শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কিভাবে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন? ওনার বাবা-মা কে? ওনার জীবন কেমন ছিল? এছাড়াও শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যাইয়ের সম্পর্কে জানা-অজানা তথ্য জানুন (Biography of Syama Prasad Mukherjee in Bengali)।
ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় অথবা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী তিনি ছিলেন একজন ভারতীয় পন্ডিত এবং নেতা। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী প্রথম হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনসংঘ গঠন করেছিলেন। ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় হিন্দু মহাসভার সভাপতি ছিলেন। তিনি জহরলাল নেহেরুর কেবিনেটের মন্ত্রী ছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে কুখ্যাত “নেহেরু – লিয়াকত” চুক্তির বিরোধিতা করে মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেছিলেন।
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কথা বলতে গেলে বলা যায় যে, জাতীয় সংহতিকরণের যার ছিল অধ্যাবসায়, যিনি দেশের একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক বিকল্পের বীজ বপন করে দিয়েছেন, তিনি ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ছাড়া আর কেউ নন। তিনি প্রথম জম্মু ও কাশ্মীরের সমস্যা বুঝতে পেরেছিলেন এবং এর সম্পূর্ণ সমাধানের জন্য দাবিতে জোর গলায় আওয়াজ তুলেছিলেন।
বাংলা ভাগের সময় তিনি ভারতের অধিকার এবং স্বার্থের জন্য সফলভাবে লড়াই করেছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তী কেউ কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদের ওপরে আমদানিকৃত মতাদর্শ এবং মতবাদ চাপিয়ে দেওয়ার বিরোধিতা করার ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং নেতৃত্বাধীন ভূমিকা পালন করেছিলেন ডাক্তার শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।
সুচিপত্র
ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এর জীবনী:
তো চলুন এই স্বাধীনতা সংগ্রামী ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এর জীবনী সম্পর্কে কিছু জানা যাক:
- সম্পূর্ণ নাম: শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় অথবা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী
- জন্ম তারিখ: ৬ ই জুলাই ১৯০১ সাল
- জন্ম স্থান: কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত
- পিতার নাম: আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
- মাতার নাম: যোগমায়া দেবী
- স্ত্রীর নাম: সুধা দেবী
- সন্তান: চারটি সন্তান ছিল
- আন্দোলন: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, ভারত ছাড়ো আন্দোলন
- প্রধান সংগঠন: ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, হিন্দু মহাসভা, ভারতীয় জনসংঘ
- মৃত্যুর তারিখ: ২৩ শে জুন ১৯৫৩ সাল (বয়স ছিল ৫১ বছর)
- মৃত্যুর স্থান: কাশ্মীর, ভারত
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পরিবার:
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পরিবারের আদি নিবাস ছিল পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার জিরাট বলাগড় গ্রামে। তার প্রপিতামহ পারিবারিক কারণে হুগলী জেলার এক ব্রাহ্মণ অধ্যুষিত গ্রাম দিগসুই থেকে জিরাট বলাগড় গ্রামে এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন।
তবে তার পিতামহ গঙ্গা প্রসাদ মুখোপাধ্যায় ১৮৩৬ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর জিরাট বলাগড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনিও ছিলেন খুবই মেধাবী। তিনি জিরাটের বিত্তশালীদের সাহায্যে কলকাতায় ডাক্তারি করতে আসেন এবং পরবর্তীতে জিরাট বলাগর গ্রাম ছেড়ে কলকাতার ভবানীপুরে বসতি স্থাপন করেন।
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এর শৈশবকাল এবং শিক্ষা জীবন:
প্রতিটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাচ্চাদের মতো শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ১৯০১ সালের ৬ জুলাই কলকাতার এক উচ্চ সামাজিক মর্যাদা সম্পন্ন ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তারপর তার পিতা স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এবং মাতা শ্রীমতি যোগমায়া দেবীর কাছ থেকে তিনি কিংবদন্তি তুল্য পান্ডিত্য এবং ঐকান্তিক জাতীয়তাবাদী চেতনা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছিলেন।
তাঁরা তাঁকে “পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপন” করার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন। ১৯২১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে সম্মান পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান দখল করার পর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি ভারতীয় ভাষার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন।
এরপরে তিনি ১৯২৪ সালে বি এল (BL) পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় এ সর্বোচ্চ স্থান লাভ করেন। ছাত্র থাকাকালীন সময় থেকে শ্যামাপ্রসাদ তার ভাইস চ্যান্সেলর পিতাকে শিক্ষা পরিকল্পনা প্রণয়নের সহায়তা করেন। কথায় আছে পিতার গুন পুত্রের মধ্যে থাকবেই থাকবে। পিতার মতো তিনিও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (১৯৩৪ থেকে ১৯৩৮) হন।
১৯৩৭ সালে উপাচার্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অনুরোধ করেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় সংগীত রচনা করে দেওয়ার জন্য।
রবীন্দ্রনাথ একটির বদলে দুটি গান রচনা করে দেন, “চলো যাই চলো যাই” এবং “শুভ কর্মপথে ধর নির্ভয় গান,” “চলো যাই চলো যাই” গানটি গৃহীত হয় এবং ১৯৩৭ সালের ২৪ শে জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে কুচকাওয়াজে ছাত্রদের দ্বারা প্রথম গাওয়া হয় সেই গান।
এরপর ২০০৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধ্যশতবর্ষ উপলক্ষে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় সঙ্গীত হিসেবে “শুভ কর্মপথে ধর নির্ভয় গান” এই গানটি গ্রহণযোগ্য হয়।
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রাজনৈতিক জীবন যাত্রা:
রাজনৈতিক জীবনযাত্রা বলতে গেলে প্রথম দিকে ডঃ মুখার্জি শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায় ভারত বিভাজনের জন্য তীব্র বিরোধিতা জানিয়েছিলেন। ১১ই ফেব্রুয়ারি ১৯৪১ সালে তিনি বলেছিলেন মুসলিমরা যদি ভারতবর্ষের বিভাজন চায় তবে ভারতের সকল মুসলিমদের উচিত তাদের সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে পাকিস্তান চলে যাওয়া।
পরবর্তীতে লর্ড মাউন্টব্যাটেন এর বাড়িতে ভারত বিভাজন ও বাংলা বিভাজন নিয়ে আলোচনা শুরু হয় সভায় সিদ্ধান্ত হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম ও হিন্দু জেলা প্রতিনিধিদের নিয়ে দুটি আলাদা সভা হবে এবং সবার মতামত নেওয়া হবে।
একটি সভার ফলাফল যদি বাংলা ভাগের পক্ষে যায় তবে বাংলা ভাগ হবে। মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ এই সভায় বাংলা বিভাজনের বিপক্ষে বেশি ভোট করেছিল। কিন্তু হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দের সবাই বাংলা বিভাজনের পক্ষেই ভোট দিয়েছিল বেশি। ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
ডক্টর মুখোপাধ্যায়ের শিল্পমন্ত্রী রূপে শপথ গ্রহণ:
১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট নেহেরুর মন্ত্রিসভায় শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী শিল্পমন্ত্রীর রূপে শপথ গ্রহণ করেন। দেশ স্বাধীনের পর হিন্দু মহাসরুপের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কাজে আত্মনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ভারতের শিল্পমন্ত্রী থাকাকালীন শিল্প উন্নয়ন নিগম, চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ স্থাপন, প্রথম শিল্পনীতি প্রণয়ন সিন্ধ্রি, সার কারখানা সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী।
