পশু পাখিদের হত্যা ও হিংসা আইনত অপরাধ জানুন আইন নিয়ম

পশু পাখিদের হত্যা করা আইনত অপরাধ এর জন্য আছে কঠোর শাস্তি। পশু পাখিদের প্রতি হিংসা করলেউ হতে পারে শাস্তি। জানুন পশু পাখিদের হত্যা করা আর তাদের প্রতি হিংসা সম্বন্ধিত অপরাধ ও আইন নিয়ম।

ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুসারে শুধুমাত্র মানব জাতির উপরে হওয়া অপরাধকেই অপরাধ বলে মনে করা হয় না, তার সাথে সাথে পশু-পাখিদের উপর অত্যাচার, নিষ্ঠুরতাও কিন্তু অপরাধ হিসেবে মনে করা হয় এবং তার জন্য শাস্তি ও রয়েছে।

এক্ষেত্রে ভারতীয় আইন খুবই উদার’ ভাবে পশু পাখিদের জন্য হওয়ার নিষ্ঠুরতা এবং তাদের হত্যা করার অপরাধে শাস্তি রেখেছে মানুষের জন্য।

পশু পাখিদের হত্যা ও হিংসা আইনত অপরাধ জানুন আইন নিয়ম
পশু পাখিদের হত্যা ও হিংসা আইনত অপরাধ জানুন আইন নিয়ম

কয়েকদিন আগে কার ঘটনা যেখানে একটি গর্ভবতী হাতিকে বারুদ খাইয়ে মারা হয়েছে, আর একটি গাভীর মুখে বারুদ রাখা হয়েছে। এইভাবে ঘটা ঘটনার মধ্য দিয়ে ঘটনা গুলি যেন কখনোই না ঘটে, তার জন্য অধিনিয়ম এর মাধ্যমে পশুপাখিদের অধিকার এর বিষয়টিও সুরক্ষিত করা হয়েছে।

ভারতীয় সংবিধান দ্বারা জীবজন্তু দের রক্ষা:

ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ 51 (ক) অন্তর্গত মূল বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, এই মুহুর্তের মধ্যে প্রত্যেক নাগরিকের উপরে কিছু কর্তব্য থাকবে যে পশু পাখিদের সুরক্ষা প্রদান করা এবং তাদের স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকার জন্য সহযোগিতা করা।

তার পরিবর্তে যদি সে গুলিতে বাধা প্রদান করা হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদান করবে আদালত। এর সাথে সাথে আদালতের নিয়ম অনুসারে সেগুলি পালন করা পশুপাখিদের স্বাধীনতা প্রদান করা।

সংবিধানের দেওয়া এই ব্যবস্থা থেকে প্রেরণা নিয়ে ভারতের সংসদে পশুপাখিদের প্রতি নিষ্ঠুরতা অধিনিয়ম 1960, বন্য জীব সংরক্ষণ অধিনিয়ম 1972 আর স্লাটার হাউস রুলস 2001 এর নির্মাণ করা হয়েছে।

ভারতীয় দণ্ডবিধি এর অন্তর্গত অপরাধ: 

পশুপাখিদের বধ করার ক্ষেত্রে এবং তাদের প্রতি নিষ্ঠুর হওয়ার জন্য ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুসারে এগুলিকে অপরাধের রূপ দেওয়া হয়েছে, তথা ভারতীয় দণ্ড সংহিতা তে পশুপাখিদের জীবন মানবজীবনের সমান মানা হয় নি।

কিন্তু পশুপাখিদের একটি সম্পত্তির মতো মনে করা হয়। যা কিনা পরিবেশ রক্ষার্থে এবং আমাদের বেঁচে থাকার উপরে বিষয়টি খুবই প্রযোজ্য। আর সেই দিক বিবেচনা করে একটি বড় বাপের সম্পত্তি জাতি ধ্বংস না হয়ে যায়, তার জন্য আইন এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী কিছু বিষয়:

ধারা 428:

