সুধাময় প্রামাণিক জীবনী 2023 – ইতিহাস, পরিবার এবং বিপ্লবী কার্যক্রম

সুধাময় প্রামাণিক কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? সুধাময় প্রামাণিক কিভাবে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন? ওনার বাবা-মা কে? ওনার জীবন কেমন ছিল? এছাড়াও সুধাময় প্রামাণিকের সম্পর্কে জানা-অজানা তথ্য জানুন (Biography of Sudhamoy Pramanick in Bengali)।

স্বাধীনতা আন্দোলনের এবং সমাজকল্যাণমূলক কাজে যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন চিন্তাধারার ব্যক্তিত্ব। তারা নিজেদের মেধা, বুদ্ধি এবং সংগ্রাম দিয়ে অনেকখানি ভূমিকা রেখে গিয়েছেন। তেমনি একজন হলেন সুধাময় প্রামাণিক।

সুধাময় প্রামাণিক জীবন পরিচয় - Sudhamoy Pramanick Biography in Bengali
সুধাময় প্রামাণিক জীবন পরিচয় – Sudhamoy Pramanick Biography in Bengali

তিনি ছিলেন একজন সমাজ কর্মী, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের একজন সদস্য এবং ভারতের স্বাধীনতার জন্য সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন, তাছাড়া তিনি ছিলেন একজন রাজনৈতিক কর্মী, তার পাশাপাশি তিনি শান্তিপুর হতে আগত একজন আইনজীবী অথবা উকিল। তিনি সমাজকল্যাণমূলক সংস্থা তিলি সমাজের আজীবন সেক্রেটারী ছিলেন।

এক কথায় বলতে গেলে, তখনকার সময়ে তিনি ছিলেন ভারতের ভাগ্যবান অধ্যক্ষ মহলের মধ্যে একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব। তিনি ভারতের প্রথম প্রেসিডেন্ট রাজেন্দ্র প্রসাদের থেকে এক বছরের বড় ছিলেন অর্থাৎ এক বছরের বয়োজ্যেষ্ঠ ছিলেন।

সুধাময় প্রামাণিকের জীবনী সম্পর্কে জানা যাক:

  • সম্পূর্ণ নাম: সুধাময় প্রামাণিক
  • জন্ম: ১১ ই সেপ্টেম্বর ১৮৮৪ সাল
  •  জন্ম স্থান: শান্তিপুর, নদীয়া, ব্রিটিশ ভারত, (বর্তমানে ভারত)
  • পিতার নাম: গোবিন্দ প্রামাণিক
  • মাতার নাম: রাধারানী প্রামাণিক
  • স্ত্রীর নাম: স্বর্ণ বালা প্রামাণিক
  • জাতীয়তা: ব্রিটিশ ভারতীয়
  • নাগরিকত্ব: ব্রিটিশ ভারত
  • শিক্ষা: বি.এ. (B.A)
  • মাতৃ শিক্ষায়তন: প্রেসিডেন্সি কলেজ
  • পেশা: রাজনীতি
  • পরিচিতির কারণ: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন
  • রাজনৈতিক দল: ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস
  • মৃত্যু: ২ রা অক্টোবর ১৯৭৪ সাল (বয়স ছিল ৯০ বছর) কলকাতা, ভারত

সুধাময় প্রামাণিকের প্রাথমিক জীবন, শিক্ষা এবং পেশা:

সুধাময় ১৮৮৪ সালে শান্তিপুরের প্রামাণিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন, তিনি ছিলেন দশ ভাইবোনের মধ্যে সবথেকে বড়। তিনি তার প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শান্তিপুরেই শুরু করেন এবং ১৯০০ সালের শুরুর দিকে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের জন্য কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন পরবর্তীকালে তিনি ইউনিভার্সিটি অফ কলকাতা থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রী অর্জন করেন এবং রায়গঞ্জ এবং শিয়ালদহ কোর্টে অ্যাডভোকেট হিসেবে প্র্যাকটিস শুরু করেন।

এছাড়া ব্যক্তিগত দিক থেকে বলতে গেলে তিনি ছিলেন খুবই বিনম্র প্রকৃতির একজন মানুষ। তিনি সংস্কৃত তে অগাধ পান্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন এবং ভারতের প্রাচীন ভাষার প্রগাঢ় ও ভালবাসা হেতু তিনি সংস্কৃত সাহিত্যের অনেক কিছুই অনুবাদ এবং সম্পাদনা করেছিলেন।

