ছট পুজোও কিন্তু এমন একটি উৎসব যেটি দুর্গাপূজার মতোই চার দিন ধরে খুবই ধুমধাম ভাবে পালন করা হয়। তবে এটা অবাঙালিদের উৎসব হলেও সকলেই এই ছট পূজায় মেতে ওঠেন। ছট পূজায় মূলত সূর্য দেবতার আরাধনা করা হয়। সংসারে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি আনার জন্য বাড়ির মহিলারা ব্রত পালন করে থাকেন এবং উপবাস পালন করেন।
তবে কথায় আছে পুণ্য অর্জন সকলেই করতে চান, কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও পুণ্য অর্জন করা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে পূজার নিয়ম কানুন সঠিকভাবে পালন করতে পারলেই দেবদেবীদের সন্তুষ্ট করা যায় এবং মনের ইচ্ছা পূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি পুণ্য অর্জন করা যায়। তেমনভাবেই সংসার সুখ, সমৃদ্ধিতে ভরে ওঠার জন্য ছট পূজাতে আপনাকে বেশ কিছু নিয়ম পালন করতেই হবে।
দুর্গাপূজার মত ছট পূজা ও চারদিন ধরে চলে বলে এই চার দিন খুবই আনন্দের সাথে কাটে সকলের, কথায় আছে এই পুজো রীতিনীতি খুবই কঠিন। চার দিনের মধ্যে প্রথম দিন হল নহায় খায়, দ্বিতীয় দিন খরনা, তৃতীয় দিন সন্ধ্যা অর্ঘ্য, আর চতুর্থ দিন সূর্যোদয় অর্ঘ্য। পূজার রীতি নীতি অনেক কঠিন হওয়া সত্ত্বেও সূর্য দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে ছটের ডালা সাজান সকল ভক্তরা।
প্রতিবছর কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ তিথিতে পালিত হয় এই পবিত্র উৎসবটি। এটি সবচেয়ে কঠিন উপবাস গুলির মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশেষ করে বিহার এবং উত্তরপ্রদেশের মানুষেরা এই ছট পূজা খুবই সুন্দর ভাবে উদযাপন করে থাকেন। এই ছট পূজা দীপাবলীর ৬ দিন পর অনুষ্ঠিত হয়।
আবার জানা যায় যে, এই উৎসবটিতে সবচেয়ে কঠিন উৎসব গুলির মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। তাই কোন রকম যদি ভুল করেও কোন ভুল হয়ে যায়, তবে উপবাসের নিয়ম ভঙ্গ করা হয়ে থাকে।
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, ছট পূজার এমন কিছু নিয়ম সম্পর্কে, যেগুলি আপনাকে খুবই ভক্তি ভরে পালন করতে হবে:
১) উৎসবের প্রথম দিন লাউয়ের তরকারি:
ছট পূজার এই উৎসবের প্রথম দিনে সকালে স্নান সেরে পরিষ্কার কাপড় এবং শুদ্ধ কাপড় পড়ে রান্না করেন বাড়ির সকল মহিলারা। দুপুরের খাবারে থাকে লাউ ভাত অর্থাৎ ভাতের সঙ্গে লাউ এর তরকারি।
তবে এইসব রান্নায় নুন ব্যবহার করা যাবে না, তাহলে বুঝতেই পারছেন সেই তরকারির স্বাদ কেমন হতে পারে। তবে রাতে যে কোন রকমে নিরামিষ খাবার খাওয়া যেতেই পারে। তাই সেই কারণে এই ব্রত পালন করা একটু হলেও তো কঠিন মনে হবেই, তাই না !
