Pohela Baisakh 2024: পয়লা বৈশাখ ও হালখাতার সম্পর্ক কি? জানুন ইতিহাস

পয়লা বৈশাখ ও হালখাতার সম্পর্ক কি? আপনি জানেন কি? আসুন জেনে নিন। পয়লা বৈশাখ মানেই এক রাশ আনন্দ, ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি পয়লা বৈশাখের সাথে জড়িয়ে রয়েছে আরও অনেক কিছু, বিভিন্ন ধরনের রান্নাবান্না, আনন্দ উৎসব, পূজা অর্চনা আর সবথেকে যেটা জরুরী সেটা দেখে এসেছি প্রতিটি দোকানে এই দিন নতুন খাতা তৈরি করা হয় অথবা নতুন একটি খাতার সূচনা হয়।

যাকে এক কথায় হালখাতা বলা হয়। দোকানে দোকানে ব্যবসায়ীরা পুরানো হিসেব চুকিয়ে নতুন খাতায় আবার নতুন বছরের হিসেব লিখতে শুরু করেন, আবার নতুন ভাবে ব্যবসা চলতে থাকে।

পয়লা বৈশাখ ও হালখাতার সম্পর্ক কি? জানুন ইতিহাস
পয়লা বৈশাখ ও হালখাতার সম্পর্ক কি? জানুন ইতিহাস

তবে একটা প্রশ্ন হয়তো থেকেই যায়, পয়লা বৈশাখের সাথে হালখাতার সম্পর্ক কিভাবে হলো, আর এই দিনের সাথে এই বিষয়টা কিভাবে জড়িয়ে গেছে ?

পয়লা বৈশাখের ও শুভ হালখাতার ইতিহাস:

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, পয়লা বৈশাখের সাথে শুভ হালখাতার সম্পর্ক এর ইতিহাস:

অনেকদিন আগে থেকেই চলে আসছে পয়লা বৈশাখ, আজ যেমন ভাবে পালন করা হয়, প্রাচীনকালে কিন্তু তেমনটা হতো না। পুরনো কলকাতা ইংরেজি নববর্ষের উৎসব উপলক্ষে বেশ উৎসবের আয়োজন করা হতো। তবে সেই সময় বাংলা নববর্ষ কে নিয়ে এই প্রেমের উৎসব অথবা আনন্দ কোন কিছুই কিন্তু দেখা যেত না।

বাঙালিরা খুবই সাদামাটা ভাবে কয়েকটি পূজা করত, আর সামান্য কিছু রান্নাবান্নার মধ্যে দিয়ে এই দিনটি অতিবাহিত করত। এখানে বলা যেতেই পারে, অনেক আগে বাঙালি দের জীবনযাত্রা ছিল একেবারেই সাধারণ আর সাদামাটা।

তবে স্পষ্ট ভাবে বলতে গেলে বলা যায় যে, নববর্ষের সাথে হালখাতার কোন সম্পর্কই ছিল না। পরবর্তীতে এই হালখাতা নববর্ষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। তবে সেটা কিভাবে যুক্ত হয়েছে তার ব্যাখ্যা করতে গেলে বলা যায় যে, একেবারে আদিম যুগে চলে যেতে হবে, এর ইতিহাস খোঁজার জন্য।

মানুষ তখন শুধুমাত্র নাঙলের ব্যবহার শিখে চাষবাস করার চেষ্টা করছিল। তখন তারা এক জায়গায় স্থায়ী ভাবে বসবাস করতে শুরু করে এবং চাষ করা দ্রব্যের বিনিময় প্রথা শুরু হয়, এই হালের মাধ্যমে উৎপন্ন হওয়া দ্রব্য বিনিময়ের হিসেবের জন্য একটি খাতার প্রয়োজন তো ছিলই।

খাতায় নিজেদের মতো করে তারা লিখে রাখতে শুরু করল যার ফলে হিসেব থাকে যে কে কোনটা আদান-প্রদান করেছে। তবে তখনকার ভাষায় লেখা হতো আর সেই খাতার নাম ছিল হালখাতা। হাল মানেই বুঝতেই পারছেন যা কিনা সংস্কৃতি এবং ফারসি দুটো ভাষা থেকে এসেছে।

সেই হিসেবে এই হালখাতার নামটি আজও প্রচলিত সকলের কাছে। আবার অন্য দিক থেকে দেখলে দেখা যায় যে সংস্কৃত তে হাল এর মানে হল নাঙ্গল আর ফারসি হলে হালের মানে হল নতুন একটি খাতা। আর বিবেচনার মধ্যে দিয়ে তাই দুটি শব্দই কিন্তু হালখাতার ক্ষেত্রে যথউপযুক্ত।

