প্রতিভা পাটিল জীবনী 2023 – শিক্ষা, পরিবার, সম্পত্তি এবং অন্যান্য বিবরণ

প্রতিভা পাটিল কে? কোথায় বাড়ি? জীবনে কিভাবে সফল হয়েছেন? আসুন জেনে নিন প্রতিভা পাটিল এর জীবন পরিচয়, পরিবার, শিক্ষা, মোট সম্পত্তি ও রাজনৈতিক বিবরণ জানুন (Biography of Pratibha Patil in Bengali)।

ভারতের প্রথম নির্বাচন হওয়া মহিলা রাষ্ট্রপতি ছিলেন প্রতিভা পাটিল। তিনি স্বাধীনতার পর ভারতের ১২ তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তার বয়স ছিল ৭২ বছর, তিনি ভারতের রাজস্থান প্রদেশের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০০ সালে ভারতীয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হন। ২০০৭ সালের ২৫ শে জুলাই তিনি ভারতের প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

প্রতিভা পাটিল জীবন পরিচয় - Pratibha Patil Biography in Bengali
প্রতিভা পাটিল জীবন পরিচয় – Pratibha Patil Biography in Bengali

ভারতীয় সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকে নির্বাহী ক্ষমতা, কিন্তু রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার গঠনে রাষ্ট্রপতির থাকে ব্যাপক ক্ষমতা। ফলে এটি শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক একটি পদ নয়, এছাড়া আরো বেশ কিছু ক্ষমতা হাতে থাকার কারণে দেশীয় উন্নয়নের ভূমিকা রাখার জন্য যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে রাষ্ট্রপতি পদে।

নির্বাচনে জেতার পর প্রতিভা পাটিল তার একটি প্রতিক্রিয়া তে বলেছিলেন যে, “কাগজে কলমে প্রেসিডেন্ট না হয়ে এই পদের সাংবিধানিক সমস্ত দায়িত্ব তিনি যোগ্যতার সাথে পালন করবেন।”

প্রতিভা পাটিল এর জীবনী সম্পর্কে কিছু জানা যাক: 

  • সম্পূর্ণ নাম: প্রতিভা দেবী সিং পাটিল
  • জন্ম: ১৯ শে ডিসেম্বর ১৯৩৪ সাল নদগাঁও, বোম্বে, প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত, এখন যেটি মহারাষ্ট্রে অবস্থিত।
  • পিতার নাম: নারায়ণ রাও পাটিল
  • স্বামীর নাম: দেবী সিংহ রণ সিংহ শেখাওয়াত
  • রাজনৈতিক দল: ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস
  • অন্যান্য রাজনৈতিক দল: ইউনাইটেড ফ্রন্ট ১৯৯৬ থেকে ২০০৪, সংযুক্ত প্রগতিশীল জোট ২০০৪ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত।
  • প্রাক্তন শিক্ষার্থী: মুলজী জেঠা কলেজ, জালগাঁও, সরকারি আইন কলেজ, মুম্বাই

প্রতিভা দেবী সিং পাটিল এর জন্ম:

১৯৩৪ সালের ১৯ শে ডিসেম্বর ভারতের মহারাষ্ট্রের ছোট শহর jalgaon তে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি।

শিক্ষা ও পারিবারিক জীবনযাত্রা: তিনি জালগাঁও ও মুম্বাইয়ে লেখাপড়া করেন। কলা ও আইন শাস্ত্রের উপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর তিনি জালগাঁও তে একজন আইনজীবী হিসেবে কর্ম জীবন শুরু করেন।

এরপর ১৯৬৫ সালে তিনি রাজস্থানী বংশগত তরুণ দেবী সিংহ রণ সিংহ শেখাওয়াতকে বিবাহ করেন এবং তাদের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে।

রাজনীতি জীবন যাত্রা:

শুধুমাত্র তিনিই যে রাজনীতি করতেন সেটা কিন্তু নয়। সামাজিক কাজ করতে গিয়ে তিনি কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬২ সালে তিনি প্রথম মহারাষ্ট্র বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত রাজস্থান মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন তিনি।

