রেল প্রশাসন কখন দুর্ঘটনা বা আকস্মিক ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে? জেনে নিন

আপনি কি জানেন কোন রেল দুর্ঘটনার জন্য আপনি ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন? এর জন্য কি কি আইনি নিয়ম রয়েছে? আর কিভাবেই বা পাবেন এই ক্ষতিপূরণ? আসুন জেনে নিন রেল দুর্ঘটনা হলে কখন রেল প্রশাসন ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে? 

অনেক সময় আমাদের চোখের সামনে এমন সব দুর্ঘটনা ঘটে যায় যা কিনা কখনোই আমরা সেটা আশা করে থাকি না, বা আমরা কখনই সেটা বুঝে উঠতে পারি না। এমনই এক খুবই কষ্টকর ঘটনা যেটা 2020 সালের মে মাসের 8 / ৮ তারিখে নানদেড় ডিভিশনের বদলাপুর আর কর্মদ স্টেশনের মাঝখানে 16 জন প্রবাসী দিনমজুর একটি মালগাড়ির ধাক্কায় তাদের প্রাণ হারিয়েছে।

মিডিয়া অথবা সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট অনুসারে সেখানে উপস্থিত 14 জন দিনমজুরের সাথে সাথে মৃত্যু হয়ে যায় কিন্তু দুইজন দিনমজুর কিছুক্ষণ পরে মৃত্যুবরণ করে। এই 16 জন দিনমজুর মধ্যপ্রদেশ ফেরার জন্য শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে ওঠার জন্য জালন থেকে ভুসাবর এর দিকে যাচ্ছিল।

রেল প্রশাসন কখন দুর্ঘটনা বা আকস্মিক ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে? জেনে নিন
রেল প্রশাসন কখন দুর্ঘটনা বা আকস্মিক ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে? জেনে নিন

রিপোর্ট অনুসারে কুড়ি জন দিনমজুর এমন ভাবে পায়ে হেঁটে ভুসাবর এর দিকে যাচ্ছিল যা কিনা প্রায় 150 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। অনেকটা পথ অতিক্রম করার পর যখন তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন বিশ্রাম নেওয়ার জন্য প্রায় 45 কিলোমিটার হাঁটার পর রেল লাইনের উপরেই তারা শুয়ে পড়ে।

আর এর পরেই ঘটে সেই খুবই বেদনাদায়ক আর ভয়ঙ্কর এই ঘটনা। যখন এই ঘটনাটি ঘটে তখন সকাল 5:15 বাজে। যেখানে একটি মালগাড়ি তাদের উপর দিয়ে চলে যায় আর সেখানেই তাদের মৃত্যু ঘটে।

রাষ্ট্রীয় মানবাধিকার কমিশন এই বিষয়ের উপরে সত্য সন্ধান নিয়েছিল: 

এই ঘটনা সত্য সন্ধান নেওয়ার পর মানবাধিকার কমিশন (এন এইচ আর সি) এই মামলার ওপরে মুখ্য সচিব মহারাষ্ট্র সরকার আর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অরঙ্গাবাদ এর জন্য নোটিশ জারি করেছে।

NHRC মামলার ক্ষেত্রে বলে যে, “শ্রমিকদের যে ক্লান্ত ভাব এসেছিলো তার জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারত, তার সাথে সাথে যে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেটাও থামানো যেতে পারত।”

এর কারণ খুবই স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায় যে, রেল অধিনিয়ম 1989 এবং সম্বন্ধিত নিয়ম অনুসারে এই ঘটনা না তো রেল প্রশাসনের কারণে হয়েছে, আর না তো রেল প্রশাসন এই ঘটনার ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার মামলাতে প্রতিকার দিয়ে থাকতে পারে। আর এটাই কারণ যে, মহারাষ্ট্র সরকার মৃত ব্যক্তির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ঘোষণা করেছে।

এক্ষেত্রে কিন্তু রেল প্রশাসন কোনরকম ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত কিন্তু নেয়নি। এক্ষেত্রে 16 জন দিনমজুরের পরিবারকে এক এক জন পরিবারের জন্য 2 লাখ টাকা করে ধার্য করা হয়েছে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা অনুসারে, সূত্র অনুসারে জানা যায় যে, পিএম রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে এই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি সম্পন্ন করতে পারবেন।

এছাড়া গভীরভাবে যারা আহত হয়েছে তাদের জন্য 50 হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। আর এই সমস্ত বিষয় এ সিদ্ধান্ত কোনভাবেই কোনটাই কিন্তু রেল প্রশাসন দ্বারা দেওয়া হয়নি অথবা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি।

রেল প্রশাসন কোন মামলাকে দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নিয়ে থাকে: 

