মাধ্যমিক পরীক্ষা 2023: শেষ মুহূর্তে পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য দারুন কিছু টিপস

মাধ্যমিক পরীক্ষা সকল শিক্ষার্থীদের জীবনে একটি প্রথম ধাপ বলা যায়। তবে মাধ্যমিক পরীক্ষার সম্মন্ধে সংক্ষিপ্তভাবে কিছু বিষয় জানা যাক। পশ্চিমবঙ্গ বোর্ডের দশম শ্রেণীর পরীক্ষা হল পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সিলেবাস নির্দেশিকা এবং মূল্যায়ন পদ্ধতির অধীনে শিক্ষার্থীদের জন্য বোর্ড দ্বারা পরিচালিত একটি পরীক্ষা। যে পরীক্ষাটি সকল শিক্ষার্থীদের কাছে মাধ্যমিক পরীক্ষা নামে পরিচিত।

পশ্চিমবঙ্গ বোর্ডের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে শুরু হয় এবং দশম শ্রেণীর পরে একটি বোর্ড পরীক্ষার মাধ্যমে শেষ হয়। যা ইংরেজি তে সেকেন্ডারি এডুকেশন (Secondary Education) এবং বাংলায় মাধ্যমিক পরীক্ষা হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত।

মাধ্যমিক পরীক্ষা: শেষ মুহূর্তে পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য দারুন কিছু টিপস
মাধ্যমিক পরীক্ষা 2023: শেষ মুহূর্তে পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য দারুন কিছু টিপস

মাধ্যমিক পরীক্ষা একজন শিক্ষার্থীর জীবনের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। যার উপর নির্ভর করে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতে কি নিয়ে পড়াশোনা করবে সে বিষয়টি নির্ভর করে।

সুতরাং মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য সঠিক অধ্যায়ন, পরিকল্পনা, সময়সূচি, প্রস্তুতি সবকিছুর প্রয়োজন পড়ে খুব সুন্দর ভাবে। এই বিষয়ে সমস্ত শিক্ষার্থী দের বাড়ির অভিভাবকরা সদা সতর্ক থাকেন তাদের সবদিক থেকে খেয়াল রাখতে।

তবে এ বিষয়ে অনেক শিক্ষার্থীরা ঘাবড়ে যান, কেননা যেহেতু প্রথম বোর্ডের পরীক্ষা তাই না জানি কত কিনা হতে পারে সেখানে। এই বিষয়ে অযথা চিন্তা করে নিজেদের মধ্যে ভয় ভীতি তৈরি করে থাকেন।

তবে এক্ষেত্রে কিন্তু কোন রকম ভয় পাওয়ার কারণ নেই। সময় শেষ হয়ে আসার সাথে সাথে প্রস্তুতির ধরনটাও কিন্তু একটু পাল্টে যায়। সে সময়টাতেও অনেক কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রেখে প্রস্তুতি আরো বেশি মজবুত করে তোলা যায়।

শেষ মুহূর্তে পরীক্ষার প্রস্তুতির দারুন কিছু টিপস:

তাহলে জেনে নেওয়া যাক, আর মাত্র কয়েক টা দিন রয়েছে মাধ্যমিকের, শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কিছু টিপস সম্পর্কে:

চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৩ এ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে ২৩ শে ফেব্রুয়ারি থেকে, হাতে রয়েছে মাত্র আর কয়েকটা দিন। স্কুল জীবনের প্রথম বোর্ড পরীক্ষা দেওয়ার আগে রইল কিছুস টিপস, যা সকল শিক্ষার্থীর মনে অনেকখানি সাহস যোগাবে।

১. সিলেবাস সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে:

যেকোনো পরীক্ষার আগেই সেই পরীক্ষার সিলেবাস সম্পূর্ণ জানাটা প্রয়োজন। সম্পূর্ণ সিলেবাসে কোথায় কোন বিষয় রয়েছে সে বিষয়ে স্বাভাবিক একটু ধারণা থাকলে তা থেকেই কিন্তু অনেকটা ভয় কাটিয়ে ওঠা যায়। সিলেবাস সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞান থাকলে পড়ার কৌশল বেছে নেওয়া অনেক সহজ হয়ে যায়।

২. বারবার পড়ার অভ্যেস:

যেকোন বিষয় যখন আপনি বারবার পড়তে থাকবেন, সেটা আপনার অজান্তে আপনার ব্রেনের মধ্যে গেঁথে যাবে। পরীক্ষা শুরুর আগে তিন সপ্তাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ধরে নেওয়া যেতে পারে যে সম্পূর্ণ সিলেবাসের পড়া হয়ে গেছে আপনার, সেক্ষেত্রে সময় নষ্ট না করে পুরানো যে পড়াগুলো রয়েছে সেগুলো আবার নতুন করে রিভাইস করতে থাকুন। বারবার পড়তে থাকুন, দেখবেন এগুলো অনেকটাই সহজ মনে হবে।