তিলি সমাজের সেক্রেটারী হিসেবে তিনি বঙ্গীয় তিলি সমাজ পত্রিকার মাধ্যমে তখনকার সামাজিক অভিশাপ যা ছিল পণ প্রথা যেটাকে আমরা যৌতুক বলে জানি, তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। সুধাময় প্রামাণিক কংগ্রেসে যোগদান এবং রায়গঞ্জ কোর্টে থাকাকালীন তিনি কংগ্রেসের একজন প্রবীণ নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।

এরপর ১৯৩০ সালে রায়গঞ্জ ব্রিটিশ রাজত্বের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করেন তিনি এবং উমেশচন্দ্র ভৌমিক কংগ্রেসের নেতা ছিলেন, যারা কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির ঐতিহাসিক লাহোর রেজুলেশন উত্থাপন করেন।

এই সময় ১৯৩০ সালের মার্চ মাসে যখন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন খুবই চরম পর্যায়ে, তখন অনেক কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ, এমনকি সুভাষচন্দ্র বসু সহ অনেক নেতৃবৃন্দ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ব্রিটিশদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে সকল জেলা হতে স্বেচ্ছাসেবক, যাদের মধ্যে মহিলারাও ছিলেন। রায়গঞ্জের রাস্তাগুলোতে মিছিল করেছিলেন তারা।

এরপর কয়েক বছর পর তিনি কলকাতা শহরে চলে আসেন, তিনি এবং তার বড় সন্তান একসঙ্গে শিয়ালদহ কোর্টে আরো অনেক টা সময় দেওয়া শুরু করেন। অনেক সমাজ কর্মীদের মুক্ত করার জন্য তারা নিজে দের জীবনকেও বিপন্ন করে তোলেন। এছাড়া অনেক গরিব ছাত্র দের সাহায্যও করেছেন। তার জন্য সেই গরিব ছাত্রদের কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন একজন সত্যিকারের নায়ক।

সুধাময় প্রামাণিকের মৃত্যু: 

যেহেতু তিনি যুক্তি তর্ক এবং শিক্ষার মাধ্যমে সবাইকে জানিয়েছিলেন যে কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল। এই সমস্ত বিষয়ে তিনি আইনের পথে হেঁটেছিলেন এবং উকিল হয়ে অনেক অসম্ভবকেও সম্ভব করে তুলেছিলেন। তাছাড়া অনেক উপকার মূলক কাজ করার সাথে সাথে যখন তার বয়স ৯০ বছর ছিল,  তখন তিনি অবস্থান করছিলেন কলকাতাতে, ২ রা অক্টোবর ১৯৭৪ সালে তিনি কলকাতাতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

তখনকার দিনে পণপ্রথা ছিল সমাজের একটি ব্যাধি বলা যায়, সেই ব্যাধি থেকে মুক্ত করেছিলেন সমাজকে এই সুধাময় প্রামাণিক। তখনও কিন্তু এমন একজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন, যিনি এমনই এক বিষ প্রথা পণ প্রথার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন।

কেননা তখন অন্যান্য বিষয়ের মত পণপ্রথা কে খুবই গুরুত্বের চোখে দেখা হতো। তবে এই বিষয়টিতে অনেক গরিব পরিবার সম্পূর্ণ রূপে শেষ হয়ে গিয়েছে, আর সেই কারণে এই পণ প্রথার বিরুদ্ধে তখন সুধাময় প্রামাণিক সোচ্চার হয়েছিলেন।

তিনি আজ আর আমাদের মধ্যে বেঁচে নেই ঠিকই, কিন্তু তার সেই গরিব ছাত্রদের উপকার করে যাওয়া এবং উকিল থাকাকালীন অনেক সমস্যার সমাধান করে যাওয়া আজও মানুষের মনে তাঁকে জীবিত করে রেখেছে। তাছাড়া তার বক্তৃতার মধ্যে দিয়ে ব্রিটিশদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে সকল জেলা হতে স্বেচ্ছাসেবক, এমনকি মহিলারাও কিন্তু রাস্তা তে মিছিল বার করেছিলেন।

নিজের সাথে সাথে নিজের সন্তানদেরও তিনি সেই শিক্ষায় বড় করেছেন এবং নিজের বড় সন্তানের সাথে ওকালতি জীবনটাকে তিনি আরো বেশি সুন্দর ভাবে অতিবাহিত করেছেন। সমাজকল্যাণ মূলক কাজে তিনি সবসময় অগ্রসর ছিলেন, প্রত্যক্ষভাবে তিনি জড়িত ছিলেন সত্যাগ্রহ আন্দোলনে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনি যে ভূমিকা পালন করে গিয়েছেন, সে ভূমিকা কখনোই ভোলার নয়। আজও দেশবাসী তাকে স্মরণ করেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top