Kojagari Lakshmi Puja 2023: মনের মত ফল পেতে এই কাজগুলি ভুলেও করবেন না

বাঙালির সবথেকে বড় উৎসব হলো দুর্বোৎসব, এই দুর্গাপূজায় সকলেই ভীষণ আনন্দ উপভোগ করে থাকেন। তবে পূজো আসছে, এই যে আনন্দ সেটাই যেন বেশি ভালো লাগে, আর পুজো চলাকালীন সেই কটা দিন তো আনন্দের সীমা থাকে না। পুজো কয়েক দিনের মধ্যে যেন শেষ হয়ে যায়, বোঝাই যায় না যে দুর্গাপূজা আসতে আসতে এত তাড়াতাড়ি চলে গেছে।

দেবী দুর্গা কৈলাসে পাড়ি দেওয়ার সাথে সাথেই সকল বাঙালি হিন্দুদের মন খারাপ শুরু হয়ে যায়। তবে আর কটা দিন পরেই দেবী লক্ষ্মী সকলের ঘরে পূজা পাওয়ার জন্য চলে আসেন। আর এই লক্ষ্মীপূজাকে বলা হয় কোজাগরি লক্ষ্মী পূজা

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা: মনের মত ফল পেতে এই কাজগুলি ভুলেও করবেন না
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা: মনের মত ফল পেতে এই কাজগুলি ভুলেও করবেন না

লক্ষ্মী দেবীকে নিজেদের ঘরে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এই পূজার দিনে সমগ্র গৃহস্থ বাড়িতে তোড় জোড় লেগেই যায়। তবে এমন অনেক কাজ রয়েছে যেগুলি আপনি কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার দিন একেবারেই করবেন না। বলতে গেলে এগুলি নিষেধ ও করা হয়েছে শাস্ত্রতে।

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজায় এই পদ্ধতি মানলে হবে মা লক্ষ্মীর প্রচুর কৃপা

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার আনন্দে মাতবেন না এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। বিসর্জন এবং বিজয়ার মন খারাপ কাটিয়ে তুলে কোজাগরী লক্ষ্মীপূজাতে লক্ষ্মীর আরাধনায় মেতে ওঠেন সকলেই।

আশ্বিন মাসের শেষে পূর্ণিমা তিথিতে এই কোজাগুলি লক্ষ্মী পূজা প্রতিটি বাঙালি হিন্দুদের ঘরে ঘরে ছোট করে হলেও অথবা বড় করে হলেও খুবই ধুমধাম এর সাথে পালন করা হয়।

এছাড়া শাস্ত্রমতে দেবী লক্ষ্মী হলেন ধন-সম্পদের দেবী, তাই তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য পূজোর আয়োজনে কোনরকম কমতি থাকে না। এছাড়া প্রায় প্রতিটি হিন্দু বাড়িতে বৃহস্পতিবার নিয়ম করে লক্ষ্মী পূজা করা হয়।

আবার দেখা যায়, দীপাবলি অর্থাৎ কালী পূজার সময়ও বাড়িতে লক্ষ্মী দেবীর আরাধনা করা হয়। অন্যদিকে পৌষ সংক্রান্তি, চৈত্র সংক্রান্তি, এই ধরনের বিশেষ কিছু তিথিতে লক্ষ্মী দেবীর আরাধনা তে মেতে ওঠেন সকল হিন্দু পরিবার।

কোথাও কোথাও দেবী লক্ষ্মী ঘটে পূজিতা হয়ে থাকেন, আবার পটেও পূজিতা হয়ে থাকেন। আবার কোথাও কোথাও দেবী লক্ষ্মীর মূর্তি গড়েও পূজা করা হয়। তবে পূজা যেভাবেই হোক না কেন, লক্ষ্মী পূজাতে এমন কিছু ভুল অনেকেই করে থাকেন যার ফলে সংসারে উন্নতি হওয়ার পরিবর্তে অবনতি নেমে আসে।

শুভ কোজাগরি লক্ষ্মী পূজা শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, এমন কিছু কাজ যেগুলি লক্ষ্মী পূজার দিন আপনি কোনমতেই করবেন না:

১) লক্ষ্মীর আরাধনায় ফুল:

ফুল ছাড়া কোন পূজাই সম্পূর্ণ নয়। তাই আপনি যখন লক্ষ্মী দেবীর পূজা করবেন তখন নিশ্চয়ই অনেকখানি ফুলের প্রয়োজন পড়বে আপনার দেবীকে সন্তুষ্ট করার জন্য !

