বাচ্চার চরিত্র গঠন করতে পরিবার ও বাবা-মা এর ভূমিকা

এই পৃথিবীতে যখন কোন শিশু জন্ম নেয় তখন সে জানে না সে কোথায় এবং কোন পরিবেশে জন্ম নিয়েছে। সময়ের সাথে সাথে সে বুঝতে পারে তার আশেপাশের পরিবেশ, সেই পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে মানিয়ে নিতে শেখে।

তবে একটা সুস্থ সুন্দর পরিবেশ ও সমাজ অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে একটা শিশুকে সুন্দর একটা মানুষ এ পরিণত হতে।

বাচ্চার চরিত্র গঠন করতে পরিবার ও বাবা-মা এর ভূমিকা
বাচ্চার চরিত্র গঠন করতে পরিবার ও বাবা-মা এর ভূমিকা

পরিবেশের পাশাপাশি তার বাবা -মা’র আচার আচরন, শিক্ষা, শৃঙ্খলা তাকে সুচারিত্রিক হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

বাবা মায়ের প্রতিটা দোষ-গুন এর মধ্যে বেশির ভাগই দোষ-গুন সন্তানের মধ্যে থেকে থাকে। আর জন্ম নেওয়ার পর বাবা মা এর সুশিক্ষা তাকে আরো উন্নত হতে সাহায্য করে।

এমন কিছু অভ্যাস ও নিয়ম বাবা মা এর মেনে চলা গুরুত্ব পূর্ণ যা তাঁদের সন্তানকে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে :

১. নিয়ম- শৃঙ্খলা :

যে জীবনে শৃঙ্খলা নেই সেই জীবন অগোছালো হয়ে যায়। ছোট বেলা থেকেই সন্তান কে শৃঙ্খলা পরায়ন হওয়ার শিক্ষা সে সেই শৃঙ্খলা তেই অভ্যস্ত হয়ে যায়, পরে তা পালন করতে তার আর কোনো কষ্ট হয় না।

সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা, নিজের বিছানাটা নিজের গুছিয়ে রাখতে শেখানোটা খুব দরকার, এর মধ্যে একটা সুন্দর শৃঙ্খলা রয়েছে।

একটা শিশু যখন সবকিছু বুঝতে পারে, নকল করার চেষ্টা করতে পারে তখন তার সাথে বা তার সামনে যেমন আচরন করবেন সে তেমনি আচরন শিখবে।

তাইতো ছোট বেলায় মেয়েরা মায়ের শাড়ি পরা নকল করে আর ছেলেরা বাবার দাড়ি সেভ করাটা। কারণ তাদের মধ্যে ভাল মন্দ বিচার করার ক্ষমতা থাকে না, যেটা দেখে সেটা ভালো মনে করেই নকল করার চেষ্টা করে।

২. ব্যবহার :

শিশুরা নিষ্পাপ হয়, তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করলে তারাও আপনার সাথে ভালো ব্যবহার করতে বাধ্য, যদি ছোট থেকেই এই শিক্ষা তার মধ্যে থেকে থাকে।

ছোট হলেও তাদেরও সম্মান আছে, সম্মান দিয়ে কথা বলুন তাদের সাথে পরিবর্তে সন্মানই ফিরে পাবেন আপনি।

বড়দের সাথে কেমন ব্যবহার করতে হয়, কোথায় কোন কথা বলতে হয়, কোথায় কোন কথা বলতে ‌নেই, এই সব বিষয়ের উপর ধ্যান রাখাটা জরুরী বাবা মা এর।

ছোট বেলার ভাল শিক্ষা ভবিষ্যতে তাকে অনেক খারাপ পরিস্থিতিকে জয় করার প্রেরণা দেবে।

৩. পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা :

পরিচ্ছন্ন থাকাটা অনেক খানি গুরুত্ব পূর্ন একটি মানুষের জীবনে। এই শিক্ষা যদি সন্তান কে ছোট থেকেই না দেওয়া হয় বড়ো হলে যত শেখানো হোক না কেন সে কিছুতেই আয়ত্ত করতে পারবে না।

শুধু মাত্র নিজেকে পরিস্কার রাখলেই হবে না, জামাকাপড়, আসবাবপত্র, ঘরবাড়ি, আশেপাশের পরিবেশ সবটাই পরিস্কার রাখাটাও জরুরী।

শিশুকে চার বছর বয়স থেকে এ বিষয়ে কঠোর ভাবে শিক্ষা দিলে, উৎসাহিত করলে সে পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে ভাল ভাবে জানতে পারবে।