১০ টাকা মূল্যের জীবজন্তুকে হত্যা করা অথবা তাঁকে বিকলাঙ্গ করার ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে বিষ প্রদান করা, তাকে অনুপযোগী বানিয়ে ফেলা সবক্ষেত্রেই শাস্তি হিসেবে দুই বছরের কারাবাস তার সাথে জরিমানা দুটোই একসাথে হতে পারে।

এই ধারার মধ্যে কোন রকম পশু পাখির নাম বলা হয়নি, কেবলমাত্র মূল্য বলা হয়েছে। এই মূল্যের কোন জীব জন্তুর প্রতি যদি কোন রকম কাজ কার্য করা হয়, যার ফলে সে জীবজন্তুর মারা যেতে পারে অথবা বিকলাঙ্গ হয়ে যেতে পারে, আর সেই পশুপাখি অথবা সে যে কোন রকম ভালো পরিস্থিতিতে না যেতে পারে তাহলে দু বছর পর্যন্ত কারাবাস হতে পারে।

ধারা 429:

ভারতীয় দণ্ড বিধির ধারা 429 যেখানে ৫০ টাকা মূল্যের অথবা তার বেশি মূল্যের কোন জীব জন্তু অথবা পশু-পাখিকে হত্যা করা অথবা বিকলাঙ্গ করা সম্বন্ধিত রয়েছে, এই ধারাতে হাতি ও ঘোড়া, খচ্চর, গরু অথবা গাভী যাই হোক না কেন, সে ক্ষেত্রে ৫০ টাকার বেশি মূল্যের জীবজন্তু যদি হয়ে থাকে সেই জীব জন্তুকে বিষ দেওয়ার মধ্যে দিয়ে বিকলাঙ্গ করার মধ্যে দিয়ে যদি কোনরকম নিষ্ঠুরতা করা হয়, তাহলে সেই পরিস্থিতি অনেকটাই গুরুতর হয়ে পড়ে, তার জন্য পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।

এই ধারা ধার্মিক প্রয়োজন অনুসারে কোন পশু বলি দেওয়ার উপরে কিন্তু যুক্ত নয়, কিন্তু এমন বলিও যেন ধার্মিক রীতি অনুসারে হয়ে থাকে।

ভারতীয় বন্য জীব সংরক্ষণ অধীনে অনেক 972 এর অন্তর্গত হাতি, ঘোড়া ও ইত্যাদির বলি দেওয়া যাবে না, গরু মহিষ গোবংশ সংরক্ষণ অধিনিয়ম এর অন্তর্গত আলাদা আলাদা রাজ্য তে সংরক্ষিত করা হয়েছে। এখন কেবলমাত্র কিছু নির্বাচন  করা পশু থেকে গিয়েছে, সেগুলির বলি দেওয়া যেতে পারে, যেমন ধরুন ছাগল, ভেড়া, মুরগি ইত্যাদি।

ধারা 429 স্পষ্ট হাতি ঘোড়া ও খচ্চর, মহিষ, গাভী, গরু এগুলির নাম নিয়ে উল্লেখিত করা হয়েছে এই ধারাতে, পশুদেরকে সম্পত্তি হিসেবে মনে করা হয়।

পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা নিবারণ অধিনিয়ম 1960:

পশুপাখিদের প্রতি নিষ্ঠুরতা সমাপ্ত করার উদ্দেশ্যে এই অধিনিয়ম এর নির্মাণ করা হয়েছে। ভারতীয় সংসদ দ্বারা এই অধীনের মাধ্যমে পশুপাখিদের প্রতি নিষ্ঠুরতা সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করার প্রচেষ্টা করা হয়েছে ওদের দ্বারাই ভারতে পশুপাখিদের প্রতি নিষ্ঠুরতা উল্লেখ করে থাকে সেগুলি হল:-

১) কোন পশুকে মারা, কোথাও দেয়ালের গায়ে মাথা ঠুকে দেওয়া, তার সাথে কোন পশুদের উপরেও খুব বেশি ভারী চাপিয়ে জিনিসপত্র বহন করা, তাদের উপরে অত্যাচার করা এ ধরনের সমস্যা রকম ব্যবহার যেগুলি অপরাধ হিসেবে ধরা হয়।