হালখাতার সাথে সম্রাট আকবরের ইতিহাস:

প্রাচীনকালে তখনো কিন্তু হিসেব-নিকেশ করা হতো খুবই সুনিপুণভাবে। প্রাচীন হালখাতার অনুকরণে সম্রাট আকবর জমিদারদের বকেয়া রাজস্ব আদায়ের অনুষ্ঠান চালু করেছিলেন যার নাম ছিল “পুন্যাহ”। আর সে হিসেবে অনেকেই মনে করেন যে সম্রাট আকবর পহেলা বৈশাখ চালু করেছিলেন, কিন্তু সেটা একেবারেই সত্য নয়।

তিনি ওই দিন রাজস্ব আদায় করতেন মাত্র। এই নিয়ম মেনে বাংলায় নবাব মুর্শিদকুলি খান সম্রাট আকবর এর রাজস্ব আদায়ের অনুষ্ঠানটি পালন করতেন। সেই সময় অনেক জমিদাররাও আসতেন খাজনা দিতে।

নবাব এর আমল থেকে নিয়ম অনুসারে প্রাচীন হালখাতা কে পুন্যাহ নাম দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে তা আবার হালখাতা তেই  পরবর্তীতে হয়ে যায়। সেই অর্থে দেখতে গেলে হালখাতা রাজস্ব আদায়ের নাম ছিল মাত্র।

পয়লা বৈশাখের অন্যান্য দিক:

নববর্ষের দিনে আমরা আরো অনেক কিছুই পালন করি, তবে পয়লা বৈশাখে নববর্ষ অথবা বছরের শুরু হিসেবে ধরি, এই রীতি কিন্তু শুরু হয়েছিল ৩১৯ সালে, সেই সময় থেকে পাঁজি অথবা পঞ্জিকা গননা শুরু হয়। এর আগে বছরের গণনা শুরু হতো হিম অথবা শরৎকাল থেকে। ঋতু হিসেবেও বছর গণনা করতে দেখা গিয়েছে।

তবে পঞ্জিকা গণনার সাথে সাথে বাঙালির পয়লা বৈশাখের শুরু না হলেও উৎসব পালনটা কিন্তু শুরু হয়েই যায়। আর হালখাতা পয়লা বৈশাখের আরেকটি নাম হিসেবে তখন সকলেই জানতো। আর বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে এই দিন দোকানে দোকানে ব্যবসার উন্নতির জন্য লক্ষ্মী গণেশের পূজা করা হয়।

নতুন খাতা খোলা হয়, সামান্য কিছু দিয়েও খাতা খোলার রীতি এখনও রয়েছে প্রায় প্রতিটি দোকানে। নতুন বছর শুরু, বেশ কিছু বছর ধরে পয়লা বৈশাখ মানেই কিন্তু হালখাতা। তবে ইতিহাস অনুসারে জানা যায় হালখাতা পয়লা বৈশাখের সঙ্গে জড়িয়েছে অনেক অনেক পরে।

সেটা মানুষের একটু বুঝে উঠতে উঠতেই এটা জড়িয়ে পড়ে নববর্ষের সাথে। এর সঙ্গে সবচেয়ে প্রথম পরিচয় ঘটে বিনিময় প্রথার যুগের মানুষের। সেই সময় পয়লা বৈশাখের কোন প্রচলনই ছিল না। শুধুমাত্র বিনিময় প্রথাটাকে গুরুত্ব দেওয়া হতো।

আর কাল ক্রমে সেই বিনিময় প্রথা অথবা খাজনা আদরের দিনটি বছরের শুরুর দিনেই পড়েছিল। সেই অনুসারে সব দিক বিবেচনা করে একসাথে পয়লা বৈশাখের দিন আজও প্রতিটি দোকানে এবং ব্যবসায় নতুন খাতার সূচনা করা হয়।

তবে যাই হোক না কেন, ইতিহাস যাই হোক, আজকের বর্তমানের পয়লা বৈশাখ মানেই কিন্তু সাজগোজ, আনন্দ উৎসব, খাওয়া-দাওয়া আর সুন্দর করে ঘর সাজানো। এখন আবার যুক্ত হয়েছে কোথাও ঘুরতে যাওয়া। সবকিছু মিলিয়ে বাঙালির জীবনে নববর্ষ অথবা পয়লা বৈশাখ অনেক খানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যার জন্য সারা বছর ধরে অপেক্ষা করে থাকা হয়, প্রস্তুতি নেওয়া হয় এই দিনটির জন্য।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top