Kali Pujo 2023: মা কালীকে সন্তুষ্ট করতে ভুলেও করবেন না এই কাজগুলি

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বনের মধ্যে দুর্গোৎসব হলো সবচেয়ে বড় উৎসব। তারপরে আরও একটি বড় উৎসব কালী পূজার পালা। পৃথিবীবাসী মেতে ওঠে কালী পূজার আনন্দে।

গ্রাম থেকে শহর আলোর উৎসবে মেতে ওঠে। দেবীকে সন্তুষ্ট করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পন্থা অবলম্বন করে থাকেন সকলেই।

কালী পূজা: মা কালীকে সন্তুষ্ট করতে ভুলেও করবেন না এই কাজগুলি
কালী পূজা: মা কালীকে সন্তুষ্ট করতে ভুলেও করবেন না এই কাজগুলি

দেবদেবী যেমন অল্পতেই সন্তুষ্ট হন, তেমনি সামান্য কিছু ভুল ত্রুটির কারণেও তারা রুষ্ট হতে পারেন। তাই অন্যান্য পূজা পার্বণের মতো কালী পূজাতেও আপনাকে এমন কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে, যার ফলে আপনাদের কোন রকম ভুল যেন না হয়ে থাকে।

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, সেই সমস্ত ভুল ত্রুটি গুলি সম্পর্কে, যেগুলি আপনি কালী পূজার দিন কোনমতেই করবেন না:

১) পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বস্ত্র পরিধান:

প্রত্যেকটি পূজাতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, তেমনি মা কালীর পূজাতে বসার সময় শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করতে হবে সকলকে।

নতুন কাপড় থাকলে তা পরে পূজায় বসা উচিত এবং সেই পূজাতে অঞ্জলি দিতে পারেন।

২) পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার সময় খারাপ চিন্তা নয়:

দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ধরনের চিন্তাভাবনার মধ্যে দিয়ে আমাদের জীবনযাত্রা বয়ে চলে, মনটাকে সব সময় স্থির ও পবিত্র রাখতে হয়।

তেমনি মহাকালীর মূর্তির সামনে বসে হাত জোড় করে প্রার্থনা করে পুষ্পাঞ্জলী দেওয়ার সময় মনে যেন কোনরকম খারাপ চিন্তা না আসে। তার পাশাপাশি কালীপুজোর সঠিক বিধি মেনে তবেই বাড়িতে পূজা করুন।

৩) মায়ের ভোগ প্রস্তুত করার সময় কথা নয়:

ছোটবেলা থেকে শুনে আসার কথা হল, যখন কোন দেবদেবীর ভোগ প্রস্তুত করা হয় অথবা নৈবেদ্য নিবেদন করার জন্য জোগাড় করা হয়, তখন যেন কোনভাবেই অতিরিক্ত কথা বলা না হয়। কেননা সেই সময় মুখের থুতু ছিটকে এসে সেই ভোগে পড়তে পারে।

সেই কারণে দেবীর ভোগ প্রস্তুত করার সময় অনেকেই মুখে কাপড় বেঁধে রাখেন, এটা খুবই নিরাপদ এক্ষেত্রে। কেননা মুখের থুতু ছিটকে গিয়ে সেই নৈবেদ্যতে পড়লে তা কিন্তু উচ্ছিষ্ট হয়ে যায়, আর উচ্ছিষ্ট ভোগ দেবীকে নিবেদন করা মহাপাপ বলে মনে করা হয়।

তবে হ্যাঁ, কাহিনী অনুসারে, আরো অনেক ঘটনার মধ্য দিয়ে আমরা জানি যে, মা কালী কে ভোগ নিবেদন করার সময় বামাক্ষ্যাপা অথবা রামকৃষ্ণ তাদের মুখের খাবার দেবী কে নিবেদন করতেন। কিন্তু তাদের কথা সম্পূর্ণ আলাদা।

তারা দেবীর সাধনায় সিদ্ধি লাভ করেছিলেন এবং দেবী তাদেরকে দিয়ে সেই কাজটা করিয়েছিলেন বলেই তারা সেটা করতে পেরেছেন। তাই বলে সাধারণ মানুষের সেটা করা কখনোই উচিত নয়। কখনোই মহাপুরুষদের অনুকরণ করা ঠিক নয়, শাস্ত্রসম্মতভাবে দেব দেবীকে ভোগ নিবেদন করা উচিত।

৪) মহিলারা কখনোই খোলা চুলে থাকবেন না:

যেহেতু কালীপূজা অমাবস্যা তিথিতে পালিত হয়ে থাকে এবং কালী পূজার দিন ও ভূত চতুর্দশীর দিন মহিলারা কখনো সন্ধ্যা বেলায় খোলা চুলে থাকবেন না।

এতেও কিন্তু সংসারে নেতিবাচক শক্তির বৃদ্ধি ঘটে আর সংসারে অমঙ্গল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, এই বিষয়ে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা জরুরী।

৫) সন্ধ্যার পর ঘর ঝাড়ু দেবেন না:

ঘরবাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার নিয়ম রয়েছে প্রতিটি গৃহস্থ বাড়িতে। তাছাড়া উৎসব বলে এটি আরো বেশি বেড়ে যায়, তবে তাই বলে আপনি সন্ধ্যার পরে এই কালী পূজাতে কখনোই ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার জন্য ঝাড়ু দেবেন না।

শাস্ত্র মতে মনে করা হয় যে, এমন করলে লক্ষ্মী দেবী আপনার ঘর থেকে বিতাড়িত হয়ে যাবেন। মা লক্ষ্মীকে ঘরে সারাজীবন অধিষ্ঠিত রাখার জন্য আপনি কতই না কষ্ট করেন।

সে ক্ষেত্রে সামান্য একটু সন্ধ্যার পরে ঝাড়ু দেওয়ার মধ্য দিয়ে আপনি নিশ্চয়ই দেবী লক্ষ্মী কে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিতে পারেন না, কি বলেন ?

