Jagadhatri Puja 2023: দেবী জগদ্ধাত্রীর সিংহ বাহনের পদতলে হাতির মাথা কেন থাকে?

বাঙালির জীবনে সবথেকে বড় উৎসব হলো দুর্গাপূজা, আর এই দুর্গাপূজার পরেই কোজাগরি লক্ষ্মী পূজা, কালীপূজা, তারপর আসে জগদ্ধাত্রী পূজা। দেবী দুর্গা কিন্তু এই জগদ্ধাত্রী রূপে পুজিত হয়ে থাকেন।

জগদ্ধাত্রী মানেই হল জগতের ধাত্রী, এক কথায় পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জানা যায় দেবী জগদ্ধাত্রীর আবির্ভাব হয়েছিল দেবতাদের গর্ব, অহংকার খর্ব করার জন্য। দেবী জগদ্ধাত্রীকে নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কাহিনী। তাকে আদি শক্তির রূপে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

দেবী জগদ্ধাত্রীর সিংহ বাহনের পদতলে হাতির মাথা কেন থাকে?
দেবী জগদ্ধাত্রীর সিংহ বাহনের পদতলে হাতির মাথা কেন থাকে?

বিভিন্ন উপনিষদে, পুরানে জগদ্ধাত্রী দেবীকে বৈষ্ণবী শক্তি হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। সেই কারণে বিষ্ণুর মত জগদ্ধাত্রী দেবীর হাতে রয়েছে শঙ্খ এবং চক্র। বিষ্ণুর মতোই জগদ্ধাত্রী দেবীও কিন্তু বিশ্বের ধারণ ও পালন করেন।

জগদ্ধাত্রী দেবীকে সন্তুষ্ট করতে দেওয়া হয় এই সমস্ত ভোগ গুলি

দেবী জগদ্ধাত্রীর সিংহবাহনের পায়ের নিচে হাতির মাথা কেন থাকে?

জগদ্ধাত্রী ঠাকুরের বৈশিষ্ট্য অনুসারে আমরা এটি লক্ষ্য করে থাকি। এছাড়া দুর্গার অপর একটি রূপ হল জগদ্ধাত্রী। কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, মহিষাসুর এবং দেবী জগদ্ধাত্রীদের মধ্যে যুদ্ধের সময় মহিষাসুর হাতির রূপ ধরে দেবীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন।

মহিষাসুর সেই হাতি কে বধ করার উদ্দেশ্যে দেবী দুর্গা যে চতুর্ভুজা মূর্তি ধারণ করেন তা হলো জগদ্ধাত্রী। এরপর হাতে থাকা চক্র দিয়ে হাতির শুঁড় ছেদন করেন। এই বিশেষ কাহিনীর সাথে মিল পাওয়া যায় জগদ্ধাত্রী দেবীর মূর্তির সাথে।

কেননা এখানে দেবীর বাহন সিংহ হলেও সিংহর পায়ের নিচে থাকে মৃত হাতি। হাতির রূপ ধারণ করা এই অসুর টির নাম হল করীন্দ্রাসুর। এর থেকে বোঝা যায় যে, যুদ্ধে জগদ্ধাত্রী হাতি রুপী অসুরকে বধ করে তার বাহন সিংহ এর পায়ের নিচে দমন করে রেখেছে।

মহিষাসুরের সঙ্গে দেবী দুর্গার যুদ্ধের সময় মহিষাসুর বিভিন্ন মায়া রূপ ধারণ করার মধ্যে একটি হল হাতির রূপ। তখন দেবী দুর্গা চতুর্ভূজা মূর্তি রূপ ধারণ করে চক্র দিয়ে ছেদ করেছিলেন সেই হাতের শুঁড়। সেই জন্যই দেবী জগদ্ধাত্রীর বাহন সিংহ একটি মৃত হাতির উপরে দাঁড়িয়ে আছে।

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজার এই অজানা তথ্য আপনার জানা আছে কি?

উপনিষদ এর কাহিনী অনুসারে দেবী জগদ্ধাত্রীর বর্ণনা:

উপনিষদের অন্য একটি কাহিনী অনুসারে যারা যায় যে, যক্ষের বেশ ধারণ করে দেবী জগদ্ধাত্রী আবির্ভূতা হয়েছিলেন। যার নাম ছিল উমা হৈমবতী। তবে তিনি আবির্ভূতা হয়েছিলেন দেবতাদের গর্ব, অহংকার কম করার জন্য।

মহিষাসুর বধের পর দেবতা দের মধ্যে অহংকার বোধের জন্ম হয়। তারা মনে করেন দেবী দুর্গাকে তারা সৃষ্টি করেছিলেন, নিজেদের সম্মিলিত শক্তি দিয়ে। সেই জন্যই অসুর বধ হয়েছে তাদের শক্তিতেই।

যেহেতু ব্রহ্মার বর অনুযায়ী মহিষাসুরকে কোন পুরুষ হত্যা করতে পারবেনা। তাই একজন নারীর দরকার পড়েছিল। কিন্তু দেবতাদের মধ্যে এই অহংকার কম করার জন্য তিনি উমা হৈমবতি রূপে আবির্ভূতা হন।

কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী দেবী “বুড়িমা” নামে কেন পরিচিত?

