প্রতিটি উৎসব এক সীমাহীন আনন্দ, সেই আনন্দের মধ্যে দিয়েও অনেক সময় অনেক অঘটন ঘটে যেতে পারে। দোল পূর্ণিমা এমন একটি উৎসব যেখানে রঙ, আবির এই সমস্ত কিছু দিয়ে হোলি খেলা হয়।
আনন্দ উৎসবের দিন নিজেকে নিয়ন্ত্রিত রাখা অনেকটাই কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তবুও কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, এই দোল পূর্ণিমায় নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত রেখে হোলি খেলার বিষয়টা।
“খেলবো হোলি রং দেব না তাই কখনো হয় ?…” এই লাইন টা নিশ্চয়ই অচেনা নয়। আপনি যতই নিজেকে বাঁচিয়ে রাখুন না কেন এই দিন আপনাকে রং মাখতেই হবে। আর রং মানেই বিভিন্ন রকমের কেমিক্যাল, প্রতিবছর বিপুল উৎসব উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে দোল পূর্ণিমা পালিত হয়।
রং ও আবির মাখিয়ে, নাচ, গান, হৈ হুল্লোড় এর মধ্যে দিয়ে রঙিন এই দিনটি পালন করুন খুবই সুন্দরভাবে। যেখানে উৎসাহ- উদ্দীপনা- আনন্দ- হাসিঠাট্টা- দেদার খাওয়া দাওয়া সুস্বাদু খাবার পরিবেশন এবং ভাঙ খেয়ে গলা ভেজানো সবকিছু চলে এই দোল পূর্ণিমা উৎসবে।
রং যেন অনেকক্ষণ স্থায়ী হয় তার জন্য সেই রঙে মধ্যে মেশানো হয় বিভিন্ন রকমের ক্ষতিকর কেমিক্যাল। যেগুলি আমাদের ত্বক এবং স্বাস্থ্যের জন্য অনেকখানি ক্ষতি করে। তাই নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে এই উৎসবে আরো বেশি সচেতন হয়ে থাকতে হবে সকলকেই।
তবে মাথায় রাখবেন যে খুব বেশি ভিড়ের মধ্যে না যাওয়াই ভালো, কারণ রঙিন দিনে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, ত্বক ও স্বাস্থ্য সব দিকটাই খেয়াল রাখতে হবে নিজেকেই।
নিরাপদে দোল খেলার উপায়:
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, নিরাপদে দোল খেলার জন্য আপনার কি কি বিষয় এর প্রতি খেয়াল থাকতে হবে:
১) প্রাকৃতিক ও পরিবেশ বান্ধব হোলি খেলার রং ব্যবহার করুন যতটা সম্ভব। বর্তমানে বিভিন্ন রঙের ফুল শুকিয়ে সেগুলি পাউডার বানিয়ে আবির বানানো হচ্ছে। যার কোনো রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।
২) দোলে রং খেলার আগে সারা গায়ে তেল মেখে নিতে পারেন, যার ফলে রঙের ছিটে সরাসরি আপনার ত্বকে গিয়ে লাগবেনা।
৩) মুখ ও হাতের মতো উন্মুক্ত জায়গায় সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন, যা আপনার ত্বককে রোদের হাত থেকে বাঁচানোর পাশাপাশি রঙের কেমিক্যাল থেকেও বাঁচাতে সাহায্য করবে।
৪) যেহেতু এই উৎসব প্রচুর গরমের মধ্যে হয়, তাই প্রচন্ড গরমে ডিহাইড্রেশন হতে পারে আপনার শরীর, সেই জন্য এই সমস্যা এড়ানোর ক্ষেত্রে বারবার জল পান করুন।
৫) হোলি খেলার পর স্নানের জন্য জল আগে থেকেই প্রস্তুত রাখুন। তাতে খুব তাড়াতাড়ি স্নান করলে রং ধুয়ে ফেলা সম্ভব হবে, না হলে সেটি আপনার তাকে আরো শক্তভাবে বসে যেতে পারে।
৬) যেকোনো জরুরি অবস্থার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসার কিট প্রস্তুত রাখুন।
৭) চোখ দুটি খুবই সুরক্ষিত ভাবে রাখুন, কেননা রঙের ছিটে বলা যায় না কোনভাবে যদি আপনার চোখের মধ্যে যায়, তাহলে চোখের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি আপনি কিন্তু দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন।
