কোন অপরাধের জন্য আইনি অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তির কি কি আইনি অধিকার রয়েছে? অভিযুক্ত ব্যাক্তি কি কি করতে পারবে? আসুন জেনে নিন আইনি অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার সম্পর্কে।
ভারতীয় সংবিধানের আওতায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরও নির্দিষ্ট অধিকার রয়েছে। অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির নির্দিষ্ট অধিকার রয়েছে। ভারতে অভিযুক্তদের অধিকার বিচারের আগে অধিকার, বিচারের সময় অধিকার এবং বিচারের পরে অধিকারে বিভক্ত।
অভিযুক্ত অধিকারগুলির মধ্যে সুষ্ঠু বিচারের অধিকার, জামিন পাওয়া, ফৌজদারি আইনজীবি নিয়োগ, ভারতে বিনামূল্যে আইনী সহায়তাপ্রাপ্তি এবং আরও অনেক সুবিধা অন্তর্ভুক্ত।
একজন ব্যক্তি বিভিন্ন কারণে অপরাধ সংঘটিত করতে পারেন। আবার মিথ্যা অভিযোগেও অভিযুক্ত হতে পারেন। এজন্য তাকে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের সুযোগ অবশ্যই প্রদান করা হবে।
সুপ্রিয় পাঠক আমাদের আয়োজনে থাকছে ভারতে অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। চলুন দেরী না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক। ভারতে অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার সম্পর্কে জেনে নিন-
ভারতীয় আইনে অভিযুক্ত সংক্রান্ত নীতি
আইনী নীতি অনুসারে একজনকে দোষী প্রমাণিত না করা অবধি নির্দোষ বলে গণ্য করা হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার থাকা কেন প্রয়োজনীয় যথাযথ সংজ্ঞা রয়েছে। বিভিন্ন আইনের অধীনে সংজ্ঞা, পরামর্শ রয়েছে যে প্রতিটি ব্যক্তির মৌলিক মানবাধিকার রয়েছে।
সুতরাং, যতক্ষণ না অপরাধ প্রমাণিত হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কিছু অধিকার রয়েছে। ভারতে অভিযুক্তদের এই অধিকারগুলি দেওয়া হয়েছে – “শত শত লোককে শাস্তি দেওয়া না হোক, তবে কোনও নিরপরাধ ব্যক্তিকে কখনও শাস্তি দেওয়া যাবে না” ভারতীয় আইনে এই নীতি মেনে চলা হয়।
ভারতের আইন অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারে যত কঠোর তার চেয়ে বেশী নির্দোষকে রেহাই দেওয়ার ব্যাপারে।
আইনী সহায়তা প্রয়োজন হলে করণীয়
আপনি যদি কোন অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে থাকেন ফোনে কোনও আইনি বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন এবং আপনার প্রয়োজনীয় আইনী পরামর্শ গ্রহণ করুন। এখন সব আইনজীবীই তাদের সাথে দেখা করার পূর্বে ফোনে কথা বলে সাক্ষাৎকারের সময় ফিক্সড করেন।
একজন অপরাধী অভিযুক্ত হলেই সে যে অপরাধ করেছে তা প্রমাণিত হয়না এজন্য তার অধিকার রয়েছে আইনের সহায়তা নেওয়ার। তার জন্য আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারবেন অভিযুক্ত ব্যক্তি। এমনকি আইনজীবী তার সাথে থানা বা জেল হাজতে সাক্ষাৎও করতে পারবেন।
অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অধিকারের মধ্যে রয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির বিচার শুরু হওয়ার আগে তার অধিকার, আদালতের বিচার চলাকালীন ভারতে আসামিদের অধিকার, এবং তার গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির বিচার শেষ হওয়ার পরে তার মানবিক অধিকার প্রাপ্তির অধিকার রয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি মানেই অপরাধী তা প্রমাণিত নয়। তাই তার অধিকার রয়েছে ভারতীয় আইন অনুযায়ী আপিল করার। গ্রেপ্তারকৃতদের অধিকারের মধ্যে তার দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করার অধিকার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
