Rakhi Purnima 2023: রাখি পূর্ণিমার দিন ভুলেও করবেন না যে কাজগুলি

হিন্দু রীতি রেওয়াজ অনুসারে যে উৎসব গুলি পালন করা হয় তার মধ্যেও থাকে অনেক বিধি নিষেধ। সেগুলি মেনে এই উৎসবগুলি পালন করতে হয়। তা না হলে শুভ ফল হওয়ার পরিবর্তে অশুভ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি।

তাইতো শুভ সময়, শুভ তিথি উপলক্ষে অপেক্ষা করে থাকা হয় সেই উৎসবটি পালন করার জন্য। তেমনি একটি উৎসব হলো রাখি বন্ধন, ভাই বোনের সুন্দর একটি মিষ্টি বন্ধন কে উপলক্ষ করে এই রাখি পূর্ণিমা উৎসব পালিত হয় বিভিন্ন জায়গায়।

তবে রাখি বন্ধন উৎসব ভাই এর হাতে বোনেরা রাখি বেঁধে থাকেন। তার মধ্যেও থাকে শুভ সময়। সেই শুভ সময় উপলক্ষ করেই রাখি বাঁধতে হয়। মানতে হয় অনেক বিধি নিষেধ। আর এগুলি মানার মধ্যে দিয়ে ভাইয়ের জন্য যা কিছু হয় সবই শুভ হয়।

রাখি পূর্ণিমা: রাখি পূর্ণিমার দিন ভুলেও করবেন না যে কাজগুলি
রাখি পূর্ণিমা: রাখি পূর্ণিমার দিন ভুলেও করবেন না যে কাজগুলি

ভাই ও বোনের দৃঢ় ভালোবাসার প্রতিক শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হওয়া এই রাখি বন্ধন একটি পবিত্র উৎসব। রাখি বন্ধনের দিন বোনেরা ভাইয়ের হাতে বিধি বিধান অনুযায়ী রাখি বাঁধলে শুভ ফল পাওয়া যায় জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে।

ভাইয়ের হাতে রাখি বাঁধার সময় দিক খেয়াল রাখা খুবই জরুরী, এর পাশাপাশি রাখি বাঁধার সময় মন্ত্র ও বিধির যত্ন নেওয়াও জরুরী বলে মনে করা হয়।

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, রাখি বন্ধন উৎসবে ভাইয়ের হাতে রাখি বাঁধার সময় আপনাকে কোন কোন বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে:

১) রাখি বাধার সময় দিক এর বিষয়টা খেয়াল রাখুন:

দশটি দিক নিয়ে আমাদের চারিপাশ। তবে চারটি দিক খুবই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ। সে যাই হোক তবে এই দিক গুলোর উপর নির্ভর করে শুভ অনুষ্ঠান ও শুভ কাজ সম্পন্ন করা হয় শাস্ত্র অনুসারে।

রাখি পূর্ণিমার দিন রাখি বাঁধার সময় ভাইয়ের মুখ পূর্ব দিক বা উত্তর দিকে হওয়া উচিত। সেই সঙ্গে ভাইয়ের পিঠ পশ্চিম দিক বা দক্ষিণ দিকে হওয়া উচিত। ভাইকে এটাও মনে রাখতে হবে যে, রাখি বাঁধার সময় মাথায় কোন কাপড় বা রুমাল রাখতে হয়।

খালি মাথায় রাখি বাঁধা কখনোই শুভ ফল দেয় না। রাখি বাঁধার আগে মাথায় কাপড় বা রুমাল রাখুন তারপরেই বোনের তিলক গ্রহণ করুন। এর ফলে মনের মধ্যে শ্রদ্ধা ও ভক্তি অবস্থান করে, আর এই রাখি পূর্ণিমা উৎসবটি আরো বেশি শুভ ফলদায়ক হয়ে ওঠে।

২) মিষ্টি মুখ:

রাখি পরানোর সময় ভাইকে অথবা দাদাকে কোনরকম নোনতা জাতীয় খাবার একেবারেই দেওয়া উচিত নয়। যতটা সম্ভব মিষ্টি খাবার দিতে হবে, সেই কারণে এই উৎসবে মিষ্টিমুখটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

৩) রাখি পরানোর মন্ত্র:

কোন শুভ অনুষ্ঠানে শুভ ফল পাওয়ার জন্য মন্ত্র উচ্চারণ করে মনের ভক্তি ও নিষ্ঠা জানানো হয় ঈশ্বরের কাছে। সেই কারণে রাখি পরানোরও একটি নির্দিষ্ট মন্ত্র রয়েছে, যেটি এই উৎসবে খুবই প্রযোজ্য।

মন্ত্র:  যেন বদ্ধ বলি রাজা দানবেন্দ্র মহা বলঃ। তেন ত্বমা রক্ষ বধ্নামি, রক্ষে মাচল মাচলঃ।

অর্থ: অর্থাৎ যে রক্ষা সুতো পরম দয়ালু রাজা বলি কে বাধা হয়েছিল, সেই পবিত্র সুতোই আমি তোমার হাতে বাঁধলাম, যা তোমাকে সর্বদা বিপত্তি থেকে রক্ষা করবে।

৪) মঙ্গল থালি:

রাখি পূর্ণিমার দিন একটি মঙ্গল থালিতে ফুল, চন্দন, জলন্ত প্রদীপ, কুমকুম, তার সাথে সুন্দর একটি রাখি সেটা হতে পারে নিজের হাতে বানানো কোন ফুলে রাখি অথবা যেকোনো রাখি। ভাই বা দাদাকে রাখি পরানোর সময় এগুলি সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে হবে মঙ্গল থালিতে।

৫) উপহার:

রাখি পূর্ণিমা উৎসব উপলক্ষে ভাইয়ের হাতে রাখি বেঁধে ভাইয়ের মঙ্গল কামনা করার জন্য বোন যেমন ভাইকে উপহার দিয়ে থাকেন, তেমনি ভাই ও কিন্তু বোনের জন্য অথবা দিদি কে উপহার দিয়ে থাকেন। তো এক্ষেত্রে এই শুভদিনে বোনকে এবং ভাইকে কোনভাবে কালো কোন জিনিস উপহার দেওয়া উচিত নয়। এতে সম্পর্ক খারাপ হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

৬) ইষ্ট দেবতার চরণে রাখি উৎসর্গ:

প্রতিটি জিনিস ঈশ্বরের চরণে আগে অর্পণ করলে সেটি আরো বেশি শুভ ফলদায়ক হয়ে ওঠে। তাই রাখি পূর্ণিমার দিন ভাই অথবা দাদাকে রাখি বাঁধার আগে যে রাখি কিনে আনা হয় অথবা তৈরি করা হয় তা অবশ্যই কিছুক্ষণ বাড়ির ইষ্ট দেবতার চরনে বা ঠাকুরের চরণে রেখে তারপরে কিন্তু ভাই অথবা দাদার হাতে বাঁধতে হয়। মনে করা হয় এতে অনেক খানি ভক্তি ও শ্রদ্ধা মিশ্রিত থাকে। তার পাশাপাশি ভাইয়ের জন্য মঙ্গল কামনা করা হয়ে যায় অনেক আগেই।

৭) মাটির প্রদীপ:

এই শুভদিনে রাখি পরানোর আগে একটি মাটির প্রদীপ জ্বালানো খুবই মঙ্গলজনক ভাই বা দাদার সারাজীবন রোগ মুক্তির কামনা করে এই প্রদীপ জ্বালাতে হয়। এর ফলস্বরূপ সমস্ত বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

৮) এই দিন রাধা কৃষ্ণের মূর্তির সামনে একটি মাটির প্রদীপ জ্বালাতে হয়, তাতে সংসারে অর্থের আগমন ঘটে।

৯) এই শুভদিনে স্নানের জলে তিল মিশিয়ে স্নান করা উচিত যা খুবই শুভ ফলদায়ক।

১০) গরীব দুঃখীদের কিছু দান করা খুবই মঙ্গল জনক বলে মনে করা হয়। তাই এই শুভ দিনটাও কখনোই হাতছাড়া করবেন না। গরিব দের কিছু অর্থ, বস্ত্র, খাদ্য দান করুন যা তাদের অনেকখানি সহযোগিতা করবে জীবনযাপনে।

১১) এই শুভদিনে মা লক্ষ্মীর সামনে নারকেল প্রদান করুন, শিষ যুক্ত ডাব দিয়ে পূজা করতে পারেন।

১২) তারপর সারাদিন পর সন্ধ্যা আরতির পরে চন্দ্র প্রণাম করা উচিত, তাতে আপনার এবং আপনার পরিবারের সকল সদস্যের সৌভাগ্য ফিরে আসবে।

রাখি পূর্ণিমা উৎসবে “ভাদ্র কাল” এর গুরুত্ব:

জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে যেকোন শুভ কাজ করার আগে ভাদ্র যোগ সম্পর্কে আগাম যাচাই করা উচিত। কেননা ভাদ্র কালের মধ্যে কোনরকম মঙ্গল কাজ অথবা উৎসব শুরু করা অথবা শেষ করার অর্থ হলো ওই কাজের ফলাফল অশুভ হওয়া।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে সূর্যদেবের কন্যা এবং শনিদেবের ভগ্নির নাম ভদ্রা। তার নাম থেকে এসেছে ভাদ্র কাল। শনিদেবের মতোই ভদ্রা দেবীর স্বভাব অত্যন্ত কঠোর প্রকৃতির।

তাইতো তার স্বভাবের পরিবর্তনের জন্য ব্রহ্মা তাকে বিষ্টি করণে স্থান দেন। পঞ্চাঙ্গের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো এই বিষ্টি করণ। ভাদ্র এর অবস্থানকালীন সময়ে কোনরকম শুভ কাজ যেমন ধরুন কোন জায়গায় যাত্রা করা বা উৎপাদনের কাজ একেবারেই করতে নেই।

তবে ভদ্রকালে তন্ত্র-কর্ম, আদালত ও রাজনৈতিক কর্ম করলে সাফল্য আসে বলে জানা যায়। সেই কারণে রাখি পূর্ণিমা বা রাখি বন্ধন উৎসব খুবই শুভ উৎসব, তাই এই শুভ কাজ কোনোভাবেই ভাদ্র কালে করা উচিত নয়। এই সময় বিবেচনা করে তবেই কিন্তু রাখি বাঁধবেন।

“ফুলো কা তারোকা সব কা কেহেনা হে, এক হাজারো মে মেরি বেহেনা হে” ভাই বোনের এই সু সম্পর্কের একটি সুন্দর অনুষ্ঠান হলে রাখি বন্ধন। হিন্দু, জৈন, শিখরাও রাখি পালন করে। রাখি বন্ধনের ইতিহাস তো আছেই, তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমস্ত দেশের মধ্যে বা সমস্ত জাতির মধ্যে ভাতৃত্ববোধ গড়ে তুলতে রাখি বন্ধন উৎসব চালু করেছিলেন।

রাখি পূর্ণিমা এমনই একটি শুভ উৎসব যেখানে ভাই বোনের সম্পর্ককে আরো বেশি দৃঢ় করতে সাহায্য করে। আর এই উৎসব প্রতিবছরে প্রতিটি ভাই বোনের কাছে এক পরম পাওয়া।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top