২) উৎসবের দ্বিতীয় দিন ব্রত পালন:
ছট পূজার দ্বিতীয় দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সকলের কাছে। যিনি এই পূজার ব্রত রাখবেন তিনি দিনভর উপবাস করে থাকবেন, আর সেই দিন সন্ধ্যায় বাড়িতে সূর্য দেবতার পূজো করবেন মহিলারা। উপাচার হিসাবে রুটি, ক্ষীর, কলা দেওয়া হয়।
এরপর তারা ছটের মূল উপকরণ যেটা সেটা হলো ঠেকুয়া, সেই ঠেকুয়া বানানোর কাজ শুরু করে দেন। এটা হল ছট পূজার দ্বিতীয় দিন খরনার নিয়ম।
৩) উৎসবের তৃতীয় দিন ডালা সাজানো:
এই দিন রাত থেকে ছটের ডালা সাজানোর প্রস্তুতি চলে। তারপর বিকেলে জলাশয় গিয়ে ডুবন্ত সূর্যকে পুজো করতে হয়।
পূজা শেষ হয়ে গেলে প্রদীপটি জলাশয়ে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এই পূজোর ডালায় ফলমূল ছাড়া ও থাকে মূল উপকরণ হিসেবে ঠেকুয়া।
৪) চতুর্থ দিন উপবাস ভঙ্গ করার পালা:
এই ছট পূজার উৎসবের শেষ সকালে সূর্য ওঠার আগেই ব্রত করা মহিলারা আবার সেই জলাশয় যাবেন, সেখানে অর্ঘ্য দিয়ে তারপর এই পূজা সম্পন্ন করবেন। পুজো শেষে বাড়ি আসার পর খরনার সন্ধ্যে থেকে প্রায় ৪০ ঘন্টা পর ঠেকুয়া, আদা, জল, গুড় খেয়ে যে উপবাস রাখা হয়েছিল সেই উপবাস ভঙ্গ করবেন। সে ক্ষেত্রে টানা এত ঘন্টা উপবাস রাখার জন্য মহিলাদের অনেকখানিই কষ্ট হয়। তাই তো ছট পূজার উপবাস এবং ব্রত পালন করা খুবই কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
পুরানো আচার অনুষ্ঠান এবং কঠোর নিয়মের সঙ্গে ছটি মাইয়ার পূজা করা হয় অর্থাৎ ছট পূজা সম্পন্ন করা হয়। উৎসবের প্রথম দিনের স্নান এবং দ্বিতীয় দিনের খরনা পালন করা হয়, যেখানে ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় তৃতীয় দিনের সূর্যকে অর্ঘ্য নিবেদন করা হয় এবং পরের দিন চতুর্থ দিনে সকালে উদীয়মান সূর্যকে অর্ঘ্য নিবেদনের মধ্যে দিয়ে ছট উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
বিশ্বাস অনুসারে জানা যায় যে ছট পূজার উপবাস পালন করার ফলে সন্তান ধারণ সম্ভব হয় এবং সন্তান না হওয়ার যাবতীয় সমস্যা দূর হয়ে যায়। তবে এর সাথে কোন রকম বৈজ্ঞানিক যুক্তি প্রযোজ্য নয় অর্থাৎ এর কোনো রকম কারণ নেই, এটা শুধুমাত্র বিশ্বাস করা হয়।
যতই কঠিন হোক না কেন, তবুও কিন্তু সূর্য দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে ছট পূজার ডালা সাজাতে ব্যস্ত থাকেন ভক্তরা। বিশেষ করে যারা ব্রত পালন করছেন অথবা উপবাস রেখেছেন তারা। এই ছট পূজার বিভিন্ন নাম রয়েছে যেমন ধরুন ছটি, ছট পরব, ডালাছট, ডালা পূজা, ছট পূজা, সূর্য ষষ্ঠী।
সূর্যদেব আমাদেরকে যা আশীর্বাদ বর্ষণ করেন তা হলো সকলের মঙ্গল সাধন এবং শস্যশ্যামলা করে তোলার জন্য সূর্যের আলো কতখানি প্রয়োজন তা তো আমরা সকলেই জানি, সেই কারণে সূর্যদেবকে ধন্যবাদ জানানোর উদ্দেশ্যে এই ছট পূজা উদযাপিত হয়। যারা উপবাস রাখেন তারা প্রায় ৪০ ঘন্টা একেবারে নির্জলা উপবাস করে থাকেন।
উৎসবের শেষ দিন সূর্যোদয় এর অর্ঘ্যের পর প্রসাদ খান, পূজো পার্বণের সময় আমিষ কিন্তু একেবারেই চলবে না। বিভিন্ন জলাশয়ে সূর্যকে অর্ঘ্য নিবেদন, প্রদীপ ভাসানো সবকিছু মিলিয়ে চারিদিকে এক সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে।