যে কোন ধরনের ধর্ষণের অপরাধের শাস্তি সম্পর্কে জানুন এবং জানুন ধর্ষণের জন্য কিভাবে আইনি ব্যাবস্থা নেওয়া হয়? এর জন্য কি কি আইনি নিয়ম ব্যাবস্থা রয়েছে? ধর্ষণের মত জঘন্য অপারাধের বিরুদ্ধে কিভাবে আইনি ব্যাবস্থা নেবেন জেনে নিন।
ধর্ষণের মতো মামলা আমরা প্রতিনিয়ত খবরের কাগজে দেখতে পাই। আর এমন ঘটনা প্রতি নিয়ত ঘটেই চলেছে। ধর্ষণ ভারতীয় দণ্ড সংহিতা তে এমন একটি অপরাধ যার ওপরে অত্যন্ত বিস্তৃত ভাবে বিধান এর অন্তর্গত করা হয়েছে। যতটা বিস্তৃত এই অপরাধের পরিভাষা কে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, ততটাই বিস্তৃত অপরাধের অধীনে শাস্তি দেওয়ার বিধান দেওয়া হয়েছে।
আর এটা হল এমন বিশেষ অপরাধ, অপরাধ হওয়ার পর শাস্তিও কিন্তু আলাদা আলাদা প্রকার হয়ে থাকে। আর অপরাধীকে আলাদা আলাদা ধর্ষণ মামলার উপর নির্ভর করে আলাদা আলাদা রকমের শাস্তি প্রদান করা হয়।
শাস্তির ক্ষেত্রে অপরাধের জঘন্যতা আর খুবই বিরল তম থেকে বিরল অপরাধ কে চিহ্নিত করার মধ্যে দিয়ে, সম্পূর্ণ সমাজের মধ্যে যতটা মানুষ দ্বারা ধর্ষণের অপরাধ করা হয় বা করানো হয়, এমন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ বিধান এই দণ্ড সংহিতার অন্তর্গত করা হয়েছে।
ভারতীয় দণ্ড সংহিতা ধারা 376 এর অন্তর্গত ধর্ষণের অপরাধের জন্য শাস্তি রাখা হয়েছে। ধারা 376, 376A, 376B, 376C এবং ধারা 376D, 376E, ধারা গুলিতে ধর্ষণের অপরাধের জন্য শাস্তি প্রদান করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সুচিপত্র
- 376 ধারা কি?
- ধর্ষণের বিশেষ মামলাতে:
- পীড়িতা মহিলার মৃত্যু অথবা প্রতিনিয়ত বিকৃতশীল অবস্থা করার জন্য শাস্তি:
- স্বামীর দ্বারা তার নিজের স্ত্রীর সাথে ধর্ষণের ক্ষেত্রে:
- কর্তৃত্বের অধীনে থাকা কোন ব্যক্তি দ্বারা ধর্ষণ:
- গণধর্ষণের মামলা তে:
- ১২ বছরের থেকে কম বয়সী মেয়েকে ধর্ষণ:
- ১৬ বছরের থেকে কম বয়সী মেয়েকে গণধর্ষণ:
- ১২ বছরের থেকে কম বয়সী মেয়েকে গণধর্ষণ:
- একজন মহিলাকে দুইবার ধর্ষণ করা:
376 ধারা কি?