৮) বেশিরভাগটা আবির দিয়ে রং খেলার চেষ্টা করুন, যেখানে আপনি খুবই সুন্দরভাবে এই উৎসব উদযাপন করার পাশাপাশি নিজেকেও সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।
দোল খেলার জন্য কোন বিষয় গুলি এড়িয়ে যাবেন:
১) চোখ, নাক, মুখ এবং শরীরের খোলা জায়গায় কোন ক্ষত থাকলে তার কাছাকাছি জায়গায় রং লাগাবেন না, পারলে সে জায়গাটি ঢেকে রাখার চেষ্টা করুন২) রাসায়নিক মিশ্রিত বা ক্ষতিকারক রং ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
৩) ভাং অথবা মিষ্টি একসঙ্গে একেবারেই খাবেন না, এতে আপনার শরীরে উল্টো রিয়েকশন হতে পারে।
৪) বাচ্চাদের একে অপরকে জলের বেলুন ফেলতে দেবেন না, এটি সংক্রমিত হলে খারাপ প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে, বাচ্চাদের সাথে অবশ্যই একজন বড় কেউ থাকবেন।
৫) রঙিন জলে খেলার সময় আপনার দামি গ্যাজেট, প্রসাধনী যেমন ধরুন আপনার দামি কোন ঘড়ি, ফোন এগুলি সঙ্গে একেবারেই নেবেন না।
৬) রং তুলতে কখনোই কেরোসিন তেল ব্যবহার করা উচিত নয়, পরিবর্তে রং খেলার আগে গায়ে কোন বডি অয়েল অথবা নারকেল তেল মাখতে পারেন। হোলি খেলার পরে রং ভিজে থাকতে থাকতেই স্নান সেরে নিলে অধিকাংশ রংই উঠে যায়।
৭) ঘরের ভিতরে রং খেলা একেবারেই উচিত নয় কেননা সেই রং আপনার ঘরকে সম্পূর্ণরূপে যে নষ্ট করবে, সেটা তো আর নতুন করে বলার কিছু নেই।
৮) আর হ্যাঁ, আপনার ত্বক এবং চুল ঢেকে রাখা বা রং থেকে কোন প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধ করার জন্য সুরক্ষিত রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে কিন্তু অনেক খানি ক্ষতি হতে পারে, সেই কারণে এই দিকটা বিশেষ খেয়াল রাখা উচিত।
দোল খেলার পর রং তলার উপায়:
দোল পূর্ণিমা মানেই বসন্ত উৎসব আর এই উৎসবে মেতে ওঠে গোটা রাজ্য। আবির আর বাহারি রঙে রঙিন হয়ে যায় চারিদিকে পরিবেশ। আমরা আগেই জেনেছি দোল খেলার আগে সারা শরীরে কোন তেল অথবা মশ্চারাইজার মাখা থাকলে সেটা সুবিধা হয়, সরাসরি রং ত্বকে গিয়ে পৌঁছায় না এবং রং মাখার পর জ্বালা ভাব অথবা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তড়িঘড়ি সবকিছু ফেলে রেখে চিকিৎসক এর পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অনেক ক্ষেত্রে রং স্থায়ী করতে মেশানো থেকে নানা রকমের রাসায়নিক সেই রং তোলার জন্য বেশি চেষ্টা করার প্রয়োজন নেই, এমনটা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। অনেকে কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে রং তোলার চেষ্টা করেন, এটা কিন্তু ত্বকের ক্ষতি করে, ত্বকের উপরে অনেকক্ষণ ঘষামাজা পড়ে, তাই ত্বক নিস্প্রাণ হয়ে পড়ে।
সানস্ক্রিন বা অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। ঠান্ডা জিনিস খাওয়া উচিত, আস্তে আস্তে রঙ উঠে যাবে। এ নিয়ে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই।
সেই কারণে রং তোলার জন্য অযথা আপনার নমনীয় ত্বকের উপরে অত্যাচার করবেন না। যেটুকু আবছা রঙ থেকে যায়, থাকতে দিন না ! যেমন দোল খেলার চিহ্নটুকু থেকে যায় তার পাশাপাশি আপনার ত্বকও অনেক খানি ক্ষতি হতে বেঁচে যায়। কি বলেন !