Poush Parban 2024: পৌষ পার্বণের সাথে যুক্ত রয়েছে অজানা পৌরাণিক কাহিনী ও রীতি

শীত মানেই কিছুদিন পরেই পিঠে পুলির উৎসব অর্থাৎ পৌষ পার্বণ চলে আসবে ঘরে ঘরে। এই আনন্দে সকলেই বেশ উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে এই বিশেষ উৎসবের আয়োজন শুরু করে দেন।

তাছাড়া বাঙালিরা আহারে বাহারে থাকতে ভীষণ পছন্দ করেন। উৎসব আনন্দ তার পাশাপাশি খাওয়া-দাওয়া, ভুরি ভোজ সবেতেই কিন্তু বাঙালি বেশ পটু।

পৌষ পার্বণের সাথে যুক্ত রয়েছে অজানা পৌরাণিক কাহিনী ও রীতি
পৌষ পার্বণের সাথে যুক্ত রয়েছে অজানা পৌরাণিক কাহিনী ও রীতি

বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব এই পৌষ পার্বণ অথবা মকর সংক্রান্তি বা পৌষ সংক্রান্তি। যা কিনা পৌষ মাসের একেবারে শেষ দিন পালন করা হয় বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে। এছাড়া এই দিনটি অন্যান্য দেশেও কিন্তু বিভিন্ন নামে উদযাপিত হয়।

পৌষ পার্বণের সাথে জড়িত পৌরাণিক কাহিনী ও লোককথা:

পৌষ পার্বণ পিঠে পুলির উৎসব হলেও এই পৌষ পার্বণ কে ঘিরে লোককথা শোনা যায় এবং এর পৌরাণিক কাহিনীও রয়েছে। মহাভারতের কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, মকর সংক্রান্তিতে মহাভারতের পিতামহ ভীষ্ম শরশয্যা ইচ্ছা মৃত্যু গ্রহণ করেছিলেন। আবার অন্যদিকে শোনা যায় সূর্য এই বিশেষ দিনে নিজের ছেলে মকর রাশির অধিপতি এক মাসের জন্য ঘুরতে গিয়েছিলেন।

এছাড়াও আবার জানা যায় এই বিশেষ দিনে দেবতা দের সঙ্গে অসুরের যুদ্ধ শেষ হয়েছিল। অসুরদের বদ করে দেওয়ার পর তাদের কাটা মুন্ডু পুঁতে দেওয়া হয়েছিল মন্দিরা পর্বতে সেই জন্যই অশুভ শক্তির বিনাশ হয়ে শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠা হয় এই বিশেষ দিনে। তাই এই দিনটির এতখানি গুরুত্ব আর সেটা বিশ্বাস অনুসারে এত যুগ থেকে চলে আসছে।

আবার অন্যদিকে “সংক্রান্তি” এই কথাটির অর্থ হল “গমন করা” অর্থাৎ নিজে কক্ষপথ থেকে সূর্যের মকর রাশিতে প্রবেশ করাকে সংক্রান্তি বলা হয়। আর এই বিশেষ ও শুভদিনে শুভ কাজগুলি শুরু করা হয়। বিশ্বাস করা হয় এই শুভদিনে শুভ কাজ শুরু করলে তা খুবই সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হবে।

নতুন ফসল তোলার উৎসব হল এই মকর সংক্রান্তি অথবা পৌষ পার্বণ। এই দিনে দক্ষিণায়ন শেষ হয়ে সূর্যের উত্তরায়ন পালিত হয়। তাই এই উৎসবটি সকলের কাছে খুবই জনপ্রিয় এবং পরিবেশ ও শরীরের সাথে জড়িত একটি বিশেষ উৎসব।

পৌষ পার্বণ অথবা পৌষ সংক্রান্তির বিশেষ কিছু নিয়ম আচার:

সংক্রান্তির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাঙ্গালী দের বেশ কয়েকটি নিয়ম কানুন। এই দিন দূরে কোথাও যাত্রা করা যাবেনা, যেটা অশুভ বলে মনে করা হয়। আবার অন্য কোথাও গেলেও কিন্তু রাতের মধ্যে বাড়ি ফিরে আসা উচিত, আর এই বিশ্বাস চলে আসছে বহু প্রাচীন কাল আগে থেকে।

মকর সংক্রান্তি নতুন ফসল এর মরসুমের প্রথম দিন ও শীত কালের শেষ দিন বলে মনে করা হয়। সংক্রান্তির আগে বাঙালিরা ঘরবাড়ি, রান্নার বাসনপত্র পরিষ্কার করে সুন্দর করে ঝকঝকে করে রাখেন। বাড়ির আশেপাশে সব কিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, যা দেখেই বোঝা যায় পৌষ পার্বণ কাছেই।