ধারা 376 তে দুটি অপরাধ বর্ণিত করা হয়েছে। প্রথম অপরাধের মধ্যে সাধারণ মামলাতে ধর্ষণের জন্য শাস্তি প্রদান করার কথা বলা হয়েছে। যদি কোন ব্যক্তির সাধারণ মামলাতে সাধারণ ভাবে ধর্ষণের অপরাধ করে থাকে, তো তাকে কম করে সাত বছর পর্যন্ত কারাবাস বা তার বেশি সময় আজীবন কারাবাস পর্যন্ত শাস্তি প্রদান করা যেতে পারে। শাস্তির মামলাতে শাস্তি আর জরিমানাও হতে পারে একসাথে।
সাধারণ ধর্ষণের মামলা তে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ন্যূনতম সাত বছরের কারাবাস, যে কোনো পরিস্থিতিতে দেওয়া যেতে পারে। তার বেশি আজীবন কারাবাস পর্যন্ত হতে পারে সেই শাস্তি।
ধর্ষণের বিশেষ মামলাতে:
ধারা 376 এর উপর ধারা 2 তে ধর্ষণের বিশেষ মামলা দেওয়া হয়েছে। যদি ধর্ষণ এর অপরাধ এই বিশেষ পরিস্থিতির মধ্যে হয়ে থাকে, তাহলে উপধারা 2 এর অধীনে মামলা দায়ের করা হয়।
এই বিশেষ পরিস্থিতি গুলি নিম্নে দেওয়া হল:-
- পুলিশ আধিকারিক দ্বারা ধর্ষণ।
- লোক সেবক দ্বারা ধর্ষণ।
- সশস্ত্র ক্ষমতার কোনো সদস্য দ্বারা ধর্ষণ।
- জেল সংশোধনাগার গৃহ, বিধবা গৃহ অথবা কোন এই ধরনের অন্য সংস্থা ইত্যাদিতে কর্মচারী থাকাকালীন ধর্ষণ।
- হাসপাতালের কর্মচারী থাকাকালীন ধর্ষণ।
- পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, সংরক্ষক অথবা শিক্ষক এমন ব্যক্তি যিনি কিনা সেই মহিলার প্রতি সুরক্ষা প্রদান করার অধিকারী হতে পারেন, তেমন ব্যক্তি দ্বারা ধর্ষণ।
- সাম্প্রদায়িক হিংসার কারণে ধর্ষণ।
- গর্ভবতী স্ত্রীকে ধর্ষণ।
- সম্মতি দেওয়ার ক্ষেত্রে অসমর্থ স্ত্রীকে ধর্ষণ।
- মানসিক অথবা শারীরিক ভাবে অসুস্থ স্ত্রীকে ধর্ষণ।
- ধর্ষণের সময় মহিলার শরীরে গুরুতর ভাবে আঘাত এবং তাকে বিকলাঙ্গ করে দেওয়া।
- কোন মহিলাকে একের অধিক বার ধর্ষণ করা।
যদি উপরোক্ত যে কোনো পরিস্থিতিতে কোনো মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়, তাহলে ধর্ষণের দোষীকে কম করে ১০ বছরের কারাবাস যা কিনা আজীবন কারাবাস পর্যন্ত হতে পারে। আর আজীবন কারাবাস থেকে শেষ জীবনকাল এর জন্য কারাবাস জারি থাকতে পারে অথবা এমন আদেশ দেওয়া যেতে পারে।
ধারা 376 A:
পীড়িতা মহিলার মৃত্যু অথবা প্রতিনিয়ত বিকৃতশীল অবস্থা করার জন্য শাস্তি:
যদি কোন অভিযুক্ত কোন মহিলাকে ধর্ষণ করে থাকে আর ধর্ষণের কারণে সেই মহিলার মৃত্যু হয়ে যায়, তাহলে পরিস্থিতি অনেকটাই জটিল হয়ে পড়ে।
এমন পরিস্থিতিতে ধারা 376 A এর অন্তর্গত ন্যূনতম ২০ বছরের কারাবাস এবং এই ২০ বছর কারাবাস থেকে সর্বোচ্চ মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। আজীবন কারাবাস ও দেওয়া যায় তখন তার অর্থ, সম্পূর্ণ শেষ জীবন পর্যন্ত কারাবাসে থাকতে হবে।
ধারা 376 B:
স্বামীর দ্বারা তার নিজের স্ত্রীর সাথে ধর্ষণের ক্ষেত্রে:
স্বামী তার স্ত্রীর সহবাস ছাড়া যদি এমন অপরাধ করে থাকে, যে ক্ষেত্রে স্ত্রী আলাদা বসবাস করছে এবং সেই পরিস্থিতিতে স্বামী তার স্ত্রীর সাথে এমন অপরাধমূলক ব্যবহার করলে, এমন পরিস্থিতিতে ধারা 376 B অনুসারে সেটা অপরাধ বলে মনে করা হয়।
এই অপরাধের জন্য ন্যূনতম দুই বছরের কারাবাস আর সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাবাস হতে পারে। তার সাথে সাথে জরিমানা এবং শাস্তি দুটো একসাথে হতে পারে।
তাছাড়া কিছু মামলাতে দেখা যায় যে, স্বামীর ঘরে বসবাস করছে এমন মহিলা এবং স্বামীর সাথে একই ঘরে, একই ছাদের নিচে বসবাস করছে, সেক্ষেত্রেও কিন্তু ধর্ষণের মামলাও স্বামীর বিরুদ্ধে দায়ের করা যেতে পারে। কিন্তু বেশকিছু মামলার ক্ষেত্রে এই বিষয়ের উপরে সুপ্রিম কোর্ট তার নির্ণয় পাল্টে দিয়েছে।
ধারা 376 C:
কর্তৃত্বের অধীনে থাকা কোন ব্যক্তি দ্বারা ধর্ষণ:
কোন ব্যাক্তি যার সাথে কোন মহিলার সম্পর্ক খুবই বিশ্বাস, ভরসাযোগ্য হয়ে থাকে, আর তা সত্বেও এমন কর্তৃত্বের অধীনে থাকা ব্যক্তি দ্বারা যদি সেই মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়, যেমন ধরুন হাসপাতালের কর্মচারী কোন জেল এর সংশোধনাগার অথবা বিধবা গৃহ ইত্যাদি কোন কর্তৃত্বাধীন ব্যক্তি যার দ্বারা বিশ্বাস এবং ভরসা প্রাপ্ত করা যেতে পারে।
সেই ব্যক্তি দ্বারা যদি এমন ধর্ষণের মতো অপরাধ হয়ে থাকে, এমন পরিস্থিতিতে ধারা 376 C এর অন্তর্গত সেই ব্যক্তি কে ন্যূনতম ৫ বছর পর্যন্ত আর সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কারাবাসে দণ্ডিত করা যেতে পারে।
ধারা 376 D:
গণধর্ষণের মামলা তে:
বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতে গণধর্ষণের মতো অপরাধ প্রায়ই চোখে পড়ার মত, সম্পুর্ন সমাজের জন্য অত্যন্ত ভয়ানক পরিস্থিতি বলা যায়। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আইন খুবই গুরুতর ভাবে অপরাধীদের শাস্তি প্রদান করে থাকে। এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য এই মামলা ভারতীয় দণ্ড সংহিতা ধারা 376 D এর অন্তর্গত করা হয়েছে।
যেখানে কোন মহিলাকে একের বেশি ব্যক্তি দ্বারা গণধর্ষণ করা হয়, এখানে কঠোরভাবে কারাবাস যা কিনা কম করে ২০ বছরের হতে পারে, যেটা আজীবন কারাবাস যেমন শেষ জীবন পর্যন্ত কারাবাসের দণ্ডাদেশ দেওয়া যেতে পারে।
যে সমস্ত ব্যক্তিরা এই রকম গণধর্ষণের মামলাতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে থাকবে, তাদের পরিণাম স্বরূপ সর্বনিম্ন ২০ বছরের কারাবাস এর শাস্তি দেওয়া হয়।
ধারা 376 AB:
১২ বছরের থেকে কম বয়সী মেয়েকে ধর্ষণ:
১২ বছরের কম কোন মেয়েকে যদি ধর্ষণ করা হয়, তাহলে সেই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কম করে ২০ বছরের কারাবাস এবং তার সাথে সর্বোচ্চ শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত কারাবাসের কাটাতে হবে এমন শাস্তি প্রদান করা হয়।
ধারা 376 DA:
১৬ বছরের থেকে কম বয়সী মেয়েকে গণধর্ষণ:
১৬ বছরের থেকে কম বয়সী মেয়েকে যদি গণধর্ষণ করা হয়, তাহলে অভিযুক্ত দের কেবল মাত্র শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত কারাবাসের শাস্তি এবং তার সাথে জরিমানা করা হয়, অথবা মৃত্যুদণ্ডও এই মামলার ক্ষেত্রে দেওয়া যেতে পারে।
ধারা 376 DB:
১২ বছরের থেকে কম বয়সী মেয়েকে গণধর্ষণ:
১২ বছরের থেকে কম বয়সী মেয়েকে গণধর্ষণের মামলাতে অভিযুক্ত দের কম করে শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত কারাবাস অথবা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। জরিমানা হিসেবে সেই ধর্ষিতার বয়ান হিসাবে করা হয়।
একজন মহিলাকে দুইবার ধর্ষণ করা:
যদি কোন ব্যক্তি দ্বারা একবার ধর্ষণের মতো অপরাধ হয়েছে এবং তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, কিন্তু সেই ব্যাক্তি আবার এমন অপরাধ করেছে, তো এমন পরিস্থিতিতে অভিযুক্তকে আজীবন কারাবাস, যার অর্থ সেই অভিযুক্ত শেষ জীবন পর্যন্ত কারাবাসের শাস্তি পাবে অথবা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা যেতে পারে।
ধর্ষণের মামলা কে আইন মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত শাস্তি প্রদান করতে পারে অপরাধীদের জন্য। আর এমন শাস্তি আগেও ঘটেছে, বর্তমানে ঘটছে এবং ভবিষ্যতেও এমন অপরাধের বিরুদ্ধে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড হবে। শাস্তি হিসাবে জেল হেফাজত, তার সাথে শেষ মুহূর্তে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত ঘোষণা করা যেতে পারে, সে অভিযুক্তর শাস্তি হিসেবে।