উনুন তৈরি করতে হয়।
আর যদি গ্যাস ব্যবহার করতেই হয় তবে একটি নতুন ওভেন ব্যবহার করতে হবে। যা প্রতি বছর শুধুমাত্র ছট পূজার দিনেই বের করা উচিত।
আর এটিই ছট পূজার একটি ঐতিহ্যবাহী নিয়ম, যা কিনা ছট পূজার প্রসাদ তৈরি করার ক্ষেত্রে আগে থেকে তৈরি করা উনুন ব্যবহার করা যাবে না।
২) প্রসাদ তৈরি করার সময় পবিত্রতা বজায় রাখা:
প্রতিটি পূজায় পবিত্রতা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তার নতুন করে বলার কিছু নেই। ছট পূজায় প্রসাদ তৈরির ক্ষেত্রে যে জায়গায় বসে তৈরি করা হবে সেই জায়গাটি এবং সেই ঘরটি সুন্দর করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে পরিশুদ্ধ করতে হবে, এর বিশুদ্ধতার জন্য বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়।
তাছাড়া যে শস্য দিয়ে তৈরি করা হবে প্রসাদ, এই সময় পাখি যেন সেই শস্য নোংরা না করে সেদিকেও বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখা উচিত।
কেউ যদি ভুলবশত শষ্যের উপরে পড়ে যায়, তাহলে এটি অশুভ লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাইতো সকলের চোখের আড়ালে শস্য রাখা হয়।
৩) ঘরবাড়িতে ময়লা আবর্জনা একেবারেই থাকা উচিত নয়:
ঘরে ময়লা আবর্জনা থাকা মানে লক্ষ্মী বাড়ি থেকে চলে যাবে, কেননা এমন জায়গায় মা লক্ষ্মী কখনোই থাকতে পারেন না। পূজার সময় মাটির পাত্র, নোংরা কাপড় চোপড় স্তুপ করে রাখা উচিত নয়, যে জায়গায় প্রসাদ তৈরি করা হবে, সেখানে সাধারণ খাবার তৈরি যেন না করা হয়।
এছাড়াও সেই স্থানে কোনরকম খাবার খাওয়াও কিন্তু নিষিদ্ধ। পূজার আগে অবশ্যই ঘরবাড়ি সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।
৪) প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা:
প্রকৃতি আমাদের সকলের জন্য দুহাত ভরে সবকিছু ঢেলে দিয়েছে। প্রাকৃতিক জিনিসপত্র আমাদের জীবনে অনেক সুন্দর ধারণা পোষণ করার পাশাপাশি জীবনকে করে তোলে বিশুদ্ধময়। পুজোর জন্য শুধুমাত্র বাঁশের তৈরি ঝুড়ি ব্যবহার করা হয়।
একটু খেয়াল করলে লক্ষ্য করবেন যে, ছট পুজোর সময় কখনোই কিন্তু স্টিল অথবা কাঁচের পাত্র ব্যবহার করা হয় না। প্রসাদ ও খাঁটি ঘি দিয়ে তৈরি করা হয় এবং শুধুমাত্র ফল ব্যবহার করা হয় নৈবেদ্য হিসাবে।
৫) বিছানাতে ঘুম একেবারে নিষিদ্ধ:
আরামদায়ক ঘুমের জন্য বিছানা অত্যন্ত জরুরি। তবে ছট পূজাতে যারা উপবাস রাখবেন, তাদের জন্য পূজার চার দিন এই নিয়ম মেনে চলতে হবে যে, উপবাস থেকে বিছানায় কোনমতেই ঘুমানো যাবে না, এটা একেবারেই নিষিদ্ধ।
এমন পরিস্থিতিতে যারা ব্রত পালন করছেন তারা মাটিতে মাদুর বিছিয়েও ঘুমাতে পারেন অথবা কোন নরম কম্বল ও ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে সেটা মাটিতে অথবা ঘরের মেঝেতে।
৬) কাম, ক্রোধ, লোভ, থেকে দূরত্ব বজায় রাখা:
মানুষের জীবনে এই বিষয় গুলি বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে। তবে মনে রাখতে হবে যে, ছট পুজোর সময় সারা সপ্তাহ উপবাসের সময় যারা উপবাস রাখবেন তারা যেন মিথ্যা কথা না বলে, বাসি জিনিস না খায়, কাম, ক্রোধ, লোভ, ধূমপান, এই সমস্ত বিষয় থেকে একেবারেই দূরত্ব বজায় রাখেন, সম্পূর্ণ ব্রহ্মচর্য পালন করতে হয়।
এছাড়া কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করা যাবে না, কঠোর ভাষা ব্যবহার করা যাবে না, কোন কারনে গালিগালাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে, এই কটা দিন। শুধুমাত্র এই কটা দিন শুধুই নয়, সারা জীবন যদি এই নিয়ম মেনে চলা যায় তাহলে জীবন অনেক সুন্দর, তাই না !