এছাড়া খড়্গপুরের ভারতের প্রথম “ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি” স্থাপন করা, কলকাতার প্রথম “ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট” স্থাপন করার ভাবনা তার মাথায় এসেছিল।
শ্যামাপ্রসাদ এর রাজনৈতিক জীবনেও উচ্চ আদর্শ আদর্শবাদের প্রভাব দেখা যায়। ১৯২৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনী এলাকা থেকে কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে তিনি বঙ্গীয় আইন পরিষদে নির্বাচিত হন। কিন্তু ১৯৩০ সালে কংগ্রেস প্রতিবাদ জানিয়ে পরিষদ বর্জনের ডাক দিলে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন। পরবর্তীতে নির্দল প্রার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনি পুনঃনির্বাচিত হন। ১৯৩৭ সালে তিনি প্রথম প্রাদেশিক নির্বাচনে লড়েছিলেন।
এরপর ১৯৩৫ সালের গভর্মেন্ট অফ ইন্ডিয়া অথবা ভারত সরকারের আইন অনুযায়ী এই নির্বাচন হয়েছিল এবং শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এই নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন। এই সময় মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন এ কে ফজলুল হক এবং অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন স্বয়ং শ্যামাপ্রসাদ। এই সময় বীর সাভারকর তার ওপর গভীর প্রভাব সৃষ্টি করে।
১৯৪২ সালের মার্চ মাসে ক্রিপস মিশনের ব্যর্থতার পরে ১৪ জুলাই মহারাষ্ট্রের আর্ধা ইংরেজদের কাছ থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি চাওয়া হয়। কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক হয়, কিন্তু এই দাবি ইংরেজরা মেনে নিতে রাজি হলো না।
আইন অমান্য আন্দোলনের পথে নামে কংগ্রেস। “আইন অমান্য” আন্দোলন এবং এরপরে “ভারত ছাড়ো আন্দোলন” দুটো আন্দোলন এরই বিরোধিতা করে শ্যামাপ্রসাদ। সেই কারণে ১৯৪২ সালে নিজের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন তিনি। এই কারণে শ্যামাপ্রসাদ কে ইংরেজ বিরোধী জাতীয়তাবাদী ও বলা হয়।
মুখোপাধ্যায়ের কাশ্মীর অভিযান:
ভারতের অখন্ডতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য সংবিধানের বিশেষ অনুচ্ছেদ ৩৭০ ধারা বিলোপ এবং পারমিট রাজ বাতিলের দাবিতে ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি কাশ্মীর অভিযান শুরু করেন।
১৯৫৩ সালের ১১ই মে পাঞ্জাবের অধমপুরে শেষ সভা করে কাশ্মীরের প্রবেশের পথে গ্রেপ্তার হয়ে যান তিনি।
ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু:
জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ নম্বর ধারা নিয়ে নেহেরু মন্ত্রিসভার সাথে মতবিরোধ দেখা দিলে তিনি মন্ত্রিসভা থেকে নিজের পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে তিনি দক্ষিণপন্থী প্রজা পরিষদ গঠন করেন এবং বলেন যে, “এক প্রজাতন্ত্রের মধ্যে আর একটা প্রজাতন্ত্র থাকতে পারে না” এই দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন।
১৯৫৩ সালের ১১ই মে শ্যামাপ্রসাদকে গ্রেফতার করে জেল বন্দি করা হলে তিনি বন্দী থাকা অবস্থায় ১৯৫৩ সালের ২৩ শে জুন রহস্যজনক ভাবে কাশ্মীরে বন্দী অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করেন।
তার মৃত্যু নিয়ে কোন মতেই কারণ জানা যায় না, ধারণা করা হয় যে, তাকে কংগ্রেস সরকার হত্যা করেছে, যেটি এখনো পর্যন্ত বিতর্কিতই রয়ে গেছে।
Syama Prasad Mukherjee Biography in bengali pdf Download
১৯৫২ সালে লোকসভা নির্বাচনে শ্যামাপ্রসাদের ভূমিকা সম্পর্কে, উদ্বাস্তু পুনর্বাসন সমস্যা, পাকিস্তানে হিন্দু গণহত্যা,ভারত পাকিস্তানের মধ্যে জনবিন্যাস, বিনিময়ে শ্যামাপ্রসাদ এর মতাদর্শ, গণআন্দোলন অথবা নিষ্ক্রিয়তা সম্পর্কে কিছুই লেখা নেই কেন??? কোথাও লেখা আছে ? হয়তো তাও নেই!!কেন???
বাংলা ভাগের অন্যতম কুশিলব