যদি আমরা রেল অধিনিয়ম 1989 এর উপর আলোকপাত করি তাহলে, অধিনিয়ম এর অধ্যায় 13 তে দুর্ঘটনার কারণ যাত্রী দের মৃত্যু আর ক্ষয়ক্ষতির জন্য রেল প্রশাসন এর দায়িত্ব সম্পর্কে কথা বলে থাকে। এই অধ্যায়ের প্রথম ধারা, ধারা 123 যা কিনা এই বিষয়ে আমাদেরকে অনেক কিছু বুঝিয়ে দেয়।

এই ধারার অন্তর্গত খন্ড (ক) এটা বলে যে: 

দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ধারা 124 এ বর্ণিত দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে এটা বলে যে, (“Accident” means an accident of the nature described in section 124) অর্থাৎ এই ধারার অন্তর্গত খন্ড (ক) কেবলমাত্র এতটাই বলে যে, একমাত্র সেই মামলা কেই দুর্ঘটনা বলে মনে করা হবে, যা কিনা ধারা 124 এ বর্ণিত করা হয়েছে।

এখন ধারা 124 এটা বলে যে, রেল প্রশাসনের দায়িত্বে সীমা কি হতে পারে, যদি এই ধারাকে কিছু বিভাগে বোঝা যায় তাহলে, সর্বপ্রথম এই দুর্ঘটনার বিষয়ে এটা বলা যেতে পারে যে, যখন কোন রেলের কার্যকারিতার মধ্যে কোন রকম দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, অথবা এমন রেলগাড়িতে এর মধ্যে কোনরকম টক্কর / ধাক্কা লেগে থাকে, যেখানে দুটি রেল গাড়ির মধ্যে একটি রেলগাড়ি যাত্রীবাহী হয়ে থাকে আর যদি রেললাইন থেকে বিচ্যুত হয়ে গিয়ে কোনরকম দুর্ঘটনার সৃষ্টি করে।

তাৎক্ষণিক ঘটনা (Untoward Incidents) আসলে কি?

বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য যে, দুর্ঘটনার মামলা ছাড়াও রেল অধিনিয়ম 1989 ধারা 124a অনুসারে রেল প্রশাসন সে সমস্ত রেলযাত্রীদের জীবনের কোনো ক্ষতি অথবা আঘাতজনিত কারণে কোনো ক্ষতির জন্য প্রতিকারের ভরপাই করার জন্য বাধ্য থাকে অথবা দায়ী থাকে। যা কিনা কোন তাৎক্ষণিক ঘটনার শিকার হয়ে থাকে।

আর এই তাৎক্ষণিক ঘটনা আসলে কি তা ধারা 123 (গ) (1) এবং (2) অনুসারে অন্তর্গত এই বিষয়টি কে পরিভাষীত করা হয়েছে:

#১) যাত্রী বহন করা রেলগাড়ি অথবা তার উপরে বা কোন রেলস্টেশনের পরিসীমার মধ্যে প্রতীক্ষালয় যাত্রীর জিনিসপত্র রাখার ঘর অথবা সংরক্ষণ বা বুকিং কার্যালয় কোন প্ল্যাটফর্ম এর উপরে অথবা কোন অন্য স্থানে কোন ব্যক্তি দ্বারা:-

i) আতঙ্কবাদী আর বিধ্বংস কার্যকলাপ অধিনিয়ম 1987 (1987 এর 28) এর ধারা (3) এরূপ ধারা (1) অর্থ তে কোন রকম আতঙ্কবাদী কার্যকলাপ সম্পন্ন করা।

ii) কোনো হিংসাত্মক আক্রমণ (Violent Attack) করা অথবা লুটপাট (Robbery) বা ডাকাতি (Dacoity) করা।

iii) Rioting করা, গুলি করা (Shoot-out) অথবা আগুন লাগিয়ে দেওয়া (Arson)।

#২) যাত্রীবাহী রেল গাড়ি থেকে কোন রকম পরিস্থিতিতে কোন ব্যাক্তির দুর্ঘটনাবশত পড়ে যাওয়া।

সংক্ষেপে রেল প্রশাসন কে কেবলমাত্র সেই মামলাতে প্রতিকার দেওয়ার জন্য বাধ্য করা যেতে পারে যেখানে দুর্ঘটনা পরিস্থিতি ধারা 124 তে উল্লেখিত পরিস্থিতি হয়ে থাকে অথবা ধারা 123 (গ) (1) এবং (2) কে উল্লিখিত অকস্মাত্ ঘটনার মত যদি হয়ে থাকে।

রেল দুর্ঘটনা এবং অকস্মাত্ বা তাৎক্ষণিক ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দায়িত্ব:

ধারা 124 পরে এটাও বলে যে, এই প্রতিকার তখনই রেল প্রশাসন দ্বারা দেওয়া যেতে পারে, যদিও রেল প্রশাসনের তরফ থেকে এমনটা কোন দোষপূর্ন কাজ, কার্য উপেক্ষা অথবা ব্যতিক্রম হয়েছে না হয়নি। দুর্ঘটনা ক্ষেত্রে কোন মামলাতে রেলওয়ে এই প্রতিকার দিতে পারে সেটা আমরা জেনেছি।

কখন রেল প্রশাসন প্রতিকার দেওয়ার জন্য কোনরকম দায়িত্ব পালন করবে না?

এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য যে ধারা 124 এর অন্তর্গত রেল প্রশাসন প্রতিকার দেওয়ার জন্য দায়িত্বাধীন হবে, যদি এই ধারায় সমস্ত শর্ত পূরণ করা হয়ে থাকে এই মামলার ক্ষেত্রে।

কিন্তু ধারা 124a এটি স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায় যে, কোন ঘটনা তাৎক্ষণিক অথবা আকস্মিক ঘটনা হিসেবে মনে করা হবে না। এই জন্য এই মামলাটির প্রশাসন প্রতিকার দেওয়ার জন্য দায়িত্বাধীন থাকবে না।

ধারা 124a পরবর্তীতে এটাও বলে যে, কিন্তু এই ধারার অধীনে রেল প্রশাসন দ্বারা কোন রকম প্রতিকার হবে না। যদি যাত্রী নিম্নলিখিত কারণে মৃত্যুবরণ করে থাকে অথবা তার কোনো রকম ক্ষতি হয়ে থাকে অর্থাৎ:-

১) কোন ব্যক্তি তার নিজের দ্বারা আত্মহত্যা অথবা কোন আত্মহত্যার চেষ্টা করার ফলে গুরুতরভাবে আহত হওয়া।

২) কোন ব্যক্তি তার নিজের দ্বারাই নিজের কোনো রকম বড় ধরনের ক্ষতি সাধন করা।

৩) কোন ব্যক্তি তার নিজের অপরাধমূলক কাজের জন্য।

৪) সেই ব্যক্তির দ্বারা মত্ততা অথবা উন্মত্ততা পরিস্থিতিতে করা কোন রকম কাজ।

৫) কোন প্রাকৃতিক কারণ অথবা রোগের কারণে অথবা চিকিৎসাজনিত বা শল্যচিকিৎসার ব্যবহার যতদূর এমন ব্যবহার উক্ত তাৎক্ষণিক ঘটনা দ্বারা হওয়ার মাধ্যমে কোন রকম ক্ষতির জন্য আবশ্যক হয়ে পড়ে না।

এবার জানা যাক যে, এই শমিকদের প্রতিকার পাওয়া সম্ভব কিনা?

বাস্তবে শ্রমিকদের দ্বারা রেল লাইনের উপরে হাঁটাচলা করা রেল অধিনিয়ম 1989 এর ধারা 147 অনুসারে এক ধরনের অপরাধ বলা যেতে পারে।

এই ধারা কোন ব্যক্তিকে কোন রেল লাইনের উপরে অথবা রেল গাড়ির ভাগে বিধি পূর্ণ অধিকার ছাড়া প্রবেশ করার কাজের জন্য ছয় মাস পর্যন্ত কারাবাস আর তার সাথে জরিমানা দুটো একসাথেই হতে পারে।

আর যেমন ধরুন ধারা 124A এটা বলে যে, রেল প্রশাসন অকস্মাত্ ঘটনার জন্য তখনই বাধ্য থাকবে না, যখন ব্যক্তি দ্বারা নিজে থেকেই ক্ষতিসাধন করা হয়ে থাকে।

আর অপরাধমূলক কোন কাজ করা হয়ে থাকে। তার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী থাকবে সেই ব্যক্তি এবং অপরাধের জন্য সেই ব্যক্তির শাস্তিও হতে পারে।

তবে এটা নয় যে, রেল লাইনের উপরে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ার মামলাতে তার পিছনে গোটা ঘটনা অথবা দুর্ঘটনা রেলওয়ে অধিনিয়ম অথবা তার নিয়ম এর অন্তর্গত।

রেলওয়ে এর কোনো রকম ভুল ত্রুটির কারণে কিন্তু এটা ঘটেনি বলে মনে করা হয়, আর না তো এমন মামলাতে রেলওয়ে প্রশাসন এর তরফ থেকে কোনো রকম প্রতিকার দেওয়া যেতে পারে।

তবে এটা পরিষ্কার যে, নিজে থেকে যদি রেললাইন অথবা রেলগাড়ি থেকে কোনরকম নিজের প্রতি প্রকৃত ক্ষতিসাধন করার ক্ষেত্রে রেল প্রশাসন কোনভাবেই দায়ী থাকবে না, এর ক্ষতিপূরণ অথবা প্রতিকার দেওয়ার জন্য।

তাছাড়া রেল স্টেশন, রেল গাড়ি এবং রেল লাইনে কোন কোন কারণের জন্য সাধারণ মানুষের ক্ষতির কারণে রেল প্রশাসন ক্ষতিপূরণ অথবা প্রতিকার দিতে পারে তা তো উপরে আলোচনা করাই হলো।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top