১৯৭৯ সালে কংগ্রেস বিধানসভা নির্বাচনে হেরে গেলে তিনি বিরোধী দল করেন। দলের নেত্রীর দায়িত্ব পালন করেন, এরপর ১৯৮২ সালে আবার রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য হন। ১৯৮৫ সালে উচ্চ রাজ্যসভার সদস্য এবং ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হওয়া প্রতিভা পাটিলের: 

ভারতের ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেস সমর্থিত সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চার (ইউ. পি. এ.) প্রার্থী ছিলেন প্রতিভা পাটিল। ১৯শে জুলাই ২০০৭ কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে সংসদ এবং দেশব্যাপী রাজ্য বিধানসভার ভোট গণনা শুরু হয়ে যায় সকাল ১১ টা পর্যন্ত শুরু হয়। প্রতিভা পাতিল বিরোধী পক্ষ বিজেপি ও এজিপির বিভিন্ন মতাবলম্বীদের অপ্রত্যাশিত সমর্থন লাভ করেন। এরপর চূড়ান্ত ভোট গণনায় দেখা যায় যে প্রতিভা পাটিল ৬৫.৮২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।

পার্লামেন্টে তিনি পেয়েছেন ৪৪২ ভোট, প্রতিপক্ষ শাখা পেয়েছেন ২৩২টি ভোট, রাজ্য বিধানসভা ও ইউনিয়ন এলাকাগুলো মিলে প্রতিভা পেয়েছিলেন ২৪৮৯ টি ভোট, সব মিলিয়ে প্রতিভা পাটিল ১০.৯৮ লাখ নির্বাচক মন্ডলী ৬ লাখ ৩৮ হাজার ১১৬ টি ভোট পেয়েছিলেন।

প্রতিভা পাটিলের সামাজিক কর্মকাণ্ড: 

মুম্বাই এবং নতুন দিল্লি অথবা নয়া দিল্লিতে তিনি কর্মজীবী মহিলাদের জন্য হোস্টেল তৈরি করেছেন। তার সাথে সাথে নিজের বাসস্থান অথবা জন্মস্থান জলগাঁও তে তিনি একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছেন।

এছাড়াও সেখানে একটি চিনিকল তার পাশাপাশি মহিলাদের জন্য একটি সমবায় ব্যাংক ও স্থাপন করেছেন সামাজিক কাজ এর মধ্যে দিয়ে।

প্রতিভা পাটিলের ডিগ্রি এবং পছন্দের খেলা: 

ছোটবেলা থেকেই তিনি খেলাধুলা করতে প্রবল আগ্রহী ছিলেন। কলেজে থাকাকালীন অথবা কলেজে পড়াশোনা চলাকালীন প্রতিভা পাটিল একাধিকবার টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে পদক এবং পুরস্কার লাভ করেছেন।

স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পরে তিনি মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ সরকারি আইন কলেজ গভর্নমেন্ট ল কলেজ থেকে আইনের স্নাতক ডিগ্রি অর্থাৎ এলএলবি (LLB) ডিগ্রী অর্জন করেন। তার পাশাপাশি তিনি সমাজসেবামূলক কাজে যুক্ত ছিলেন।

একই সঙ্গে তিনি লোকসভার হাউস কমিটির চেয়ারপারসন ও ছিলেন। তার কর্মজীবনের বিশাল পরিসরে তিনি অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৫ সালে মহারাষ্ট্র সরকারের জল দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সভাপতি ও ছিলেন তিনি।

এছাড়া ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি মহারাষ্ট্র প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতিও হয়েছিলেন। একই সঙ্গে তিনি ন্যাশনাল ফেডারেশন অফ আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাংক এর ডিরেক্টর ছিলেন।

১৯৬২ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের যুক্ত হয়ে নিজের ৪২ বছর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সূচনা করেছেন এই বর্ষিয়ান নেত্রী প্রতিভা পাটিল। এছাড়া জাতীয় রাজনীতির ইতিহাসে নিজের সম্পূর্ণ রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি নির্বাচনে অপরাজিত থাকার বিরল নজির গড়ার একমাত্র দাবিদার এখনো পর্যন্ত কিন্তু তিনি রয়েছেন।

