Jagaddhatri Puja 2023: জগদ্ধাত্রী দেবীকে সন্তুষ্ট করতে দেওয়া হয় এই সমস্ত ভোগ গুলি

বিভিন্ন পূজা বিভিন্ন জায়গায় নানা ভাবে উদযাপন করা হয়। তেমনি জগদ্ধাত্রী দেবী পূজাও অনেক জায়গায় এমন কিছু নিয়ম মেনে পালন করা হয়, সেগুলি অনেক বছর আগে থেকে নিয়ম মেনে চলে আসছে। সেগুলো পরিবর্তন করার কোন জায়গাই নেই।

আর এইভাবেই দেবী জগদ্ধাত্রীকে সন্তুষ্ট করে রাখা হয়েছে অনেক আগে থেকে। তবে জগদ্ধাত্রী পূজার নবমীর দিন পাঁচ রকম মাছ ভাজা দিয়ে মায়ের পূজা করা হয়। শুনতে হয়তো অনেকটাই অবাক লাগছে, কিন্তু এই নিয়ম মেনে গত ১৮০ বছর ধরে জগদ্ধাত্রী মায়ের পুজো হয়ে আসছে মানকুন্ডুর ঘটক বাড়িতে।

জগদ্ধাত্রী দেবীকে সন্তুষ্ট করতে দেওয়া হয় এই সমস্ত ভোগ গুলি
জগদ্ধাত্রী দেবীকে সন্তুষ্ট করতে দেওয়া হয় এই সমস্ত ভোগ গুলি

প্রথা মেনে রীতিমতো পাঁচটি থালায় পাঁচ রকমের মাছ ভাজা সাজিয়ে নবমীর দিন দেবী জগদ্ধাত্রীকে অর্পণ করা হয়। এই পূজা দেখার জন্য পরিবারের সদস্য ছাড়াও এলাকার অনেক মানুষ এসে জমা হন সেখানে। এ যেন এক কোনো গল্পের অংশ, কিন্তু এটা বাস্তবে হয়ে আসছে ১৮০ বছর ধরে।

জগদ্ধাত্রী পূজার অজানা তথ্য যা আপনি জানেন না

ঘটক বাড়ির জগদ্ধাত্রী পূজা:

জগদ্ধাত্রী পূজা বিভিন্ন জায়গায় এবং বিভিন্ন রাজবাড়িতে এবং গৃহস্থ বাড়িতে সুন্দর ভাবে ঘটা করে করা হয়, তবে গত ১৮০ বছর আগে থেকে এই বাড়িতে পুজো শুরু করেন লোহার ব্যবসায়ী ভবতোষ ঘটক চ্যাটার্জী।

খুবই অভিজাত পরিবার এবং ভবতোষ মা জগদ্ধাত্রীর কাছে ব্যবসার জন্য মানত করেছিলেন, সেই মানত পূর্ণ করার ক্ষেত্রে বাড়ির মেয়ের মত পুজো শুরু হয় এই বাড়িতে জগদ্ধাত্রী দেবীর। সেই কারণে বাড়ির মেয়ের মতোই তাকে আপ্যায়ন করা হতো মাছ ভাত দিয়ে।

ভোগ নিবেদনের কারণ হিসেবে তাদের যুক্তি ছিল, মা এখানে বাড়ির মেয়ে হিসাবেই রয়েছেন। তাই বাড়ির মেয়েকে যেভাবে যত্ন করা হয় তাকেও কিন্তু সেই ভাবেই পূজা অর্চনা করা হয়। সেই কারণে বাড়ির আদরের মেয়ের জন্য তো মাছ থাকবেই। অন্য জায়গায় মা জগদ্ধাত্রীর মূর্তির গড়ন যেমন হয়, এই বাড়িতে কিন্তু দেবীর মূর্তি একেবারেই আলাদা।

দেবী জগদ্ধাত্রীর সিংহ বাহনের পদতলে হাতির মাথা কেন থাকে?

ঘটক বাড়িতে জগদ্ধাত্রী মায়ের রূপ:

মায়ের মূর্তি গড়িয়ে সমস্ত জায়গায় পূজা অর্চনা করা হয়। তবে এখানে কিন্তু মায়ের রূপ অন্যরকম। ছোট্ট একচালায় মায়ের গায়ের রং ও আলাদা, হালকা লাল রঙের মা জগদ্ধাত্রী, দুই পাশে থাকেন জয়া এবং বিজয়া

৫৬ রকমের আলাদা আলাদা নৈবেদ্য সহকারে কুমারী এবং সধবা দের পুজো এই বাড়িতে করা হয় বলে তার ঐতিহ্য কিন্তু একেবারেই আলাদা। এখানকার জগদ্ধাত্রী পূজা দেখার জন্য একটা দিন হলেও অর্থাৎ নবমীর দিন এই পুজো দেখার জন্য হাজির হন অনেকেই।