আর এই শিক্ষা তার অভ্যাসে পরিণত হতে থাকবে, একসময় তারই অজান্তে পরিস্কার থাকা বা পরিবেশ কে পরিচ্ছন্ন রাখাটা তার কাছে সাধারণ বিষয় মনে হবে।

৪. বাবা – মা :

সবথেকে গুরুত্বপূর্ন বিষয় হলো সন্তানের প্রথম বড় শিক্ষক হলো তার বাবা মা। একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে, একটি শিশু মেধাবী বা চরিত্রবান হয় তার বেশির ভাগই নির্ভর করে তার মায়ের উপর।

যে মা যত বেশী বুদ্ধিমতী সেই মায়ের সন্তান তত বেশী প্রতিভাবান। বাবার গুনও থাকে, তবে মায়ের উপর নির্ভর করে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই।

৫. মানসিক বিকাশে সহায়তা করা :

বাচ্চাদের শারীরিক বিকাশের সাথে সাথে মানসিক বিকাশের দিকেও লক্ষ্য দেওয়া দরকার। কি বলতে চাইছে সে তার কথা শোনাটাও গুরুত্বপূর্ন।

তার সাথে খেলা করা, কোনো ভালো কাজ করলে প্রশংসা ও পুরস্কৃত করার মধ্যেও শিশুরা নতুন কিছু শেখার, নতুন কিছু করার উৎসাহ পায়।

অনেকেই আছেন শিশুদের খাওয়ানোর সময় মোবাইল দিয়ে দেন তাদের হাতে। এটা অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেলে সে আর মোবাইল ছাড়া খাবে না, তাছাড়া সে কি খাচ্ছে তার উপকার তার শরীরে প্রভাব ফেলে অতি সামান্য।

এই অভ্যাস থাকলে ত্যাগ করার চেষ্টা করুন, তার সাথে কথা বলুন, ঘুরে বেড়িয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করুন যতটা পারবেন মোবাইল থেকে দূরে রাখুন আপনার ছোট্ট শিশুকে।

ওদের সামনে আপনিও মোবাইল কম ব্যবহার করুন। যতটা পারবেন তাদের সাথে সময় কাটান, এতে আপনারও ভাল লাগবে, ওরাও আনন্দ পাবে।

৬. পারিবারিক অশান্তি :

পরিবারে ছোটখাটো ঝগড়া ঝামেলা থেকেই থাকে, সেক্ষেত্রে ছোট বাচ্চাদের এর মধ্যে টেনে না আনাটাই ভাল।

তারা এসবের কিছুই বোঝে না, তাদের সামনে কারোর সাথে উঁচু গলায় কথা বলা, খারাপ কথা বলা বাচ্চাদের মনের উপর ভীষণ ভাবে প্রভাব ফেলে।

বাচ্চারা চায় বাবা মা, পরিবারের সবাই তাকে ভালোবাসবে, তাই তাদের সাথে ও সামনে ভালো ব্যবহার ও হাসিখুশি থাকতে চেষ্টা করুন।

সারাদিন ঝগড়া মারামারি তে ভরে থাকা একটা পরিবারের শিশু বেড়ে ওঠে ঝগড়া মারামারি  শিখতে শিখতে। এর জন্য তার ভবিষ্যত অনেক খানি ঝুঁকিতে থাকে, নষ্টও হয়ে যায় অনেক শিশুর ভবিষ্যত।

বিদ্যালয়ের পুঁথিগত  শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে আমরা বাস্তবে বেঁচে থাকতে যে শিক্ষার প্রয়োজন তা অনেকাংশেই পাই না বললেই চলে।

তার জন্য পরিবারের অবদান অনেকটাই। ব্যবহার আর আচরনের মাধ্যমে তার পরিবার ও পরিবেশের পরিচয় পাওয়া যায়। শিশুকে যেমন ভাবে গড়ে তোলা হবে সে ঠিক তেমন ভাবে গড়ে উঠবে।

‘ ব্যক্তিত্ব ‘ কথাটা এখনকার দিনে দাঁড়িয়ে কতটা গুরুত্বপূর্ন, কাজের ক্ষেত্রে, কারো সাথে কথা বলার ক্ষেত্রে, সাহায্য করার ক্ষেত্রে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে একটা ভালো চরিত্রের মানুষ কে সবাই খোঁজে।

তাই সন্তানের ভবিষ্যত উজ্জ্বল করতে তার চারিত্রিক ও মানসিক দিক টাও খেয়াল রাখুন। আপনার হাতেই রয়েছে আপনার সন্তানকে সুন্দর করে গড়ে তোলার চাবিকাঠি।

এবার আপনার উপর নির্ভর করছে আপনি আপনার সন্তান কে কেমন ভাবে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top