৩. কেমন প্রশ্ন এসেছিল আগের বারে:

মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে গত কয়েক বছরের প্রশ্ন নিয়ে উৎসাহ দেখা যায় খুবই। গত কয়েক বছর কেমন ধরনের প্রশ্ন এসেছিল তার মধ্যে থেকে কিছু প্রশ্ন আবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আসতে পারে।

প্রস্তুতি ভালো করতে এটি সহজ, সঠিক পদ্ধতি। এর ফলে প্রশ্নের ধরন নিয়ে আর কোনো বিভ্রান্তি থাকবে না। কেমন ধরনের প্রশ্ন আসতে পারে আর সেই অনুসারে নিজেকে সেই ভাবে প্রস্তুত করতে হবে।

৪. সংক্ষিপ্ত নোট প্রস্তুত করা:

মাধ্যমিক পরীক্ষা শিক্ষার্থীর জীবনের একটি বিশেষ টার্নিং পয়েন্ট। সেক্ষেত্রে সব দিক থেকে বিশেষ ধ্যান থাকাটা জরুরী। পরীক্ষার আগে “টু দি পয়েন্ট” অর্থাৎ পয়েন্ট ভিত্তিক পড়াশুনা খুব জরুরী।

সে ক্ষেত্রে ছোট ছোট নোট প্রস্তুত করতে পারেন। সেগুলি বারবার পড়তে থাকুন। এর ফলে পড়া মনে রাখা অনেক সহজ হবে, আর পয়েন্ট মনে থাকলে সেই পয়েন্টের উপর ভিত্তি করে আপনি অনেকটা বিস্তারিত লিখতে পারবেন।

৫. রেফারেন্স বইয়ের সাহায্য নিন:

পাঠ্যপুস্তক পড়ার পাশাপাশি রেফারেন্স বই পড়ার অভ্যাস থাকলে আপনার জন্য তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে কোন একটির উপর সম্পূর্ণ ভরসা কখনোই করবেন না।

আজকে যদি পাঠ্য বই পড়ে থাকেন তবে আগামীকাল ওই একই চ্যাপ্টারের রেফারেন্স বই থেকে পড়তে থাকুন। দেখবেন এর থেকে আপনি অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারছেন। আর পরীক্ষার সম্পর্কে অনেকটাই ধারণা করতে পারছেন।

৬. পরীক্ষা দিন:

পরীক্ষা যে কোন কাজকে আরো বেশি সহজ করে তোলে, যে পড়াশোনা গুলো আগে থেকে করে আসছেন সেগুলির উপরে একটি ছোট্ট পরীক্ষা নিজে থেকেই দিতে পারেন, গৃহশিক্ষক অথবা বাড়ির কোন সদস্য, অভিভাবকের কাছে ছোটখাটো একটা পরীক্ষা দিন।

মক টেস্ট দেওয়া ও তাতে প্রাপ্ত নম্বর পরীক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। তার সাথে সাথে মাধ্যমিক পরীক্ষার কিছুটা হলেও অনুশীলন হয়ে গেল।

৭. রুটিন মেনে চলুন:

শুধু পরীক্ষা নয় যেকোনো কাজের জন্য রুটিন মেনে চলাটা জরুরী। দিনের ২৪ ঘন্টা পড়ার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই তা আমরা সকলেই কম বেশি জানি। তাই যেটুকু পড়বেন সেটুকু যেন আপনার সম্পূর্ণ মনে থাকে এবং তার উপর ভিত্তি করে আপনি ভালোভাবেই প্রতিফল পেতে পারেন সেটার উপরে গুরুত্ব দিতে হবে।

৮  ঘন্টা ঘুম বাদ দিয়ে দিনের বাকি সময় ভাগ করে নিন। কোন ভাগে কোন বিষয়ে পড়বেন, যেটা আপনার সুবিধা হবে, সেই অনুসারে ঠিক করে নিন আগে থেকেই। আর সেই হিসেবে পড়াশুনা করতে থাকুন।

৮. অযথা চিন্তা করবেন না:

প্রথমত শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন সেই কারণে স্বাভাবিক ভাবেই একটু ভয় চিন্তা থাকতেই পারে, তবে অযথা চিন্তা করে সময় নষ্ট করে ব্রেনের উপরে প্রেসার সৃষ্টি করে পরীক্ষা কে আরো বেশি ক্রিটিকাল করে তোলার কোন মানেই হয় না। স্কুল জীবনের প্রথম বোর্ড পরীক্ষার আগে চিন্তা হওয়াটা স্বাভাবিক।

