কালী পূজা হল শক্তির আরাধনা, আর এই আরাধনা করতে গেলে অনেক জটিল নিয়ম কানুন মানতে হয়। সেই নিয়ম কানুন মেনে পূজা করা সকলের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না সবার পক্ষে। অনেক সময় কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দেয়।
তবে শাস্ত্র মতে কালীপুজোর দিন কিছু উপাচারের কথা বলা হয়েছে। যেগুলি করলে সারা জীবন মা কালীর অসীম কৃপা লাভ করা যায়। বলা যেতে পারে কালী পূজার দিন যদি এইভাবে আপনি দেবী কালিকে সন্তুষ্ট করতে পারেন, তাহলে সারা জীবন আপনি তার আশীর্বাদ পাবেন।
কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে মহাকালীর আরাধনা করেন সকলেই অর্থাৎ পূজা অর্চনা করতে না পারলেও এই উৎসবে অংশগ্রহণ সকলেই করেন। আনন্দ উৎসবের পাশাপাশি দেবীকে পূজা দিয়ে থাকেন অনেকেই। দেবীর পূজায় ব্রতী হয়ে যান।
তবে কালী পূজার নিয়ম কানুন অনেক বেশি কঠিন আর ধৈর্যের সাথে পালন করতে হয়, তাইতো সকলের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনা মা কালীর আরাধনা করা।
তবে কালীপূজার দিন যদি আপনি কিছু নিয়ম কানুন মেনে থাকেন সেক্ষেত্রে কালী পূজা করতে না পারলেও কালী পূজা করার মত পুণ্য অর্জন করতে পারবেন, তার পাশাপাশি মায়ের কৃপা লাভ করতে পারবেন।
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, কালীপূজার মতোই এমন কিছু নিয়ম কানুন যেগুলি আপনি মানবেন, কালীপূজা না করেও সমান পুণ্য অর্জন করতে পারবেন:
সুচিপত্র
১) উপবাস রাখুন:
প্রতিটি পূজা পার্বণে উপবাস একটি সাধারণ বিষয়। আর কালী পূজার সময় আপনি যদি এই দিন উপবাস রাখেন, আর মায়ের পূজা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে থাকেন, তাহলে দেবী কিন্তু সন্তুষ্ট হবেন আপনার ওপরে। এরপর অঞ্জলি দিয়ে, তারপর আপনার উপোস ভাঙুন।
ফল খেয়ে উপবাস ভাঙতে পারলে আরো ভালো। পরের দিন আমিষ খাবার গ্রহণ করলে কোন অসুবিধাই নেই বলতে গেলে।
আবার এর পাশাপাশি যদি কোথাও বলি হয়ে থাকে সেই বলির প্রসাদও খেতে পারবেন। উপবাসের মধ্যে দিয়ে আপনি মা কালীকে প্রসন্ন করতে পারবেন।
২) সিঁদুর ও লাল জবা:
মা কালীর পূজায় আরো অন্যান্য জিনিসপত্র গুলির পাশাপাশি সিঁদুর এবং লাল জাবা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। পূজার আগে মায়ের মন্দিরে অথবা মায়ের উদ্দেশ্যে লাল চেলি, সিঁদুর এবং লাল জবা ফুল দান করুন।
পূজা হয়ে গেলে সেগুলি আবার বাড়িতে এনে আপনার নিজের ঘরের ঠাকুর ঘরে রেখে দিন। পূজার ফুল আলমারিতে অথবা সিন্দুকেও রাখতে পারেন।
এছাড়া যে সিঁদুর আপনি দিয়েছিলেন সেই সিঁদুর লাল চেলিতে করে মুড়ে আপনার পূজার জায়গায় রেখে দিন, এর ফলে আপনার সংসারে অর্থের অভাব দূর হবে, বয়ে আসবে সৌভাগ্যের ঢেউ।
কোনো কাজে যাওয়ার আগে ওই কৌটো থেকে সিঁদুরের তিলক পরে নিতে পারেন, প্রতিটি কাজে আপনি সাফল্য পাবেনই।
৩) প্রদীপ দান করুন গরিবদের:
অমাবস্যাতে কালী পূজা মানেই চারিদিকে আলোর রোশনায়, অন্ধকার কে কাটিয়ে তুলে আলো কে আমরা চারিদিকে সাজিয়ে দিই। তেমনি কালী পূজার দিন প্রদীপ, মোমবাতি এগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাথমিক প্রয়োজনীয় বিষয়।
