এক কথায় স্বাস্থ্যই সম্পদ, আপনার শরীর যদি সুস্থ স্বাভাবিক এবং স্ট্রং না হয়, তাহলে যত সম্পদ অর্জন করা হোক না কেন, তা একসময় এমনভাবে খরচ হয়ে যায় চিকিৎসা ক্ষেত্রে, তা ধারণার বাইরে। হঠাৎ করে কোন অসুস্থ ব্যক্তি যখন হসপিটালে ভর্তি হন তখন হাজার থেকে লাখে পৌঁছায় সেই খরচের মাত্রা।
সুস্থ থাকার জন্য আমাদের অনেক কিছুই করতে হয়, তবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমাদের অভ্যাসের মধ্যে এমন কিছু অভ্যাস থাকে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। সেগুলি বাদ দিতে পারলেই তার পরিবর্তে যদি ভালো অভ্যাস গঠন করা যায় তাহলে সুস্থ থাকাটা এমন কিছু কঠিন কাজ নয়।
সেই অভ্যাসটা রপ্ত করতে গেলে মাত্র কুড়ি থেকে একুশ দিন যদি নিজেকে একেবারে নিযুক্ত করা যায় সেই অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসার জন্য, সংকল্প করা যায় তাহলে অনায়াসে সেই কাজ সম্ভব হয়। সুস্থ থাকার জন্য আমাদের বাদ দিতে হবে কিছু ক্ষতিকর অভ্যাস। সেই সঙ্গে রপ্ত করতে হবে এমন কিছু অভ্যাস যেগুলো আমাদের সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
যেমন ধরুন প্রকৃতিতে সময় কাটানো, নিয়ম মেনে ঘুমাতে যাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুমের দিকে খেয়াল দেওয়া, চাপমুক্ত থাকা, শরীর চর্চা করা, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা, পরিমিত জল পান করা, এই সমস্ত অভ্যাসগুলি আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি মন কেও সুস্থ রাখে। শুধু শারীরিক সুস্থতার দিকে খেয়াল রাখলে তো হয় না, তার সাথে সাথে মানসিক স্বাস্থ্যেরও খেয়াল রাখতে হয়।
এসব অভ্যাস গুলোর সাথে সাথে বাদ দিতে হবে অতিরিক্ত ভাজাপোড়া, মশাদার খাবার, অতিরিক্ত মিষ্টি কিংবা লবন এড়িয়ে চলতে হবে। সেই সঙ্গে খেতে হবে কিছু “সুপারফুড” তাহলেই সুস্থ থাকা সহজ হবে।
সুচিপত্র
এই সুপার ফুড আসলে কি?
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন
সুপারফুড কোন ফুড অথবা খাবার যখন শরীরের সুস্থতায়, রোগ নিরাময়ে বিশেষ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তখন সেই সব খাবার কে সুপারফুড বলা যেতেই পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন সুপার ফুড বলা হয় এমন খাবার কে, যা অনেক বেশি পুষ্টিকর, যেসব খাবারে ক্যালরি কম থাকে এবং পুষ্টি উপাদান সবথেকে বেশি থাকে।
আমাদের শরীরে পুষ্টির প্রয়োজন কতখানি তা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। এমন সব খাবারে প্রচুর পরিমাণে খনিজ থাকে, ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এসব খাবার মানব শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাবে।
এছাড়া বর্তমান সময়ের খুবই চেনা পরিচিত রোগ গুলি যা জীবন কেড়ে নিতে পারে, যেমন ধরুন হার্টের সমস্যা, হার্ট অ্যাটাক, আর্থারাইটিস, ক্যান্সার, স্ট্রোকের মতো অসুখকেও দূরে রাখবে এবং বাড়াবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও। সুস্থ এবং দীর্ঘ জীবন পেতে সকলেই চাইবেন, তাই নিজের খাবারের তালিকাতে এই সুপার ফুডগুলি রাখার চেষ্টা করুন।
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত সুপারফুড এর নাম গুলি :
১. সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজি:
সবুজ শাকসবজি সুস্থতার প্রতিক হিসেবে মনে করা হয়। তাই সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজি এমন অনেক আছে, বাঁধাকপি বিভিন্ন ধরনের শাক এবং আরো অন্যান্য সবজি, ব্রকলি ইত্যাদি যেগুলি বিভিন্ন ভিটামিনের সমন্বয়ে গঠিত।
এইজন্যই শাকসবজি খেলে তা নানাভাবে আমাদের শরীরকে উপকার করে। সবুজ শাক-সবজি ভিটামিন এ, ই, সি এবং কে এর ভালো উৎস।
পাতাযুক্ত শাকসবজিতে থাকে আয়রন, ক্যারোটিনয়েডস, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম। ফলে শরীরের প্রয়োজনীয় অনেক পুষ্টির যোগান মেলে এই সমস্ত পাতাযুক্ত শাকসবজি থেকে।