কারাগারে থাকাকালীন অসুস্থ হয়ে গেলে চিকিৎসা পাবার অধিকার রয়েছে অপরাধীর। কারাগারে থাকাকালীন অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সমস্ত মানবাধিকার পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
এছাড়াও, কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মানবিক আচরণের পাওয়ার অধিকার রয়েছে অপরাধীর। এছাড়াও অপরাধীএ অন্যান্য অধিকারের মধ্যে রয়েছে কারাগারে পারিবারিক দর্শন পাওয়ার অধিকার, নিয়মিত খাবার, অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার অধিকার। জেলে থাকাকালীন তার পরিবারের সবাই নির্দিষ্ট দিন ও সময়ে তার সাথে দেখা করতে যেতে পারবে।
ভারতে অভিযুক্তদের অধিকার
ফৌজদারি কার্যবিধি কোড (সিআরপিসি), ১৯৭৩ এর অধীনে সিআরপিসির অধীনে একজন গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে অবশ্যই তাকে গ্রেফতারের কারণ, অপরাধের বিবরণ এবং তার বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগের বিবরণ জানাতে হবে।
একজন অপরাধী যতই অপরাধ করুক না কেন ভারতীয় আইন অনুযায়ী তাকে তার অপরাধের বিবরণ জানিয়ে গ্রেফতার করতে হবে৷ এটা একজন অপরাধীর নাগরিক ও মৌলিক অধিকার।
যদি কারো বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয় সিআরপিসি এর ধারা ৫৭ এবং সংবিধানের ২২ (২) অনুচ্ছেদে সিআরপিসিতে অভিযুক্তদের অধিকার রয়েছে, তাকে গ্রেপ্তারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করতে হবে।
সংবিধানের ২০ (২) অনুচ্ছেদ অনুসারে একজন ব্যক্তিকে একই অপরাধের জন্য একাধিকবার বিচার ও শাস্তি দেওয়া যাবে না। একজন অপরাধী যখন অপরাধ সংঘটিত করেছে তখন সেটা নিয়েই তাকে অভিযুক্ত করা হবে। এর আগের যে অপরাধের শাস্তি সে একবার ভোগ করেছে।
আগে অপরাধ করেছে বলেই সে পুনরায় বিচার ছাড়াই দোষী এরকম বিচার বা অভিযোগ প্রমাণ ছাড়া তার উপর চাপিয়ে দেওয়া যাবেনা।
ভারতে আসামিদের অধিকার হিসাবে জামিন পাওয়ার অধিকার রয়েছে
অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার তাদের জেল হেফাজত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য জামিনের আবেদন করতে পারবে। ভারতীয় আইনের অধীনে তিন ধরণের জামিন রয়েছে – আগাম জামিন, অন্তর্বর্তীকালীন জামিন এবং বন্ডসই দ্বারা জামিন।
জামিনযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র জামিনের জন্য আবেদন করা যেতে পারে। তবে, কোনও ব্যক্তি গ্রেপ্তারের আগে তার ফৌজদারি আইনজীবীর মাধ্যমে আগাম জামিনও নিতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হতে হবে।
অভিযুক্তের বিচার চলাকালীন অধিকারসমূহ
অভিযুক্ত ব্যক্তি যাতে দ্রুত এবং নিরপেক্ষ বিচার পায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে কোন বাধা প্রদান করা যাবেনা। জেল হাজতে অভিযুক্তকে নির্যাতন বা মিথ্যাসাক্ষ্য প্রদানে বাধ্য করা যাবেনা।