৬) কালী পূজার দিন রাতে বাড়ির বাইরে নয়:

কালী পূজার দিন খুবই সাবধানে এবং সন্তর্পনে থাকতে হয়। কালী পূজার দিন এবং ভূত চতুর্দশীর দিন কবরস্থান, শ্মশান এবং আরো অন্যান্য জায়গা গুলি এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে আপনি যদি ঘর থেকে বাইরে সময় না কাটান সে ক্ষেত্রে আপনার জন্য অনেকটাই মঙ্গলজনক।

কারণ এই সময় সেখানে একটি নেগেটিভ শক্তি বিরাজ করে। সেক্ষেত্রে আপনি ঘরেতেই এই উৎসবের আনন্দ উপভোগ করুন, ঘরের বাইরে বেশি রাত পর্যন্ত অথবা সন্ধ্যের পরে না থাকাটাই আপনার জন্য শুভ বলে মনে করা হয়।

৭) সন্ধ্যাবেলায় দুগ্ধ জাতীয় জিনিসপত্র দেওয়া নেওয়া করবেন না:

এছাড়া কালীপূজার এই দুইদিন সন্ধ্যার পরে কেউ যদি আপনার কাছে থেকে দুধ অথবা দুগ্ধ জাতীয় কোন রকম জিনিস চায় সেটা তো আপনি যেমন দেবেন না তেমনি এরকম জিনিস আপনি কারো কাছ থেকে নেবেনও না।

এর ফলে, বাড়ি থেকে পজেটিভ শক্তি বিদায় নেয়, এর পরিবর্তে নেগেটিভ শক্তি বৃদ্ধি পায়। সামান্য সামান্য জিনিসেও অনেকখানি বাধা নিষেধ থাকে। যেগুলি সংসারে উন্নতির সাধন হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে, তাই এই বিষয়গুলি আপনাকে মেনে চলতেই হবে।

⭐ এছাড়াও আরো অনেক বিষয় রয়েছে যেমন ধরুন জুতো পড়ে ঘরে প্রবেশ করা যাবে না, এমনকি ঠাকুর ঘরেও প্রবেশ করা যাবে না, তাছাড়া পূজার জায়গার পাশাপাশি ও কোনরকম জুতো যেন না রাখা হয়।

এরপর টাটকা ফুল ছাড়া মা কালীর পূজা কখনোই করা উচিত নয়। সেক্ষেত্রে যেদিন আপনি কালী পূজা করবেন সেদিন সকালে আপনাকে বাজার থেকে টাটকা ফুল কিনে আনতে হবে অথবা আপনার কাছে যদি ফুল গাছ থাকে বা বাগান থাকে সেখান থেকেও জোগাড় করতে পারেন। কখনোই বাসি ফুল দিয়ে মা কালীর পূজা করা যাবে না।

তারপর চামড়া দিয়ে তৈরি জিনিসপত্র ঠাকুর ঘরে না রাখা, সেগুলি ঠাকুর ঘরে ঢোকানো মানে আপনার সংসারে আপনি নিজেই অমঙ্গল ডেকে নিয়ে আসছেন। যদিও আগে থেকে থাকে, সেগুলি কালী পূজা উপলক্ষে সেখান থেকে সরিয়ে রাখুন।

⭐ দেব দেবীর মূর্তি যদি ভেঙে যায় সেগুলিও কখনোই সেভাবে জোড়া তালি লাগিয়ে কখনোই পূজা করবেন না। সে ক্ষেত্রে সেই মূর্তি সরিয়ে রেখে সেখানে আবার নতুন মূর্তি স্থাপন করতে পারেন। আর কালী পূজার দিন অলক্ষ্মী পূজা অবশ্যই করবেন, এর ফলে আপনার ঘরে লক্ষ্মী সর্বদাই বিরাজ করবেন।

কালী পূজোর দিন আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনাকে মেনে চলতে হবে, যেটি সেটি হল পূর্বপুরুষদের ছবি ঠাকুর ঘরে রাখবেন না। অন্যান্য দেব-দেবীদের পাশাপাশি মৃত পূর্বপুরুষদের ছবি কখনোই ঠাকুরের সমতুল্য হতে পারে না। তাই ঠাকুর ঘরে শুধুমাত্র দেবদেবীর ছবি অথবা মূর্তি রাখুন। ঠাকুর ঘরে অথবা পূজার ঘরে কখনোই পূর্বপুরুষদের ছবি রাখবেন না।

এই সমস্ত বিষয়গুলি আপনাকে কালী পূজার দিন অথবা দীপাবলিতে মেনে চলতে হবে। এর পাশাপাশি আপনি যেমন সংসারে উন্নতি সাধন করার সাথে সাথে মা কালীকে প্রসন্ন করতে পারবেন এবং মা কালীর আশীর্বাদ আপনার ঘরে সর্বদাই বর্ষিত হবে। তাছাড়া এই কালী পূজাতে দীপান্বিতা লক্ষ্মী পূজাও করা হয়। সেই কারণে আপনি দেবী লক্ষ্মী কে নিজের ঘরে সর্বদাই অধিষ্ঠিত করে রাখতে পারবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top