চাষের জমি কিভাবে ভাগাভাগি করা যায়? আইনি নিয়ম জানুন

চাষের জমি কিভাবে ভাগ করা যায়? আইনি নিয়ম অনুসারে চাষের জমি কিভাবে ভাগাভাগি করা যায়? বিনা কোন অসুবিধায় আইনি নিয়ম অনুসারে যে কোন চাষের জমি ভাগ করার আইনি পদ্ধতি জেনে নিন (Partition of Agricultural Land in Bengali)।

ভারতের অধিকাংশ মানুষ চাষবাসের উপরে নির্ভরশীল। যাদের কাছে চাষযোগ্য জমি রয়েছে, তারা সেই চাষযোগ্য জমির অংশীদার বলা যেতে পারে। চাষাবাদ ভারতের প্রধান জীবিকা বলা যেতে পারে। এমন চাষাবাদের জন্য জমি কোন ব্যাক্তি নিজে থেকে অর্জিত করতে পারেন অথবা নিজের পরিবার সজনের থেকে উত্তরাধিকার হিসেবে পেতে পারেন।

কখনো কখনো পরিবারের এমন পরিস্থিতির জন্ম হয়, যেখানে পরিবারের সকল সদস্য কখনোই এক মত প্রকাশ করেন না। বা বলতে গেলে একজন সদস্যের সাথে আর একজন সদস্যের কখনোই মিল হয় না। আলাদা আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, সেই ক্ষেত্রে এমন জমি জায়গার ভাগ নিয়ে তখন সমস্যা তৈরি হয়।

চাষের জমি কিভাবে ভাগাভাগি করা যায়? আইনি নিয়ম জানুন
চাষের জমি কিভাবে ভাগাভাগি করা যায়? আইনি নিয়ম জানুন

তখন চাষাবাদের জমি ভাগ করার পরিস্থিতি চলে আসে। আর অংশীদার অথবা ভাগীদার তাদের নিজেদের মধ্যে জমি জায়গা ভাগ বাটোয়ারা করে থাকেন।

তবে সবাই কিন্তু সমান নয়, এমন পরিস্থিতিতে কিছু পক্ষকার জমির ভাগ করতে চাইবেন আবার অনেকে ভাগ করতে চাইবেন না। কোন ব্যক্তির ভালো দিক সেই জমির সাথে সম্পর্কিত, তার কাছে অধিকার আছে যে, সে এমন ভাগ বাটোয়ারা করার পর সেই জমি নিজের নামে রেজিস্টার করে দেবেন।

এই ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া কি?

ধরা যাক, একজন ব্যক্তির কাছে কিছু জমি রয়েছে চাষাবাদের জন্য। আর সেই ব্যক্তির মৃত্যুর আগে সেই জমির ভাগ বাটোয়ারা হয়ে যায়, তখন এমন ব্যক্তির জমি তার উত্তরাধিকারীদের কাছে চলে যায়। এখন সেই ব্যক্তির দুটি ছেলে এবং একজন বিধবা স্ত্রী হয়েছে (মৃত্যুর পরের পরিস্থিতি) এমন পরিস্থিতিতে তিন জনই কিন্তু সমান ভাবে অংশীদার হবেন সেই চাষাবাদযোগ্য জমির।

আবার খতিয়ানে নাম সেই মৃত ব্যক্তির নাম দায়ের করা হয়েছে, তখন এই তিনজনই উত্তরাধিকারী নিজেদের নাম দায়ের করার অধিকারী হয়ে থাকেন। যদি তারা চান একটি সাধারণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবস্থা সম্পন্ন করার পর আবেদনের মাধ্যমে খতিয়ান এর মধ্যে তিনজনের নাম সংযুক্ত করতে পারেন।

আবার বলা যায়, তিনজনের মধ্যে যদি দুজন, কোন দুজন একসাথে নাম নথিভুক্ত করার কথা ভাবেন তাহলে তাকে প্রাপ্ত করার জন্য একটি সিভিল সুট জারি করতে হবে। তার পরেই কিন্তু সেই চাষের জমি ভাগ করা সম্ভব হবে।

কোথায় দায়ের করা হয়ে থাকে সিভিল সুট?

ভাগ-বাটোয়ারার এমন সিভিল স্যুট এস ডি এম এ দায়ের করা হয়ে থাকে, এটি সাধারণত সেই গ্রামের তহসিল রয়েছে আর যেখানে জমি রয়েছে যেখানে একটি সিভিল সুট যুক্ত করতে হবে, যাতে যে পক্ষকার জমির ভাগাভাগি ি চাইবেন সে সেই জমির সাথে নিজের ভালো দিক প্রমাণ করতে পারেন বা প্রমাণ করে থাকেন।

এটাও প্রমাণিত করতে হবে যে, সেই জমি তার পিতার নামে ছিল এবং পিতার মৃত্যু হয়ে গিয়েছে এমন পরিস্থিতিতে সেই জমির তিনটি উত্তরাধিকারী হয়েছে আর এই তিনটি উত্তরাধিকারীর মধ্যে একজন উত্তরাধিকারী নিজে হয়েছেন, সেটাও প্রমাণিত করতে হবে। আর তাকে নিজের জমি সংযুক্ত খতিয়ান তে নিজের নাম সংযুক্ত করতে না চেয়ে আলাদা করে নিজের নাম রেজিস্টার করতে চাইতে পারেন।

ডিক্রি এর পর কি হয়ে থাকে?

যদি উপখন্ড অধিকারী দ্বারা সিদ্ধান্ত করা হয়ে থাকে, তখন সেই গ্রামের পাটোয়ারী কে ডাকা হবে। উপখন্ড অধিকারী পাটোয়ারীকে এই আদেশ করবে যে, ভাগ বাটোয়ারা সম্বন্ধিত প্রস্তাব বিচারালয়ে প্রস্তুত করা হোক।

পাটোয়ারীর এটি কর্তব্য যে, এই ভাগ বাটোয়ারা সম্বন্ধিত কিছু প্রস্তাব তৈরি করে আনবেন, যেমন ধরুন কোন এক হেক্টর জমি আছে, আর তার তিনটি অধিকারী আছে, তখন পাটোয়ারী তিন জনের ভাগের জমিতে আলাদা আলাদা লিখে নিয়ে আসবেন।

আর বিচারালয় এর কাছে বলবেন যে, সেই অনুসারে জমি কে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে, যাতে সমস্ত ভাগীদার এর নিজেদের অংশ প্রাপ্ত হতে পারে। আর কারো সাথে কোন রকম অন্যায় যেন না হয়।

এরপর প্রস্তাব রাখা হবে, অংশীদার দের সহমতি সেই প্রস্তাব অনুসারে নেওয়া হবে। তাদের মত অনুসারে জমির অংশ সমানভাবে ভাগ করে তিনটি ভাগে ভাগ করা হবে, আবার যদি পক্ষকার সহমত না হয়ে থাকেন, তখন উপখন্ড আধিকারিক এর নির্ণয়ই হয়ে থাকে শেষ নিষ্পত্তি। আধিকারিক যেমন ধরনের ভাগ বাটোয়ারার আজ্ঞা দেবেন, তেমন ভাবেই কিন্তু সেই জমির ভাগ বাটোয়ারা করা হবে।

এই পরিস্থিতিতে কোর্ট ফিস কত হতে পারে?

যেমন ধরুন যে কোন সিভিল স্যুট তে কোর্ট ফিস দেওয়াটা জরুরি, যেটা বিচারালয় এ জমা হয়, চাষাবাদের জমির মামলাতে কোর্ট ফিস খুবই সামান্য হয়ে থাকে, ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা কোর্ট ফিস, এমন কেসের এর জন্য লাগানো যেতে পারে।

এরপর এই বিষয়ের উপরে খেয়াল রাখা জরুরী যে, যদি সেই জমির উপরে কোনরকম দেনা বা ঋণ থেকে থাকে, তাহলে কিন্তু সেই জমি কোন ভাবেই ভাগ বাটোয়ারা করা সম্ভব হবে না। প্রথমে অংশীদার দের সেই ঋণ শোধ করতে হবে, আর ঋণ শোধ করার জন্য আদেশ দেওয়া হবে তাদেরকে।

ঋণ শোধ করে দেওয়ার পর, তারপর সেই জমি ভাগ করা সম্ভব হবে। কেননা পক্ষকার দের এটি দায়িত্ব যে, যে জমি তারা উত্তরাধিকার হিসেবে প্রাপ্ত করছেন, সেই জমি সম্বন্ধিত সমস্ত রকমের ঋণ যেন পরিশোধ করা হয়ে থাকে।

এই প্রক্রিয়াতে নিজে থেকেই অর্জিত সম্পত্তির মামলাতে আপনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন, যেমন ধরুন কখনো কখনো এটাও হতে পারে যে, সমস্ত পক্ষকার মিলে কোন একটি জমি কিনতে চাইছেন বা কিনছেন, আর কোন একটি খতিয়ানে সমস্ত প্রকারের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে, সেটাও কিন্তু এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জমির ভাগ বাটোয়ারা করার ক্ষেত্রে রায় দিয়ে থাকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top