রামনাথ কোবিন্দ কে? কোথায় বাড়ি? জীবনে কিভাবে সফল হয়েছেন? আসুন জেনে নিন রামনাথ কোবিন্দ এর জীবন পরিচয়, পরিবার, শিক্ষা, মোট সম্পত্তি ও রাজনৈতিক বিবরণ জানুন (Biography of Ram Nath Kovind in Bengali)।
রামনাথ কোবিন্দ যিনি একজন দলিত নেতার পাশাপাশি ভারতীয় জনতা পার্টি অর্থাৎ বিজেপির সদস্য। রামনাথ কোবিন্দ ২০১৫ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিহারের রাজ্যপাল ও ছিলেন। ১৯ শে জুন ২০১৭ তে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ রামনাথ কোবিন্দ কে ঘোষণা করেছিলেন। যিনি রাষ্ট্রপতি পদের জন্য এনডিএ প্রার্থী ছিলেন এবং ২০ শে জুলাই ২০১৭ তে রামনাথ কোবিন্দ ভারতের রাষ্ট্রপতি হন।
রামনাথ কোবিন্দ বিহার রাজ্যের রাজ্যপাল ছিলেন। কিন্তু তার আগে তিনি দেশের ক্ষমতাশীল দল ভারতীয় জনতা পার্টির নেতা ছিলেন। এছাড়া রামনাথ কোবিন্দ দেশের বিভিন্ন চরিত্র তে অংশগ্রহণ করেছেন।
একজন সমাজকর্মী, আইনজীবী, তার পাশাপাশি রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবেও কাজ করার সময় রামনাথ কোবিন্দ দুর্বল শ্রেণীর মানুষের উপকার করার চেষ্টাও করেছিলেন।
এছাড়া রামনাথ কোবিন্দ রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি রাজ্যসভায় থাকাকালীন অনেক পদে কাজ করেছেন, তিনি তার দায়িত্ব সামলেছেন খুবই ভালোভাবে।
সুচিপত্র
পূর্ব রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ জীবনী সম্পর্কে জানা যাক:
- সম্পূর্ণ নাম: রামনাথ কোবিন্দ
- জন্ম তারিখ: ১ লা অক্টোবর ১৯৪৫ সাল
- জন্মস্থান: উত্তরপ্রদেশ, ভারত
- পিতার নাম: মাইকুলাল
- মাতার নাম: কলাবতি কোবিন্দ
- স্ত্রীর নাম: সবিতা কোবিন্দ
- জীবিকা: আইনজীবী, রাজনীতিবিদ
- রাজনৈতিক দল: ভারতীয় জনতা পার্টি
- ধর্ম: হিন্দু
- ভারতের রাষ্ট্রপতি: ২০১৭ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত।
রামনাথ কোবিন্দের জন্ম এবং পরিবার:
রামনাথ কোবিন্দ ১৯৪৫ সালের ১ লা অক্টোবর কানপুরের দেরাপুর তফসিলে জন্মগ্রহণ করেন। রামনাথ কোবিন্দের পিতার নাম মৃত মাইকুলাল এবং মাতার নাম স্বর্গীয় কলাবতী। রামনাথ কোবিন্দের সহধর্মিনী অর্থাৎ স্ত্রীর নাম সবিতা কোবিন্দ।
তাদের একটি পুত্র সন্তান (প্রশান্ত কুমার কোবিন্দ) ও একটি কন্যা (স্বাতী কোবিন্দ) সন্তান রয়েছে। রামনাথ কোবিন্দ এর পুত্রের বিয়েতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অতিথি হয়েও গিয়েছিলেন।
রামনাথ কোবিন্দের শিক্ষা জীবন:
১ লা অক্টোবর ১৯৪৫ সালে উত্তরপ্রদেশের কানপুর দেহাত জেলার পাড়াউখ গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মাইকুলাল ছিলেন একজন ভূমিহীন চাষী। ছোট্ট দোকানের উপর নির্ভর করে মাইকু লাল কোবিন্দের সংসার চলত।
এছাড়া রামনাথ কোবিন্দ যে মাটির কুড়ে ঘরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেই কুঁড়েঘরটি বর্তমানে আর নেই। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবথেকে ছোট ছিলেন রামনাথ। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তিনি তার মাকে চিরদিনের মত হারিয়ে ফেলেন। গ্রামের পাঠশালাতেই তিনি তার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করতে থাকেন।
পরবর্তীতে রামনাথ প্রতিদিন ৬ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে খানপুর গ্রামের জুনিয়র স্কুলে পড়তে যেতেন। খুবই অদম্য প্রচেষ্টা এবং মনের বল এর ওপর নির্ভর করে তিনি কানপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীর কুমার শ্রীবাস্তব কলেজ থেকে কমার্স নিয়ে বি. এ. (B.A.) এবং আইন পাশ করেন।