ছোটবেলা থেকে প্রতিভা তার বাবার কাছে আসা মক্কেলদের নানাবিধ সমস্যা গুলির কথা মনোযোগ সহকারে শুনতেন এবং অবসর সময়ে তিনি সেই সমস্যা গুলির উৎস সম্পর্কে এবং সমাধান সম্পর্কে নিজের মনে নিজে থেকেই বিশ্লেষণ করতে থাকতেন। আর এগুলির মধ্যে দিয়ে তার মধ্যে এক নেত্রী ভাবের জন্ম হয়।

এছাড়া ওই সময় তিনি মহারাষ্ট্র সরকারের “২০- পয়েন্ট পোগ্রাম এর অন্যতম একজন প্রবক্তা ছিলেন। প্রতিভা পাটিল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি নাইরোবি এবং পুয়ার্ত  রিকোতে অনুষ্ঠিত সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার কনফারেন্সে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন, তার পাশাপাশি ১৯৯৫ সালের চীনের বেজিং এ অনুষ্ঠিত বিশ্ব নারী সমাবেশে (World Women’s Conference) এবং অস্ট্রিয়া তে স্ট্যাটাস অফ ওমেন্স সমাবেশে ভারতীয় বিশেষ সম্মানীয় ব্যক্তি হিসেবে তিনি উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিভা পাটিল শিশু ও নারী কল্যাণমূলক কার্যকলাপের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। এছাড়া মুম্বাই এবং দিল্লিতে কর্মজীবী মহিলাদের জন্য আবাসন তৈরি করেছেন। অমরাবতী জেলার পিছিয়ে পড়া শিশুদের জন্য এবং বিমুখতা জাতির দুস্থ শিশুদের জন্য স্কুল তৈরি করেন। ওই অঞ্চলের গরিব মহিলাদের জন্য গান, সাঁতার এবং কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেন।

জলগাঁওতে গ্রামীণ যুবকদের জন্য কারিগরি কলেজ নির্মাণ করেন এবং জলগাঁও জেলাতে মহিলা হোমগার্ড নিয়োগ চালু করেন। মহারাষ্ট্র সরকারের অধীনে নারী উন্নতির লক্ষ্য নিয়ে তিনি মহিলা বিকাশ মহামন্ডল” তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনিই।

প্রতিভা পাটিলের সম্মান:

প্রতিভা পাটিল ভারতবর্ষের প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি হয়ে ইতিহাসে চিরস্থায়ী স্থান লাভের পাশাপাশি এখনো পর্যন্ত একমাত্র মহিলা রাষ্ট্রপতি হওয়ার নজির সৃষ্টিকারী রূপে ও স্মরণীয় হয়ে আছেন।

২০১৮ সালে ৩ রা আগস্ট মেক্সিকো সরকার প্রতিভা পাটিল কে “অর্ডার অফ দি অ্যাজটেক ঈগল” (Order of the Aztec Eagle) সম্মানে ভূষিত করেন। এটি মেক্সিকোর সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান। রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন ভারত এবং মেক্সিকোর সম্পর্ক খুবই সুন্দর করার জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করার ক্ষেত্রে তিনি এই সম্মানের অধিকারী হয়েছিলেন।

ভারতের পূর্ব রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের পর তিনি দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে এই সম্মানের সম্মানিত হয়েছেন। ২০১৯ সালে পুনের মিশিয়া ভবনে (MCCIA Bhaban) অর্ডার অফ দি অ্যাজটেক ঈগল সম্মান প্রদানের অনুষ্ঠানটি হয়।

একজন নারী হয়ে এত সমস্ত দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন। তার পাশাপাশি গরীব দুঃখীদের কথাও তিনি ভেবেছেন, বিশেষ করে শিশু ও মহিলাদের জন্য তিনি অনেক সামাজিক কল্যাণকর কাজ করেছেন। সেই কারণে সারা জীবন তিনি মানুষের মনে বিরাজ করবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top