৭) সাত্ত্বিক খাবার গ্রহন:
ছট পূজার সময় নিরামিষ খাবার খাওয়ার পাশাপাশি শুধুমাত্র সাত্ত্বিক খাবার তৈরি করতে হয়। সেটা হল প্রসাদ বানানোর সময় ভুল করেও হাত দিয়ে লবণ স্পর্শ করা উচিত নয়।
যারা ব্রত পালন করছেন এবং পরিবারের সদস্যরাও ছট পূজার সময় পেঁয়াজ, রসুন, মাংস এবং মাছ খেতে পারবেন না কোনোভাবেই।
৮) ব্রতীদের সেবা করা:
ছট পুজোর সময় নারী অথবা পুরুষ যারা উপবাস রাখবেন তাদেরকে সেবা যত্ন করা বা খাবার পরিবেশন করলে আশীর্বাদ পাওয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে ছট পূজার উপবাস অত্যন্ত ধার্মিক মনে করে বিশ্বাস করা হয়। তাই উপবাস পালন করা ফলদায়ক বলে মনে করা হয়।
তার সাথে সাথে যারা উপবাস রাখবেন তাদের সেবা যত্নে যদি অংশগ্রহণ করা যায়, সে ক্ষেত্রেও অনেক পুণ্য অর্জন করা যায়। ব্রত পালনকারীদের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করার ক্ষেত্রে আশীর্বাদ পাওয়ার পাশাপাশি এগুলি শুভ কাজ বলেও মনে করা হয়।
৯) নতুন পোশাক পরিধান করা:
প্রতিটি পূজা তে নতুন পোশাক, শুদ্ধ পোশাক পরা উচিত বলে মনে করা হয়। কেননা সেগুলি পবিত্রতা বজায় রাখে। ছট উৎসবের চারদিনে কিন্তু উপবাসের সময় নতুন পোশাক পরতে হয়।
মহিলারা শাড়ি পরবেন এবং পুরুষরা ধুতি, পাঞ্জাবি পরবেন। এমনটাই নিয়ম রয়েছে অনেক দিন আগে থেকে।
১০) অর্ঘ্য নিবেদন করার নিয়ম:
ছট পূজার সময় সূর্যকে অর্ঘ্য নিবেদন করতে হয়। বাড়ীর অথবা পরিবারের অন্যান্য লোকেরা যদি সূর্যকে অর্ঘ্য নিবেদন করতে চান, তবে তার আগে কখনো খাবার গ্রহণ করা চলবে না। এর পাশাপাশি প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে সূর্যকে জল নিবেদন করেই ব্রতীরা খাবার গ্রহণ করবেন।
সকালে অথবা সন্ধ্যার সময় অর্ঘ্যের সময় তামার পাত্র ব্যবহার করা উচিত বলে মনে করা হয়। তামার পাত্র থেকে সূর্যদেবকে জল / অর্ঘ্য নিবেদন করলে বিশেষ কৃপা লাভ করা যায়।
সবাই চান যে, সংসারে আসুক সুখ, শান্তি সমৃদ্ধি। সেই কারণে কঠিন থেকে কঠিনতম উপবাস হলেও তা পালন করার চেষ্টা করেন সকল ব্রতিরা। সেই কারণে ছট পূজার সমস্ত পুণ্য অর্জন করার পাশাপাশি সূর্যদেবকে সন্তুষ্ট করার জন্য আপনাকে এই সমস্ত নিয়ম গুলি খুবই ভালোভাবে এবং নিষ্ঠার সাথে পালন করতে হবে। তবেই কিন্তু আপনি এই ছট পূজার শুভফল লাভ করতে পারবেন।