কারণ অনেক সময় সাক্ষ্য সহজে প্রদান না করায় অমানুষিক নির্যাতন করার মত অভিযোগ পাওয়া যায় দায়িত্বরত পুলিশের বিরুদ্ধে৷ যা অভিযুক্তের মানবিক এবং আইনগত অধিকার খর্ব করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় কোন ধরনের শারীরিক অত্যাচার করা যাবেনা।
বিচার চলাকালীন আদালতে এবং জবানবন্দী দেবার সময় আইনজীবী উপস্থিত থাকতে পারবে। যাতে তার দেওয়া তথ্য এবং সাক্ষ্য বিকৃত ওয়ার কোন সুযোগ না থাকে। কোডের ২৭৩ ধারায় বলা হয়েছে অভিযুক্ত ব্যক্তি যে সমস্ত প্রমাণ দেবে এবং বিবৃতি প্রদান করবে তা অবশ্যই অভিযুক্ত এবং তার ফৌজদারি আইনজীবীর উপস্থিতিতে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
নথির অনুলিপি পাওয়ার অধিকার অভিযুক্তের একটি সাধারণ আইনগত অধিকার। ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের এই মামলা সম্পর্কিত প্রসিকিউটর কর্তৃক দায়েরকৃত সকল নথিপত্রের অনুলিপি প্রাপ্তির অধিকার রয়েছে।
অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার-পরবর্তী অধিকার
বিচারকাজ শেষ হওয়ার পরে অভিযুক্ত ব্যক্তিরও কিছু অধিকার রয়েছে। অভিযুক্তের এই অধিকারগুলি তার বিচারের ফলাফলের উপর নির্ভর করে।
এর অর্থ, আদালত দ্বারা তিনি খালাস পেয়েছেন বা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং পুলিশ তাকে পুনরায় গ্রেপ্তার করেছে কিনা এর উপর নির্ভর করবে। তবে যদি অভিযুক্তকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয় এবং খালাস প্রদান করা হয়, তবে নিম্নলিখিত অধিকারগুলি অভিযুক্ত ব্যক্তি পাবেন।
অভিযুক্ত ব্যক্তিদের রায়ের অনুলিপি নিতে পারবেন। দায়মুক্তি পাওয়ার পরে তার জীবন সংশয় রয়েছে এমন হুমকির দেওয়া হলে পুলিশ প্রোটেকশন পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
শেষ কথা
দেশের নাগরিকরা নানা কারণে দেশের আইনবিরোধী কাজ করে অথবা মিথ্যা অভিযোগে প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্রে দোষী সাব্যস্ত হয়। যদি কেউ প্রতারণা, নারী ও শিশু নির্যাতন, গুম, খুন,ছিনতাই ইত্যাদি অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে থাকে তবে তাকে গ্রেফতার করার সময় থেকে তাকে তার অধিকার এবং আইন অনুযায়ী সুবিধা দিতে হবে।
একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি মানেই সে সমস্ত নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে এমন নয়। সে অপরাধ প্রমাণের আগ পর্যন্ত অপরাধী বলে গণ্য হবেনা। এবং নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের সমস্ত আইনী সুবিধা পাওয়ার অধিকার সে পাবে।
তার জীবনের ঝুঁকি থাকলে তাকে পুলিশি পাহারা দেওয়া এবং চিকিৎসা বা অন্যান্য কারণে জামিন সুবিধাও দেওয়া হয়। একজন অভিযুক্ত ব্যক্তিও ভারতের নাগরিক হিসেবে তার সমস্ত আইনগত অধিকার পাবেন এবং নির্দোষ হয়ে থাকলে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন। আশা করি ভারতে অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার সম্পর্কে জানানোর আমাদের ক্ষুদ্র প্রয়াস সফল হয়েছে৷
সুপ্রিয় পাঠক পোস্টটি পড়ে আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেব না। এরপর কোন বিষয় নিয়ে জানতে চান তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। আমরা পরবর্তীতে সে বিষয়ে তথ্য নিয়ে হাজির হব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি। ধন্যবাদ সবাইকে।