রামনাথ কোবিন্দ প্রাথমিকভাবে শিক্ষা অর্জন করার পর বি.কম. (B.Com) এবং এল এল বি (LLB) ডিগ্রি লাভ করেন। রামনাথ কোবিন্দ কানপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন। কানপুর থেকে আইনের পড়াশোনা সম্পূর্ণ করে তিনি দিল্লি চলে যান।
দিল্লিতে রামনাথ কোবিন্দ আই এ এস (IAS) পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু এই প্রচেষ্টায় তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন। তৃতীয়বার তিনি আবার আই এ এস প্রবেশিকা পরীক্ষা দেন এবং তিনি সেখানে সফল হন। রামনাথ কোবিন্দ চাকরি করেন নি এবং চাকরি না করে আইন প্র্যাকটিস করছিলেন।
রামনাথ কোবিন্দ এর কর্মজীবন:
যেহেতু তিনি এল এল বি ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন, সেই কারণে তিনি ওকালতিতে ও তার কর্মজীবনের চেষ্টা করেছিলেন এবং একজন দক্ষ আইনজীবী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিলেন রামনাথ কোবিন্দ।
রামনাথ কোবিন্দ এর ওকালতি জীবনে তিনি দিল্লি হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করেন। এখানে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন। দিল্লি হাইকোর্টে রামনাথ কোবিন্দ এর কার্যকাল ছিল ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত। ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত রামনাথ কোবিন্দ কেন্দ্রীয় সরকারের স্থায়ী পরিষদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে অনুশীলন ও করেছিলেন।
সাংসদ এর ভূমিকায় ১৯৯৪ সালের এপ্রিল মাসে রামনাথ কোবিন্দ উত্তর প্রদেশ থেকে রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে নিযুক্ত হন। রামনাথ কোবিন্দ কর্মদক্ষতার মধ্যে দিয়ে টানা দুইবার রাজ্যসভার সাংসদ পদ পেয়েছিলেন। এইভাবে রাজ্যসভায় রামনাথ কোবিন্দের কার্যকাল ১২ বছর ধরে অর্থাৎ ২০০৬ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল।
রামনাথ কোবিন্দের কাজ গুলি সম্পর্কে জানা যাক:
তিনি ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ আর এই সংসদ হিসেবে রামনাথ কোবিন্দ রাজ্যসভায় যে নির্দিষ্ট পদগুলিতে কাজ করেছিলেন সেগুলি নিচে আলোচনা করা হলো:-
#১) তপশিলি জাতি ও উপজাতি সংসদীয় কমিটি।
#২) পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস পারলিয়েন্টি কমিটি।
#৩) স্বরাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় কমিটি।
#৪) আইন ও বিচার সংসদীয় কমিটি।
#৫) সামাজিক ন্যায় বিচার ও ক্ষমতায়ন সংসদীয় কমিটি।
#৬) রাজ্যসভার চেয়ারম্যান।
এই সমস্ত পথ ছাড়াও শ্রী রামনাথ কোবিন্দ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। রামনাথ কোবিন্দ ডক্টর ভিমরাও আম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বোর্ডের সদস্য হিসেবে ও কাজ করেছেন।
এর পাশাপাশি কলকাতার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট বোর্ড এর সদস্য পদে কাজ করেছেন। তার পাশাপাশি রামনাথ কোবিন্দ ২০০২ সালে অক্টোবরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।
রামনাথ কোবিন্দের রাষ্ট্রপতি পদে নিযুক্ত হওয়া:
ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির মেয়াদ ছিল ২৪ শে জুলাই ২০১৭ পর্যন্ত। পরের দিন ২৫ শে জুলাই ২০১৭ রামনাথ কোবিন্দ ভারতের ১৪ তম রাষ্টপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন।
রামনাথ কোবিন্দ ২০ জুলাই ২০১৭ শেষ ভোট গণনার পর মোট ১০ লক্ষ ৯,৩৫৮ ভোটের মধ্যে ৭ লক্ষ ২০৪৪ ভোটে জয়ী হন। তো এইভাবে শ্রী রামনাথ কোবিন্দ অন্যান্য আরো সমস্ত পদের দায়িত্বভার সামলানোর পাশাপাশি রাষ্ট্রপতির এই পথ খুবই দায়িত্বের সাথে পালন করে আসছেন।