২. স্যালমন / স্যামন মাছ:
মাছেও থাকে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ, তবে নানা ধরনের পুষ্টিগুনে ভরপুর হলো স্যালমন মাছ অথবা স্যামন মাছ। এই মাছে থাকে ই, পি, এ এবং ডি এইচ এ সম্পন্ন ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। যা কিনা মানব শরীরের জন্য এক অনবদ্য খাদ্য উপাদান।
আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় একটি উপাদান হলো ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকাতে এই এসিডযুক্ত খাবার রাখা জরুরী। আরো অন্যান্য মাছের পাশাপাশি এই মাছটাও খাবারের তালিকাতে রাখতে পারেন।
৩. ব্লুবেরি:
বেরি জাতীয় যেকোনো ফল সুপার ফুড এর তালিকাতে পড়ে। যার মধ্যে সবথেকে বেশি পুষ্টিগুণ থাকে ব্লুবেরি তে। এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি ফল অথবা খাবার বলা যেতে পারে।
এই খাবারে রয়েছে ম্যাকানিজ, ফাইবার, ভিটামিন কে বা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ব্লুবেরি যদি নিয়মিত খাওয়া যায় তাহলে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় রক্তচাপ, যা বর্তমানে সকল মানুষকে একেবারে কাবু করে রেখেছে।
সেই সঙ্গে হার্টের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ভয় ও অনেকটাই কমে যায়। হার্টকে সুস্থ রাখতে পারে এই ব্লুবেরি। তাই নিয়মিত খাবারের তালিকায় যোগ করতে পারেন এই ফল।
৪. বিভিন্ন ধরনের বীজ:
বিভিন্ন ধরনের সবজি এবং ফুলের বীজ যেগুলি আমরা সাধারণত ফেলে দিই অথবা কোন কাজে আসবে না মনে করে সেগুলোর জায়গা হয় ডাস্টবিনে।
তবে অনেকের হয়তো জানা নেই যে, এই সমস্ত বীজ সুপারফুড এর তালিকাতে পড়ে, জলখাবার হিসেবে খেতে পারেন সূর্যমুখীর বীজ এবং চিয়া বীজ। এ ধরনের বীজগুলিতে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমানোর মত উপাদান থাকে।
সেই সাথে সাথে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এর ফলে উদ্বেগ কম হয় এবং শরীর সবসময় একটা ফ্রেশ ফিল করে। তার সাথে সাথে শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা ও কমিয়ে আনতে পারে।
সেই কারণে এই উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ সুপারফুড বিভিন্ন ধরনের পিএইচ সমৃদ্ধ, আর কখনোই ফেলে দেবেন না যত্ন করে রাখুন কেননা এগুলি আলাদা করে কিনতে গেলে বেশ দাম দিতে হয়, সেটা আপনি কিনে নিতেই পারেন। তবে হাতের কাছে পেলে যত্ন করে সংরক্ষণ করে রাখতে ক্ষতি কি !
৫. বাদাম:
বাদাম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো, তাইতো প্রতিদিন মুঠো ভরা বাদাম মানেই বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান। শরীরের অনেক পুষ্টির অভাব মিটিয়ে থাকে, আপনার সুস্থ থাকার ভূমিকা রাখতে পারে এই বাদাম। বিভিন্ন ধরনের বাদাম হতে পারে, এটি স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ধরনের উপকারিতা বয়ে নিয়ে আসতে পারে।
প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় এক মুঠো কাঁচা বাদাম ভিজিয়ে রাখুন যা অভ্যাসে পরিণত করুন। এরপর সকালে উঠে সেই ভিজানো বাদাম খেয়ে নিন আর এতে অনেক উপকার পাবেন।
এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের রংবেরঙের ফল গুলির মধ্যে প্রতিদিনের খাবারের তালিকা তে যে কোন একটা রাখতেই পারেন। এর ফলে শরীরের পুষ্টির যোগান হওয়ার সাথে সাথে আপনার মন এবং ত্বক, চুল সবকিছুই সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকবে।
সুপারফুড মানেই যে অনেক দাম দিয়ে কিনতে হবে তা কিন্তু নয়, আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় সাধারণ খাবারের মধ্যেই এই সুপারফুড রয়েছে। শুধু সেগুলি চিহ্নিত করে খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিলে চলবে না, সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন এবং দীর্ঘায়ু পাওয়ার জন্য এগুলি রাখতে হবে খাবারের তালিকায়।