তবে এক্ষেত্রে একটা কথা বলে রাখা জরুরী যে, কোজাগরী লক্ষ্মী পূজাতে কখনোই দেবীকে সাদা রঙের ফুল দিয়ে পূজা করবেন না, এর পরিবর্তে বিভিন্ন রঙের অর্থাৎ লাল, হলুদ অথবা গোলাপি রঙের কোন ফুল দিয়ে লক্ষ্মী দেবীর পূজায় অর্পণ করতে পারেন।

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা বিধি: অভাব অনটন দূর হবে এই নিয়ম মেনে পূজা করলে

২) দেবীর আরাধনায় কাপড়ের ব্যবহার:

ফুলের মত কাপড়ের রঙেরও এখানে অনেকখানি ভূমিকা রয়েছে। দেবীর আরাধনা তে কখনোই কালো অথবা সাদা রঙের কাপড় ব্যবহার করার নিয়ম নেই। তার পরিবর্তে ব্যবহার করা যেতে পারে লাল, গোলাপি প্রভৃতি রঙের কাপড়গুলি।

প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে জানা যায় পুজোর আসনে সাদা অথবা কালো রঙের কাপড়ের ব্যবহার করলে মা লক্ষ্মী অত্যন্ত রুষ্ট হন। যার ফলে আপনার সংসারে অবনতি ঘনিয়ে আসতে একটুও সময় নেবে না। সেই কারণে এই দিকটা বিশেষভাবে খেয়াল রাখা জরুরী।

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা: বাড়িতে পুরোহিত ছাড়াই পূজা করুন এই পদ্ধতিতে

৩) তুলসী পাতার ব্যবহার:

তুলসী পাতা খুবই পবিত্র একটি বস্তু যা কিনা প্রায় প্রতিটি পূজাতে লেগে থাকে। তবে এই কোজাগরি লক্ষ্মী পূজাতে লক্ষ্মী দেবীর আরাধনায় কখনোই তুলসী পাতার ব্যবহার করা যাবে না।

এর কারণ হিসাবে পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, তুলসীর সঙ্গে শাল গ্রাম শিলার বিবাহ হয়েছিল আর শালগ্রাম শিলা মানেই তো নারায়ণের একটি রূপ অথবা প্রতিভু বলা যায়। তাই এই লক্ষ্মী দেবীর পূজাতে তুলসীর ব্যবহার কোন মতেই ভুলেও করবেন না।

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা: মনের মত ফল পেতে এই কাজগুলি ভুলেও করবেন না

৪) দান করা:

দান করলে অনেকখানি পুণ্য অর্জন করা যায়, এটা আমরা সকলের মুখেই শুনে থাকি। তবে এখানে একটা কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে যে,

কোজাগরি লক্ষ্মী পূজার সময় যে চাল আপনি দেবীকে অর্পণ করেছেন সেই চাল যেন কোনমতে কাউকে দান না করেন। সেই চালে দেবীলক্ষ্মীর আশীর্বাদ থাকে, সেটা আপনি আপনার ঘরে নিজের কাছে রেখে দিন।

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা: আর্থিক সমস্যা দূর করতে এই কাজগুলি করুন

৫) লক্ষ্মী পূজার প্রসাদ:

প্রতিটি পূজার প্রসাদ সকলকে বিতরণ করার মধ্য দিয়ে একটা শান্তি খুঁজে পাওয়া যায়। তেমনি লক্ষ্মী দেবীর পূজাতে পূজার পর মন্দির অথবা ঠাকুর ঘরের দক্ষিণ মুখে প্রসাদ অর্পণ করার কথা বলা হয়েছে শাস্ত্রে, এছাড়াও অনেকের মুখে শোনা যায় এই কথা।