দশমীতে মাছ ভাত খেয়ে বাড়ির মহিলারা বরণ করেন জগদ্ধাত্রী মাকে। যেহেতু এই এলাকার ঘটক বাড়ীর আলাদা পরিচিতি রয়েছে এই পূজার জন্য, তাই তাদের বিসর্জনের পর তেলেনিপাড়া ঘাটে অন্য বাড়ির প্রতিমা নিরঞ্জন অর্থাৎ বিসর্জন করা হয়।

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজার অজানা বিষয় যা এই পুজোকে জনপ্রিয় করে তুলে

মুর্শিদাবাদে জগদ্ধাত্রী মায়ের ভোগের আয়োজন:

পূজা অর্চনা তে ভোগ, নৈবেদ্য নিবেদন করার মধ্য দিয়ে মনের ইচ্ছা ও স্বপ্ন দেবীকে জানানো হয়। আর সেই ইচ্ছা পূরণ করার পাশাপাশি দেবী সকলের ঘরে আনেন সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি।

মুর্শিদাবাদ জেলার থানার কাগ্রামের প্রধান উৎসব এই জগদ্ধাত্রী পূজা। আর সেখানে খুবই বড় আকারে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। মুর্শিদাবাদের এখানকার পুজোর আকর্ষণ হল সাবেকি ধাঁচে বনেদিয়ানা ও আভিজাত্য।

কাগ্রাম হলো নবাবের জেলা, মুর্শিদাবাদের একটি প্রান্ত তে প্রাচীন বনেদি গ্রাম। মধ্য রাঢ় এর অতি প্রাচীন এই গ্রামের নামকরণ গ্রাম্য দেবী কঙ্কচণ্ডীর নাম অনুসারে করা হয়েছে। এখানে পারিবারিক এবং বারোয়ারি পূজা মিলিয়ে মোট ২২ টি পূজা হয়।

পারিবারিক যে জগদ্ধাত্রী পূজা গুলি হয় সেগুলি হল দে বাড়ির পূজা, মহাশয় বাড়ির পূজা, মিস্ত্রি বাড়ির পূজা, পাল বাড়ির পূজা, সাহাবাড়ির পূজা, এমন ভাবে অনেক পারিবারিক জগদ্ধাত্রী পূজা এখানে হয়ে থাকে।

এর পাশাপাশি সার্বজনীন পূজা গুলির মধ্যে অন্যতম দক্ষিণপাড়া সার্বজনীন, তাঁতীপাড়া সার্বজনীন, সাহাপাড়া সার্বজনীন এই রকম ভাবে অনেক সার্বজনীন জগদ্ধাত্রী পূজা এখানে খুবই বড় আকারে হয়ে থাকে। তার সাথে মেলাও বসে খুবই সুন্দরভাবে। এখানে একটা কথা বলে রাখা জরুরী যে, গ্রামের প্রাচীন পূজা গুলির অন্যতম হলো মহাশয় বাড়ির জগদ্ধাত্রী পূজা।

কাহিনী অনুসারে জানা যায় পরিবারের আদিপুরুষ নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের জগদ্ধাত্রী পূজা দেখে দেখে গ্রামে এই জগদ্ধাত্রী পূজার প্রচলন করেছিলেন। এখানে কিন্তু অনেক পুরানো প্রথা মেনে মহিষ বলি দেওয়া হয় এবং কুমারী পূজা করা হয় দুর্গাপূজার আদলে। এই গ্রামের অপর একটি প্রাচীন পূজা হল রায় পাড়ার জগদ্ধাত্রী পূজা

কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী দেবী “বুড়িমা” নামে কেন পরিচিত?

জগদ্ধাত্রী মায়ের ভোগ:

আগে রায়পাড়া জগদ্ধাত্রী পূজা পারিবারিক পুজো হলেও পরবর্তীতে কিন্তু তা সার্বজনীন হয়ে ওঠে, আর এখানে পূজার সংকল্প করা হয় মহিলাদের নামে। দেবীর ভোগ হিসাবে সপ্তমীতে ভাত, মাছ, ভাজা, শাক, তরকারি, চাটনি এই সমস্ত দিয়ে দেবী জগদ্ধাত্রীকে ভোগ নিবেদন করা হয়।

এরপর অষ্টমীতে পোলাও থাকে, ভাজা থাকে, খিচুড়ি, তরকারি এবং নবমীর দিনে লুচি ও সুজি দেওয়া হয় মায়ের ভোগে। জগদ্ধাত্রী পূজা উপলক্ষে গ্রাম সম্পূর্ণরূপে আলোর সাজে সেজে ওঠে।