এর পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অশুভ শক্তি কে বিদায় জানায়, তাই নতুন কোন উৎসবের আগমন ঘটলে বাড়ি-ঘর পরিষ্কার রাখাটা বাঞ্ছনীয়। যা এই পৌষ পার্বণের রীতি-নীতির মধ্যে একটি বিশেষ বিষয়।

এর পাশাপাশি ঘরের উঠানে, ঘরের বারান্দায়, দরজায়, চালের গুঁড়ো দিয়ে আলপনা দেওয়া হয়। যা এর উৎসবকে এক ঐতিহ্য পূর্ণ সৌন্দর্য প্রদান করে। প্রতিটি বাড়ি সেজে ওঠে এই আলপনা তে। তার মাঝে থাকে মা লক্ষ্মীর পদচিহ্ন।

সদর দরজা থেকে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করানো হয় মা লক্ষ্মীর পদচিহ্ন ও আলপনা। ধানের গোলা থেকে শুরু করে ঘরের সমস্ত জায়গায় এই আলপনা দেওয়া হয় যা কিনা পৌষ পার্বণের একটি বিশেষ অঙ্গ।

পৌষ পার্বণে বিশেষ বড় উৎসব ও মেলা:

এই দিন উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সাগরদ্বীপে প্রত্যেক বছর আয়োজন করা হয় গঙ্গাসাগর মেলার

যেখানে কপিল মুনির আশ্রমকে কেন্দ্র করে পুণ্য স্নান ও বিরাট বড় মেলা অনুষ্ঠিত হয় এবং গঙ্গায় পবিত্র স্নান করতে যেখানে দূরদূরান্ত থেকে আসেন লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থী। এছাড়া ভারতের বীরভূমের কেন্দুলী গ্রামে এই বিশেষ দিনকে ঘিরে ঐতিহ্যময় জয়দেব মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো বাউল গান

এছাড়াও এই বিশেষ দিনে টুসু উৎসব অথবা মকর পরবে মেতে ওঠেন বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও সংলগ্ন এলাকার মানুষজন। নাচে গানে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন তারা, টুসু গান, সকলের কম বেশি জানা আছে, যার অন্যতম হলো পোরকুলের মেলা। আর এই উৎসবটি টুসু পূজা, টুসু উৎসব ও টুসু মেলা নামে পরিচিত।

পৌষ পার্বণে বিভিন্ন পিঠে পুলি:

এছাড়াও এই উৎসবের সবথেকে জনপ্রিয় বিষয় হলো সুস্বাদু সব পিঠে পুলি, পায়েস যা সকলের জিভে জল এনে দেবে। দুধপুলি, ক্ষীরপুলি, পাটিসাপটা, চিতই পিঠে, নলেন গুড়ের বিভিন্ন সব পিঠে যেগুলি সকলে মিলে আনন্দের সাথে তৈরি করা হয়। বলা যেতে পারে এই পিঠে পুলি তৈরি করার জন্য সপ্তাহখানেক আগে থেকেই চলে তার প্রস্তুতি।

পৌষ সংক্রান্তিতে সাধারণত আতপ চালের গুঁড়ো, ময়দা, নারকেল, গুড়, দুধ দিয়ে বিভিন্ন সাধের বিভিন্ন ধরনের পিঠে তৈরি করা হয়। তার সঙ্গে তিল, কদমা এই সব খাওয়া রীতিও প্রচলিত রয়েছে।

নতুন ফসল ঘরে ওঠার আনন্দে মা লক্ষ্মী কে ভীষণ ভাবে ধন্যবাদ জানাতে এবং ঘরে অধিষ্ঠিত হয়ে থাকার জন্য এই উৎসবটি একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি উৎসবের যেমন গুরুত্ব রয়েছে তেমনি পৌষ পার্বণ কিন্তু অনেক পৌরাণিক কাহিনীর সমন্বয়।

লোককথার উপরে ভিত্তি করে আজও প্রতিটি বাঙালি মানুষের কাছে জনপ্রিয় একটি সুন্দর মিষ্টি মধুর উৎসব। এই বিশেষ উৎসবের দিনে আমন্ত্রিত থাকেন বাড়িতে অনেকেই। আত্মীয়-স্বজন আসা-যাওয়া করেন এবং চারিদিকে চলে এই উৎসবের ঘনঘটা।

বিভিন্ন ধরনের রীতি – নীতি, নিয়ম-কানুন থাকলেও এই পৌষ পার্বণ কিন্তু এক আনন্দ মুখরিত উৎসব। শীতের আমেজে বিভিন্ন স্বাদের পিঠে খাওয়া এবং পুণ্য স্নান বিভিন্ন মেলা উৎসবে অংশগ্রহণ করা, সবকিছুতে যেন উৎসবের ছোঁয়া লেগেই থাকে। তাইতো এই উৎসব বাঙালির প্রাণের উৎসব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top