তবে জানা যায় যে এমন অনেকেই আছেন প্রসাদ খেতে চান না, এখানে একটা কথা বলে রাখি, লক্ষ্মী পূজার প্রসাদে কখনোই না বলতে নেই, সামান্য হলেও তা ভক্তি ভরে মুখে তুলতে হয়। পূজার পর সকলের মধ্যে প্রসাদ বিলি করার কথা বলা হয়েছে।

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার ইতিহাস ও তাৎপর্য

৬) কাঁসর ঘন্টার শব্দ: 

লক্ষ্মী দেবী বড়ই চঞ্চলা, তিনি শান্তি পছন্দ করেন সেই কারণে যে বাড়িতে সর্বদাই ঝগড়া লেগে থাকে সেখানে কখনোই লক্ষ্মী দেবী এক মুহূর্তও থাকতে পারেন না।

তাই পূজার ক্ষেত্রেও আপনাকে এমন কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে, যেখানে ঢাক-ঢোল, কাঁসর, ঘন্টা, এগুলি লক্ষ্মী পূজাতে বাজানো চলবে না। শুধুমাত্র শাঁখের আওয়াজে তাকে আরাধনা করতে হবে।

তিনি খুবই শান্ত স্বভাবে এবং শ্রীলক্ষী, তিনি এমন গোলযোগ পছন্দ করেন না, আর তাই কোজাগরী লক্ষী পূজাতে এগুলি কখনোই বাজাবেন না, না হলে তিনি কিন্তু আপনাদের সকলের উপরে খুবই ক্রুদ্ধ হয়ে গৃহ ত্যাগ করে চলে যাবেন, এমনটাই ধারণা করা হয়।

আর হ্যাঁ, কখনোই পূজাতে কালো কাপড়ের ব্যবহার করবেন না অর্থাৎ নিজের পোশাকটার রংটাও যেন কালো না হয়।

🎂 শুভ জন্মদিনের শুভেচ্ছা বার্তা স্ট্যাটাস ও ছবি🎈🎉🎉

৭) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা:

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কে ভালোবাসেন না বলুন তো, সকলেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন। ভালো করে ঘর মুছে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখলে তা যেমন দৃষ্টি নন্দন হয় তেমনি সেখানে লক্ষ্মী বিরাজ করেন। কোজাগরী লক্ষ্মী পূজাতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।

ভালো করে ঘরবাড়ি পরিচ্ছন্ন করে মুছে আলপনা দিয়ে তবেই পূজোর আয়োজন করা হয়। আর দেবীর প্রসাদে থাকতে হবে অবশ্যই বাড়ির তৈরি নাড়ু, মুড়কি এবং মোয়া, তাছাড়া আরও যে সমস্ত নৈবেদ্য দেবীকে অর্পণ করা যায় সেগুলিও তৈরি করতে পারেন ভক্তি রেখে নিজের হাতে।

🌄 93+ সুপ্রভাত শুভেচ্ছা বার্তা স্ট্যাটাস ও ছবি [আপডেট]

৮) দেবীর আরাধনায় ধন-সম্পদ বৃদ্ধি:

ভক্তিতে অনেকখানি শক্তি থাকে, তাই যদি ভক্তি দিয়ে ঈশ্বরকে ডাকা যায়, তিনি ভক্তের ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারেন না। মনে করা হয় যে, লক্ষ্মী পূজা যে বাড়িতে করা হয়, সেই বাড়িতে মা লক্ষ্মী সর্বদাই বিরাজ করেন আর ধনসম্পত্তি অক্ষয় হয়ে থাকে। জীবনের সমস্ত স্বপ্ন পূর্ন হয়। কেটে যায় আর্থিক সমস্যা

সারা বাড়িতে চালের গুড়া দিয়ে আলপনা, তেলের প্রদীপ জ্বালানো, লক্ষ্মীর পাঁচালী পাঠ করা এবং সারারাত জেগে দেবীর আগমনের অপেক্ষা করা, তিনি যেন আপনার উপরে সন্তুষ্ট হন এমনটাই প্রচেষ্টা করতে হবে এই কোজাগরী লক্ষ্মীপূজায়।

দেবী কে সারা বছর এবং সারা জীবন নিজের ঘরে রাখার জন্য আপনাকে এই বিষয় গুলির প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। সকলের খুবই ভালো কাটুক এই কোজাগরি লক্ষ্মী পূজা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top