তাই এমন অনেক দুঃখী পরিবার রয়েছে যাদের দিন আনা দিন খাওয়া, তাই তাদের উদ্দেশ্যে দান করতে পারেন এমন মোমবাতি, প্রদীপ। তাদের ঘর আলোকিত করার পাশাপাশি আপনি আপনার ভাগ্য ও আলোকিত করে ফেলবেন। সন্তুষ্ট হবেন দেবী মা কালীও।
৪) শ্রীকৃষ্ণের নাম জপ করুন:
শুনতে অবাক লাগলেও এটাই কিন্তু সত্য, মা কালীর সাথে শ্রীকৃষ্ণের অটুট বন্ধন। কালী পূজার দিন কৃষ্ণ নাম জপ করতে পারেন, একই সঙ্গে দেবাদিদেব মহাদেবের আরাধনা করুন নিজের বাড়িতে।
এর ফলে আপনি খুব শুভ ফল লাভ করতে পারবেন। সাধ্যমত নৈবেদ্য দিয়ে দেবাদিদেব মহাদেবের পূজা অর্চনা করতে পারেন নিজের ঠাকুর ঘরে।
৫) লাল ফল দান করুন:
রংবেরঙের ফলের মধ্যে এমন অনেক ফল আছে যার রং লাল, যেমন ধরুন আপেল, আলুবোখরা অথবা চেরি ফল। এমন কালী পূজার দিনে আপনি এই সমস্ত লাল রঙের ফলগুলি দান করতে পারেন।
এর পাশাপাশি লাল জবা ফুল, মোমবাতি, মিষ্টি খাবার, ধুপ এবং একটি খড়গ অর্পণ করুন দেবী মায়ের মন্দিরে।
এতে সন্তানের লেখাপড়া, চাকরির ক্ষেত্রে বাধা বিপদ দূর হয়। এর পাশাপাশি যারা সন্তান চান, তাদের জন্য এই নিয়মটি খুবই শুভ বলে মনে করা হয়।
৬) বাড়ির চারিদিক সাজিয়ে তুলুন আলোতে:
কালীপুজোর দিন এমন কোন হিন্দু পরিবারের ঘর আপনি দেখতে পাবেন না, যেখানে আলোর রোশনাই নেই। নিজেদের সাধ্যমত বাড়ির ভিতর এবং বাড়ির আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় আপনি আলো দিয়ে সাজিয়ে তুলুন।
সন্ধ্যের সময় বাড়ির চারিদিকে আলোর মালা, প্রদীপ, মোমবাতির আলোয় সুন্দর করে সাজিয়ে তুলুন।
এর ফলে পজিটিভ এনার্জি প্রবেশ করে, তার ফলে লক্ষী লাভ হয় সংসারে। অমাবস্যার কালো অন্ধকার কেটে গিয়ে আপনার ঘর এবং আপনার ঘরের চারিপাশ সুন্দরভাবে আলোকিত হওয়ার ফলে দেখতে যেমন দৃষ্টিনন্দন লাগে, তেমনি দেবীর আশীর্বাদ বর্ষিত হয়।
৭) ঘি এর প্রদীপ:
অন্যান্য পূজা পার্বণের মতো কালী পূজাতেও ঘিয়ের প্রদীপ অনেকখানি গুরুত্বপূর্ণ এবং শুভ বলে মনে করা হয়।
কালীপুজোর রাতে বাড়ির ঠাকুর ঘরে সারারাত একটি ঘি এর প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখুন, খেয়াল রাখবেন কোনভাবেই যেন সেই প্রদীপ নিভে না যায়।
সংসারে থাকা সমস্ত অশুভ শক্তির প্রভাব কেটে দিয়ে সংসারে আসে শুভ শক্তি। তার সাথে সাথে ধন-সম্পদ বৃদ্ধি, সুখ, শান্তি আসবে আপনার ঘরে।
৮) অন্ন রান্না নয়:
অমাবস্যা, পূর্ণিমা, একাদশী এগুলি অনেকেই মেনে থাকেন। সেই অনুসারে এই দিন কোনরকম অন্ন না খেয়ে আটা দিয়ে তৈরি খাবার খেয়ে থাকেন। তেমনভাবে সবাই কিন্তু এই নিয়ম না মানলেও কালীপূজার এই অমাবস্যায় প্রতিটি বাড়িতে ভাত রান্না হয় না অর্থাৎ অন্ন খাবার খাওয়া হয় না।
আটা জাতীয় খাবার যেমন ধরুন রুটি, লুচি, পরোটা ইত্যাদি খাওয়া হয়, আর সম্পূর্ণ নিরামিষ থাকে খাবারে। এই নিয়ম পালন করার পাশাপাশি আপনি যেমন দেবীকে সন্তুষ্ট করবেন, তেমনি সংসারে আসবে উন্নতি ও সমৃদ্ধি।
এতগুলো নিয়ম পালন করার পাশাপাশি আপনার মনে থাকতে হবে অনেকখানি ভক্তি, যা অনেক নৈবেদ্যর থেকে বেশি প্রয়োজন, সবার প্রতি সম্ভব হয়ে ওঠে না সমস্ত নিয়ম মেনে কালী পূজা করা, তাই এই নিয়ম গুলি যদি আপনি কালী পূজার দিন মেনে চলেন, তাহলে কালী পূজা করার মতোই পুণ্য অর্জন করতে পারবেন।