এখানকার স্থানীয় মানুষজন কর্মসূত্রে বাইরে যে কোন জায়গায় থাকলেও এই জগদ্ধাত্রী পূজার সময় সকলেই কিন্তু গ্রামে ফিরে আসেন কয়েকদিন আগেই, এই উৎসবে গা ভাসানোর জন্য। বলা যেতে পারে সারা বছর ধরে এই পূজার আনন্দের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন গ্রামবাসী।

মুর্শিদাবাদ জেলার জগদ্ধাত্রী পূজা দেখতে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপাশি আশেপাশের জেলা থেকেও প্রচুর পরিমাণে মানুষের আগমন ঘটে, পুজোর দিনগুলিতে হাজার হাজার ভক্তদের সমাগম হয়। প্রতিটি সার্বজনীন জগদ্ধাত্রী মণ্ডপে এবং পারিবারিক যে পূজা গুলি হয় সেখানেও ভিড় চোখে পড়ার মতো।

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজার এই অজানা তথ্য আপনার জানা আছে কি?

বৈকুণ্ঠপুরে মা জগদ্ধাত্রীর ভোগের আয়োজন:

বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভাবে জগদ্ধাত্রী দেবীকে ভোগ নিবেদন করা হয় মাকে সন্তুষ্ট করার জন্য। এখানে অর্থাৎ বৈকুণ্ঠপুর এ মায়ের পুজোয় থাকে অন্নকুট। বহু পুরানো এবং ঐতিহ্যবাহী হলো এই বৈকন্ঠপুরের জগদ্ধাত্রী পূজা।

এখানকার জগদ্ধাত্রী মায়ের মূর্তি সুদূর রাজস্থান থেকে নিয়ে আসা হয়, এই শ্বেত পাথরের মূর্তি সাড়ে ৮  ফুট একটি গোটা শ্বেত পাথর খোদাই করে এই মূর্তি তৈরি করা হয়েছে। প্রায় থেকে ৫২ বছর আগে এই পূজা শুরু হয়েছিল বলে জানা যায়। বৈকুন্ঠপুর জগদ্ধাত্রী পূজাতে মায়ের ভোগ হিসেবে ৬৫০ টি ভোগ দেওয়া হয়। যা কিনা এক কথায় অন্নকূট নামে পরিচিত।

বৈকুন্ঠপুর এর জগদ্ধাত্রী মায়ের অন্নকুট:

এখানে জগদ্ধাত্রী মায়ের অন্নকূট দেখতে দূর দূরান্তর থেকে মানুষের আগমন ঘটে প্রচুর পরিমাণে। পূজা মন্ডপে জায়গা দেওয়া যায় না ভক্তদের,

এই অন্নকূটে মাকে দেওয়া হয় ১৩৫ রকমের মিষ্টি, ১১৭ রকমের বিভিন্ন কসমেটিক জিনিসপত্র, ১৫৭ রকমের বিভিন্ন রকমের পদের রান্না, ৪৮ রকমের সবজি, ১৮০ রকমের চিপসসহ আরো অন্যান্য খাবার, ৩৩ রকমের ফল-মূলসহ বিভিন্ন রকমের স্ন্যাক্স, ১৫ রকমের আচার, বেনারসি শাড়িসহ ১২০ টি শাড়ি, যা কিনা দান করে দেওয়া হবে পরবর্তীতে, ১৭ রকমের শাক ভাজা, ১০ রকমের চাটনি।

মায়ের ভোগ বিতরণের যে প্রসাদ পাওয়া যায় সেটা পাওয়ার জন্য দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা মায়ের মন্দিরে দর্শন করেন এবং প্রসাদ গ্রহণ করার জন্য একেবারে হুড়মুড়িয়ে পড়েন বলতে গেলে।

দেবী মাকে একেবারে নিজের বাড়ির সদস্য মনে করে পূজা অর্চনা করা হয় বিভিন্ন জায়গায়। তাই সেখানে একেবারে যত্নে ভরিয়ে তোলা হয় বাড়ির মেয়ে হিসাবে। তাইতো মা জগদ্ধাত্রীর ভোগে এত রকমের নৈবেদ্য উপস্থিত থাকে তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য। কোন রকম ভাবেই কোন দিক থেকে কমতি রাখা যাবে না।

বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকমের নৈবেদ্য তে মা জগদ্ধাত্রী সেখানে স্থানীয় মানুষজনদের সকল মনস্কামনা পূরণ করেন। আপনিও যদি এমন পূজায় অংশগ্রহণ করতে চান এবং এমন ভোগ এর প্রসাদ পেতে চান, তাহলে এই সমস্ত জায়গায় জগদ্ধাত্রী পূজাতে অংশগ্রহণ করতেই পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top