দেবী জগদ্ধাত্রী পরীক্ষা নিয়েছিলেন দেবতাদের:

যেহেতু দেবতারা তাদের শক্তি দিয়ে দেবী দুর্গার দ্বারা মহিষাসুর বধ করেছিলেন। সেই কারণে তাদের মধ্যে এক অহংকারের জন্ম হয়। সেই অহংকার দেখে দেবী তাদের শক্তির পরীক্ষা করতে চান। তিনি আড়াল থেকে ছুঁড়ে দেন সামান্য একটি তৃণ খণ্ড অর্থাৎ ঘাসের টুকরো কে।

অগ্নি দেব আগুনে পোড়াতে পারেন নি সেই ঘাস এর টুকরো। আবার ইন্দ্র দেব ও বজ্র দিয়ে ধ্বংস করতে পারেননি সামান্য তৃণখণ্ডটি। পাশাপাশি বায়ু এবং বরুণদেবও ব্যর্থ হয়েছিলেন সেই তৃণ খণ্ডকে ধ্বংস করতে।

এমন পরিস্থিতিতে তখন আবির্ভূতা হন দেবী, চতুর্ভূজা জগদ্ধাত্রী রূপে। আর বুঝিয়ে দেন যে, তিনিই জগতের ধারীনি শক্তি। তার মধ্যে রয়েছে অপার শক্তি, তিনি চাইলেই অনেক কিছুই করতে পারেন। আবার আরেক দিকে দেবী জগদ্ধাত্রী হাতি রূপী করিন্দ্রাসুর কে বধ করেছিলেন বলে, তার অপর নাম করিন্দ্রসুরনিসূদিনী।

জগদ্ধাত্রী পূজার অজানা তথ্য যা আপনি জানেন না

জগদ্ধাত্রী পুজো কেন হয়?

জগদ্ধাত্রী ও নয়, দুর্গাও নয়, দুটি রূপ মিলে দেবীর প্রকাশ। এই দেবী জগদ্ধাত্রী সিংহের পীঠে বসে আছেন। নানা অলংকারে ভূষিতা এবং নাগ রূপ যজ্ঞউপবিত ধারিণী। পুরানেও দুর্গার আবির্ভাবের আগে বেশ কয়েকবার এক দেবীর উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে।

যিনি বিষ্ণুমায়া অথবা বৈষ্ণবী শক্তি হিসেবে সুপরিচিতা। এছাড়া দেবী জগদ্ধাত্রী দেবী দুর্গার আরেকটি  হওয়ার কারণে তাকে দেবী দুর্গার রূপে পূজা করা হয়। দুর্গা পুজোর মতই লাগে পদ্মফুল এবং আরও অন্যান্য নৈবেদ্য, যেগুলি দুর্গাপুজার সাথে সমান তালে মিল রেখেছে।

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজার অজানা বিষয় যা এই পুজোকে জনপ্রিয় করে তুলে

জগদ্ধাত্রী পূজার অষ্টমী:

দুর্গা পুজোর আদলে এই পূজা সম্পন্ন হয় বলে জগদ্ধাত্রী পূজাতে অষ্টমী, নবমী সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ আর এই দুটি দিনে গুরুত্বপূর্ণ পূজা হয় মায়ের। চন্দননগর এবং কৃষ্ণনগরে এই দিন সাজো সাজো রব ওঠে, দুর্গা পূজার মতোই চার দিন ধরে চলে এই জগদ্ধাত্রী পূজা। দেবী জগদ্ধাত্রী কাত্যায়নী তন্ত্রে, উমা অথবা জগদ্ধাত্রী কোন নামেই পরিচিত নন, সেখানে কিন্তু কেবলমাত্র হৈমবতী অর্থাৎ স্বর্ণালংকার ভূষিতা তিনি।

পৌরাণিক কাহিনী এবং দেবীর রূপের বর্ণনা অনুসারে তার মূর্তি গঠন করে মর্ত্যে জগদ্ধাত্রী দেবীর পূজা অর্চনা করা হয়। যে জায়গাতে তার পূজার আয়োজন করা হয়, সেখানে খুবই বড় করে এবং ঘটা করে পূজা সম্পন্ন হয়। প্রতিটি জায়গায় জগদ্ধাত্রী দেবীর মূর্তি বেশ বড় আকারের হয়ে থাকে। কোথাও বা সিংহের পায়ের নিচে হাতির কাটা মুন্ডু।

আবার কোথাও বা মরা হাতির উপরে সিংহবাহনের উপরে অধিষ্ঠিতা জগদ্ধাত্রী। তাছাড়া চন্দননগরের সমস্ত জগদ্ধাত্রী পূজার সিংহের গায়ের রং সাদা বর্ণের। আর বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছে হাতি রুপী অসুর। তার উপরে অধিষ্ঠিতা চতুর্ভূজা, অলংকারে ভূষিতা, ত্রিনয়না দেবী জগদ্ধাত্রী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top