২) কোন পশু তাদের বয়স কোন অঙ্গ শিথিল হয়ে যাওয়া, কোন ঘা, ফোঁড়া এর কারণে যদি কাজ করতে না পারে বা অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন সেই পশুদের আবার ওই অসুস্থ অবস্থায় যদি কাজে লাগানো হয় সেটাও কিন্তু অপরাধ।

৩) যে কোন পশুকে ক্ষতি করার জন্য কোন ক্ষতিকারক পদার্থ জেনে-বুঝে যদি খাওয়ানো হয় সেটাও কিন্তু আইনত অপরাধ।

৪) কোন পশু দের কে কোন এমন রীতি অনুসারে কোন গাড়ি মোটর যানবাহন এর মাধ্যমে নিয়ে যাওয়ার সময় তাদের অনেকখানি কষ্ট হয় এটাও কিন্তু আইনত অপরাধ।

৫) কোন পশুকে কোন খাঁচায় বন্দি করে রাখা, যেটা লম্বা এবং চওড়ায় খুবই কম যেখানে সেই পশুটি ভালোভাবে থাকতে না পারে, সেটাও একটি অপরাধ বলা যায়।

৬) কোন পশুকে অনুচিত এবং খুবই ছোট দড়িতে বেঁধে রাখা অথবা কোনো ভারী বস্তুর সাথে বেঁধে রাখা।

৭) পশুর মালিক হওয়ার পরও সেই পশুকে খাদ্য, জল না দেওয়া।

৮) কোন উচিত কারণ ছাড়া কোন পশুকে এমন জায়গায় ছেড়ে দেওয়া, যেখানে খাওয়ার জন্য খাদ্য-পানীয় কোন কিছুই না পাওয়া যায় এবং সেখানে সে অভুক্ত অবস্থায় মারা যেতে পারে।

৯) কোন বিকলাঙ্গ, ক্ষুধার্ত, অসুস্থ এবং তৃষ্ণার্ত এমন পশু বিক্রির জন্য বাজারের রেখে দেওয়া।

১০) দুটো পশুর মধ্যে লড়াই লাগিয়ে দিয়ে মনোরঞ্জন এর মতো পরিস্থিতি তৈরি করা আইনত অপরাধ।

১১) গুলি চালিয়ে নিশানা লাগিয়ে পশুদের হত্যা করা ও আইনত অপরাধ।

এই সমস্ত বিষয়ের উপরে নিষ্ঠুরতার প্রমাণ পাওয়া যায় এবং যদি এমন অপরাধ প্রথমবার করা হয় তাহলে কম করে ২৫ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে। আর দ্বিতীয়বার যদি আবার এমন অপরাধ করা হয়, তাহলে তিন মাসের সাজা পেতে পারেন।

কোন সার্কাস ইত্যাদিতে কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়ার মধ্যে দিয়ে জীবজন্তুদের কাজে লাগানো হয়ে থাকে। এমন প্রশিক্ষণের জন্য কেন্দ্র সরকার দ্বারা বানানো হয়েছে একটি বোর্ড, বোর্ড এর অন্তর্গত রেজিস্ট্রেশন নিতে হবে অবশ্যই, আর এই বোর্ড এই সমস্ত বিষয়গুলি নজরদারি করে থাকে। পশুদের উপর নিষ্ঠুরতা নিবারণ অধিনিয়ম 1960 ও রেজিস্ট্রেশন এর প্রক্রিয়া উল্লেখ করে থাকে।

এছাড়া পশুপাখি আমাদের পরিবেশকে সুন্দরভাবে রক্ষা করে থাকে। যার জন্য আমরাও সুস্থভাবে বাঁচতে পারি। তাই তাদেরকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আর এমন অপরাধের বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। অকারণে কোন পশুকে হত্যা করা, তাদেরকে বিরক্ত করা, তাদের আঘাত করা এগুলো কখনোই উচিত নয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top