পড়ার মাঝে কিছুক্ষণ বিরতি নিন, তারপর বাড়ির সকলের সঙ্গে কথা বলুন, গল্পের বইয়ের পাতায় কিছুটা হলেও চোখ রাখতে পারেন। মনটাকে শান্ত করতে ফুরফুরে করতে প্রাকৃতিক পরিবেশের সংস্পর্শে আসুন। মন শান্ত রেখে আবার পড়াশোনায় মন দিন।

৯. সিলেবাসের শেষে দেওয়া প্রশ্নের উপর গুরুত্ব:

সিলেবাসের প্রতিটি বিষয়ের একেবারে শেষে অধ্যায়ের অনুশীলনী অথবা বইয়ের শেষে দেওয়া সমস্ত প্রশ্নের উত্তর নিজে থেকেই সেই বইয়ের টেক্সট থেকে প্রস্তুত করে রাখতে হবে। এর ফলে প্রশ্নগুলো সম্পর্কে স্বাভাবিক একটা ধারণা হয়ে যাবে।

নিশ্চয়ই পরীক্ষায় যে প্রশ্নগুলো আসবে বইয়ের বাইরে থেকে আসবে না, তাই না ! এই প্রশ্ন গুলো যদি আপনি প্রস্তুত করে রাখেন, তাহলে মনে করতে পারেন পরীক্ষার সকল প্রশ্ন আপনার স্বাভাবিক ভাবে জানা হয়ে গেছে।

১০. অংকের জন্য:

অংক এমন একটা বিষয় যা সব ছাত্রছাত্রীদের পছন্দ হওয়ার নয়, প্রতিটি সমস্যার পুনরাবৃত্তিমূলক অনুশীলন প্রয়োজন। যতক্ষণ না নিশ্চিত হচ্ছেন যে  আপনার পাঠ্যপুস্তকে দেওয়া এবং একই শ্রেণীর অন্যান্য সকল বইয়ের সব সমস্যার সমাধান নিজে করতে পারছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত অংকের অনুশীলন করতে থাকুন।

এছাড়াও,

১১. প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা খাতা তৈরি করতে হবে, যেখানে লাস্ট কয়দিনের মধ্যে সেগুলি একবার করে চোখ বুলিয়ে নিতে পারলেই মুশকিল আসান।

১২. টেস্ট পরীক্ষার আগেই সিলেবাসের পড়া শেষ করে ফেলাটা উচিত, বাকি যে সময়টা পড়ে থাকবে সেটা রিভাইজ এবং বারবার অনুশীলন করার জন্য যথেষ্ট।

এই সমস্ত বিষয় গুলি মেনে চলার পাশাপাশি নিজের প্রতি খেয়াল রাখাটাও জরুরী:

সারা বছর ধরে মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য উৎসাহ উদ্দীপনার শেষ নেই। সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েও দেখা যাচ্ছে পরীক্ষার সময় খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেক শিক্ষার্থীরা। সে ক্ষেত্রে আগে থেকেই অতিরিক্ত চিন্তা এবং শরীরের দিকে বিশেষভাবে খেয়াল না রাখার কারণে এগুলো হতে পারে।

তাই সম্পূর্ণরূপে পড়াশোনা করার পাশাপাশি প্রস্তুতি নেওয়ার সাথে সাথে নিজের শরীরের দিকে খেয়াল রাখতে হবে, না হলে সব কষ্টই যে বৃথা যাবে। নিয়ম শৃঙ্খলা অনুযায়ী পড়াশোনা করা, স্বাভাবিক জীবনযাপনে যা কাজ রয়েছে সেগুলিও করা জরুরী।

খাওয়া-দাওয়ার উপরও বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। তাছাড়া মাধ্যমিক পরীক্ষা এমন একটা সময় হয়ে থাকে, যা ঋতু পরিবর্তনের সময়। এই সময়টাতে শরীরের দিকে অবশ্যই অবশ্যই খেয়াল দেওয়াটা সব শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

পরীক্ষার প্রস্তুতি হোক অথবা শরীরের খেয়াল সব দিক থেকে বাড়ির আরো অন্যান্য সদস্য, অভিভাবকরা সম্পূর্ণরূপে সহযোগিতা করবেন শিক্ষার্থীদের। এর ফলে তারা সাহস পাওয়ার পাশাপাশি প্রস্তুতি অনুসারে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবেন খুবই ভালোভাবে। সকল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য রইল অনেক অনেক শুভকামনা, সকলের পরীক্ষা সুন্দর হোক।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top